
অনুচ্ছেদ লিখন
সুন্দরবন
চির সবুজের দেশ আমাদের এ মাতৃভূমি। এ দেশের চির সবুজের অন্যতম নিদর্শন হলো, পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ অরণ্য ‘সুন্দরবন’। গাছপালার চমৎকার সমারোহ এবং বিচিত্র সব বন্য প্রাণীর সমাবেশ সুন্দরবনকে এক অপরূপ প্রাকৃতিক নিদর্শন হিসেবে উপস্থাপন করেছে। বৃহত্তর খুলনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ জুড়ে সুন্দরবনের বিস্তার। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার অংশবিশেষ নিয়ে বাংলাদেশের অংশের সুন্দরবন অবস্থিত। জোয়ার-ভাটার কারণে এখানকার মাটিতে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার প্রভাব বেশি। সুন্দরবনের উদ্ভিদকুলও বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে রয়েছে বৃক্ষ, লতাগুল্ম, ঘাস প্রভৃতি উদ্ভিদ। সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ ‘সুন্দরী বৃক্ষ’। এ ছাড়া অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে গেওয়া, গরান, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, বাইন প্রভৃতি। সুন্দরবনের ছোট ছোট খালের পাড়ে জন্মে ‘গোলপাতা’। বিচিত্র প্রাণীদের সমারোহ সুন্দরবনকে ঐশ্বর্যশালী করে তুলেছে। প্রাণীগুলোর মধ্যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বেশি পরিচিত ও বিশ্ব বিখ্যাত। এ ছাড়া রয়েছে হরিণ, বানর, সজারু, শূকরসহ বিভিন্ন প্রাণী। একসময় সুন্দরবনে প্রচুর হাতি দেখা যেত। বর্তমানে অরণ্য কমে যাওয়ায় একটিও হাতি চোখে পড়ে না। সুন্দরবনে রয়েছে নানা রঙের ছোট-বড় প্রাণী। যেমন- বক, সারস, হাড়গিলা প্রভৃতি। সমুদ্র উপকূলে দেখা মিলে গাংচিলের। চিল, মাছরাঙা, প্যাঁচা, বুলবুলি, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল প্রভৃতি পাখির বিচিত্র সমারোহও দেখা যায় সুন্দরবনে। এখানে প্রায় ৫০ জাতের সরীসৃপ দেখা যায়। বিষাক্ত সাপের আনাগোনাও লক্ষ করা যায় সুন্দরবনে। সুন্দরবন শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত নয়, দেশের অর্থনীতিতেও বিশাল ভূমিকা রাখে। সুন্দরবনের বৃক্ষ কাঠের স্থাপনা তৈরিতে, জ্বালানি হিসেবে এবং কাঠ কয়লা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। ঘরের চাল ও বেড়া তৈরিতে গোলপাতা ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কেবল সুন্দরবনকে কেন্দ্র করেই ব্যাপক জনগোষ্ঠী বেঁচে আছে। কিছু অসাধু মানুষ সুন্দরবনকে ধ্বংস করার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই এই বনকে সংরক্ষণ করতে হবে। ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেসকো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
আরো পড়ুন : ৩টি অনুচ্ছেদ লিখন, ১ম পর্ব
স্বাধীনতা দিবস
স্বাধীনতা এক অমূল্য সম্পদ। ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। আমাদের জীবনে স্বাধীনতা দিবস অত্যন্ত গৌরবময় তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সূচনা হয়, অবসান ঘটে সাড়ে ২৩ বছরব্যাপী চলা পাকিস্তানি অপশাসনের। বাঙালির স্বাধীনতা ঘোষণা এবং স্বাধীনতা লাভের পেছনে রয়েছে এক সুদীর্ঘ প্রেক্ষাপট ও সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। প্রথমেই আমাদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত আসে। পরবর্তী সময়ে তাদের ঔদ্ধত্য ও নিষ্ঠুরতা চরম আকার ধারণ করে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। কিন্তু জনগণের রায়কে উপেক্ষা করে পাকিস্তানি সরকার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে। এ দেশের সচেতন জনতা কিছুতেই তা মেনে নিতে পারেনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায় নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় পিলখানা, রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেপ্তারের আগেই, তার স্বাক্ষরিত স্বাধীনতার ঘোষণার বার্তাটি তৎকালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। এরপর চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণা। সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত মুক্তির সংগ্রাম। এরপর গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করে ৯ মাসব্যাপী চলা বাঙালির বীরত্বপূর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘটনাবলি। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি লাভ করে চূড়ান্ত বিজয়, লাভ করে মুক্তির স্বাদ। আমাদের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবস বিশেষ তাৎপর্যবহ একটি দিন। প্রতি বছর ২৬ মার্চ যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। এদিন সব ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়, জাতীয় পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় দীক্ষা দেওয়া হয়। বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। তাই প্রতিটি স্বাধীনতা দিবসে আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার বলিষ্ঠ শপথ গ্রহণ করতে হবে। আর সেই শপথকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে দেশ গড়ার নতুন প্রত্যয়ে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা
কবীর