
দ্বিতীয় অধ্যায় : সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-৩
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
কাঞ্চনপুর একটি নদী বিধৌত এলাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। জনসাধারণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ওই সমস্যা মোকাবিলায় গৃহীত সমাজসেবামূলক কর্মসূচির আমূল সংস্কার দরকার। তাই জেলা প্রশাসক সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা এলাকার সর্বস্তরের প্রতিনিধির মতামতের ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট দেন। রিপোর্টে জনগণের অগ্রগতির পথে পাঁচটি অন্তরায় চিহ্নিত করেন এবং সেগুলো দূরীকরণে পাঁচটি সুপারিশও পেশ করেন।
ক. জাকাত দেওয়ার খাত কয়টি?
খ. সামাজিক পরিবর্তন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কাঞ্চনপুর এলাকার রিপোর্টের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোন ঐতিহাসিক রিপোর্টের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিত করা রিপোর্টটি যুক্তরাজ্যে সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রবর্তনে কী ভূমিকা রাখে? আলোচনা করো।
উত্তর: ক. জাকাত দেওয়ার খাত ৮টি।
খ. সামাজিক পরিবর্তনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো- Social Change। সমাজকাঠামো বা সামাজিক সংগঠনের মধ্যে সংঘটিত পরিবর্তনই সামাজিক পরিবর্তন। সামাজিক পরিবর্তনের সংজ্ঞায় সমাজবিজ্ঞানী মরিস জিন্সবার্গ বলেন, ‘সামাজিক পরিবর্তন বলতে সামাজিক কাঠামো এবং তৎসম্পর্কিত কার্যাবলির পরিবর্তনসহ যেসব আদর্শ, মূল্যবোধ ও বিধিব্যবস্থা সামাজিক কাঠামোকে সংহত করে বিভিন্ন অংশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করাকে বোঝায়।’
আরো পড়ুন : সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অধ্যায়ের ১টি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর, ৪র্থ পর্ব
গ. উদ্দীপকে কাঞ্চনপুর এলাকার রিপোর্টের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক বিভারিজ রিপোর্টের মিল রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কাঞ্চনপুর এলাকায় যে অবস্থার সৃষ্টি হয়; জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে, এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি গঠন করা হয়, তদ্রূপ আধুনিক ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধজনিত কারণে সৃষ্ট আর্থসামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় স্যার উইলিয়াম হেনরি বিভারিজের নেতৃত্ব সামাজিক বিমা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির আন্তঃবিভাগীয় কমিটি সামাজিক কাঠামো গঠন করা হয়। এ কমিটি ১৯৪২ সালে একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন পেশ করে, যা বিভারিজ রিপোর্ট নামে পরিচিত। এ রিপোর্টে উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো- অভাব, রোগব্যাধি, মলিনতা, অলসতা ও অজ্ঞতা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিভারিজ রিপোর্টে পাঁচটি সুপারিশও পেশ করা হয়। রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে ইংল্যান্ডে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কাজেই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, কাঞ্চনপুর এলাকার রিপোর্টের সঙ্গে বিভারিজ রিপোর্টের মিল রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিত করা ঐতিহাসিক বিভারিজ রিপোর্টে বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থার সূচনা করে। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি যে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা তা ইংল্যান্ডে বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রথম গ্রহণ করা হয়। তাই সমাজকর্মের পেশাদার মর্যাদা অর্জনে বিভারিজ রিপোর্ট যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি মানবকল্যাণে এটি একটি মাইলফলক। বিভারিজ রিপোর্টে উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে যে পাঁচটি কারণকে তুলে ধরা হয়, তা সব দেশে ও বিভিন্ন সময়ে এগুলোর উপস্থিতি দেখা যায়। তাই উন্নয়নের লক্ষ্যে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণে এ রিপোর্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আবার, বিভারিজ রিপোর্টের কল্যাণে ইংল্যান্ডে যেসব সামাজিক নিরাপত্তামূলক আইন প্রণয়ন করা হয়, তা আধুনিক সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় পথ নির্দেশ করে। বিভারিজ রিপোর্টের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার একটি হলো এটি সর্বস্তরের জনগণের কল্যাণ সাধনে গুরুত্বারোপ করে। সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই ছিল এর লক্ষ্য। তাই আধুনিক সমাজকল্যাণ আইনের ভিত্তি হিসেবে এবং অন্যান্য দেশের মডেল হিসেবে বিভারিজ রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে প্রণীত আইনগুলো অনুসৃত হচ্ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ এবং পরিবার থেকে সমাজ সব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিধানে এ রিপোর্টে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কাজেই সত্যিকার অর্থে বলা যায়, ইংল্যান্ডের বিভারিজ রিপোর্টের গুরুত্ব আজও সমাজিকভাবে স্বীকৃত।
লেখক : প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ
শের-ই-বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
কবীর