
একাদশ অধ্যায় : খনিজ সম্পদ : জীবাশ্ম
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-৪
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
C ও H মিলে হাইড্রোকার্বন গঠিত হয়। এটি তিন প্রকার। যথা- অ্যালকেন, অ্যালকিন ও অ্যালকাইন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই হাইড্রোকার্বনগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
ক. ফরমালিন কী?
খ. কীভাবে Butene প্রস্তুত করবে?
গ. উদ্দীপকের হাইড্রোকার্বনগুলো কীভাবে পৃথক করবে?
ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত হাইড্রোকার্বনটির প্রস্তুত প্রণালি বর্ণনা করো।
উত্তর: ক. ফরমালিন হলো ফরমালডিহাইডের (HCHO) ৪০ শতাংশ জলীয় দ্রবণ। এটি একটি বর্ণহীন, তীব্র গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা জীবন্ত কোষকে মেরে ফেলে এবং তাদের পচন রোধ করে। জীববৈজ্ঞানিক নমুনা সংরক্ষণ, জীবাণুনাশক এবং কিছু শিল্পে এর ব্যবহার রয়েছে।
খ. বিউটিন (C4H8) প্রস্তুত করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। নিচে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো-
বিউটানল থেকে পানি নিষ্কাশন
বিউটানলকে (বিউটান-১-ওল বা বিউটান-২-ওল) অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al2O3)-এর মতো নিরুদক পদার্থের উপস্থিতিতে উচ্চ তাপমাত্রায় (প্রায় ৩০০-৪০০°C) উত্তপ্ত করলে পানি নিষ্কাশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিউটিন উৎপন্ন হয়।
যদি বিউটান-১-ওল ব্যবহার করা হয়, তবে প্রধানত বিউট-১-ইন এবং সামান্য পরিমাণে বিউট-২-ইন উৎপন্ন হতে পারে-
CH3CH2CH2CH2OHAl2O3,300−400°CCH3CH2CH=CH2+H2O (বিউটান-১-ওল) (বিউট-১-ইন)
CH3CH2CH2CH2OHAl2O3,300−400°CCH3CH=CHCH3+H2O (বিউটান-১-ওল) (বিউট-২-ইন)
যদি বিউটান-২-ওল ব্যবহার করা হয়, তবে প্রধানত বিউট-২-ইন এবং সামান্য পরিমাণে বিউট-১-ইন উৎপন্ন হতে পারে-
CH3CH2CH(OH)CH3Al2O3,300−400°CCH3CH=CHCH3+H2O (বিউটান-২-ওল) (বিউট-২-ইন)
CH3CH2CH(OH)CH3Al2O3,300−400°CCH3CH2CH=CH2+H2O (বিউটান-২-ওল) (বিউট-২-ইন)
উৎপন্ন বিউটিনের মিশ্রণকে আংশিক পাতনের মাধ্যমে পৃথক করা যায়।
আরো পড়ুন : খনিজ সম্পদ : জীবাশ্ম অধ্যায়ের ১টি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর, ৩য় পর্ব
গ. উদ্দীপকের হাইড্রোকার্বনগুলো (অ্যালকেন, অ্যালকিন ও অ্যালকাইন) তাদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন পদ্ধতিতে পৃথক করা যায়। যদি একটি মিশ্রণে এই তিনটি শ্রেণির হাইড্রোকার্বন উপস্থিত থাকে, তবে নিম্নলিখিত কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে-
রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথকীকরণ: অ্যালকিন ও অ্যালকাইন শনাক্তকরণ ও অপসারণ: প্রথমে ব্রোমিন পানি বা বেয়ার দ্রবণ ব্যবহার করে অ্যালকিন ও অ্যালকাইনকে অ্যালকেন থেকে আলাদা করা যায়। অ্যালকিন ও অ্যালকাইন ব্রোমিন পানিকে বর্ণহীন করে এবং বেয়ার দ্রবণকে বর্ণহীন করে বাদামি বর্ণের ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইডের অধঃক্ষেপ তৈরি করে। অ্যালকেন এই বিক্রিয়া করে না।
অ্যালকাইন শনাক্তকরণ ও অপসারণ: টলেন্স বিকারক ([Ag(NH3)2]OH) বা অ্যামোনিয়াকাল কপার(I) ক্লোরাইড (CuCl in NH3) ব্যবহার করে প্রান্তীয় অ্যালকাইনকে শনাক্ত ও পৃথক করা যায়। প্রান্তীয় অ্যালকাইন এই বিকারকগুলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে সাদা বা লালচে বাদামি বর্ণের ধাতব অ্যাসিটাইলাইডের অধঃক্ষেপ তৈরি করে। অ্যালকিন ও অ্যালকেন এই বিক্রিয়া করে না।
ভৌত পদ্ধতির মাধ্যমে পৃথকীকরণ: আংশিক পাতন: যদি হাইড্রোকার্বনগুলোর স্ফুটনাঙ্কে যথেষ্ট পার্থক্য থাকে, তবে আংশিক পাতনের মাধ্যমে এদের পৃথক করা সম্ভব। সাধারণত কার্বন সংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাইড্রোকার্বনের স্ফুটনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। মিশ্রণটিকে উত্তপ্ত করলে উপাদানগুলো তাদের স্ফুটনাঙ্ক অনুযায়ী বিভিন্ন তাপমাত্রায় বাষ্পীভূত হয় এবং ঘনীভূত করে আলাদা করা যায়। তবে অ্যালকেন, অ্যালকিন ও অ্যালকাইনের সমসংখ্যক কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট আইসোমারের স্ফুটনাঙ্ক খুব কাছাকাছি হওয়ায় এই পদ্ধতি একা যথেষ্ট নাও হতে পারে।
ক্রোম্যাটোগ্রাফি: গ্যাস ক্রোম্যাটোগ্রাফি (GC) হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণকে পৃথক করার একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মিশ্রণটিকে একটি স্থির দশার মধ্যদিয়ে একটি গ্যাসীয় মোবাইল দশার সঙ্গে প্রবাহিত করা হয়। উপাদানগুলোর স্থির দশার প্রতি আকর্ষণ ভিন্ন হওয়ার কারণে তারা বিভিন্ন গতিতে স্তম্ভের মধ্য দিয়ে যায় এবং আলাদা আলাদা সময়ে শনাক্ত হয়।
বাস্তবে, একটি জটিল মিশ্রণ থেকে অ্যালকেন, অ্যালকিন ও অ্যালকাইনকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক করার জন্য একাধিক পদ্ধতির সমন্বয় প্রয়োজন হতে পারে।
ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত হাইড্রোকার্বন বলতে অ্যালকাইনকে বোঝানো হয়েছে। নিচে ইথাইন (C2H2), যা সরলতম অ্যালকাইন, এর পরীক্ষাগারের প্রস্তুতি বর্ণনা করা হলো-
ইথাইন প্রস্তুতি (পরীক্ষাগারে): ক্যালসিয়াম কার্বাইড (CaC2)-এর সঙ্গে ঠাণ্ডা পানির বিক্রিয়ার মাধ্যমে পরীক্ষাগারে ইথাইন গ্যাস প্রস্তুত করা হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: গোলতল ফ্লাস্ক, থিসল ফানেল, নির্গমন নল, গ্যাস সংগ্রহ করার জার, ক্যালসিয়াম কার্বাইড (CaC2) ও পানি।
পদ্ধতি: ১. একটি গোলতল ফ্লাস্কে সামান্য পরিমাণ ক্যালসিয়াম কার্বাইড নেওয়া হয়।
২. থিসল ফানেলের সাহায্যে ধীরে ধীরে ফ্লাস্কে পানি যোগ করা হয়।
৩. ক্যালসিয়াম কার্বাইড পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে ইথাইন গ্যাস উৎপন্ন করে এবং নির্গমন নলের মাধ্যমে গ্যাস সংগ্রহ করার জারে (সাধারণত নিম্ন অপসারণ দিয়ে) সংগ্রহ করা হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়া: CaC2(s)+2H2O(l)→ Ca(OH)2 (aq)+C2H2(g)
ক্যালসিয়াম কার্বাইড + পানি → ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড + ইথাইন
সতর্কতা: ১. এই বিক্রিয়াটি তাপ উৎপাদী, তাই ফ্লাস্ক গরম হয়ে যেতে পারে।
২. উৎপন্ন ইথাইন গ্যাস দাহ্য, তাই আগুনের উৎস থেকে দূরে রাখতে হবে।
শিল্পক্ষেত্রে ইথাইন সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় মিথেনকে উত্তপ্ত করে অথবা প্রাকৃতিক গ্যাসের আংশিক জারনের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। তবে পরীক্ষাগারে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও পানির বিক্রিয়াই সহজ ও প্রচলিত পদ্ধতি।
লেখক : প্রধান শিক্ষক
হাজী রফিজুদ্দিন ভূঁইয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ
কবীর