
অনুচ্ছেদ লিখন
পয়লা বৈশাখ / বাংলা নববর্ষ
সারা বছরের গ্লানি মুছে দিয়ে পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব চুকিয়ে প্রতি বছর ফিরে আসে পয়লা বৈশাখ। নতুন পসরা সাজিয়ে আগমন ঘটে নতুন বছরের। এ দিনটি ‘বাংলা নববর্ষ’ নামে পরিচিত। এ দিনটি বাঙালি জাতির প্রাণে এক আনন্দ ধারা বইয়ে দেয়। নববর্ষের আগমনে দেশের সর্বত্রই বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ১৫৫৬ সালে সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকে পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ পালনের রেওয়াজ শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বৈশাখী মেলার উৎসব আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিলে পয়লা বৈশাখ অর্থাৎ বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়। নববর্ষ উপলক্ষে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। গ্রামে, গঞ্জে ও শহরে অনুষ্ঠিত এ মেলাকে বৈশাখী মেলা বলা হয়। এ মেলা চলে সপ্তাহ থেকে মাসব্যাপী। এ মেলা এখন বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকায় বর্ষবরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা লোকজ চিত্রকলা আঁকেন, নানা সাজ-বৈচিত্র্যে বৈশাখী র্যালিতে অংশ নিয়ে বাংলা সনকে তারা বরণ করে নেন। আনন্দ শোভাযাত্রার এমন দৃশ্য দেখে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা UNESCO বাংলা নববর্ষকে Heritage হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ দিনে ভোর থেকে রবীন্দ্র সংগীতের মনোমুগ্ধকর গানে রমনার বটমূলে সমবেত হয়ে নববর্ষ শুধু করে নেয় ‘ছায়ানট’। ভোরবেলায় রমনা পার্কে পান্তা, ইলিশ, বিভিন্ন ভর্তা, পিঠা বিক্রির আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষ শুধু সংস্কৃতি নয়, এর অর্থনৈতিক দিকও রয়েছে। এ অর্থনৈতিক দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পয়লা বৈশাখ ব্যবসায়ী মহলে হালখাতার দিন। হালখাতা উপলক্ষে ক্রেতা-বিক্রেতাদের লেনদেনে যে বাকি থাকে, তা পরিশোধ করা হয়। সেই সঙ্গে মিষ্টিমুখ করানো হয়। নববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানুষ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তারা এই সর্বজনীন উৎসব পালন করে থাকেন। মনে রাখতে হবে, বাংলা নববর্ষ আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একটি বিশেষ উপাদান। পৃথিবীর এক বিরল বৈচিত্র্যময় উৎসব। এ উৎসব শুধু বাঙালির একার গৌরব।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা)
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা
কবীর