পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নবদ্বীপে মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত শ্রী শ্রী রাধামদনমোহন জীউর মন্দিরে তাঁর নামে স্মৃতিফলক স্থাপন করেছে নজরুল চর্চাকেন্দ্র ছায়ানট (কলকাতা)।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা এই স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ছায়ানটের (কলকাতার) সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।
এ সময় মন্দিরের সেবায়ত গোস্বামী পরিবারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- প্রভুপাদ শ্রী নিত্যগোপাল গোস্বামী, প্রেমগোপাল গোস্বামী।
নজরুল সম্পর্কিত আলোচনায় অংশ নেন নবদ্বীপের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম।
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করেন পীতম ভট্টাচার্য এবং সুকন্যা রায়।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে নবদ্বীপের শ্রী শ্রী রাধামদনমোহন জীউর মন্দিরে নজরুলের স্মৃতি জড়িয়ে থাকার বিষয়টি জানতে পারেন ছায়ানটের (কলকাতার) সভাপতি সোমঋতা মল্লিক। পরে তিনি গত ২৩ এবং ২৪ সেপ্টেম্বর শ্রী শ্রী রাধামদনমোহন জীউর মন্দির দর্শন করেন এবং মন্দিরের সেবায়ত গোস্বামী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন।
এ সময় গোস্বামী পরিবারের পক্ষ থেকে উপহারসস্বরূপ প্রভুপাদ শ্রীল মদনগোপাল গোস্বামীর লেখা ‘শ্রী শ্রী প্রাণগোপাল চরিতামৃত কণা ও কথামৃত কণিকা’ বইটি সোমঋতার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এই বইয়ে গোস্বামী পরিবার এবং প্রভুপাদ শ্রীল শ্রীযুক্ত প্রাণগোপাল গোস্বামী সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়।
প্রভুপাদ শ্রীনিত্যগোপাল গোস্বামীর মতে, নজরুল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নবদ্বীপের শ্রী শ্রী রাধামদনমোহন জীউর মন্দিরে একাধিকবার এসেছিলেন।
নজরুলের জীবন ছিল বর্ণময়। বহুজায়গায় তিনি গেছেন, বহু পরিবারের সঙ্গেই ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। স্বভাবগত দিক থেকে তিনি ছিলেন আড্ডাপ্রিয় মানুষ। যেখানেই যেতেন, তাঁর নিজস্ব গুণেই তিনি হয়ে ওঠতেন আড্ডার মধ্যমণি। ঘন্টার পর ঘন্টা চলতো আড্ডা আর গান।
নবদ্বীপে নজরুলের আগমন সম্পর্কে জানতে হলে তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মদনমোহন মন্দিরের সেবায়ত গোস্বামী পরিবারের স্মৃতিচারণার ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। বংশপরম্পরায় এই তথ্য মৌখিকভাবে প্রচারিত হয়েছে। নজরুল যে ঘরে থাকতেন কিংবা তাঁর ব্যবহৃত চেয়ারটি এখনও পারিবারিকভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। সেই সময় বৈষ্ণবমন্দিরে বিধর্মী নজরুলের একাধিকবার আগমন প্রমাণ করে গোস্বামী পরিবার চিরকালই উদারমনস্ক।
গোস্বামী পরিবারের সঙ্গে নজরুলের সম্পর্ক কিভাবে গড়ে ওঠে সেই সম্পর্কে আলোকপাত করেন বর্তমানে শ্রী শ্রী রাধামদনমোহন জীউর মন্দিরের সেবায়ত প্রভুপাদ শ্রীনিত্যগোপাল গোস্বামী।
তিনি সোমঋতাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমার পিতামহ প্রভুপাদ যদুগোপাল গোস্বামী। তাঁর তিন পুত্র - রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী, যদুকৃষ্ণ গোস্বামী এবং মদনগোপাল গোস্বামী। প্রভুপাদ যদুগোপাল গোস্বামী ছিলেন বিষ্ণুপর ঘরানার প্রসিদ্ধ শিল্পী ভগবান সেতারীর ছাত্র। পারিবারিক সাঙ্গীতিক ঐতিহ্যের হাত ধরেই খুব ছোটবেলা থেকে রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। পরবর্তীকালে বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে তিনি তালিম নেন। ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় আমার জ্যেঠামশাইকে এতোটাই স্নেহ করতেন যে কখনও কখনও নবদ্বীপে আমাদের বাড়িতে এসেই সঙ্গীত শিক্ষা দিতেন। ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের অন্যতম শিষ্য ভুলু সেন এবং রাধাকৃষ্ণ গোস্বামীর মধ্যে অন্তরঙ্গতা ছিল। ভুলু সেনের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামেরও যোগাযোগ ছিল। ভুলু সেনের মাধ্যমেই রাধাকৃষ্ণ গোস্বামীর সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয় এবং নজরুল তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। এই সূত্র ধরেই নবদ্বীপের শ্রী শ্রী রাধামদনমোহন জীউর মন্দিরে নজরুলের আগমন।
নজরুল তাঁর বিখ্যাত গান ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ নিজে হাতে আমার জ্যেঠামশাইকে শেখান। ১৯৩৭-৩৮ সাল থেকে রাধাকৃষ্ণ গোস্বামীর সঙ্গে নজরুলের সখ্যতা গড়ে ওঠে। আমার বাবার থেকে শোনা- নবদ্বীপে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পথপরিক্রমায় নজরুল অংশগ্রহণ করেন। আমার বাবা আমাদের মন্দিরে নজরুলকে দেখেছিলেন। ১৮৯২-৯৩ সালে আমার প্রপিতামহ প্রভুপাদ প্রাণগোপাল গোস্বামী পূর্ববঙ্গ থেকে নবদ্বীপে আসেন এবং বর্তমানে মন্দিরের যে অবয়ব তা তাঁরই হাতে সৃষ্ট। আমার পিতামহের জ্যেঠীমা রাধারানী দেবী, যিনি বড়মা নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি নিজে হাতে পরিবেশন করে নজরুলকে খাওয়াতেন। প্রকৃত গবেষণার অভাবে এই সমস্ত তথ্য এখনও বইয়ে স্থান পায়নি।
শুধু কাজী নজরুল ইসলামই নন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, অচল মিত্রসহ বহু মানুষ আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। আমার প্রপিতামত ঢাকার অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তাঁর অনেক শিষ্যকে অনুপ্রাণিত করেন এই দলে যোগ দেওয়ার জন্য। ব্রিটিশদের নজর এড়াতে এই সমস্ত কাজ খুব গোপনেই হতো, সেই সময় সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।’’
নদিয়ার সঙ্গে নজরুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ১৯২৬ সালের ৩ জানুয়ারি বন্ধু হেমন্ত সরকারের আমন্ত্রণে তিনি সপরিবারে কৃষ্ণনগরের গোলাপট্টিতে আসেন। ওই বছরেই নজরুল থাকতে শুরু করেন চাঁদ সড়ক এলাকায় গ্রেস কটেজে। ছিলেন ১৯২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই বসবাসকাল কবির সৃষ্টিশীল জীবনের অন্যতম গৌরবময় সময়।
১৯৩৭ সালে নজরুল রচিত অন্যতম ভক্তিসঙ্গীত ‘বর্ণচোরা ঠাকুর এলো রসের নদীয়ায়’ রেকর্ড আকারে প্রকাশিত হয়। এই গানের সুরকার ছিলেন সত্যেন চক্রবর্তী, শিল্পী লতিকা মিত্র। এই গানটি ১৯৫০ সালে আবারও রেকর্ড আকারে প্রকাশিত হয়। সুরকার নিতাই ঘটক এবং শিল্পী উত্তরা দেবী।
২০০৮ সালের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে ছায়ানটের (কলকাতা) পথচলা শুরু। কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টির বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে কলকাতার কয়েকজন নজরুলপ্রেমী একত্রিত হয়ে শুরু করেছিলেন ছায়ানট (কলকাতা)।
শুধুমাত্র কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী কিংবা প্রয়াণ দিবস পালন করা নয়, সারা বছর ধরেই তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চর্চা করাই ছায়ানটের উদ্দেশ্য। বছরে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা ছাড়াও প্রতিমাসে বৈঠকী আড্ডা, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করার একমাত্র উদ্দেশ্য কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকে আরও বেশি করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া।
ছায়ানট প্রথমবারের মতো কলকাতায় শুরু করে নজরুল মেলা। নজরুল স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নজরুলপ্রেমীদের অবগত করাও ছায়ানটের কার্যক্রমের অংশ। আলিপুর জেল মিউজিয়ামে ছায়ানটের (কলকাতা) উদ্যোগে নজরুল কক্ষ নির্মাণ, কলকাতার কফি হাউসে নজরুল স্মরণ, নৈহাটী স্টেশনে নজরুল স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, নজরুল স্মৃতিবিজড়িত গ্রেস কটেজে বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন, দার্জিলিঙে নজরুল স্মৃতিকে ফিরে দেখা, রাঁচিতে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব সাইক্রিয়াটিতে (সিআইপি) নজরুল স্মরণে অনুষ্ঠান - এরই ধারাবাহিকতায় নবদ্বীপে নজরুল স্মৃতিকে সবার সামনে তুলে ধরার প্রয়াস।
কাজী নজরুল ইসলাম তার সংকল্প কবিতায় লিখেছিলেন - ‘বিশ্ব-জগৎ দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে’। কবির এই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে অনেকাংশেই।
দেশপ্রেমিক প্রভুপাদ প্রাণগোপাল গোস্বামী সম্পর্কে প্রভুপাদ মদনগোপাল গোস্বামী লিখেছেন, ‘প্রভুপাদের দেশপ্রেমের নিদর্শনস্বরূপ এখন আর একটি চমকপ্রদ ঘটনার উল্লেখ করছি - যেটি শ্রবণে আমরা উপলব্ধি করতে পারব, ন্যায় ও সত্যের জন্য প্রভুপাদ কতখানি নির্ভীক হতে পারতেন। প্রভুপাদের শ্রীধাম নবদ্বীপে বর্ত্তমান ব্রজানন্দ গোস্বামী রোডস্থিত (প্রাচীন নাম বৈঞ্চবপাড়া বা অভ্যাগত) শ্রীরাধামদনমোহন মন্দিরটি ছিল আত্মগোপনকারী বিপ্লবীদের আত্মগোপনের একটি নির্ভরযোগ্য ঘাঁটি। কারন প্রভুপাদ বিপ্লবীদের আশ্রয় দিতেন এবং তাঁর গোপনীয়তা রক্ষা করতেন এমন কঠোরভাবে যে বাড়ীর একজনও এমন কি নিকটতম আত্মীয়রাও বিপ্লবীদের প্রকৃত পরিচয় জানতে পারত না।... আমি এখানে এমন একজন বিপ্লবীর নাম করব যাঁকে এককথায় সকলেই চিনতে পারবে। এই বিপ্লবীটির সঙ্গে প্রভুপাদের মিলন হয় একাশী নম্বর ল্যানস ডাউন রোডে সলিসিটার অচল মিত্র মহাশয়ের বাড়ীতে। ইনি আর কেউ নন, ইনিই তদানিন্তন কালের স্বনামধন্য বিপ্লবী শ্রী রাসবিহারী বসু মহাশয়। দেশবন্ধুর আগ্রহেই শ্রী বোস মহাশয়ের সঙ্গে প্রভুপাদের মিলন হয়। ছদ্মবেশে শ্রী বসু মহাশয় উক্ত মিত্র মহাশয়ের বাড়ীতে দেখা করেন এবং তাঁর আত্মগোপনের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রভুপাদকে জানান। শ্রীল প্রভুপাদ শ্রী বসু মহাশয়ের কথা শোনা মাত্র তাঁকে শ্রীধাম নবদ্বীপস্থ তাঁর শ্রীমদনমোহন জীউর মন্দিরে আশ্রয় গ্রহণের ব্যাপার অনুমোদন করেন।’
এভাবেই প্রভুপাদ প্রাণগোপাল গোস্বামী অনেক বিপ্লবীকেই আশ্রয় দিয়েছিলেন।
প্রভুপাদ মদনগোপাল গোস্বামী আরও লিখেছেন, ‘প্রভুপাদ প্রাণগোপাল গোস্বামী ভারতের এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্ত পর্যন্ত ভাগবতী সভার মাধ্যমে ভাগবত ধর্ম প্রচার করে বেড়াতেন, তাই হাজার হাজার লোকের সম্মুখে তাঁর যে কোন বক্তব্য রাখার সুযোগ পেতেন অফুরন্ত। প্রভুপাদ এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছিলেন দেশ সেবার কাজে। তিনি তাঁর ভাগবত পাঠের অন্তে তাঁর পাঠে মুগ্ধ হাজার হাজার শ্রোতা যাঁরা প্রভুপাদের মুখনিঃসৃত তত্ত্বকথা শ্রবণে শ্রীকৃষ্ণই পরতত্ত্ব অনুভূতিতে ভরপুর হয়ে যেতেন, সেই তাঁদের মাঝখানে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করতেন - দেখুন! মনপ্রাণ খুলে কৃষ্ণভজন করতে হলে সর্বপ্রথম দেশটাকে স্বাধীন করা প্রয়োজন। নইলে হয়তো বা কোনদিন কৃষ্ণ ফেলে খৃষ্ট ভজতে হতে পারে। দেখুন! সামর্থ্য এবং যোগ্যতার তারতম্যে হয়ত বা আমাদের সকলের পক্ষে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না কিন্তু একটু ইচ্ছা করলেই যাঁরা প্রত্যক্ষ সংগ্রামে নেমেছেন, আমরা অনায়াসে আমাদের সামর্থ্য মত তাঁদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা সকলে তা তো করছিই না বরং আমাদের অনেকের আচরণই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিপাকে ফেলছে। আমরা এত ভীরু এবং স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি যে, একান্ত প্রয়োজনে একজন আত্মাগোপনকারী দেশসেবীকে একটি রাতের জন্যও গোপনে আশ্রয় দিতে পর্যন্ত কার্পণ্য করি। যারা দেশ আর দশের কথা না ভাবে তারা কখনোই শ্রীকৃষ্ণের পরিপূর্ণ কৃপায় কৃতার্থ হতে পারে না। উপস্থিত শ্রোতৃমণ্ডলীর কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা আমার পূর্বের কথাগুলোর মত আমার এই শেষের কথা কটিও মনে রাখবেন।’
আমাদের প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আমরা বহু বিশেষণে ভূষিত করি। কখনও তিনি ‘বিদ্রোহী’ কবি, কখনও আবার প্রেমিক কবি, কখনও মানবতার কবি আবার কখনও অসাম্প্রদায়িক কবি, সাম্যবাদী কবি। কিন্তু নজরুলের গান ও কবিতা তৎকালীন সময়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কিভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল তা নিয়ে আলোচনা কমই হয়।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন - ‘আমরা যখন যুদ্ধে যাবো, তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাবো, তখনও তাঁর গান গাইবো।’
নজরুল তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ধূমকেতুতে ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করেন। ধূমকেতুতে প্রকাশিত হয় নজরুলের লেখা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটি। এই কবিতার জন্যই তাঁকে প্রায় এক বছর কারাগারে থাকতে হয়। এ ছাড়াও নজরুলের বেশ কিছু বই ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে। কিন্তু এতকিছুর পরও নজরুল আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ছিলেন। তাই স্বদেশপ্রেমী নজরুলের সঙ্গে মদনমোহন মন্দিরের সেবায়ত গোস্বামী পরিবারের যে খুব সহজেই একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, তা নজরুলপ্রেমীদের বুঝতে অসুবিধে হয় না।
প্রভুপাদ শ্রীনিত্যগোপাল গোস্বামীর মতে, নজরুল শ্রী শ্রী রাধামদনমোহন জীউর মন্দিরে একাধিকবার এসেছিলেন। তাই সহজেই বোঝা যায়, নজরুল নিশ্চয়ই এই পরিবারে তার সমমনস্ক মানুষ খুঁজে পেয়েছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সৃষ্টি এবং তাঁর স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলি সম্পর্কে এখনও গবেষণার অবকাশ রয়েছে। সবকিছু এখনও লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। নজরুল গবেষকরা প্রতিনিয়ত খোঁজার চেষ্টা করছেন। বিশ্বব্যাপী নজরুলপ্রেমীদের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে।
অমিয়/