
কানাডার রাজধানী অটোয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটির উদ্যোগে আগরতলায় বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অটোয়ার স্থানীয় সময় বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে এই সমাবেশে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা অংশ নেন।
অত্যন্ত দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে বাংলাদেশি নাগরিকরা এ বিক্ষোভের আয়োজন করেন।
বাংলাদেশি কমিউনিটি অব অটোয়ার আয়োজনে এ বিক্ষোভে বাংলাদেশে ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি’, এবং ‘হাইকমিশনে হামলা কেন, দিল্লি তুই জবাব দে’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রতিবাদ জানানো হয়।
প্রতিবাদ সভায় বৃটেনে নিযুক্ত সাবেক বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ভারত ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী অতিথি রাষ্ট্রকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার কথা থাকলেও অত্যন্ত গর্হিতভাবে সন্ত্রাসী আরএসএসের পাণ্ডাদের উসকে দিয়ে পুলিশের উপস্থিতেতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলা এবং ভাঙচুর চালিয়েছে এবং আমাদের জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে। তাদের উচিত নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং অবিলম্বে বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসিনার আমলের বাংলাদেশ আর ’২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ এক নয়। বাংলাদেশকে সমীহ করে না চললে, সম্মান না দিলে তারাও আর একচেটিয়া সম্মান পাবে না।’
বাংলাদেশি কমিউনিটি অব অটোয়ার সদস্য মিসবাহুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ আর ভারতীয় আগ্রাসন সহ্য করবে না। হিন্দুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের কল্পিত কাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সব ধর্ম-বর্ণ এবং মতের মানুষ এক হয়েছে, এই মিথ্যচারের মাধ্যমে এ ঐক্যে ফাটল ধরানো যাবে না।’
কমিউনিটির পক্ষ থেকে বক্তব্যে আব্দুল্লাহ মাসউদ বলেন, ‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জোরালো ভূমিকা এবং কমিউনিটিকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন ছিল, কিন্তু দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি।’
তিনি হাইকমিশনারসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে - ’২৪ এর বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকা পালন না করলে বাংলাদেশি কমিউনিটি বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধেও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’
তিনি ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পৃথিবীর সবদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশি কমিউনিটি অব অটোয়ার আরেক সদস্য মাসুদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। ভারতের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি একটি সরাসরি আঘাত।
তারা উল্লেখ করেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত, কিন্তু তা কখনোই আধিপত্যবাদের রূপ নিতে পারে না। ভারত সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে এবং দেশের প্রাকৃতিকসম্পদ ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে নিজেদের প্রভাব বলয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
তারা বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ষড়যন্ত্রের অংশ।
প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা জানান, এটি ছিল একটি শুরু। ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হলে তারা এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজন করবে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় প্রবাস থেকে ভূমিকা রাখবে।
কমিউনিটির নেতাদের মধ্যে মনোয়ার হোসেন আকাশ, ইফতেখার চৌধুরী রকি, আনোয়ার হোসাইন, মুসতাইম বিল্লাহ রাতিন, নজরুল রহমান, ইউসুফ হারুন, শামা-সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অমিয়/