বিশ্বে ফলিত বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ বিকাশমান বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা রাসায়নিক প্রকৌশলবিদ্যা। যেখানে ভৌত বিজ্ঞানের সঙ্গে গণিতের সামঞ্জস্য রেখে কোনো কাঁচামালকে বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে উৎকৃষ্ট পদার্থে পরিণত করা হয়। এ পৃথিবীতে শিল্পকারখানা যতদিন থাকবে, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাহিদাও ততদিন থাকবে।
শিল্পক্ষেত্রে দেশ যত অগ্রসর হবে, এর কাজের ক্ষেত্র ততই বিস্তৃত হবে। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের হাতেই নিয়ন্ত্রিত হয় দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
পড়াশোনা: ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি, প্লান্টগুলোর যাবতীয় ডিজাইন, নতুন পণ্য উৎপাদন এবং তার কার্যক্রমের পদ্ধতি নিয়ে পড়াশোনা করে থাকে। দেশের বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও পলিটেকনিক কলেজে কেমিকৌশল বিষয়ে পাঠদান করানো হয়। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের ওপর অনার্স, মাস্টার্স ডিগ্রি চালু রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েট, জেএসটিইউ, এসইউএসটি, এনএসটিইউ, ডিইউ, আরইউ অন্যতম। বহির্বিশ্বে এই বিষয়টি প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং নামে পরিচিত।
গবেষণার সুযোগ: আধুনিক বিজ্ঞানের বিশাল এক সেক্টর হচ্ছে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এখানে পড়াশোনার সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে গবেষণার সুযোগও। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই ইউএসএর বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে যাচ্ছে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে। যেগুলোর মধ্যে নর্থ ক্যারোলাইনা, সাউথ ক্যারোলাইনা, ভার্জিনিয়া, আটলান্টা, সাউথ ভ্যাকোটা, ফ্লোরিডা, কানসাস, শিকাগো, কানেটিকাট, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস উল্লেখযোগ্য। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই ক্ষেত্রটি প্রতিমুহূর্তেই বিকশিত হচ্ছে। যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন গবেষণা আর কাজের ক্ষেত্রে।
কাজের ধরন: আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি এমন অনেক পণ্যের ওপর রাসায়নিক প্রকৌশলীদের বিশাল প্রভাব রয়েছে। একজন রসায়নবিদ যে প্রক্রিয়া ল্যাবের বিকারে ঘটায়, একজন ইঞ্জিনিয়ার সেই কাজগুলোই শিল্পক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে কেমিক্যাল প্লান্টে প্রয়োগ করে থাকেন। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা সাধারণত রাসায়নিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার নকশা তত্ত্বাবধানের কাজ করে থাকেন। খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি কারখানার রাসায়নিক উৎপাদন ব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যা সমাধান তাদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। উৎপাদনে যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখা দেয়, সেগুলো রাসায়নিক প্রকৌশলী দ্বারা সমাধান করা হয়। সারা বিশ্বের রাসায়নিক প্রকৌশলীরা নিরাপদে প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে তাদের গণিত এবং বিজ্ঞান বিশেষ করে রসায়ন জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে।
ক্যারিয়ার: কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ারের প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো। দেশে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ খুবই সীমিত থাকায় গ্র্যাজুয়েট খুব বেশি থাকে না। ফলে চাকরির বাজারে এর একটা সুফল পেয়ে থাকে ফ্রেশাররা। একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এন্ট্রি লেভেলে ২০ হাজার থেকে শুরু করে পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ, কাজের অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠানভেদে মাসে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে থাকে। এই সেক্টরে রয়েছে সমৃদ্ধ এক ভবিষ্যতের হাতছানি। একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের মূল সাফল্য নির্ভর করে তিনি যে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন ওই শিল্পে টেকনিক্যাল স্কিল ও জ্ঞানের ওপর। সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও বিভিন্ন শিল্পকারখানায় অভিজ্ঞতা ও কারিগরি দক্ষতা অর্জন করতে পারলে ম্যানেজার পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ থাকে।
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাহিদা: বর্তমান আধুনিক শিল্পে অতিমাত্রায় বাড়ছে কেমিক্যালের ব্যবহার। মূলত সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালিত হয় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা। একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সব ধরনের কারখানাতেই কাজ করে থাকেন। দেশে চাহিদা অনুযায়ী কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা কম থাকায় দিন দিন বেড়েই চলছে এর কদর। মূলত সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানেই রয়েছে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাহিদা। খাবার চিপস থেকে শুরু করে কম্পিউটারের মাইক্রো চিপও তৈরি হয় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের হাত ধরে।
কাজের সুযোগ: কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা সব ধরনের কারখানাতেই কাজের সুযোগ পান। অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে অনেক বড় বড় দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন। সরকারি চাকরির মধ্যে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান যেমন- গ্যাস প্রোডাকশন, ট্রিটমেন্ট, ট্রান্সমিশন, ডিস্ট্রিবিউশনে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের অ্যামোনিয়া ইউরিয়া প্লান্ট, পেপার ইন্ডাস্ট্রি, ফসফেট এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অধীনস্থ একমাত্র রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল শোধনাগার, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে কেমিকৌশলীরা কাজ করে থাকেন।
এ ছাড়া তিতাস বা অন্যান্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বিসিআইসি, সারকারখানা, সুগারমিল, পেপারমিল, ওষুধশিল্প, পেইন্টস কারখানা, গ্লাস ও সিরামিক শিল্প, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি, পেট্রোলিয়াম, ট্যানারি শিল্পে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ বিভাগের বড় একটা অংশ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি, কেমিস্ট্রি টেক্সটাইল অথবা লেদার ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে থাকেন।
তারেক