কর্মক্ষেত্রে আমরা অনেকেই এমন অনেক কাজ করি, যেগুলো পেশাদার আচরণ নয়। অনেক ভালো কর্মীও এসব অপেশাদার আচরণ করে থাকেন।
সেগুলো কী এবং কীভাবে এসব কাজ এড়িয়ে চলবেন, তা আমরা জানাব এই লেখায়।
গুরুত্বপূর্ণ কথা মেসেজে বলা
মিটিংয়ের সময় পরিবর্তন সম্পর্কে জানাতে টেক্সট মেসেজ ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য অবশ্যই ই-মেইল বা সরাসরি কথা বলা উচিত। টেক্সটে অনেক সময় আপনি যা বলতে চান, তা পুরোপুরি বোঝানো সম্ভব হয় না। তাই অন্যজন ভুল বার্তা পেতে পারে। সরাসরি আলোচনা করলে বার্তা আরও ভালোভাবে বোঝা যায়, যা সঠিক যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের উপযুক্ত ডকুমেন্টেশনের জন্য ই-মেইলও ভালো মাধ্যম।
সব কাজের ক্রেডিট নেওয়া
অফিসের বেশির ভাগ কাজই দলগতভাবে করতে হয়। তাই কোনো কাজে সফলতা এলে সে কাজে সংশ্লিষ্ট সবারই প্রশংসা করা উচিত বা বসের কাছে সবার ক্রেডিটই দেওয়া উচিত। টিম লিডার হিসেবে শুধু নিজে ক্রেডিট নেবেন না। এমনটা করলে ভবিষ্যতে কেউ আর আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাইবে না।
অজুহাত দেওয়া
কেউ শতভাগ নিখুঁত নয়। কাজ করতে গেলে ভুল হবেই। তাই আপনি যখন কিছু ভুল করেন, তখন তা স্বীকার করুন এবং সামনে এগিয়ে যান। সরাসরি ভুল স্বীকার করা এবং সৎ থাকাটাই সর্বোত্তম পন্থা, যদিও এটা কিছুটা কঠিন মনে হতে পারে। আপনি হয়তো ভাবছেন অজুহাত দিয়ে নেতিবাচক ফলাফল ও অপর পক্ষের অসন্তুষ্টি এড়াতে পারবেন, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উল্টোটাই হয়। অযথা অজুহাত দেওয়াটা অপেশাদার ও অদায়িত্বশীল আচরণের বহিঃপ্রকাশ।
অন্যের নামে কুৎসা রটানো
কারও বিরুদ্ধে যদি আপনার কোনো অভিযোগ বা ক্ষোভ থাকে, তা হলে তার পেছনে না বলে সরাসরি তাকে গিয়েই বলুন। অফিসে কারও বিরুদ্ধে তার অগোচরে কটুকথা বলা খুবই অপেশাদার ও অসৎ একটি কাজ। এতে করে বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। আপনার যতই মনে হোক না কেন- যাকে বলছেন তার কাছ থেকে কথাটি অন্য কারও কাছে ছড়াবে না, এটা কখনোই শতভাগ নিরাপদ নয়।
ধরুন, আপনি আপনার সহকর্মীকে বন্ধু ভেবে কারও বিরুদ্ধে একটা কথা বললেন। তিনি হয়তো কাউকে কথা প্রসঙ্গে কথাটি বলে দেবেন এবং তিনি আবার অন্য কাউকে বলবেন। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে আপনি খুব বিব্রতকর একটা পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
পোশাকরীতি অনুসরণ না করা
অনেক অফিসেরই নির্দিষ্ট পোশাকরীতি আছে। সেটি মেনে চলা উচিত। আবার অনেক অফিসে নির্দিষ্ট কোনো পোশাকরীতি নেই। সেক্ষেত্রে এমন কোনো পোশাক পরা উচিত নয়, যা দৃষ্টিকটু। চটকদার পোশাক পরিহার করা উচিত।
দেরিতে উত্তর দেওয়া
ই-মেইল ও ভয়েস মেসেজের উত্তর দেরিতে দেওয়াটা অপেশাদার ও বিরক্তিকর একটি কাজ। আপনার উত্তরের ওপর অন্য কারও কাজ নির্ভর করতে পারে। তাই অফিসের কোনো ই-মেইল বা মেসেজের জবাব যত দ্রুত সম্ভব দেওয়া উচিত। অনেকে অফিসের ই-মেইলের উত্তর দিতে কয়েক দিন দেরি করেন কিংবা পুরোপুরি ভুলেই যান এবং অন্য কাউকে আবার মনে করিয়ে দিতে হয়। এই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত।
দ্রুত জবাব দিলে সহকর্মীরা কোনো কাজের জন্য আপনার ওপর ভরসা করতে পারেন এবং কাজটি করার মতো সময় আপনার হাতে আছে কি না, তা সহজে বুঝতে পারেন। ই-মেইলের জবাব দ্রুত দিলে আপনার ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমে যায়।
ডেস্ক অগোছালো করে রাখা
আপনার কাজের ডেস্কটি সব সময় পরিপাটি থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তবে টেবিলের সর্বত্র সব সময় কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখাটা ভালো দেখায় না। এতে আপনার সম্পর্কে সহকর্মীরা ভিন্ন বার্তা পাবে। টেবিল যতটা সম্ভব নিজে গুছিয়ে রাখুন, প্রয়োজনে নিজের পছন্দমতো কোনো সৌন্দর্য উপকরণ ব্যবহার করুন। এতে মনে হবে আপনি আপনার কাজকে গুরুত্ব দেন। আপনার প্রায়ই অফিসে দীর্ঘসময় কাজ করতে হতে পারে। তাই নিজের ডেস্কটি এমনভাবে রাখুন, যাতে আপনি সেখানে বসাটা উপভোগ করতে পারেন।
একটু পরপর ফোন চেক করা
কোনো মিটিংয়ে থাকা অবস্থায় ফোন বারবার চেক করা উচিত নয়। কারণ এতে উপস্থিত অন্যরা বিরক্ত হন। আপনার মনে হতে পারে আপনি একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারেন, কিন্তু আসলে এতে মনোযোগের অনেক ব্যাঘাত ঘটে। সহকর্মীদের সামনে এ কাজ করাটা তাদের প্রতি রূঢ় আচরণের শামিল, একই সঙ্গে অপেশাদারও। একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন, যখন আপনি সবগুলো নোটিফিকেশন একসঙ্গে চেক করবেন।
দেরিতে অফিসে আসা
ট্রাফিক জ্যাম বা পারিবারিক ব্যস্ততায় মাঝে মাঝে অফিসে দেরিতে আসতেই পারেন। অধিকাংশ মানুষই এসব সমস্যা বুঝতে পারবে। কিন্তু এটা যদি প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে, তা হলে সেটা মোটেও পেশাদার আচরণ হতে পারে না। নিয়মিত দেরিতে এলে আপনার কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও কাজে সমস্যা হতে পারে। ধারাবাহিকভাবে অফিসে দেরি করে আসাটা প্রমাণ করে, অফিসের সময়ের চেয়ে আপনার নিজের সময়টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কখনোই অসুস্থতাজনিত ছুটি না নেওয়া
এমন অনেক অফিস আছে, যেখানে কর্মীদের তাদের শারীরিক অবস্থা যেমনই থাকুক না কেন, প্রতিদিন অফিসে আসতে উৎসাহিত করা হয় এবং এমন একটা মনোভাব পোষণ করা হয় যে কেউ কোনো কারণে অফিসে আসতে না পারলে তিনি মনে হয় অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়লেন। ইদানীং অবশ্য এমন অফিস সংস্কৃতির অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে, বিশেষ করে করোনা মহামারির পর।
এখন অসুস্থ অবস্থায় অফিসে আসাটা বরং অনেক অফিসেই নিরুৎসাহিত করা হয়। কারণ এতে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক বসই এখন কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধা আগের তুলনায় আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে বিবেচনা করছেন। তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
তারেক