
আপনি অফিসের বস। আপনাকে হতে হবে সবার চেয়ে আলাদা। কিন্তু আপনি দৈনন্দিন কাজে অনেক সময় ব্যয় করে ফেলেন। সাধারণত কোম্পানির প্রয়োজন হয় একজন কৌশলী নেতার। তাই নিজেকে গড়ে তুলতে হবে সেভাবেই।
শুরুতে হয়তো শুধু আপনি আর আপনার পার্টনার ছিলেন। আপনি নিজেই সব কাজ করতেন। সবকিছু ঠিকঠাক করা, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দেখা করা, অফিস গোছানো ও ফোন কল করা। এখন এসব কাজ করার জন্য আপনি অন্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছেন, তাই আপনার সময় হয়েছে একজন কৌশলী নেতা হওয়ার। যদি আপনি কৌশলী হওয়ার ব্যাপারে ইতস্তত বোধ করে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন এমন মনোভাবের মানুষ আপনি একা নন। সব নেতাই চান তাদের সামনে যা আছে তা নিয়ে কাজ করতে কারণ সেটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ বলে মনে হয়। কিন্তু এমনটা করলে আপনার কোম্পানি যেকোনো সময় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
প্রত্যেক কোম্পানিতেই শোনা যায় যে কৌশলী নেতাদের দরকার। কাজটা যেহেতু কঠিন, তাই সবাই এটি বুঝে উঠতে পারেন না। কৌশলী নেতারা কী কী করে সেটা না জানলে আপনার নিজের একজন কৌশলী নেতা হওয়া কঠিন হতে পারে। যেসব কৌশলী নেতা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে তারা এই ছয়টি কাজ ভালোভাবে করে থাকে-
পূর্ব অনুমান
ব্যবসার ভবিষ্যৎ কী সেটা জানতে অনেক কোম্পানিই উদগ্রীব হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে নেতাদের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হয়। আপনার প্রতিযোগীরা ইশারা-ইঙ্গিত বুঝে নিয়ে ঠিকমতো কাজ করলে আপনাকে পিছিয়ে পড়তে হবে। তাই আপনাকে পূর্বানুমান করতে হলে-
-আপনার ইন্ডাস্ট্রির জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তনের তথ্য খুঁজতে হবে।
-আপনার ব্যবসার বর্তমান পরিধির বাইরে যেতে হবে।
-পরিস্থিতি বুঝে নিতে বেশি বেশি নেটওয়ার্ক গড়তে হবে।
সমালোচক হিসেবে চিন্তা করা
যদি অন্ধভাবে ম্যানেজমেন্টের মতামতকে গ্রহণ করে নেন, তাহলে আপনার কোম্পানি প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়তে পারে। তাই আপনাকে যা করতে হবে, তা হলো-
-সমস্যাকে অন্যভাবে বিশ্লেষণ করে সমস্যার মূল বের করতে হবে।
-নিজেরসহ প্রচলিত বিশ্বাস ও মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ করুন।
-প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় হঠকারিতা, ম্যানিপুলেশন ও পক্ষপাতিত্বের খোলস উন্মোচন করে দিন।
ব্যাখ্যা করা
যেকোনো কিছুর অস্পষ্টতা অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করে। এমন হলে কর্তৃপক্ষ সাধারণত একটি দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করে। অনেক সময় এ সমাধান হয়তো সঠিক নাও হতে পারে। একজন ভালো কৌশলী নেতা নিজের মতো তৈরি করার আগে অনেক সূত্র থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই করে দেখেন। কোনো কিছু ব্যাখ্যা করতে গেলে আপনাকে যা করতে হবে, তা হলো-
-একই তথ্যের একের বেশি সূত্রের মাঝে প্যাটার্ন খুঁজে দেখতে হবে।
-অন্যদেরও একই কাজ করতে প্রেরণা দিতে হবে।
-বিদ্যমান ধারণার ব্যাপারে প্রশ্ন করুন এবং একই সময়ে একের অধিক ধারণা পরীক্ষা করে দেখুন।
সিদ্ধান্ত নেওয়া
বিশ্লেষণ করতে করতে অনেক নেতাই হাঁপিয়ে ওঠেন। আপনাকে এমন প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে যেন সেগুলো বাস্তবায়ন করলে আপনি একটি ভালো অবস্থানে আসতে পারেন। আপনাকে যা করতে হবে, তা হলো-
-সিদ্ধান্তটি এমনভাবে নিতে হবে যেন তা পুরো বিষয়ের জন্য প্রযোজ্য হয়।
-গতি, কাঠিন্য, মান ও দ্রুততার মাঝে ভারসাম্য রাখুন। পরিপূর্ণতা অর্জন করতে যাবেন না, কারণ তা সম্ভব নয়।
-অসম্পূর্ণ তথ্য ও বিস্তৃত মতামতের মাঝেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকুন।
বিন্যাস করা
সব বিষয়ে সবাই একমত হবেন- এমনটা সব সময় হয় না। একজন কৌশলী নেতা আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করেন, বিশ্বস্ততা গড়ে তোলেন এবং ভিন্নমত সামনে আসলে মূল স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করেন। এক্ষেত্রে যা করণীয়, তা হলো-
-লুকায়িত বিষয়সহ অন্যদের এজেন্ডা বোঝানো।
-কঠিন বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসতে হবে। তা যতই অস্বস্তিকর হোক না কেন।
-ঝুঁকি মূল্যায়ন করুন এবং দরকারি সাপোর্ট গড়ে তুলুন।
শেখা
আপনার কোম্পানি যত বড় হবে তত সঠিক ফিডব্যাক আসা ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকবে। ফিডব্যাক চালু রাখার জন্য যা যা করার তা করতে হবে। কারণ সাফল্য এবং ব্যর্থতা- দুটি জিনিস থেকেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শেখার অনেক কিছু আছে। আপনার যা করণীয়, তা হলো-
-সঠিক ফিডব্যাককে উৎসাহিত করে শেখার যা যা আছে তা আমলে নিতে হবে।
-ট্র্যাকের বাইরে চলে গেলে দ্রুত ঠিক পথে চলে আসতে হবে।
-যেসব সাফল্য ও ব্যর্থতা থেকে শেখার কিছু আছে তা আমলে নিতে হবে।
উপরোক্ত কাজগুলো অবশ্যই কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। তবে কেউই কিন্তু সব দক্ষতা একসঙ্গে নিয়ে জন্মায় না। তাই যেসব ক্ষেত্রে দক্ষতা নেই সেসব ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে নিজেকে কৌশলী নেতা হিসেবে ভাবা হবে নিতান্তই বোকামি।
তারেক