
একটি অফিসের সব কর্মচারী ভালো হবেন এমন কোনো কথা নেই। যদি সব কর্মচারী ভালো হতো, তাহলে ম্যানেজার আর সিইওদের জন্য কাজ করা আরও সহজ হয়ে যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, কোনো না কোনো সময় আমাদের প্রতিষ্ঠানে অসাধু কর্মচারীদের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময় যথাসম্ভব সন্দেহভাজনদের বাদ দেওয়া হলেও ইন্টারভিউয়ে একজন মানুষকে আর কতটুকুই বা ভালোভাবে বোঝা যায়? তা ছাড়া খারাপ আচরণ প্রকাশ পেতে কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে।
আপনি চাইলে অসাধু কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের খারাপ আচরণ রোধ করতে পারেন কিংবা তাদের বরখাস্তও করতে পারেন। আপনার প্রতিষ্ঠানের সুনামহানি করতে পারে এমন তিন ধরনের কর্মচারীদের কথা এবং তাদের খারাপ আচরণ রোধে কী করণীয় তা তুলে ধরা হলো-
পরচর্চা করা কর্মচারী
আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে যন্ত্রণা সৃষ্টিকারী কর্মচারী হলো এরাই। ভালো হোক বা খারাপ যেকোনো তথ্য গুজব আকারে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম এসব কর্মচারী। ‘আমি শুনেছি যে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে’, ‘আপনি কি জানেন যে এই ব্যক্তি অমুকের সঙ্গে দেখা করেছে? মনে হয় তারা চলে যাচ্ছে’, ‘কোম্পানি পার্টিতে এই ব্যক্তি অমুকের সঙ্গে সময় কাটিয়েছে এবং আমি শুনেছি তারা বেশ অন্তরঙ্গ ছিল’- এমন কথা এদের মুখ থেকেই শোনা যায়।
সমাধান: আপনার পরিষ্কার মনের কারণে আপনি ভাবতে পারেন যে এ ধরনের কোনো কর্মচারী আপনার প্রতিষ্ঠানে নেই। কিন্তু ভালোমতো খোঁজ করলে দেখতে পাবেন যে, এ ধরনের কর্মচারী আপনার প্রতিষ্ঠানেও আছে। তাদের নিয়ে কী করবেন? প্রথমত, এরা কী ধরনের গুজব ছড়াচ্ছেন তা ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন। যদি আপনি আপনার কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে থাকেন তাহলে কেউ না কেউ আপনার কাছে এসে জানতে চাইবে যে তারা যা শুনেছে তা সত্য কি না। এরপর আপনি গুজবের ব্যাপারে অবগত আছেন তা আপনার পুরো দলকে জানাতে পারেন এবং তাতে একেবারে ইতি টেনে ফেলতে পারেন।
যদি গুজবগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে এ ধরনের কর্মচারীদের সঙ্গে বসুন এবং বলুন যে আপনি বেশ কিছু গুজব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, এগুলো যদি অন্য কেউ বলে থাকেন তাহলে তা যেন আপনাকে অবহিত করা হয়। তাকে বলুন যে আপনি চান সে নিজেই এই গুজব ছড়ানো বন্ধ করা নিশ্চিত করুক। এতে সে বুঝবে যে আপনি অন্য কারও দিকে তর্জনী নির্দেশ না করে একমাত্র তাকেই কাজটি ন্যস্ত করেছেন।
লুকিয়ে থাকা কর্মচারী
এ ধরনের কর্মচারীরা একটু চালাক হন। এরা ইচ্ছে করেই নিম্নমানের কাজ করে থাকেন এবং প্রতিবারই কাজের মান একটু বেশিই ভালো করে আপনাকে দেখিয়ে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এরা তাদের সহকর্মীদের থেকে অনেকাংশে পিছিয়ে থাকলেও, আপনি তাদের কাজ দেখে খুশি হন। ফলে কিন্তু আপনি তাদের নিচু মানের কাজকেই বাহবা দিচ্ছেন।
এ ধরনের কর্মচারীদের নিয়ে সমস্যা হলো এরা নিম্নমানের কাজ করেন এবং তাদের সহকর্মীরা যখন দেখেন যে, আপনি তাদের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট, তারা ভেবে নেন এমনটা করাই বোধহয় স্বাভাবিক। তারা বলতে পারেন যে, এরা তো সামান্য কাজেও প্রশংসা পান।
সমাধান: তাদের ব্যাপারে আপনার করণীয় কী? এদের জন্য স্মার্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিন এবং তাদের যে স্থানে থাকার কথা সে স্থানে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিন। স্মার্ট লক্ষ্য বলতে কী বোঝায়? যেসব লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনীয়, প্রাসঙ্গিক এবং সময় আবদ্ধ। ফলে তারা বুঝতে পারবে যে সামনে দিকে এগিয়ে যেতে হলে তাদের কী করা উচিত।
ঘ্যানঘ্যান করা কর্মচারী
কিছু কর্মচারী আছেন যারা প্রতিষ্ঠানের খুঁত বের করার অপেক্ষায় থাকেন এবং এ ব্যাপারে যাকে পায় তার কাছেই অভিযোগ তুলে ধরেন। হয়তো অন্য সহকর্মীরা তাদের এই আচরণ সহ্য করে নেবে কিন্তু একটা সময় তা বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। ছোটখাটো বিষয় নিয়েও তারা কথা বলতে ছাড়বেন না। তারা আপনার ভেতরের দোষ বের করে আনবেন এবং তারা চাইবে অন্যরাও তাদের সঙ্গে তাল মিলাক।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের কর্মচারীদের কাজের বাইরেই সমস্যা থাকে, যা তারা অফিসে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। এখন আপনার কী উচিত হবে তাদের সেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা? হয়তো না। তবে যদি তারা কাজে পারদর্শী হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো আপনি তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
সমাধান: এসব কর্মচারীর সঙ্গে বসুন এবং তাদের বলুন যে আপনি জানতে পেরেছেন যে, তারা আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সুখী নন এবং কী করলে তাদের ভালো লাগবে তা জিজ্ঞেস করুন। কাজের বাইরে সবকিছু ঠিক আছে কি না, তা জানতে চান। হতে পারে আপনার কর্মচারী এ সময় কেঁদে ফেলতে পারে। তবে যাই হোক না কেন, আপনি তার এহেন আচরণের কারণ সম্পর্কে অবগত হবেন এবং সেই কর্মচারীও বুঝতে পারবে যে সবাই তার আচরণ খেয়াল করছে। এটি দুই পক্ষেরই কাজে আসবে।
তারেক