
করপোরেটের এই যুগে বস হচ্ছেন অভিভাবকের মতো। বসরা অধীনস্থদের সবচেয়ে কাছের বন্ধুও বটে। একজন বস ও কর্মীর মধ্যে সম্পর্ক কেমন হতে পারে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা ব্যাংক পিএলসির সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মিজানুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারেক বিন ফিরোজ
বস শুধুই কি একজন নির্দেশদাতা। আপনার কী মনে হয়?
বর্তমান সময়ে বসদের কাজের পরিধির পাশাপাশি বেড়েছে কাজের কৌশলও। অফিসের কাজ তো বটেই, এর বাইরে ব্যক্তিগত সম্পর্কেও এগিয়ে থাকছেন বসরা। তাই প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির জন্য বসকে শুধু নির্দেশদাতা না হয়ে একজন সহায়ক নেতা ও পরামর্শক হতে হয়।
আরেকটু বিস্তারিত বলুন-
নিজের কাজের পাশাপাশি বসকে পুরো টিমের কাজ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এবং প্রতিটি কর্মীর সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি। সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত দিক থেকে ভালো জ্ঞান রাখা এবং কর্মীদের সেগুলোর সঙ্গে পরিচয় করানো উচিত। পাশাপাশি কর্মীরা যেন নির্ভয়ে কাজ করতে পারে, এ জন্য তাদের কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। এতে কর্মীরা নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে এবং তারা নিজেদের সক্ষমতা উন্নয়ন করতে পারে। এ ছাড়া কর্মীদের উৎসাহিত করা এবং তাদের সমস্যার সময় পাশে থাকা বস হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি কর্মীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে এবং তাদের কর্মক্ষমতাকে বাড়ায়।
বিশ্বাস গড়ে তোলা, কার্যকরভাবে যোগাযোগ করা, শ্রদ্ধাশীল হওয়া, উদ্যোগ নেওয়া, প্রতিক্রিয়া চাওয়া, গঠনমূলকভাবে দ্বন্দ্বগুলো পরিচালনা করা এবং পেশাদার সীমানা বজায় রাখার মাধ্যমে একজন কর্মী ও বসের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। বসের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে কর্মীর ক্যারিয়ার এবং অফিসের কাজের গতি ও মানেরও উন্নয়ন হয়।
একটা জিনিস মনে রাখা প্রয়োজন, যে বস সহকর্মীদের পরামর্শদাতা এবং বন্ধু হতে পারেন, তার হাতেই প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানের উন্নতির মূল চাবিকাঠি থাকে।
প্রতিষ্ঠানে কাজের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?
প্রতিষ্ঠান হলো আমাদের দ্বিতীয় পরিবার, যেখানে আমরা দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাই। তাই কর্মীদের জন্য বন্ধুসুলভ, সহযোগিতামূলক এবং সুখকর পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। কর্মক্ষেত্র এমন হওয়া উচিত, যেখানে প্রত্যেক কর্মী নিজের কাজকে নিরাপদ এবং গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এতে কর্মীরা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হন এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। একটি স্বস্তিকর ও আনন্দময় কাজের পরিবেশ কর্মীদের মধ্যে নতুন নতুন সৃজনশীল ধারণা আনতে সহায়ক হয়, যা প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেখানে কাজ করতে কর্মীদের আনন্দ হয়, সেখানে কাজের মানও উন্নত হয়।
কর্মীদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কেন?
কর্মীদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। ভালো কাজের স্বীকৃতি বা প্রশংসা কর্মীদের মধ্যে দায়বদ্ধতার অনুভূতি বাড়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের আস্থা বৃদ্ধি করে। যেখানে স্বীকৃতি থাকে, সেখানে কাজের গতি ও গুণমানও বেড়ে যায়। কর্মীরা যখন তাদের কাজের স্বীকৃতি পায়, তখন তা তাদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করে। প্রতিষ্ঠানের মনে রাখা উচিত, কর্মীরা কাজের স্বীকৃতি পেলে, নিজেদের আরও মূল্যবান এবং উৎসাহী মনে করেন। এতে তাদের কর্মক্ষমতা ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং তাদের কাজে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। সত্যিকার অর্থে, আদর্শ বস কখনো কর্মীদের ভালো কাজের প্রশংসা করতে দ্বিধা বোধ করেন না। কারণ, তারা জানেন, প্রশংসা করা গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া জানানোর মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মীরা যদি জানেন যে, বস তাদের কাজের মূল্যায়ন করেন, তাহলে তারা নিজে থেকেই দ্বিগুণ উদ্যমে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন।
যদি প্রতিষ্ঠানে সব কর্মী প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য না হয়?
খেয়াল করলে দেখতে পাবেন- একটি অফিসে বা একটি টিমে সবাই একই রকম কাজ করেন না। কেউ কেউ কাজে অবহেলাও করেন। তার মানে এই না যে কর্মক্ষেত্রে কখনোই কাউকে পুরস্কৃত করা যাবে না। এমন কোনো বিষয় যা অফিসের কোনো ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না, কিন্তু পুরস্কৃত করার ফলে কর্মীরা আরও উৎসাহিত হতে পারেন সে ক্ষেত্রে সেরা কর্মীকে পুরস্কার দেওয়া যেতেই পারে। মনে রাখতে হবে, পুরো অফিসের জন্য সবার কাজেরই গুরুত্ব রয়েছে। তাই সবাইকে একই ভিত্তিতে তুলনা করলে অফিসের সার্বিক উন্নতিই বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
প্রতিষ্ঠানের অলস কর্মীকে সেরা বানাতে বসের ভূমিকা কী?
বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী বিল গেটস বলেছিলেন, ‘আমি কঠিন কাজের জন্য একজন অলস ব্যক্তিকেই নির্বাচিত করি। কারণ, একজন অলস ব্যক্তিই কাজটি সম্পন্ন করার সহজ উপায় খুঁজে পান।’ একজন বসের আসলে তাই-ই করা উচিত। কর্মীর কোনো সমস্যা থাকলে সামনাসামনি বসে আলোচনা করতে হবে, সমস্যার সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে সবার আগে প্রতিষ্ঠানের বসকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে- বিশেষভাবে পরিচর্যা করলে অলস কর্মীও সেরা হয়ে যায়।
তারেক