
কোনো নতুন ব্যবসা শুরু করার পর সর্বপ্রথম কাজ হওয়া উচিত টার্গেট মার্কেট ঠিক করা। কারণ, টার্গেট মার্কেটের ওপরই নির্ভর করবে যে, আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কেমন হবে, আপনি কীভাবে ব্যবসা করবেন এবং কাদের সঙ্গে ব্যবসা করবেন।
প্রোডাক্ট বা সার্ভিস যতই ভালো হোক না কেন, ভুল টার্গেট মার্কেটের কাছে বিক্রি করলে আপনার ব্যবসা কখনোই সফল হবে না। এসব কারণেই টার্গেট মার্কেট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কেট টার্গেট করার অর্থ শুধু একটি পণ্য বিক্রি করা নয়। এটি এমন একটি অভিজ্ঞতা, যা গ্রাহকদের বাস্তব প্রয়োজন মেটায়। টার্গেট মার্কেট যদি ঠিকমতো করা হয় তাহলে ব্যবসায় সফলতা অর্জন অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
টার্গেট মার্কেট কী?
একটি কোম্পানির পণ্য যেসব ক্রেতা কেনার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে, সেই ক্রেতাদেরই কোম্পানির টার্গেট মার্কেট বলা হয়। ক্রেতাদের নির্দিষ্ট কোনো বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করেই টার্গেট মার্কেট সেট করা হয়, যেমন- বয়স, আয়, লাইফস্টাইল ইত্যাদি।
কোনো কোম্পানি যখন নিজেদের প্রোডাক্ট ডিজাইন, প্যাকেজিং ও মার্কেটিং করে থাকে, তখন এসব কাজে প্রোডাক্টের টার্গেট মার্কেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
আপনার টার্গেট মার্কেট হতে পারে অনেক বড়, যেমন- ‘দেশে বসবাসকারী ৪০-এর বেশি বয়সী পুরুষরা’ অথবা চাইলে অনেক ছোটও হতে পারে, যেমন- ‘আপনার এলাকার স্বাস্থ্য সচেতন নারী-পুরুষরা’। আপনার প্রোডাক্ট আসলে ক্রেতাদের কোন ধরনের চাহিদা পূরণ করছে, তার ওপর নির্ভর করে আপনার টার্গেট মার্কেট সেট করতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের টার্গেট মার্কেট
বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের টার্গেট মার্কেট বিভিন্ন উপায়ে সেট করে থাকে। তবে সেই উপায়গুলোকে মোটা দাগে চার ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-
ডেমোগ্রাফিক: এ ধরনের টার্গেট মার্কেট সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু ভেরিয়েবলের ওপর নির্ভর করে সেট করা হয়, যেমন- বয়স, লিঙ্গ, আয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ইত্যাদি। আবার কোনো ডেমোগ্রাফিক গ্রুপের ক্রয়ক্ষমতা ও ক্রয়ের অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে কোম্পানি উক্ত গ্রুপের ছোট একটি অংশকেও টার্গেট করতে পারে।
জিওগ্রাফিক: নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে জিওগ্রাফিক টার্গেট মার্কেট মূলত কোনো নির্দিষ্ট রিজিয়নের ওপর নির্ভর করে সেট করা হয়, যেমন- উপজেলা, জেলা, বিভাগ, দেশ ইত্যাদি।
সাইকোগ্রাফিক: এ ধরনের টার্গেট মার্কেট সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু মানসিক ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়, যেমন- লাইফস্টাইল, নৈতিকতা, ব্যক্তিত্ব, সোশ্যাল স্ট্যাটাস ইত্যাদি।
বিহেভিয়রাল: এ ধরনের টার্গেট মার্কেট বিভিন্ন কনজ্যুমার বিহেভিয়রের ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়, যেমন- পণ্য কেনার উদ্দেশ্য, পণ্যের প্রতি আশা, ব্র্যান্ডের প্রতি লয়্যালটি ইত্যাদি।
আপনি যদি একজন ভালো মার্কেটিয়ার হতে চান তবে আপনাকে এটি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, কোম্পানির উদ্দেশ্য ও মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির ওপর নির্ভর করে। একটি কোম্পানি চাইলে একাধিক টার্গেট মার্কেটকে উদ্দেশ্য করে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস তৈরি করতে পারে। ৬০ ভাগ মার্কেটিয়ারের মতে টার্গেটেড অ্যাডভার্টাইজিং হবে আগামী পাঁচ বছরের ভেতর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং কৌশল।
টার্গেট মার্কেট নির্ধারণ করার জন্য আপনার প্রোডাক্ট নিশ, কাস্টমার ও কম্পিটিটরদের সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি আপনাকে টার্গেট মার্কেটের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কেও জানতে হবে।
টার্গেট মার্কেট কীভাবে নির্ধারণ করবেন?
আপনার ব্র্যান্ডের টার্গেট মার্কেট নির্ধারণের জন্য নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
কাস্টমারদের ডেটা কালেক্ট করুন: টার্গেট মার্কেট নির্ধারণের পূর্বশর্ত হচ্ছে আপনার কাস্টমারদের সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা রাখা। আপনার ব্যবসা যদি নতুন হয়ে থাকে এবং বর্তমানে অনেক কাস্টমার না থাকে, তবুও যারা ভবিষ্যতে আপনার কাস্টমার হতে পারেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে আপনি বিভিন্ন সাধারণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, যেমন- বয়স, লোকেশন, ক্রয়ক্ষমতা, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি। আর যদি আপনি বিভিন্ন কোম্পানির জন্য পণ্য বা সেবা তৈরি করে থাকেন, তাহলে এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারেন, যেমন- ব্যবসার সাইজ, ঠিকানা, ইন্ডাস্ট্রি, বাজেট ইত্যাদি।
পণ্য বা সেবার সুবিধাগুলো চিহ্নিত করুন: কাস্টমাররা প্রতিযোগীদের পণ্য না কেনে আপনার পণ্য কেন কিনবেন? এই বিষয়ে জানার জন্য আপনি কাস্টমারদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন যে, আপনার পণ্যে কোন কোন বিষয় যুক্ত করা হলে তারা আপনার পণ্য কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। আবার এই কাজে প্রতিযোগীর অ্যানালিসিস করে দেখতে পারেন যে, প্রতিযোগীদের থেকে কোন কোন দিক দিয়ে আপনার পণ্য ভালো।
প্রতিযোগীর অ্যানালিসিস করুন: এই পর্যায়ে এসে আপনার প্রতিযোগীরা কাদের টার্গেট করে পণ্য তৈরি করছে, সেই বিষয়ে ধারণা নেওয়া প্রয়োজন। এই বিষয়ে জানতে আপনি তাদের ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, ব্লগ ইত্যাদি মনিটর করতে পারেন। কনটেন্ট মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে তারা কোন ধরনের কাস্টমারদের টার্গেট করছেন তা দেখলেও আপনি বিষয়টি বুঝতে পারবেন।
কাস্টমার সেগমেন্ট তৈরি করা: এই পর্যায়ে এসে আপনার নিশ্চয়ই মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে যে, আপনার টার্গেট মার্কেট কারা এবং তাদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য আপনি জেনে গেছেন। আপনার পরবর্তী কাজ হচ্ছে মার্কেট সেগমেন্টেশন। আপনার টার্গেট মার্কেটকে জিওগ্রাফিক, ডেমোগ্রাফিক, সাইকোগ্রাফিক ও বিহেভিয়ার- এই চারটি সেগমেন্টে ভাগ করতে পারেন। এতে করে আপনার জন্য মার্কেটিং ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
টার্গেট মার্কেট স্টেটমেন্ট লিখুন: এখন যেহেতু আপনার টার্গেট মার্কেট সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা তৈরি হয়ে গেছে, আপনি সবকিছু লিখে রাখতে পারেন। টার্গেট মার্কেট স্টেটমেন্ট তেমন কঠিন কিছু না। শুধু আপনার টার্গেট মার্কেটের বিভিন্ন মূল ফিচার যেমন- ডেমোগ্রাফি, জিওগ্রাফি, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি লিখে রাখা আর কী।
তারেক