
সব বস কর্মীদের ভালোবাসা পান না, এটি চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। এর অবশ্য কারণও আছে। অনেক বসই ভাবেন, ধমক দিয়েই কাজ আদায় করতে হয়। কিন্তু করপোরেট ঘরানার এই যুগে বসদের কাজের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে কাজের কৌশল।
ভালো বস পেলে কর্মীরা সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করেন। বলতে গেলে বসরাই এখন অধীনস্থদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। অফিসের কাজ তো বটেই, এর বাইরেও ব্যক্তিগত সম্পর্কেও এগিয়ে থাকছেন বসরা। আর তাই তো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বসের কাছেই বেশি দায়বদ্ধ থাকেন অধীনস্থরা।
বসের সঙ্গে কর্মীদের ভালো সম্পর্ক থাকলে তা দুপক্ষের জন্যই ভালো। একদিকে কর্মীরা যেমন অফিসে এসে আরামদায়ক ও নিশ্চিন্ত অনুভব করেন অন্যদিকে তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চটুকুই পায় অফিস।
একজন ভালো বসের কিছু বিশেষ গুণ থাকে যা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তোলে। ভালো বসের কিছু গুণের কথা নিচে উল্লেখ করা হলো-
বিনয়
বিনয়ী হওয়াটা একজন ভালো বসের জন্য খুবই জরুরি। বিনয় শুধু একটা গুণই নয়, এটা কর্মক্ষেত্রের নানা জটিলতা থেকেও বসকে রক্ষা করে। আরেকটি বিষয়, বিনয়ী হওয়া মানে ছোট হওয়া নয়। বিনয় উচ্চমার্গীয় একটি বিশেষ গুণ।
অসম্ভবকে সম্ভব করা
বস মানে দলনেতা। আর দলনেতাদের কাজই হচ্ছে আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব নেওয়া এবং সে কাজ শেষ করা। বসকে হতে হয় দূরদর্শী। সবাই যেটা অসম্ভব বলবেন, বসকে সেটা সম্ভব করতে হবে। আর সে জন্যই তার থাকতে হবে নিজের ওপর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস এবং নিজের টিম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। তাহলেই কেবল অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়ে দেওয়া সম্ভব।
সম্ভাবনা দেখার ক্ষমতা
বসরা জানেন কাকে দিয়ে কী করানো সম্ভব। আর সে কারণেই সম্ভাবনাময় অধীনস্থদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করে থাকেন ভালো বসরা। একই সঙ্গে কাজের সুযোগ তৈরি করা এবং কর্মীর সম্ভাবনাকে বিকশিত করার ব্যবস্থা করে দেওয়াই একজন ভালো বসের কাজ। কারণ কর্মীদের কেউ ভালো করলে সুনাম কিন্তু বসেরই হয়।
আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করেন
ভালো বসরা সব সময়ই পেশাদার হয়ে থাকেন। কাজের ক্ষেত্রে তারা কখনো আবেগ টেনে আনেন না। সবার সামনে নিজেদের আবেগ প্রকাশ করেন না। তবে সবকিছুর পরও তারা মানুষ। তারা কর্মীদের ভালো কাজের প্রশংসা করেন এবং খারাপটাও ধরিয়ে দেন।
সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ান
বস-সুলভ আচরণের অন্যতম এক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যেকোনো সমস্যার সামনে গিয়ে দাঁড়ানো। কর্মীদের যেকোনো প্রয়োজনে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। এতে কর্মীরা তার ওপর নির্ভর হতে শিখবে।
কর্মীকে বিপদে ফেলেন না
বিপদের গন্ধ পেলে সেখানে কখনোই কর্মীদের ঠেলে দেন না ভালো বসরা। ঝুঁকি বা বিপদের সম্ভাবনা যেখানে রয়েছে সেখানে বসরাই দায়িত্ব পালন করেন এবং কর্মীদের নিরাপদে রাখেন। একজন ভালো বস তার কর্মীকে তখনই কোনো দায়িত্ব দেন যখন তিনি দেখেন সেই কাজটি করতে গিয়ে তার কর্মীর ক্ষতির আশঙ্কা নেই। আর যদি আশঙ্কা থাকে তাহলে তার দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধেই তুলে নেন।
প্রতিদিন এগিয়ে যাওয়া
ধারাবাহিকতা হচ্ছে ভালো বসদের প্রধান গুণ। তারা প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়ে যান। প্রতিদিন আগের দিনের চেয়ে ভালো করার চেষ্টা একজন ভালো বসের মধ্যে যেমন থাকে, সেভাবে তিনি তারা কর্মীদেরও এগিয়ে নেন। ভালো বস সামনে থাকলে কর্মীরাও নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেন সেরা কাজটি দেওয়ার এবং টিমকে এগিয়ে নেওয়ার।
কর্তৃত্ব খাটান না
ভালো বসরা কখনো কর্তৃত্ব খাটান না। নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বোঝানোর জন্য কখনো অন্যায় আচরণ করেন না কর্মীদের সঙ্গে। ভালো বসদের কাছে কর্মীরাই আসেন সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনার জন্য। সেই আস্থা এবং নেতৃত্বের জায়গাটি বসদের নিজেদের যোগ্যতায় তৈরি করে নিতে হয়।
কর্মীদের খেয়াল রাখা
ভালো বসদের সঙ্গে কর্মীদের সম্পর্ক কখনো নষ্ট হয় না। কারণ, ভালো বস সব সময় কর্মীদের খেয়াল রাখেন। কর্মীদের যেকোনো প্রয়োজনে তারা এগিয়ে আসেন। চাকরি বদল, বেতন বাড়ানো বা পারিবারিক ঝামেলা সবকিছু থেকে কর্মীদের বাঁচিয়ে রাখেন একজন ভালো বস। আর তাই প্রতিষ্ঠান বদলালেও ভালো বসদের সঙ্গে কর্মীদের সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হয় না।
ভুল শুধরে দেন
কাজ করলে ভুল হতেই পারে। আর কর্মীরা যেহেতু কাজ করেন তাদের তো ভুল হবেই। কিন্তু ভালো বস উত্তেজিত হন না কিংবা কর্মীদের বকাঝকাও করেন না। এ ক্ষেত্রে তিনি ভুলগুলো শুধরে দেন। এরপর ধরিয়ে দেন ভুল আর সঠিকের পার্থক্য। এতে কর্মীরা সহজেই ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
কথায় নয় কাজে বড়
ভালো বসদের কথার জোরের চেয়ে মাথার জোর বেশি থাকে। সত্যিকারের ভালো বসরা কথা নয় কাজপাগল। তাদের কাজই তাদের পক্ষে কথা বলে। ভালো বসরা সব সময় নিজেদের আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। সে কারণে খুব সহজেই তারা টিম তৈরি করতে পারেন। টিমের মধ্যে ভাঙাগড়া থাকবেই কিন্তু ভালো বসরা যেকোনো পরিস্থিতিকে নিজের টিমের মধ্যে সমন্বয় করে চলার এবং টিমকে উজ্জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন।
হাস্যরস
অনেকেই মনে করেন বস মানেই গুরুগম্ভীর একজন মানুষ। আদতে কিন্তু তা নয়। ভালো বসরা সব সময় সিরিয়াস হয়ে থাকতে পছন্দ করেন না। তারা কাজের মধ্যেই হাসিঠাট্টা করেন, গল্পগুজব করেন, কর্মীদের সঙ্গে চা খেতে বেরিয়ে যান, বৃষ্টির দিনে নিজের গাড়িতে কর্মীদের বাসায় পৌঁছে দেন। এই ছোটখাটো ব্যাপারগুলো কর্মীদের কাছে অনেক বড়। তারা এ ধরনের বসদের জন্যই নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে থাকেন।
গ্রহণযোগ্যতা
গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে ভালো বস হয়ে ওঠা যায় না। আর তাই ভালো বস হতে হলে গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হয়। সেটা যেমন নিজের অফিসে তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও। আর সে কারণেই কর্মস্থল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভালো বসরা কখনো বিপদে পড়েন না। তারা যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে সক্ষম।
ব্যক্তিত্বের প্রতি সম্মান
একজন ভালো বস তার কর্মীদের যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন করেন। কারণ তিনি জানেন প্রতিটি কর্মীই ব্যক্তিগতভাবে আলাদা। তাদের নিজস্ব আলাদা আলাদা শক্তি ও দুর্বলতার জায়গা আছে। তারা যে কেবল তার কর্মী নয় বরং এক একজন আপাদমস্তক মানুষ; এ কথাটি একজন ভালো বস সব সময় মনে রাখেন।
বসও একজন মানুষ। তাই বস যে সব সময় সঠিক পদক্ষেপ নেবেন, কখনো কোনো ভুল করবেন না, তা কিন্তু নয়। একজন মানুষ হিসেবে তারও অনেক কিছুতে ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু ভালো বস হওয়ার চেষ্টা সব বসকেই নিয়মিত করে যেতে হবে।
তারেক