যেকোনো কাজে সাফল্য পেতে হলে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হয়। কাজে মনোযোগ ধরে না রাখতে পারলে শুধু কর্মদক্ষতা কমে যায় না, বরং কাজের মান, কাজ করার ইচ্ছা, আগ্রহ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। মনোযোগ ধরে রাখতে পারলে কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু কিছু টিপস মেনে চললে কাজে মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব। বিস্তারিত জানাচ্ছেন গাজী তাহির
আমরা অনেকেই অফিসে খোলামেলা পরিবেশে অনেক মানুষের মধ্যে বসে কাজ করি। ফলে দেখা যায় সব সময়ই কেউ না কেউ কথা বলছে অথবা হাঁটাচলা করছে। আপনার নিজেকে এসব থেকে মানসিকভাবে আলাদা করতে শিখতে হবে, যাতে আপনি কাজের দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন।
গুছিয়ে কাজ করুন
আপনার কাজ আর আশপাশের পরিবেশ যত অগোছাল থাকবে, খুঁটিনাটি বিষয়গুলো থেকে মনোযোগ সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে তত বেশি। তাই মনোযোগ বাড়ানোর অন্যতম একটা উপায় হচ্ছে আপনার কাজের পরিকল্পনা যতটা সম্ভব গুছিয়ে রাখা।
তালিকা তৈরি করুন
অনেকের মধ্যে একটা ধারণা দেখা যায় যে, লিস্ট তৈরি করা এবং পরিকল্পিতভাবে কাজ করা সৃজনশীলতা নষ্ট করে দেয়। এটি একটি ভুল ধারণা। কাজের তালিকা বানানো বরং সৃজনশীলতাকে বিকশিত করে। কারণ এতে করে প্রতিটি কাজকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া যায়, যাতে করে কাজ থেকে তৈরি হওয়া মানসিক চাপ অনেকটা কমে আসে।
মনোযোগ ধরে রাখুন
মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে পাশের ডেস্কে বসা কলিগ পর্যন্ত কাজের সময় আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, কাজের মনোযোগ নষ্ট করে এসব অপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন কীভাবে?
আমরা অনেকেই অফিসে খোলামেলা পরিবেশে অনেক মানুষের মধ্যে বসে কাজ করি। ফলে দেখা যায় সব সময়ই কেউ না কেউ কথা বলছে অথবা হাঁটাচলা করছে। আপনার নিজেকে এসব থেকে মানসিকভাবে আলাদা করতে শিখতে হবে, যাতে আপনি কাজের দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন।
এর জন্য অনেকেই নয়েজ ক্যান্সেলেশন হেডফোন ব্যবহার করেন। রিসার্চে পাওয়া গেছে, যারা কাজ করার সময় ক্লাসিক্যাল মিউজিক শোনেন তাদের কাজের প্রতি মনোযোগ বেশি হয়। তবে মনোযোগে সাহায্য করার জন্য কোনো লিরিক্স যুক্ত মিউজিক না শোনাই ভালো, কারণ তাতে বরং ডিস্ট্র্যাকশনের পরিমাণ আরও বাড়ে।
এ ছাড়া মোবাইলের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা অথবা মোবাইল দূরে রেখে কাজ করতে বসা, ডেস্কটপে ই-মেইল ও মেসেজ নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখা ইত্যাদি মনোযোগ সরে যাওয়ার সম্ভাবনা কমাবে।
নিয়মিত বিরতি নিন
যতক্ষণ আমরা কাজ করি, আমাদের মস্তিষ্কের পেশিগুলোও ততক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পায় না। ফলস্বরূপ এই পেশিগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং যেকোনো কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং নিয়মিত বিরতি নেওয়া।
কাজকে উপভোগ করুন
অনেক সময় মনোযোগ দিতে না পারার একটা বড় কারণ হচ্ছে কাজ করে আনন্দ না পাওয়া। চাকরি বা ব্যক্তি জীবনে অনেককেই প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যা পছন্দের কাজটাকেও একটা নীরস বিষয়ে পরিণত করে। তাই দৈনন্দিন কাজের প্রক্রিয়াকে কীভাবে আরও উপভোগ্য করা যায় তা নিয়ে ভাবুন।
রুটিন অনুসরণ করুন
অতিমাত্রায় রুটিন মতো চলা যেমন জীবনের আনন্দকে নষ্ট করে দিতে পারে, একেবারে কোনো রুটিন না থাকাও বিশৃঙ্খলার কারণ হতে পারে। রুটিন মেনে চলার অর্থ হচ্ছে প্রতিদিন একই সময়ে একই ধরনের কাজ করা। এতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে খাওয়া, ঘুম এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কাজ নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন কমে যাবে। ফলাফল, কাজের প্রতি মনোযোগ আরও বাড়বে।
কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করুন
অনেকেই দ্রুততার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করেন। তারা কাজের মান নিশ্চিত করার চেয়ে দ্রুত কাজ শেষ করাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কিন্তু দ্রুত কাজ করা মানে হচ্ছে খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য সময় না নেওয়া। এর ফলে কাজটিও ঠিকমতো করা হয়ে ওঠে না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আপনার ক্যারিয়ার এবং মর্যাদার ওপর।
অতিরিক্ত ডেডলাইনের চাপ না নিয়ে বরং কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করাতে বেশি গুরুত্ব দিন। কারণ নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হওয়া কাজ অনেক দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল এনে দিতে পারে।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির কথা আগে ভাবুন
সবচেয়ে খারাপ ফলাফলের কথা চিন্তা করুন। কারণ, সবচেয়ে খারাপ ফলাফলের কথা চিন্তা করলে আপনার অবচেতন মন আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে।
আপনার গাফিলতি বা অমনোযোগ আপনার ক্যারিয়ার ও কোম্পানির ব্যবসায়িক অবস্থাকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে তা সম্পর্কে ধারণা থাকলে সহজাতভাবেই আপনি মনোযোগ সহকারে কাজ করার অনুপ্রেরণা পাবেন।
হয়তো আপনি যে পরিস্থিতিটা চিন্তা করছেন তা কখনোই ঘটবে না। কিন্তু ঝুঁকি না নিয়ে বরং প্রস্তুত থাকাই ভালো।
এক সময়ে শুধু একটা কাজ করুন
অনেকেই মনে করেন যে একসঙ্গে একাধিক কাজ করলে বেশি কাজ করা সম্ভব। কিন্তু এই ধারণা ভুল হওয়ার প্রমাণ বিভিন্ন রিসার্চে অনেকবার পাওয়া গেছে। তাই মনোযোগের সঙ্গে কাজ করতে চাইলে এক সময়ে একটা কাজ করাই সবচেয়ে ভালো।
বই পড়ুন
যত দিন যাচ্ছে, আমরা তত বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আর তার কারণও আছে। জ্ঞান অর্জন হোক বা শুধু বিনোদন, বই পড়ার চেয়ে অনেক সহজ ও আনন্দদায়ক মাধ্যম এখন আমাদের কাছে সহজলভ্য। কিন্তু বই পড়া যেভাবে আপনার মনোযোগ বাড়াবে, অন্য কোনো মাধ্যম তা পারবে না।
তারেক