
চিকিৎসক হওয়ার সিদ্ধান্ত হঠাৎ করেই নেওয়া যায় না। এর জন্য পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। পরিশ্রম করার এবং মানসিক চাপ সহ্য করতে পারার মানসিকতা যাদের নেই, এই পেশা তাদের জন্য নয়। তবে আপনি যদি এই চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন তাহলে এই পেশাই আপনার জন্য অনেক আনন্দদায়ক হতে পারে।
সফল চিকিৎসক হতে হলে বেশ কিছু স্কিল থাকা চাই। আর অন্য সব পেশার মতোই একজন চিকিৎসকেরও কিছু মানবিক দক্ষতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। সেগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
শেখার ইচ্ছা
প্রবাদে আছে- দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করো। একজন চিকিৎসকের জীবনে এ কথাটি যেন জ্বলজ্বলে সত্য। একজন চিকিৎসকের জ্ঞান অর্জন কখনো শেষ হয় না।
কারণ, মানুষের দেহ এতটাই জটিল যে, এর ব্যাপারে সবকিছু জানা একজন ব্যক্তির পক্ষে অসম্ভব। আর প্রতিনিয়তই নতুন নতুন গবেষণা, চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কার হয়েই চলছে।
তাই আজ থেকে ১০-১৫ বা আরও অনেক বছর পরেও আপনাকে পড়াশোনা চালিয়েই যেতে হবে। হয়তো নতুন ডিগ্রি অর্জন করতে হবে, নতুন রিসার্চ পড়তে হবে। সারা জীবন ধরে চলতে থাকা এই শিক্ষার জন্য দরকার অনেক ধৈর্য এবং শেখার ইচ্ছা। যা একজন চিকিৎসকের সাফল্যের জন্য অত্যাবশ্যক।
পেশাদারি মনোভাব
একজন চিকিৎসককে অনেক মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হয়। এ সময় খুব স্বাভাবিক পরিস্থিতিও অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এসব মানুষ যখন অসুস্থ এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে তখন তাদের সামলানো আরও শতগুণে বেশি কঠিন। সব পরিস্থিতিতে নিজের পেশাদারত্ব ধরে রাখতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতির শিকার হয়ে এমন কিছু কখনোই করা যাবে না যাতে রোগীর চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটে।
সহনশীলতা
সহনশীলতাকে আসলে দক্ষতা বলা যায় না। বরং এটি একটি গুণ। কিন্তু তার মানে এটা না যে চেষ্টা এবং প্র্যাকটিসের মাধ্যমে সহনশীলতা বাড়ানো যায় না।
চিকিৎসকদের প্রায়ই নেতিবাচক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। অনেকেই আপনার মতামতকে গুরুত্ব দেবে না, কটাক্ষ করবে। আবার অনেকেই আপনাকে সম্পূর্ণ সহায়তা দেবে। তাই আপনাকে সহনশীলতা অর্জন করতে হবে।
সহানুভূতিশীলতা
যেকোনো পরিস্থিতিতে রোগীদের প্রতি সহানুভূতি ধরে রাখতে হবে। সহানুভূতি ধরে রাখতে পারাও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে মাঝে মাঝেই আপনাকে রোগী বা তার আত্মীয়স্বজনদের খারাপ খবর দিতে হবে। ফলে আপনাকে এমন অনেক পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে যেখানে রোগী ও তার পরিবার অনেকটা নেতিবাচকভাবে খবরটা গ্রহণ করছে। এরকম সময়ে তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা এবং ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে যাওয়া থেকে বাঁচাতে পারে।
মনোযোগ
অ্যালার্জির সমস্যা আছে কি না, ওষুধের ডোজ নির্ধারণ, ভৌগোলিক ও সামাজিক ভেদাভেদ, রোগীর আগে কোনো সমস্যা ছিল কি না- চিকিৎসাক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে এরকম অনেক বড়-ছোট সূক্ষ্ম বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখতে হয়। তাই একজন চিকিৎসকের জন্য মনোযোগের সঙ্গে কাজ করা অত্যাবশ্যকই বলা যায়। আপনার মনোযোগের একটু এদিক-ওদিকের ওপর নির্ভর করতে পারে একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য। একজন ভালো চিকিৎসক এ সবকিছুই খেয়াল করেন এবং রোগীকে সাহায্য করার জন্য কোনো প্রচেষ্টা বাকি রাখেন না।
চিকিৎসক হওয়া কোনো সহজ কাজ নয়। বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে তবেই একজন ব্যক্তি চিকিৎসক হিসেবে পরিচিতি পেতে পারেন। এই কঠিন প্রক্রিয়ার মাঝে অনেক সময়ই এসব মানবিক দক্ষতাগুলো বাদ পড়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় মানবিক গুণাবলিই হয় সাফল্য আর ব্যর্থতার মাঝে পার্থক্য নির্ধারক।
তারেক