বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও হামলার নানা ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার আঁচ লেগেছে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল জলের গানের গায়ক রাহুল আনন্দের বাড়িতেও। গত ৫ আগস্ট আগুনে পুড়ে যায় রাহুল আনন্দের বাড়ি এবং অনেক বাদ্যযন্ত্র।
এই ঘটনার জন্য শোবিজ অঙ্গনে ওঠে নিন্দার ঝড়। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেক তারকা প্রকাশ করেন তাদের প্রতিবাদ।
তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, পরিকল্পিতভাবে এ আগুন দেওয়া হয়। দেশের গণমাধ্যমে রাহুল আনন্দ জানান, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে কোনোমতে বের হয়ে এসেছিলেন তিনি। তবে এখন শোনা যাচ্ছে ভিন্ন কথা।
এ বিষয়ে বিস্তারিত সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন রাহুল আনন্দের পারিবারিক বন্ধু ফারহানা হামিদ। লেখাটি জলের গানের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও শেয়ার করা হয়েছে।
ফারহানা হামিদ তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘রাহুল আনন্দের বাসা উদ্দেশ্য করে আগুন দেওয়া, লুটপাট বা ভাঙচুর করা হয়নি। আগুন দেওয়া হয়েছে ৩২-এর ‘বর্তমান বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম ও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ’ সেটুকুতে। রাহুলদা একটা একতলা বাসায় ভাড়া থাকতেন। একপাশে তাদের সংসার, অন্য পাশে জলের গানের স্টুডিও (অনেকের ভিডিওতে এই বাসাটা নিয়ে ভুলভাল কথা বলতে দেখেছি আমি)। সেই বাড়িটা ব্যক্তিমালিকানায় ছিল। ৩২-এর সেখানে আরও অনেক এমন বাসা আছে। রাহুলদা ও তার পরিবারের দুর্ভাগ্য এই মায়াময় বাসাটা নতুন মিউজিয়ামের দেয়াল ঘেঁষা ছিল, তাই তার বাসাতেও আগুন দেওয়া হয়।
তিনি আরও লেখেন, ‘রাহুলদাকে উদ্দেশ করে আগুন দিলে তারা এই পরিবারকে এভাবে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিত না। আর সুযোগ না দিলে সেই বাসা থেকে বের হওয়া অসম্ভব। রাহুলদার বাসায় আগুনের সঙ্গে রাহুলদার ধর্ম, বর্ণ, জাত, সংস্কৃতি এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এমন গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করছি। দেশের এই পরিস্থিতিতে যেকোনো গুজব ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমরা সচেতন হই। একটা সংসার, একটা দলের বহু দিনের সাধনা, একজন বাচ্চার শৈশবের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। আর কারও কোনো কিছু পুড়ে না যাক। ভালোবাসা নেমে আসুক মানুষের মনে, আপনারা তাদের পাশে থাকলে আবার ‘জলের গান’ এর সঙ্গে গলা মিলিয়ে গান গাইব- ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাক তুমি, সকল দেশের রানি সে যে- আমার জন্মভূমি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘জলের গানের প্রতিটা বাদ্যযন্ত্র দীর্ঘসময় নিয়ে হাতে বানানো এবং প্রায় সবার চেনা। কোথাও কেউ কোনো কারণে খুঁজে পেলে তা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করছি। (আমি ব্যক্তিগতভাবে কোথাও আগুন দেওয়ার পক্ষে না। বঙ্গবন্ধু মিউজিয়ামের মতো দেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস এ আগুন দেওয়ার পক্ষে তো অবশ্যই না। এই সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের বিষয় আমি অবগত এবং এর ঘোর বিপক্ষে। কিন্তু তার মানে এই না যে, বাসা, ধর্ম, বর্ণ, জাত, সংস্কৃতি-এর কারণে আক্রমণ করা হয় নাই কিন্তু কোন কারণে গুজব ছড়াচ্ছে আর সেই গুজবকে গুজব বলা যাবে না)’।
স্ট্যাটাসটি জলের গানের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে শেয়ার দিয়ে লেখা হয়, ‘প্লিজ!!! লেখাটা পড়ুন ও সত্যটা জানুন। আমরাই গড়ব সাম্যের বাংলাদেশ।
ভালোবাসি আমার সোনার বাংলা...আগামী সুন্দর হোক।’
এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে চলছে রাহুল আনন্দকে নিয়ে নানা সমালোচনা। দেশের শোবিজ অঙ্গনের অনেকেই রাহুল আনন্দের এই মিথ্যাচারের জন্য ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে রাহুল আনন্দ ব্যক্তিগতভাবে এখনো মুখ খোলেননি।
জাহ্নবী