বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
ইতোমধ্যেই দেশের কয়েকটি জেলা হয়েছে বন্যাকবলিত। এ কারণে লাখ লাখ মানুষ হয়েছেন পানিবন্দি। বন্যার বিপর্যয়ও অনেকটা সামলে নিয়েছেন দেশের মানুষ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যেই ফিরেছে স্বাভাবিক কাজের গতি। দেশের সব সেক্টরে অচলাবস্থা কাটিয়ে সচল হলেও শোবিজ অঙ্গন রয়েছে এখনো স্থবির। তারকারা বলতে গেলে বেকার হয়ে আছেন। টেলিভিশন, মিউজিক ও চলচ্চিত্রের কাজ থেমে আছে দীর্ঘদিন ধরে। অল্প কিছু নাটকের শুটিং হলেও নতুন কোনো সিনেমার শুটিং আদৌ শুরু হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে আইসিইউতে থাকা এ শিল্প কবে ঘুরে দাঁড়াবে তার কোনো জবাব মিলছে না। এভাবে চলতে থাকলে এর পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী হবে তা নিয়েও কপালে চিন্তার ভাঁজ সংশ্লিষ্টদের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সরকার পতনের আগে–পরে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পর নতুন একটি মাত্র সিনেমা মুক্তি পেয়েছে গত ২৩ আগস্ট। মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত সিনেমার নাম ‘অমানুষ হলো মানুষ’। সিনেমাটি ঢাকাসহ দেশের ২১টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করেছেন ডিপজল ও মৌ খান জুটি।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বেশ কয়েকটি সিনেমার ঘোষণা করেছেন কয়েকজন পরিচালক। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে সিনেমাগুলোর নাম নিবন্ধন করেছেন তারা। শেখ হাসিনার পতনের পর ‘আয়নাঘর’ প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠে এসেছে বারবার। যেখানে সরকারের বিরাগভাজনদের বন্দি রেখে চালানো হতো নির্যাতন। সেই ‘আয়নাঘর’-এর কাহিনি নিয়ে সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন তিনজন পরিচালক। এর মধ্যে খ্যাতিমান নির্মাতা বদিউল আলম খোকন ‘ভয়ংকর আয়নাঘর’, নির্মাতা জয় সরকার ‘আয়নাঘর’ এবং জানেসার ওসমান ‘অন্ধকারের আয়নাঘর’ নামে সিনেমাগুলো নির্মাণের ঘোষণা দেন।
এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ নামেও একটি সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দেন নির্মাতা এম কে জামান। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে সিনেমাটির নামও নিবন্ধন করেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দলের চেয়ারপারসনকে নিয়ে কোনো সিনেমা বা ডকুমেন্টরি নির্মাণের অনুমতি কাউকেই দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া হাইকোর্টের এক আইনজীবী বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিকে সিনেমাটি নিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। এতে জানানো হয়েছে, সিনেমাটি নির্মাণের জন্য বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের কোনো অনুমতি নেই। এ জন্য ওই সিনেমাটির পাশাপাশি আয়নাঘরের কাহিনি নিয়ে সিনেমাগুলোর নামও স্থগিত করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির উপ-মহাসচিব কবিরুল ইসলাম রানা (অপূর্ব রানা)।
তিনি বলেন, ‘‘আয়নাঘর যেহেতু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থার একটি ইন্টারগেশন সেল, তাই বিষয়টি সেনসেটিভ। এ জন্য তাদের অনুমতি ছাড়া আমরা এ ধরনের ঘটনা নিয়ে সিনেমা নির্মাণের অনুমতি দেইনি। তাই আপাতত সিনেমাগুলোর নাম চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি স্থগিত করেছে। যদি অনুমতি নিয়ে সঠিক পন্থায় সিনেমাগুলো নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তবে এই স্থাগিতাদেশ উঠে যাবে। এ ছাড়া ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সিনেমা নিয়ে একজন আইনজীবী আমাদের সমিতিতে চিঠি পাঠিয়েছেন। তাই এই সিনেমার নামও আমরা স্থগিত করেছি।’’
এগুলো ছাড়াও নতুন আরও তিনটি ছবির নাম পরিচালক সমিতিতে নিবন্ধন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে রাশিদ পলাশের ‘দরবার’, বেলাল সানির ‘পরিবর্তন’ এবং রাশেদ সেনের ‘৩৬ জুলাই (এক দফা)’।
এগুলোর বাইরে যেসব সিনেমাগুলোর শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল সেগুলো পিছিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শাকিব খানের ‘বরবাদ’। চলতি মাসে এর শুটিং হওয়ার কথা ছিল। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, সিনেমাটির শুটিং পিছিয়েছে। কবে নাগাদ শুরু হবে, তাও অনিশ্চিত।
পিছিয়েছে শাকিব খানের আরও একটি সিনেমা ‘শের’-এর শুটিংও।
সেপ্টেম্বরে শুটিং শুরুর কথা ছিল সাইফ চন্দন পরিচালিত শরীফুল রাজ-ইধিকা পালের সিনেমা ‘সাহেব’। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আপাতত শুটিংয়ের কোনো পরিকল্পনা নেই সংশ্লিষ্টদের। পূজা চেরি অভিনীত ‘মাসুদ রানা’ সিনেমার বাকি অংশের শুটিং চলতি মাসের মাঝামাঝিতে শুরুর পরিকল্পনা ছিল। সেটিও বাতিল হয়েছে। চিত্রনায়িকা পূজা চেরি ও আদর আজাদকে নিয়ে ‘দরদীয়া’ নামে একটি সিনেমার শুটিং চলতি বছরেই শুরুর কথা ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটিও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
সিনেমা সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, নতুন কোনো সিনেমার শুটিং এখন হবে না। যারা সিনেমা প্রযোজনা করতেন, তারা একটু সময় নিচ্ছেন। চলচ্চিত্রে এই অচলাবস্থা কবে নাগাদ কাটবে সে সম্পর্কেও অনিশ্চিত তারা।
জাহ্নবী