
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদার। গানবিষয়ক নিয়মিত আলোচনা করার জন্য ‘মিউজিক্যাল মাইন্ডস’ নামে গড়েছেন একটি প্ল্যাটফর্ম। হঠাৎ করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এসব বিষয় ও অন্যান্য কাজ নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন এই জনপ্রিয় গায়ক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ মিজান।
মিউজিক্যাল মাইন্ডস বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিলেন। শুধুই রেসপন্স কম পাচ্ছেন এ জন্যই নাকি বিশেষ কোনো কারণ আছে?
অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আমি এই প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু করেছিলাম। এটাতে আসলে আমার কোনো লাভ নেই। তার পরও নতুনদের কথা চিন্তা করে, সবার যাকে উপকার হয় সেই ভাবনা থেকেই কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু এই কাজটিতে যে ধরনের রেসপন্স পাওয়া দরকার তা পাইনি। একেবারে যে রেসপন্স পাইনি তেমনটি নয়, তবে আমার প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া পাইনি। তাই আমার মন খারাপ হয়েছে। এ জন্য এমন ঘোষণা দিয়েছি।
তাহলে কি বন্ধ করে দেবেন কাজটি?
একটা ভিডিও নির্মাণ করতে আমার কমপক্ষে ৫০ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। কারণ শুট করার পর এডিটে সময় দিতে হয়। এত সময় ব্যয় করেও যদি মনের মতো ফলাফল না পাই, তবে খারাপ লাগে। এর ভিউ যা আছে সেটা পুরোপুরি অর্গানিক। আমি এক টাকাও বুস্ট করিনি। তবে স্ট্যাটাসটি দেওয়ার পর অসংখ্য মানুষ আমাকে কাজটি চালিয়ে যেতে বলেছেন। আমার সংগীতাঙ্গনের অনেক গুণীজনও আমাকে কাজটি বন্ধ না করার জন্য বলেছেন। এই বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। তাই আপাতত প্ল্যাটফর্মটি আর বন্ধ করছি না। সবার ভালোবাসায় কাজটি নিয়মিত চালিয়ে যেতে চাই।
এটা কি বাণিজ্যিকভাবে করতেন?
এটা সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই শুরু করেছি। এর পেছনে বাণিজ্যিক কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমি গানের মানুষ, আমাকে অনেকেই পছন্দ করেন, তাই আমার সংগীতবিষয়ক কোনো আলোচনায় কারও উপকারে এলে আমার ভালো লাগবে।
তরুণ প্রজন্মের জন্য কতটা উপকার হচ্ছে?
আমার মূল ভাবনার জায়গা হচ্ছে, যারা নতুন মিউজিক করতে চাচ্ছেন বা মিউজিক করছেন তাদের নিয়ে। যারা নতুন কাজ করছেন, তাদের শেখার একটা জায়গা আমার এই আয়োজন। এখানে গান বানানোর টেকনিক্যাল বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। গান, মিউজিক, কম্পোজিশন, মিউজিক্যাল টিপস ছাড়াও মিউজিকের নানা বিষয়ে কথা বলে থাকি। কীভাবে একটা গান কম্পোজিশন করা হয়, সেটাও দেখাই।
বর্তমানে কী কী কাজ করছেন?
আমি একটি গজলের অ্যালবাম করছি। এই অ্যালবামে মোট ৮টি গান থাকবে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু গানের কাজ শেষ করেছি। রুনা লায়লা ম্যাম একটি, আমি দুটি, কোনাল একটি, তানভীর আলম সজীব একটি, টিনার জন্য একটি গানের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ইউসুফের গানের কাজ চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে টিনার গানটি প্রকাশিত হবে।
গানগুলো কি অ্যালবাম আকারে প্রকাশ পাবে?
ইচ্ছা আছে গজলের এই গানগুলো ফিজিক্যাল অ্যালবাম আকারে প্রকাশ করব। পাশাপাশি ডিজিটাল বিভিন্ন ম্যাধ্যমেও প্রকাশ পাবে।
শেষ কবে এভাবে অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন?
২০১৬ সালে হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ভাইয়ের অ্যালবাম করেছিলাম। এরপর এভাবে আর কোনো অ্যালবাম করা হয়নি। এখন গানগুলো ডিজিটাল মাধ্যমেই বেশি প্রকাশ পায়। এত বছর পর আবারও পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম প্রকাশ করব, এটা ভেবেই আনন্দ লাগছে।
রুনা লায়লায় সঙ্গে প্রথমবার গান করলেন। কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
রুনা লায়লা ম্যামের সঙ্গে গান গাইতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত। ওনার মতো এমন একজন বড় মাপের শিল্পীর কাছে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। গানটা যখন তৈরি করে ওনাকে পাঠালাম, উনি ৭-১০ দিন শুধু শুনেছেন। এরপর আমি ওনার বাসায় গিয়ে গানটা তুলে দিয়েছি। রুনা ম্যাম আমার স্টুডিওতে এসে ভয়েস দিলেন। স্টুডিওতে উনি ২ মিনিট দেরিতে আসায় খুব বিনয়ী হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আহা কী দারুণ বিনয়, কী অসাধারণ তিনি।
গানটি রুনা আপার একাই গাওয়ার কথা ছিল। স্টুডিওতে এসে উনি বললেন এটা দ্বৈত হলে ভালো হবে। তিনিই আমাকে গাইতে বললেন। এই স্মৃতি আমার ক্যারিয়ারে অনন্য হয়ে থাকবে।
বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
এখন গজলের অ্যালবামটি করছি আর দলছুটের স্টেজ পারফর্ম নিয়ে ব্যস্ততা।
জনপ্রিয় গান উপহার দেওয়ার পরও চলচ্চিত্রে নিয়মিত গান করছেন না কেন?
আমার কাছে সিনেমার গান খুব কম আছে। মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের পরিচালনায় ‘বনলতা সেন’-এর আবহ সংগীতের কাজ শেষ করেছি। এর মধ্যে নতুন সিনেমায় কোনো গান করিনি।
এখন অনেক শিল্পী এখন ভাইরালমুখী। গান হিট হচ্ছে কিন্তু টিকছে না। এর কারণ কী বলে মনে করেন?
গানের এত সাপ্লাই হলে কী করবেন শ্রোতারা। গান তো শোনার মতো সময় দিতে হবে তাই না? একের পর এক গান এলে মানুষ তো গানটা শুনতে পারে না। শত শত হাজার হাজার গান যদি প্রতিদিন রিলিজ হয়, তবে মানুষ কয়টা গান শুনবে। এখন গান হিট হচ্ছে কিন্তু গানগুলো বেশি দিন থাকছে না। আসলে শ্রোতাদের কাছে গানগুলো পৌঁছানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় দিতে হবে। আর এখন হিট হওয়ার গান তৈরি হচ্ছে। গান নিয়ে যে ধরনের ভাবনা দরকার, এর পেছনে সেভাবে সময় দিচ্ছে না কেউ।
হাসান