
আজ পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বসন্তবরণ বাঙালির সংস্কৃতির এক অনন্য উৎসব। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনকে স্বাগত জানানোর জন্য উদযাপিত হয় এই উৎসব। প্রথম ফাল্গুনকে বরণ করে নেওয়ার পাশাপাশি প্রিয়জনদের সঙ্গে ভালোবাসা ভাগাভাগি করে নেবেন সাধারণ মানুষ থেকে শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও। এসব বিষয় নিয়ে আয়োজন করা হয়ে খবরের কাগজের আজকের রঙ। তারকাদের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন এ মিজান।

আমাদের সময় প্রপোজ করতেই ৫ বছর লেগে যেত: সোহেল রানা
বিশ্ব ভালোবাসা নিয়ে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমান যখন ‘লাল গোলাপ’ শো শুরু করেন তখন আমি তার বিরোধিতা করেছিলাম। সে সময় পত্রিকাতেও আমি এসবের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম তাকে নিয়ে। কারণ এসবের জন্য আমাদের সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদেশি কালচার আমাদের কালচারে প্রভাব বিস্তার করেছে। বাঙালির সংস্কৃতি অনেক বেশি সমৃদ্ধ। ১২ মাসে ১৩ পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। বৈশাখ, চৈত্রসংক্রান্তি, ফাল্গুনসহ বাঙালিদের নানা রঙিন সংস্কৃতি রয়েছে। বিদেশি সংস্কৃতির বিভিন্ন ডে দিয়ে আমাদের সংস্কৃতি আজ ধ্বংসপ্রায়। তাদের আবেগ আর আমাদের আবেগ এক নয়। বিদেশিরা লিভ টুগেদার করেন। বিয়ের আগেই তাদের ছেলেমেয়ে হয়।
১৮ বছর বয়স হলেই ছেলেমেয়েরা মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা থাকে। এটা আমাদের সংস্কৃতিতে ভাবাই যায় না। আমরা পরিবারনির্ভর। পরিবার আমাদের সারা জীবনের জন্য। আমরা পারিবারিক ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা ঘরের বাইরে গেলেও বাবা-মাকে বলে যেতাম। তাদের ভালোবাসা সব সময় আমার মাথার ওপর ছিল। এখন কে কোথায়, কার সঙ্গে যায় এসব নিয়ে কেউ খবর রাখেন না। সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। আর ভালোবাসা নিয়ে বিশেষ কোনো দিবস আমার খুবই অপছন্দের। ভালোবাসার বিশেষ কোনো দিবস কেন থাকবে? প্রিয় মানুষকে আমরা সব সময়ই ভালোবাসব। প্রতিদিনই ভালোবাসার দিন আমাদের। ভালোবাসার সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ বা সময় থাকা উচিত না।
এখন ভালোবাসা বিষয়টি ঠুনকো হয়ে গেছে। এখন মানুষ অর্থ এবং এনজয় করাতেই বেশি বিশ্বাসী। সবকিছু একেবারেই রোবোটিক হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স। আমাদের সময় প্রোপজ করতেই ৫ বছর লেগে যেত। কাউকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা ছিল অনেক কঠিন বিষয়। এখন প্রথম দিনেই কফি ডেট, প্রথম দিনেই তুমি সম্বোধন। সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগে। প্রজন্ম অনেক আবেগহীন হয়ে যাচ্ছে। কেউ মারা গেলেও এখন আর সবাই কাঁদেন না। কিছু মানুষ কাঁদেন, আর কিছু মানুষ যেন দায়িত্ব পালন করতেই ছুটে যান। সবকিছুই আর্টিফিশিয়াল। আমি পর্দায় অসংখ্য প্রেম করেছি। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে প্রেমের অভিজ্ঞতা ভালো না। কারণ আমার সব সময় ফোকাস ছিল আমার ক্যারিয়ার নিয়ে। আমি রাজনীতি করেছি, খেলাধুলা করেছি। পড়াশোনা নিয়েও তুমুল ব্যস্ত থাকতাম। ব্যস্তময় জীবনে ওইভাবে প্রেম করা হয়নি। তবে আমি আমার প্রিয় মানুষদের অনেক ভালোবাসি। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা আছে এবং থাকবে। সবার জন্যই অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা।

ভালোবাসার চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই: ববিতা
বিশেষ দিন বা সময় ভালোবাসার জন্য নির্ধারণ করা উচিত নয়। ভালোবাসা হচ্ছে সাংঘাতিক একটা ব্যাপার। এর চেয়ে সত্য, সুন্দর ও চিরন্তন কিছু নেই। ভালোবাসার চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, ভাই-বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা, প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা- সবকিছু মিলিয়ে ভালোবাসাটা স্বর্গীয় একটা বিষয়। এই পৃথিবীতে ভালোবাসা না থাকলে পৃথিবী এত সুন্দর হতো না। আমাদের সময় যে ভালোবাসা ছিল, আর এখন বর্তমান সময়ে ভালোবাসার যে ধরনের ভালোবাসা দেখি তা হচ্ছে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। আমাদের সময়ে ভালোবাসা ছিল আস্থার, শ্রদ্ধা ও একে অপরের প্রতি দারণ বিশ্বাসের। ভালোবাসা এখনো আছে কিন্তু তার পরও এখনকার ছেলেমেয়েরা কীসের পেছনে যেন ছুটে বেড়ায় সব সময়। এক ধরনের অস্থিরতা দেখি তাদের মাঝে। ভালোবাসা নিয়ে আমার বেশ স্মৃতি আছে। আমি যদি বলি আমার ভালোবাসা ছিল না, তাহলে ভুল বলা হবে। তবে বিভিন্ন পত্রিকায় তখন বিভিন্নজনের সঙ্গে আমার গসিপ লেখা হতো। এগুলো পড়ে আমি হাসতাম।
ছোট বয়সেই মিডিয়ায় কাজ শুরু করেছিলাম। আমার ক্যারিয়ারে অনেক নায়কের সঙ্গেই কাজ করেছি। কিন্তু জাফর ইকবালের প্রতি আমার একটা ভালোলাগা ছিল। সেটা ভালোবাসাও বলতে পারেন। জাফর ইকবাল ছিল ভীষণ স্মার্ট, গুড লুকিং। অভিনয়ও যেমন দারুণ করতেন আবার গানও গাইতেন চমৎকার। কেউ কেউ বলেন, ভালোলাগার তীব্রতা নাকি জাফর ইকবালের বেশি ছিল। আমারও কিন্তু ভালোই ছিল। অভিনয়ের কারণে অসংখ্য ভক্তের ভালোবাসা পেয়েছি। অনেক ভক্ত আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য পাগলামীও করেছেন। একবার প্রেস ক্লাবের সামনে এক ভক্ত মশারি টাঙিয়ে বসে গেলেন আমার জন্য। তার দাবি ছিল আমার সঙ্গে দেখা করে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করবেন। সে সময় এ ঘটনা পত্রিকাগুলো ফলাও করে ছাপিয়েছিল। পুলিশ নাকি বুঝিয়ে সেই ভক্তকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। আমি কী কারণে যেন সেই ভক্তের কাছে যেতে পারিনি। এখনো অনেক মানুষ আমার বাসার নিচে এসে দেখা করতে চায়। সবার সঙ্গে তো আর দেখা করা সম্ভব নয়, তবে আমি চেষ্টা করি ভক্তদের অনুরোধ রাখতে। কোথাও গেলে ভক্তদের কারণে আমি কখনই বিরক্ত হই না। কারণ তাদের ভালোবাসার জন্যই আমি ববিতা হতে পেরেছি। আমি দোয়া করি সবাই সবার ভালোবাসার মানুষগুলো নিয়ে সুখে থাকুক। সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা। কারণ ভালোবাসা সুন্দর হলেই মানুষগুলো ভালো থাকে। ভালোবাসায় ভালো থাকুন পৃথিবীর সব মানুষ।
আমি হলুদ শাড়ি পরব: সাফা কবির
প্রতিদিনই আমার কাছে ভালোবাসার দিন। তারপরও ভালোবাসার জন্য একটি বিশেষ দিন থাকলে এটা আরও বেশি উপভোগ্য হয়। আমার কাছে মনে হয়, ভালোবাসা মানে শুধুই প্রেমিক-প্রেমিকা এমনটি নয়। ভালোবাসার মানুষ মা-বাবা, ভাইবোন, বন্ধুরা যে কেউই হতে পারেন। তবে যেকোনো বিশেষ দিন বা সময় আমার ভালো লাগে। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের পরিকল্পনা হয়ে গেছে। আমি দুপুরে হলুদ শাড়ি পরব, আর রাতে লাল পোশাক পরে সেলিব্রেট করব। আমার কাছে ভালোবাসার মানে হচ্ছে ‘ওপেন টু লাভ’। ভালোবাসার দিনে সবাই ভালো থাকুক সেই কামনা করি। সবাই তার ভালোবাসার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দিনটি ভালোভাবে উদযাপন করুক।

শুধু মুখে বলে দিলেই ভালোবাসা হয় না : মুমতাহিনা টয়া
আমার কাছে ভালোবাসা দিবসের বিশেষ পরিকল্পনা নেই। প্রতিদিনই প্রিয় মানুষদের ভালোবাসার দিন। ভালোবাসার দিনে আমি একটা বার্তা দিতে চাই, সেটা হলো ভালোবাসা পাওয়ার চেয়ে সেটা রক্ষা করাটা বেশি কঠিন। ভালোবাসা মেইনটেইন করতে হয়। আমি তোমাকে ভালোবাসি শুধু মুখে বলে দিলেই ভালোবাসা হয় না। কাজে ও ব্যবহারে বোঝাতে হয়। নিজের পার্টনারকে অথবা পরিবারের মানুষকে যাকেই ভালোবাসেন, কাজ দিয়েই তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে, আপনি আসলে কতটা ভালোবাসেন।

ভালোবাসা শুধু একটা শ্রেণিতে আবদ্ধ নয় : ইমরান
ভালোবাসা একেকজনের কাছে একেক রকম। আমরা এটাকে আসলে প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলি। এটা সঠিক নয়, প্রেমিক-প্রেমিকা ছাড়াও ভালোবাসা হচ্ছে মা-বাবার প্রতি, দেশ, সমাজের প্রতি বিশেষ অনুভূতি। ভালোবাসা মানে সংগ্রাম ও সেক্রিফাইস। ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাস। ভাষার জন্য অনেকেই রক্ত দিয়েছেন। ভাষার প্রতি যারা জীবন দিয়েছেন তাদের এই ভালোবাসাটা শ্রদ্ধা ও সম্মানের। তাই ভালোবাসা দিবস শুধু একটা শ্রেণিতে আবদ্ধ নয়। ভালোবাসা দিবস আমি গানে গানে ভক্তদের সঙ্গে উদযাপন করব। এই মাসে আমার অনেক শো আছে। তাই ভালোবাসা দিবস নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা করতে পারিনি। তবে একজন শিল্পী হিসেবে ভক্তদের সঙ্গে ভালোবাসা শেয়ার করার যে সুযোগ পাচ্ছি, এটাই আমার অনেক বড় প্রাপ্তি।
/আবরার জাহিন