
কাশ্মীর হামলা নিয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এখন চরমে। দুই দেশের কূটনৈতিক বৈরিতা যেন বেড়েই চলেছে। দুই দেশের সরকারই এ ঘটনায় একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছে। নিজেদের মধ্যকার বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতাও বাতিল করছে। নানা বিষয়ে একে অন্যকে নিষেধাজ্ঞা দিতে ব্যস্ত তারা। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণও নিজ নিজ দেশের সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, যা থেকে বাদ গেল না দুই দেশের শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও।
এরই মধ্যে কাশ্মীর হামলার জেরে পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতি ত্যাগ করেছে মোদি সরকার। ফলে ভারতে পাকিস্তানি শিল্পীদের কাজের ব্যাপারে আবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ভারতে পাকিস্তানি তারকাদের অভিনয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা বলেছে ভারতের ফিল্ম ফেডারেশন অব ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনেমা (এফডব্লিউআইসি)।
ফলে জনপ্রিয় পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমিরের আসন্ন পাঞ্জাবি সিনেমা ‘সরদারজি ৩’-এর মুক্তি স্থগিত হয়ে গেছে। সংগীতশিল্পী দিলজিৎ দোসাঞ্জের বিপরীতে ‘সরদারজি ৩’ শিরোনামের এক পাঞ্জাবি সিনেমার মধ্য দিয়ে ভারতীয় সিনেমায় অভিষেক হওয়ার কথা ছিল এই পাকিস্তানি অভিনেত্রীর।

এ ছাড়া আরেক পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খানও আসন্ন বলিউড সিনেমা ‘আবির গুলাল’-এর প্রেক্ষাগৃহে আগামী ৯ মে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও সেটিও এখন অনিশ্চিত। এই সিনেমার মাধ্যমে দীর্ঘ তিন বছর পর বলিউডে প্রত্যাবর্তনের পথে ছিলেন এ পাকিস্তানি তারকা। কিন্তু ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র থেকে জানা গেছে, কাশ্মীর হামলার জেরে মন্ত্রণালয় থেকে ছবিটির মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই সিনেমায় ফাওয়াদের সহ-অভিনেত্রী হিসেবে প্রধান চরিত্রে আছেন ভারতীয় অভিনেত্রী বাণী কাপুর।
পরিচালক অমিত কাসারিয়ার ‘লাভ স্টোরি অব নাইন্টিজ’ সিনেমায় পাকিস্তানি গায়ক আতিফ আসলামের গাওয়ার কথা থাকলেও সেটাও এখন অনিশ্চিত। যদিও কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে সহমর্মিতা জানিয়েছিলেন হানিয়া আমির ও ফাওয়াদ খান। তবে এতেও পাকিস্তানি শিল্পীরা আঁধার কাটিয়ে আলোর মুখ দেখবে কি না, তা আপাতত বলা যাচ্ছে না। ভারতের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিকে পাকিস্তানি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ না করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
পাকিস্তানি শিল্পী ও কলাকুশলীদের বলিউডে নিষেধাজ্ঞার ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন লেগেই আছে। এর আগে ২০১৬ সালে উড়ির সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর ভারতে পাকিস্তানি শিল্পীদের কাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ফলে দীর্ঘদিন আতিফ আসলাম, রাহাত ফতেহ আলী খান, ফাওয়াদ খান, শাফকাত আমানত আলীসহ পাকিস্তানি শিল্পীরা বলিউড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। পরে ২০২৩ সালে গিয়ে শিল্পীদের ওপর দেওয়া সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত।
ফলে ধীরে ধীরে আবারও ভারতীয় সিনেমায় পাকিস্তানি শিল্পীদের অংশগ্রহণ স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও কাশ্মীরের পাহালগামে এই হামলার ঘটনায় ফের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারেন প্রতিবেশী দেশটির শিল্পীরা। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সব পাক শিল্পীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি মোদি সরকার।
তবে সব সময় ভারতই যে কেবল পাকিস্তানের ওপর নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া চালিয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে নিজ দেশে ভারতীয় সিনেমা ও টেলিভিশন চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছিল পাকিস্তান। সে বছরের মার্চে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে ভারতীয় সিনেমা, বিজ্ঞাপন, সিরিয়ালসহ দেশটির সব ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
এমন সিদ্ধান্তে তখন পাকিস্তানের দর্শকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। বলা হয়ে থাকে, সেবারের নিষেধাজ্ঞায় পাকিস্তানই নাকি বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছিল। কেননা সিনেমা হলগুলো নিজ দেশের সিনেমার থেকে বলিউড সিনেমার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।
এদিকে পাহালগামে হামলার জেরে দেশটিতে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন, সামা টিভি, এআরওয়াই নিউজ, জিও নিউজ, সুনো নিউজ, রাফতার এবং বোল নিউজের মতো সংবাদমাধ্যমগুলোর ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন সাংবাদিক ইর্শাদ ভাট্টি, উমর চিমা, মুনিব ফারুক এবং আসমা শিরাজির ইউটিউব চ্যানেলও।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুসারে, ২২ এপ্রিল পাহালগামে হামলার পর থেকেই সাম্প্রদায়িক ও উসকানিমূলক কথা প্রচারের অভিযোগে পাকিস্তানের মোট ১৬টি ইউটিউব চ্যানেল সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। ফলে ভারত থেকে এই চ্যানেলগুলোতে বর্তমানে আর প্রবেশ করা যাচ্ছে না। বলিউড শিল্পীরা কাশ্মীর হামলার প্রতিবাদ জানালেও পাকিস্তানি শিল্পীরা এই নিষেধাজ্ঞার খেলায় অংশ নেননি। জল আর কত দূর গড়ায়, এবার সেটিই দেখার বিষয়।
/শাকিল