ঢাকা ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

একান্ত সাক্ষাৎকারে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ৪ বছরে ন্যাশনাল ব্যাংক আর্থিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করবে

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১০:০৫ এএম
আপডেট: ১২ মে ২০২৪, ১০:১৭ এএম
৪ বছরে ন্যাশনাল ব্যাংক আর্থিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করবে
আলহাজ খলিলুর রহমান

ন্যাশনাল ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কেডিএস গ্রুপের কর্ণধার আলহাজ খলিলুর রহমান বলেছেন, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সবাই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তাদের সেই অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাংকটির আর্থিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধারে চার বছরের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনায় প্রথমেই আছে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে গ্রাহককে অনুপ্রাণিত করা। তাতে কাজ না হলে পরবর্তী সময়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ। আমানতকারীদের স্বার্থের পুরোপুরি সুরক্ষা দেওয়া এবং নতুন আমানত সংগ্রহ অভিযান জোরদার করাও এ পরিকল্পনার অংশ। তিনি জানান, এসবের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে পূর্বের ন্যায় লাভজনক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া এ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। 

খবরের কাগজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আলহাজ খলিলুর রহমান আরও বলেন, ব্যাংকটির সম্পদ ও দক্ষ জনবল আছে। একই সঙ্গে আছে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকটির ব্যবসায়িক সুনাম। আমি সবাইকে অনুরোধপূর্বক নির্দেশ দিয়েছি যেন গ্রাহকের সঙ্গে বিনয়ী ব্যবহার করা হয়। গ্রাহকসংখ্যা বাড়াতে হলে, ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে হলে গ্রাহক তথা জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ইতোমধ্যে শেয়ারবাজারে ব্যাংকটির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৫ টাকা থেকে প্রায় ৭ টাকা হয়েছে। আমি পর্ষদ সদস্যদের নিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করব যেন ব্যবসায়ীদের অধিকহারে ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত করা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংক কার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কীভাবে টাকা গেছে, তার সবকিছুই সবাই জানে। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা একত্রিত হয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে সেটা বলেছি। কষ্ট করে চালাব। পরিশ্রম এবং সততা থাকলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। যাদের কাছে টাকা পাওনা রয়েছে তা আদায় করতে হবে। তাদের বোঝাব। ডিপোজিট আনব। ব্যবসা করব। একসময় বছরে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা লাভ করেছি। ৯০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছি। সেই ইতিহাস আমাদের আছে। 

খলিলুর রহমান বলেন, আমিসহ পর্ষদের সব সদস্য দায়িত্ব নিয়েই খেলাপি গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছি। ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

তিনি জানান, কিছু বড় ঋণখেলাপির সঙ্গে তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করলে তারা তাকে কথা দিয়েছেন টাকা ফেরত দেবেন। জমি বিক্রি করে হলেও টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। 

নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ভুয়া কাগজপত্রের বিপরীতে নেওয়া ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের চিহ্নিত করতে সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বন করা হবে। প্রয়োজনে ঋণ অনুমোদন ও ছাড়ের পর ঋণগ্রহীতার অনুকূলে ইস্যু করা চেক কোন ব্যাংক থেকে ক্লিয়ারিং করা হয়েছে, তা অনুসন্ধান করা হবে। তারপর ওই সব খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে খুঁজে বের করে ব্যাংকের টাকা উদ্ধার করা হবে। তিনি জানান, ব্যাংকটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের শাখাপ্রধানদের এক মতবিনিময় সভায় এসব পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের নিজেদের স্বার্থে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করা ও সার্বিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা অর্থ জনগণের আমানত। আমরা সে অর্থের খেয়ানত বরদাশত করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে বর্তমান পর্ষদ খুবই কঠোর হবে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আগামী চার বছরে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। 

অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের মাত্র ২৫ শতাংশ খেলাপি। এখনো ব্যাংকের হাজার হাজার গ্রাহক ও তাদের আমানত আছে। তারা নিয়মিত লেনদেন করছেন ব্যাংকে। এটিই আমাদের শক্তি। ব্যাংকটি একীভূত করার কথা বলা হয়েছে। যখন এটা জানতে পেরেছি তখন ব্যাংকের পর্ষদ সভায় বসে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমরা একীভূত হব না। কারণ যে ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা বলা হচ্ছিল ওই ব্যাংক থেকে ন্যাশনাল ব্যাংক অনেক শক্তিশালী। আমরা কেন তাদের সঙ্গে একীভূত হব। প্রয়োজনে নতুন পর্ষদ গঠন করে ব্যাংক চালাব। তাই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছি অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার বিষয়টি। 

তিনি বলেন, আমরা ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করার পর এটি দেশের শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিল। একীভূতকরণের কারণে এ ব্যাংকের কারও জীবিকার্জনের ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাক সেটি আমরা চাই না। ব্যাংকটির সব কর্মীরও একই মতামত। তারা ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনে সফল হবে বলে বিশ্বাস করেন। এটিও আমাদের ভরসার স্থান। 

খলিলুর রহমান বলেন, আমরা জানি ব্যাংক কীভাবে চালাতে হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি বাংলাদেশের এক নম্বর কাতারে ছিল। এটি বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক। আমাদের যারা পরিচালক ছিলেন সবাই অভিজ্ঞ। পরিচালকরা সবাই ব্যবসায়ী ছিলেন। অভিজ্ঞতা দিয়েই ব্যাংকটিকে তারা এত দূর নিয়ে এসেছেন। আমি নিজেই অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়েছি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। প্রচুর মানুষকে চাকরি দিয়েছি। আমার একমাত্র চাওয়া-পাওয়া হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। আমার কাছে এসে কেউ সহযোগিতা না পেয়ে ফেরত যায়নি। ইন্শাআল্লাহ এই ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা ফেরাতেও সক্ষম হব।

ব্যবসা চাঙা করতে চাই প্রণোদনা

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
ব্যবসা চাঙা করতে চাই প্রণোদনা
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া

ডলারসংকটের কারণে মোটরসাইকেলের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। বাড়তি দামের কারণে এটি জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিক্রি না বাড়ায় এ ব্যবসায় চলছে মন্দাভাব। পরিস্থিতি উত্তরণে এ খাতকে চাঙা করতে প্রণোদনা চান ব্যবসায়ীরা। খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে বাজাজ মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান উত্তরা মোটরর্সের চট্টগ্রাম সেল সেন্টারের শাখা প্রধান মুজিবর রহমান ভুঁইয়া মোটরসাইকেল ব্যবসার বিস্তারিত দিক তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টগ্রাম অফিসের স্টাফ রিপোর্টার আবদুস সাত্তার। 

খবরের কাগজ : মোটরসাইকেল ব্যবসা কেমন চলছে ? 
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া: মোটরসাইকেল ব্যবসা এখন আগের মতো নেই বললে চলে। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে মোটরসাইকেল। দিন দিন দাম বেড়ে যাচ্ছে। এক সময় সর্বনিম্ন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। এখন সেই গাড়িগুলো দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে মোটরসাইকেল বিক্রিতে। 

খবরের কাগজ : মোটরসাইকেল ব্যবসা মন্দা হওয়ার কারণ কি ? 
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল। আবার গাড়ির দাম বৃদ্ধিরও প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দামের প্রভাবও পড়েছে। এখন কম দামে গাড়িতো দেওয়া যাচ্ছে না। মানুষের চাহিদা টাকার ওপরও নির্ভর করে। গাড়ির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা কমে গেছে। 

খবরের কাগজ : বাজাজ মোটরসাইকেলের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দাম কত ? 
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : বাজাজ মোটরসাইকেল ১০০ সিসির গাড়ি সর্বনিম্ন দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আবার ২৫০ সিসির গাড়ি আছে সেগুলো ৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। বলতে গেলে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মধ্যে বাজাজ গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। বাজাজ গাড়ির গুণ ও মানের কথা বিবেচনায় এ দাম রাখা হয়েছে। 

খবরের কাগজ : বাজাজের গাড়ি বিদেশে রপ্তানি হয় কি ? 
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : বাজাজের গাড়ি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি হয় না। আমাদের ঢাকার মোটরসাইকেল কারখানাতে গাড়ি গুলো অ্যাসেম্বলি হয়। বাজাজের মূল কারখানা ভারতে। 

খবরের কাগজ : বাজাজ পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয় গাড়ি প্রস্তুত করছে কি ? 
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : অবশ্যই বাজাজের সব গাড়ি পরিবেশবান্ধব। জ্বালানি সাশ্রয় করে ১০০ ও ১২৫ সিসির বাইকগুলো বানানো। কিন্তু বেশি দামি বাইকগুলোতে জ্বালানি সাশ্রয় করা যাবে না। বেশি সিসির গাড়িগুলো সর্বসাধারণের জন্যও নয়। এগুলো স্পেশাল। এ গাড়িগুলো যারা চালাবে তারা জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করবে না। 

খবরের কাগজ : বাংলাদেশের চাহিদার ওপর নির্ভর করে নতুন গাড়ি প্রস্তুত করা হবে কি না ? 
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : আমাদের দেশের চাহিদার কথা বিবেচনা করে নতুন গাড়ি আনার প্রক্রিয়া চলছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রেখে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব গাড়ি আনা হবে। আবার বেশ কিছু ফ্যাশনেবল গাড়িও আসবে। তবে এ গাড়িগুলো মডেল বা মাইলেস এখানে বলা যাবে না। বাজাজ একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড তাই গুণগত মান ধরে রেখে নতুন গাড়ি আনা হবে। 

খবরের কাগজ : ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স অফিসের কোনো ঝামেলা বা হয়রানি পোহাতে হয় কি না ? 
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : উত্তরা মোটরসের সব গাড়ি শত ভাগ ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধের মাধ্যমে আমদানি ও বাজারজাত হয়ে থাকে। সুতরাং এখানে ভ্যাট ও ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের ঝামেলা করার মতো কিছুই নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়রানি করার চেষ্টা করা হলেও কাগজপত্র ঠিক থাকায় হয়রানির স্বীকার কম হতে হয়। 

খবরের কাগজ : কয়েক বছর আগের তুলনায় এখন কি পরিমাণ গাড়ি বিক্রি হয় ? 
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : করোনার আগে চট্টগ্রামে প্রতি বছর গড়ে ৭ হাজার পিস করে বাইক বিক্রি হয়েছে। সেটি নামতে নামতে এখন প্রতি বছর ৩০০০ পিসে চলে এসেছে। করোনা পরিস্থিতির পর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সেটির প্রভাব পড়েছে এই শিল্পে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। আর ক্রয়ক্ষমতা কমার ফলে মোটরসাইকেল বিক্রি কমে গেছে।

খবরের কাগজ : বাইক ব্যবসায় মন্দাভাবকে চাঙা করতে আপনার পরামর্শ কি ? 
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : অবশ্যই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বাজাজ ছাড়াও যেসব কোম্পানির বাইক বাজারে পাওয়া যায় সবার অবস্থা একই। কারোর ব্যবসা ভালো না। সুতরাং এই মন্দাভাবকে চাঙা করতে হলে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। প্রণোদনা দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। 

খবরের কাগজ : আপনাকে ধন্যবাদ।
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকারে মুজিবুর রহমান হাওলাদার পানির হিস্যা বুঝে নিতে চাই

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ এএম
পানির হিস্যা বুঝে নিতে চাই
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার। বাংলাদেশের নদ-নদী ও পানি প্রবাহ নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। আগস্টের আকস্মিক বন্যায় ফেনীসহ ১২ জেলা প্লাবিত হওয়ার পর আলোচনায় আসে বাংলাদেশ-ভারত পানি বণ্টন ও অভিন্ন নদী চুক্তির বিষয়গুলো। বাংলাদেশ কেন নদী রাজনীতিতে পিছিয়ে আছে? বাংলাদেশের সঙ্গে নদী চুক্তিতে ভারতের অনীহা কেন? চীনের আগ্রহ কেন তিস্তাতে? এসব বিষয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের হেড অব ডিজিটাল গোলাম রাব্বানী

খবরের কাগজ: সম্প্রতি ফেনীসহ দেশের ১১ জেলায় যে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, এর পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। ভারত নিজেও স্বীকার করেছে যে, তারা মুহুরী নদীর বাঁধ খুলে দিয়েছিল। প্রতিবেশী দেশকে আগাম বার্তা না দিয়ে এভাবে কী নদীর বাঁধ হুট করে খুলে দেওয়া যায়? 

মুজিবুর রহমান হাওলাদার: আমি বলব যে, বাঁধ বানানো তাদের অন্যায় হয়েছে। আমাদের অনুমতি নিয়ে বাঁধটা বানানো উচিত ছিল। তারা তো আমাদের আপার রায়পেরিয়ান কান্ট্রি। আমরা ডাউন রায়পেরিয়ান কান্ট্রি। আমাদের যে ইন্টারন্যাশনাল ড্রেনেজ সিস্টেম/বেসিন, নদী, নালা-খাল-বিল, এগুলোর প্রবাহ অবিচ্ছেদ্য। উজান থেকে ভাটি অঞ্চলের মধ্য দিয়েই আমাদের বঙ্গোপসাগরে ভারতের অতিরিক্ত পানিসহ সব ময়লা-আবর্জনা, সিল্টস-সেডিমেন্টস প্রবাহিত হয়, যার ফলে ভারত হয় পরিচ্ছন্ন ও জঞ্জালমুক্ত! একবার ভেবে দেখুন তো এই প্রবাহ পথ যদি কোনো কারণে সংকুচিত কিংবা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ভারতের কী অবস্থা হবে! আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে, পারস্পরিক সম্পর্ক-সহযোগিতা ও প্রকৃত সাহায্য ও শ্রদ্ধাবোধ কত জরুরি। কাজেই বাংলাদেশের অবস্থান ভাটির দেশ বলে কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবা প্রতিবেশীর একেবারেই অনুচিত হবে। ফলে দুটো বন্ধুপ্রতিম দেশের পানি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন একই প্রাকৃতিক বন্ধনে ঐতিহাসিকভাবেই গড়া। এ গভীর সত্যকে উপলব্ধি করেই ভাটির দেশের সমস্যা সমাধানের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

আপার রায়পেরিয়ান দেশ ভারত আমাদের পানিপ্রবাহকে বন্ধ করার জন্য বা উইথড্রো করার জন্য অথবা রিজার্ভ করার জন্য যেসব বাঁধ দিয়েছে, তা অবিলম্বে পুনর্মূল্যায়ন করবে সেটাই ডাউন রায়পেরিয়ান বাংলাদেশের মানুষের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও গভীর সত্যনির্ভর প্রত্যাশা। এসব একতরফা বাঁধ নির্মাণের ইম্প্যাক্ট তো ড্রাই সিজনে আমাদের ওপরে পড়েছে ও পড়বে। আপার রায়পেরিয়ান ড্রাই সিজনে পানিশূন্যতা মোকাবিলা করার জন্য তারা রিজার্ভ করে রাখছে, অ্যাট দ্য কস্ট অব ‘বাংলাদেশের প্রাপ্য নিয়মিত সাপ্লাই’, অর্থাৎ ফ্লো-টা যখন আসত বাংলাদেশই সেটা পেত। আমাদের নদীবিধৌত হতো, আমাদের এখানে কৃষি থেকে শুরু করে পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্যসহ অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ত। তো তারা যে কাজটা করেছে প্রথমে সেই স্থাপনাগুলো করাটাই ঠিক হয়নি।

খবরের কাগজ: বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের মানুষকে পানির কষ্ট দেয়। বন্যাতে অধিক পানি ছেড়ে দেয় আর শীত মৌসুমে পানির সংকট তৈরি করে। জনগণের এই সাইকোলজিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? 

মুজিবুর রহমান হাওলাদার: ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে না করলেও এটা তাদের স্বার্থ ও যৌথ পানি ব্যবস্থাপনার ওপরে তাদের যে প্রমিনেন্স বা ডমিনেন্স এটি বজায় রাখার কারণে এই ঘটনাগুলো ঘটছে। আর তার মারাত্মক প্রভাব জীবন ও আমাদের জনপদ ও জলপথের ওপর ডেট্রিমেন্টাল ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যাডভার্স অ্যাফেক্টস হিসেবে বাংলাদেশের ওপর পড়তে শুরু করেছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যে বন্যা মোকাবিলা করলাম, যা ছিল স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহতম। তো এই ইস্যুটা এখন মানুষের মনে আরও বেশি নাড়া দিচ্ছে যে, এত পানি কীভাবে অত্যন্ত তীব্র বেগে ওপর থেকে এল। একে শুধু অতিবৃষ্টির কারণ হিসেবেই দেখা যায় না।

বেশ কয়েকটা ফ্যাক্টর আমাদের মনে করতে হবে। একটা হলো যে, ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেছে কি না। আমি বলব যে, ‘না’। আমি যেটা মনে করি ইচ্ছাকৃত না হলেও ভারতের কারণেই যে এটা ঘটেছে সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় আমাদের নেই। ভারতের এটা করা উচিত ছিল না। কারণ ‘জাতিসংঘের নন নেভিগেশনাল ওয়াটার রিসোর্সের যে ‘কনভেনশনাল ক্লজেজ’ আছে, সেখানে কিন্তু স্পষ্ট করে বলে দেওয়া আছে যে রাইপেরিয়ান কান্ট্রিগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক ড্রেনেজ বেসিনগুলো আছে সে বেসিনগুলোর ওপরে কোনো স্থাপনা উভয় দেশের সম্মতিজ্ঞাপন ছাড়া একতরফা ভাবে করা যাবে না।’ ভারত যে বাঁধগুলো তৈরি করেছে সেগুলোতে আমাদের অনুমোদন নেই। তো এই জায়গাগুলোতে তারা পানি রিজার্ভ করে রাখছে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন করেই চলেছে; ত্রিপুরার কথা যদি ধরি, আবার একইভাবে আপনারা দেখবেন যে, তিস্তার গজলডোবায় তারা এই কাজটা করেছে, তো টিপাইমুখ বাঁধের কথাও বলুন, এরকম অনেক বাঁধ কিন্তু উজানে একতরফা ভাবেই তৈরি হয়েছে। 

খবরের কাগজ: দুই দেশের পানির ন্যায্য হিস্যা প্রতিষ্ঠার জন্য যৌথ নদী কমিশন গঠন হয়েছিল ১৯৭২ সালে। কিন্তু এই কমিশনও কার্যত নিষ্ক্রিয়...এই কমিশন কি দুই দেশের নদী সমস্যা সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?

মুজিবুর রহমান হাওলাদার: এই কমিশনের দুই বছর পর পর বা বছরে একটি মিটিং করার কথা। কিন্তু কার্যকর গবেষণা, গবেষণা দল বা কোথায় গবেষণার ফলাফল তার কিছুই আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি।

এসব ক্ষেত্রে তো আমাদের মানুষের মাঝে বিশ্বাসহীনতার একটা ব্যাপার তৈরি হয়েছে এই কারণে যে, দীর্ঘদিন তারা এই তিস্তা করবে করবে বলছে কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হয়নি।

খবরের কাগজ: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একমত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না...। এর থেকে বের হওয়ার অন্য কোনো পথ আছে কী বাংলাদেশের?

মুজিবুর রহমান হাওলাদার: অবশ্যই আছে। এটাকে বলে ওয়াটার ডিপ্লোম্যাসি। আমরা বলছি আমরা মিটিং করব, তো দ্বিপক্ষীয় সভা করতে পারি আমরা মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে; মিটিং করে আমরা কেন আমাদের সমস্যার ভয়াবহতা দেখাতে পারছি না। কেন মমতা ব্যানার্জিকে আমরা এখানে আমন্ত্রণ করে আনতে পারলাম না। কোনো একটা সমস্যা তো ছিলই, সেটা হয়তো রাজনীতির অপসংস্কৃতি!

হ্যাঁ ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তো অবিভক্ত বাংলার অংশ ছিল এই সেদিন অবধি। আমি মনে করি আমাদের সমঝোতার জায়গাটা বাড়াতে হবে। অতঃপর আমাদের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে হবে। আমাদের পানি ব্যবস্থাপনা কীভাবে আমরা সঠিক পথে এগিয়ে নিতে পারি। আমরা পার্টনারশিপে যেতে পারি চায়নার সঙ্গে, যেটা আমরা করেছি ইতোমধ্যে, যেভাবে এগোচ্ছিল সরকার তাকে বাস্তবতার নিরিখে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উইন-উইন অবস্থা তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে পারি।

খবরের কাগজ: চীনের আগ্রহ রয়েছে তিস্তা নিয়ে, আমাদের নদীর পানি বণ্টন বিষয়ে চীন কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?

মুজিবুর রহমান হাওলাদার: চীনের সঙ্গে আমাদের নেগোসিয়েশনের জায়গাগুলো ক্লিয়ার করতে হবে। এই জায়গাটা কীভাবে উইন-উইন সিচুয়েশনে যাওয়া যায় সেটা দেখতে হবে। তবে চীনের এসব বিষয়ে ভালো দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে। চায়না বলছিল যে দুই পাশে বাঁধ করবে এবং বাঁধ করে নদীকে ছোট করে দেবে, যদিও গভীরতা বৃদ্ধি করেই করতে ইচ্ছুক। কিন্তু নদী ছোট করবে কী কারণে? বরং নদীকে আপনি আরও গভীর করেন, গভীর করলে স্রোত বাড়বে। নদীর দুই তীর দখলের মাধ্যমে কোনো কনস্ট্রাকশন করার পরিকল্পনা আইনসংগত হবে না। শুধু বাঁধ যেটা পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করে যদি টেকসই করা যায়, তবেই করবে। কারণ বর্ষায় পানি ধারণ করাটাই কিন্তু বড় কথা না। একটা রিজার্ভ হিসেবে ও এটাকে এমন প্যারালালওয়েতে করতে হবে যে, শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের পানি শুষ্কতা ও নাব্যহীন অবস্থাকে যেন দূর করা যায়। তো সেরকম করে নদীর সোপানটা যদি আমরা করতে পারি, সেটা নিয়েই মনে হয় আমাদের আরও তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন আছে। আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, গবেষক আছেন তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এগোতে পারি।

খবরের কাগজ: অনেকেই এখন আলোচনা করছেন বাঁধের বিরুদ্ধে বাঁধ দেওয়া নিয়ে। সেটা কি আদৌ সম্ভব? 

মুজিবুর রহমান হাওলাদার: আমাদের অংশে তো আমাদের বাঁধ দিতে হবে। আমাদের সেই বাঁধে ভারতের তো কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু ভারত যদি মনে করে বাংলাদেশ নিচে আছে তার যখন ইচ্ছা পানি আসবে ছেড়ে দিবে, তারা বলছে যে উপচে ওপর দিয়ে পানি এসেছে। তাহলে বাঁধ করার কি প্রয়োজন ছিল? এখন এই বাঁধের প্রভাব পড়ছে সাউথ ইস্টার্ন রিজিওনে। জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের পানি সম্পদ নিয়ে যে কনভেনশন আছে সেটার সরাসরি লঙ্ঘন করছে ভারত। সেখানে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া আছে, ভারত এবং বাংলাদেশ সীমান্তে যে ৫৪টি নদী আছে সবগুলো থেকে একমত হয়ে উভয় পক্ষ সমান সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করবে। কিন্তু ভারত এর উল্টোটা করছে। তারা বলছে বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ এটা বিশ্বাস করে না। এটা অবশ্যই অনুসন্ধান করে দেখা উচিত। একটা কমিশন গঠন সেটা অনুসন্ধান করে দেখা হোক যে, ভারত সেখানে কেন বাঁধ নির্মাণ করেছে। যতই তারা বলছে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, পানির সংরক্ষণ করছে, কিন্তু বাঁধ নির্মাণের সময় তারা বাংলাদেশের কোনো অনুমোদন নেয়নি বলেই তার অবস্থান জানিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ কখনোই মনে করে না যে আমরা বন্যার প্রাদুর্ভাব থেকে একেবারেই মুক্ত হতে পারব। ভারতও তা হতে পারবে না। কারণ জলবায়ুজনিত যে পরিবর্তন এখন এসেছে, আর জলবায়ু পরিবর্তন যারা করছে: আমেরিকা, রাশিয়া ও চীন, যাদের সঙ্গে ভারতও কিন্তু দায়ী। আন্তর্জাতিক আদালতে তারা কিন্তু দোষী সাব্যস্ত। তারা আমাদের নদী দূষণ করছে! এবং তাদের থেকেও বয়ে-আসা পানিতে আমাদের অর্থনৈতিক ও কৃষি খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। জীবন ও জীবিকার বিনাশ ঘটেই চলেছে এখানে!

খবরের কাগজ: পানি বণ্টন রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল, এ কথাটা আসলে কতটা সত্য?

মুজিবুর রহমান হাওলাদার: হ্যাঁ, কথাটা সত্য। তবে সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। বাংলাদেশের যারা পার্টনারশিপে এই বিষয়টা নিয়ে কাজ করছে তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই দুর্বল অবস্থানে থাকে এবং সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য, যা দেশের মানুষ এখন বলছে, সরকারের যা করা উচিত ছিল তা করেনি। এবং আমরা এমন একটা সরকার চাই, যারা সংবিধান অনুযায়ী দেশের সকল প্রাকৃতিক/পাবলিক সম্পদ/সম্পত্তি রক্ষায় জনগণের জন্য কাজ করবে। আমরা সঠিক ওয়াটার ডিপ্লোম্যাসি করতে পারিনি; যার কারণে আমাদের যে সফলতাটা দেখতে চাচ্ছিলাম সেটির দোরগোড়ায় গিয়েও আমরা ঝুলে আছি। 

খবরের কাগজ: যৌথ নদী কমিশন নিষ্ক্রিয় কেন? 

মুজিবুর রহমান হাওলাদার: যৌথ নদী কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। এই কমিশনের কোন মানে নেই বলে পর্যালোচনায় সবাই মিলে দাবি তুলছে। এটা ঝুলিয়ে রেখে আমাদের সমস্যা আর কোনো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আমাদের যে চুক্তি, তা হচ্ছে জি-টু-জি। কিন্তু না, এটা হতে হবে স্টেট-টু-স্টেট। এবং ইন্টারন্যাশনাল যে কনভেনশন সেখানে বলে দেওয়া আছে যে রাষ্ট্র-টু-রাষ্ট্র সমাধান করবে। প্রধানমন্ত্রী-টু-প্রধানমন্ত্রী এগুলো সমাধান হবে না। এটার কোনো গোপন দলিল হওয়া উচিত নয়। যতটুকু তারা জানাবে ততটুকুই জানা যাবে, এর বাইরে কিছু জানা যাবে না- এটা কেন? নদী, নালা, খাল-বিল স্রষ্টার দেওয়া সম্পদ, এই সম্পদ সবার।

খবরের কাগজ: অনেকেই মনে করছেন ভারতের আশায় বসে না থেকে নদীর পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে আমাদের তৃতীয় পক্ষের কাছে যাওয়া উচিত। যেমন বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ অনুষ্ঠিত হয়েছে... এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার সময় কী হয়েছে আমাদের? 

মুজিবুর রহমান হাওলাদার: অবশ্যই পারি। তিস্তা প্রকল্পে যেহেতু ভারত এগিয়ে আসছে না এবং চীন আগ্রহ দেখিয়েছে সেখানেও আমরা বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা নিতে পারি। এবং এ প্রকল্পে আমি বলব নেপাল-ভুটান তারাও আমাদের সঙ্গে জয়েন করুক। আমরা যেমন ভারতের জনগণেরও সুযোগ-সুবিধা চাই, তারা সুখে থাকুক, ভালো থাকুক, সঙ্গে আমরাও। আমরা শেয়ার করব। আমাদের নদী পথ রক্ষা করতে হলে, কোন জায়গায় কতটুকু কীভাবে উন্নয়ন অত্যাবশ্যক এটা নিয়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এমনকি স্পারসোরও বাস্তবভিত্তিক স্টাডি করা জরুরি । শত বছরের পুরোনো ডেটা থেকে শুরু করে নিকট অতীত ও বর্তমান এবং আগামী দিনে কী হতে পারে এসব ডেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। 

খবরের কাগজ: ভারতের সঙ্গে আমাদের যে অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে এই নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টনের জন্য আমাদের দ্রুত কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন? 

মুজিবুর রহমান হাওলাদার: দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানি সুষম বণ্টনের জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। সেসব মিটিংয়ে কী কী তথ্য-উপাত্ত (ডকুমেন্ট) উপস্থাপন করতে হবে, সেসব নিয়ে আগে থেকে বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি নিতে হবে। শুধু একটি মন্ত্রণালয়ের আশায় থাকলে কার্যকর ফল আসবে না। নদী বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দেশের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ বিষয়ে সবচেয়ে ভালো জানে না। আমি শুধু বলতে চাই আমাদেরকে নিজের স্বার্থের ব্যাপারে দায়িত্ববোধের সৎ, সাহসী ও নির্ভীক হতে হবে। সত্য কথা সাহস নিয়ে দায়িত্ববোধের সঙ্গে বলতে হবে। 

খবরের কাগজ: আপনি বলছিলেন আমরা ডিপ্লোমেটিক জায়গায় খানিকটা দুর্বল। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?

মুজিবুর রহমান হাওলাদার: উত্তরণের জন্য প্রথমেই ৫৪টি নদীর কী অবস্থা তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে হবে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ, তবে খুব জরুরি। শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ ৫-৭টি নদীর হাইড্রোমরফলজিক্যাল, জিও টেকনিক্যাল স্টাডিজ এবং ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট স্টাডি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে হবে। এরপর আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা আগে দূর করতে হবে। দুর্যোগে শুধু অন্যদের দোষ দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। সমস্যা দুই পক্ষেই রয়েছে। ভারত থেকে পানি এসেছে বিষয়টি যেমন সত্যি, তেমনি আমাদের দুর্বল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও এই বন্যার জন্য দায়ী। আমাদের নদী-খালগুলো যদি আরও প্রশস্ত আর গভীর হতো তাহলে এত মৃত্যুর মিছিল আজ দেখতে হতো না। ভারত থেকে বন্যার পানি এলেও তা সহজেই বঙ্গোপসাগরে নেমে যেত। তাই আমি মনে করি প্রথম কাজ হচ্ছে আমাদের নিজেদের কাজটুকু সঠিকভাবে করা। এই সংকট কিন্তু বারবার ফিরে আসবে। তাই এখন যারা সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ে আছেন বিশেষ করে উপদেষ্টামণ্ডলীর সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে এই দুর্যোগ মোকাবিলায় আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। নদী-খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর আইন রয়েছে তার প্রয়োগ করতে হবে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতির যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। এই জায়গায়ও বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। এবারের বন্যা মোকাবিলায় ছাত্ররা যেভাবে এগিয়ে এসেছে, সেটা অবশ্যই প্রসংশনীয়। তবে আমাদের বন্যা ব্যবস্থাপনার পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না। উপকূলে যেমন সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে তেমন ফ্লাড রেসকিউ সেন্টার/ টাওয়ার তৈরি করতে হবে। হঠাৎ বন্যা হলে মানুষ যেন সহজেই সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। এ ছাড়া বন্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব যেমন বোট, নৌকা, লাইফজ্যাকেটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকবে সেখানে। 

এত গেল ভেতরের কথা। আন্তর্জাতিকভাবে ভারত, চীন, ভুটান অর্থাৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে মিলে আকস্মিক এই বন্যার কারণ খুঁজতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্বনেতাদের সাহায্য চাইতে হবে। এবং আন্তর্জাতিকভাবে এই বন্যার কারণ এবং প্রভাবের রিপোর্ট জাতিসংঘের কাছে পেশ করতে হবে। দ্বিপক্ষীয় আইন কার্যকর না হলে আন্তর্জাতিক আইনে যেভাবে বলা আছে সেভাবেই আমরা নিজেদের হিস্যা বুঝে নিতে চাই।

সাক্ষাৎকারে আবুল কাসেম ফজলুল হক অপশক্তি গণতন্ত্রকে রোধ করতে পারে না

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:২২ এএম
আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৪ এএম
অপশক্তি গণতন্ত্রকে রোধ করতে পারে না
আবুল কাসেম ফজলুল হক

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খবরের কাগজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন খবরের কাগজের সিনিয়র সহসম্পাদক সানজিদ সকাল

খবরের কাগজ: অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী? 
আবুল কাসেম ফজলুল হক: অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের উচিত দেশকে ভালো অবস্থানে নিয়ে আসা। প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা নিয়ে একটি রাষ্ট্র বেশি দিন চলতে পারে না। উপদেষ্টা পরিষদে আলী ইমাম মজুমদারকে যুক্ত করা হয়েছে। তার সহযোগিতা নিয়ে হয়তো সংস্কার করে দেশকে শৃঙ্খলায় আনার চেষ্টা করা হবে। জনগণের মধ্যেও এক ধরনের স্থিরতা দরকার। পুলিশ, সামরিকবাহিনীর ক্ষমতা দুর্বল হলে রাষ্ট্রের ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে যায়। আমরা চাই, দ্রুতই রাষ্ট্র এই দুরবস্থা থেকে মুক্ত পাক। প্রতিপক্ষকে দমনপীড়ন করা মোটেও ঠিক নয়। দেশকে স্থিতিশীল রাখতে দুই পক্ষের উপস্থিতি প্রয়োজন। যারা রাজনীতি করবেন, তাদের রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত। মানুষের জীবন ও জীবিকা যাতে সহজ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নতুন সরকার যদি জনগণের কথা মাথায় রেখে কাজ করে তাহলে ভালো হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের কথাই তারা বারবার বলছেন, তাহলে সেভাবেই কাজ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

খবরের কাগজ: অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বাড়তে পারে কি ? এই সরকার দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কি? এ ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই। 
আবুল কাসেম ফজলুল হক: দেশে জরুরি অবস্থা জারি থাকার একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। অন্তর্বর্তী সরকারেরও একটা মেয়াদ থাকে। সংবিধানে উল্লেখ আছে- অন্তর্বর্তী সরকার যদি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের কাজ শেষ করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে সময়সীমা বাড়তে পারে। দেশে এখন কোনো জরুরি অবস্থা জারি নেই। নতুন সরকার যেভাবে ক্ষমতায় এসেছে এবং সাংবিধানিকভাবে যেভাবে কাজ করার কথা ছিল, সেভাবে কাজ করছে না। উপদেষ্টারা তাদের নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে তেমন কোনো পরামর্শমূলক আলোচনা দেখছি না। এটা অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত বলে মনে হচ্ছে। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রভাব বিস্তার করছে কি? 
আবুল কাসেম ফজলুল হক: বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই আমেরিকা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। যুক্তরাষ্ট্র গত তিন-চার বছর ধরে শেখ হাসিনার সরকারে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছে। দেশটির উদ্বেগ হলো- বাংলাদেশ কেন চীনের দিকে গেল? বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থাকুক। আমরা গণমাধ্যমে দেখি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে ভীষণ উদ্বিগ্ন। তাদের লক্ষ্য- বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রপন্থি হোক। চীন, রাশিয়া বা ভারতপন্থি হতে দেওয়া যাবে না। বিএনপি একটি অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, ভারত বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি করছে। বিএনপির জন্মের আগে থেকে জিয়াউর রহমান এই ধরনের ভারতবিরোধী কথা বলে আসছিলেন। জিয়াউর রহমানের সব নীতি ভারতবিদ্বেষী ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রপন্থি ছিল। এতে কোনো সুফল বয়ে আসবে না। ভারতকে কখনোই এতটা শত্রু মনে করা ঠিক নয়। ভারতের কাছে আমরা কী পেতে পারি, আমরা কী চাই, সে ব্যাপারে রাষ্ট্র ঠিকমতো তার দাবি তুলে ধরলেই হয়। আমরা দেখেছি, গত ১৫ বছরে ভারত বাংলাদেশ থেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, কিন্তু সেই তুলনায় দিল্লির কাছ থেকে ঢাকা তেমন কোনো সুবিধা নিতে পারেনি। যেমন- তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে বড় সমস্যায় আছে বাংলাদেশ। তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার একরকম বলে- আবার পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার আরেকরকম বলে। এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ভারত বরাবরই বাংলাদেশ থেকে অনেক সুবিধা নিয়েছে। বাংলাদেশ কখনোই ভারতের ওপর নির্ভরশীল নয়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারতের কাছ থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা নিতে পারি, কিন্তু নেওয়াটা ঠিক হবে না। তাহলে উল্টো পক্ষও বাংলাদশের পক্ষে থাকবে না। সব দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। এখন যে নতুন সরকার আছে, তারা মনে হয় সম্পূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের পথে হাঁটছে। নতুন সরকার হয়তো এখন স্পষ্ট করে কিছু বলছে না, কিন্তু কিছুদিন গেলে হয়তো মুখোশ বের হয়ে আসবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন উল্টো পথে যাওয়া ঠিক হবে না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি শেখ হাসিনা সরকার যেই ধারায় বা নীতিতে রেখে গেছেন, সেভাবেই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে হবে যেকোনো মূল্যেই। বহিঃশক্তির চাপে আমরা যদি ভারত, চীন ও রাশিয়াবিরোধী হয়ে যাই, তাহলে সেটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনবে না। 

খবরের কাগজ: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করলে ভারতের জন্য তা হুমকিস্বরূপ হবে কি না? বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন। 
আবুল কাসেম ফজলুল হক: ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু ভারতের মনমোহন বা বর্তমান মোদি সরকার কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিচালিত হতে রাজি হননি। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নীতি বা পরামর্শ ভারত মেনে নেয় না। ভারত নানাভাবে তাদের প্রস্তাব এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে। বাংলাদেশকেও যেকোনো একটা ব্লকে থাকতে হবে। একটা চীন-রাশিয়া ব্লক। আরেকটা আমেরিকান ব্লক। আন্তর্জাতিকভাবে চীনের শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে। বর্তমানে চীন, রাশিয়া ও ভারতের জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন ও কানাডার জোট বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। বর্তমান পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক রেখে নতুন করে উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে যাওয়া মোটেও ঠিক হবে না। বাংলাদেশের রাষ্ট্র হিসেবে এবং জাতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে জড়ানো ঠিক হবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নষ্ট করার খুব চেষ্টা করবে। যুক্তরাষ্ট্র অনেক শক্তিশালী দেশ বলে তারা কোনো কিছু আমাদের ওপর চাপিয়ে দিলে তা প্রতিরোধ করতে পারব না। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী দেশে পরিণত হয়েছে। এখন সারা বিশ্বে দেশটি আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে। 

খবরের কাগজ: আমলা ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের পদত্যাগের বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন? 
আবুল কাসেম ফজলুল হক: কোনো কিছুতেই বাড়াবাড়ি ঠিক নয়। তবে যারা পদত্যাগ করছেন, তাদের পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ আছে। ভালো কর্মকর্তার কখনোই পরাজয় হয় না। অফিসারদের সততা থাকা উচিত। যাদের মধ্যে সততা ও নৈতিকতার অভাব রয়েছে তারা এক দিন ঝরে যায়। সব অফিস এখনো ভালোমতো খোলেনি। এটা দেশের জন্য ভালো কোনো লক্ষণ নয়। 

খবরের কাগজ: অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে ছাত্রদের রাখার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? নতুন সরকার কোনো দল গঠন করতে পারে কি না। 
আবুল কাসেম ফজলুল হক: ড. ইউনূস থেকে শুরু করে যারা উপদেষ্টা আছেন, তারা অদূর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির দিকেই ঝুঁকছেন। মনে হয় তাদের কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের অভিপ্রায় রয়েছে। তারা মাইনাস-২ প্লান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এর আগেও এক বছর ১১ মাস ‘জরুরি অবস্থা’ জারি ছিল। তখন ইয়াজউদ্দিন আহমেদ, সাহাবুদ্দিন ও মঈনুদ্দিন সাহেব দেশের সরকার পরিচালনা করেছেন। সেই সময় তারাও ১৫ জন উপদেষ্টা নিয়েছিলেন। ওই তিনজনও ১৫ জন উপদেষ্টার বুদ্ধি-পরামর্শেই কাজ করতেন। তাদের মূল কাজ ছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দুর্বল করে দেওয়া। নিজেরাই একটি রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলবে এবং তার ভিত্তিতেই বাংলাদেশের রাজনীতি চলবে। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য তারা সফল করতে পারেননি। তাদের সেই মনোবল ও সাহস গড়ে উঠছিল না। অন্তর্বর্তী সরকারের মূল উদ্দেশ্য এখনো তেমন বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, তারা মাইনাস-২ ফর্মুলা অনুযায়ী কাজ করছে। অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তারা চলে যাবে। উপযোগী পরিবেশ তৈরি হতে যদি বেশি সময় লাগে তাহলে তারা থাকবে বলেছে। এতে বোঝা যায়, এরা সহজে ক্ষমতা ছাড়বে না। 

খবরের কাগজ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ইতিহাসের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পোড়ানো এবং তার ম্যুরাল ভেঙে ফেলাকে আপনি কীভাবে দেখছেন। 
আবুল কাসেম ফজলুল হক: শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু একাই দেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই কথাটি শেখ হাসিনা অতিরঞ্জিত করে বলেছেন। এটা বলা মোটেও ঠিক হয়নি। স্বাধীনতার নেতৃত্বের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে তাজউদ্দীনের নাম রাখা উচিত ছিল। তা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের সঙ্গে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামানসহ অন্যরাও স্বাধীনতার সময় দেশ পরিচালনা করেছেন। কাজেই শুধু বঙ্গবন্ধুকে রেখে বাকি সবাইকে উহ্য রাখাটা ঠিক হয়নি। শেখ হাসিনা কখনোই এদের নাম উল্লেখ করেননি। এ কারণে অনেকেই শেখ হাসিনার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। তার প্রতি এই অভিযোগ কখনোই ফেলে দেওয়া যায় না। এদের একসঙ্গে নিয়ে চললে হয়তো সমস্যা হতো না। জনগণ স্বভাবগতভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন চায়। সরকার পরিবর্তন হতে হলে চলমান সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে উন্নততর চিন্তা করা দরকার। আগে রাজনীতিবিদ বা রাজনৈতিক দলের অনেক গুরুত্ব ছিল, কিন্তু এখন তা নেই। এখন যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে, তাদের মূল অভিপ্রায় বোঝাটা কঠিন। এই সরকার যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে, তা স্পষ্ট। অল্প সময়ের মধ্যে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করা যাবে না। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে। জনগণ জাগলে কোনো অপশক্তিই গণতন্ত্রকে রোধ করতে পারে না।

খবরের কাগজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আবুল কাসেম ফজলুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকারে ফরহাদ মজহার পতন হয়েছে ছাত্রদের প্রজ্ঞার কাছে

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০৯:২০ এএম
আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:২৭ পিএম
পতন হয়েছে ছাত্রদের প্রজ্ঞার কাছে
ফরহাদ মজহার

কবি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ফরহাদ মজহার। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পেছনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়। তার জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অন্তর্বর্তী সরকার, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, আগামী নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের পতনের কারণ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। তার দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশ হলো আজ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন খবরের কাগজের হেড অব ডিজিটাল গোলাম রাব্বানী

খবরের কাগজ: সিএনএনসহ বিশ্বের কয়েকটি গণমাধ্যম ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানকে জেন-জিদের অভ্যুত্থান বলছে। কিন্তু আপনি এর বিরোধিতা করছেন, এর কারণ কী?

ফরহাদ মজহার: প্রথমত জেন-জি বিষয়টা হচ্ছে বিল গেটস মার্কা কর্পোরেট টার্ম। এক ধরনের কর্পোরেট মিথ। যুক্তরাষ্ট্রের ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন জেনারেশান বোঝাতে এই টার্ম ব্যবহার করা হয়। মনে করা হয় জি-জেন আসলেই কিছু জানে না, যা কিছু জানে তার সীমানা হচ্ছে এই ফেসবুক, ইন্সট্রগাম, টিকটক -- এতটুকুই তাদের জগৎ। তারপরও তারা তথাকথিত ‘স্মার্ট’, কারণ তারা ইমিডিয়েট অ্যাকশন চায়। যা চাইবার তা সরাসরি চায়, ইত্যাদি। 
কিন্তু বাংলাদেশের তরুণতা তো সেই রকম না। তারা একটা বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে, তার ঐতিহাসিক ও ভূরাজনৈতিক তাৎপর্য নেক গভীর। তার মানে সমাজ, ইতিহাস এবং বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের উপলব্ধি ও জানাশোনা অনেক গভীর।
তাছাড়া বাংলাদেশের তরুণরা তো একটা অ্যান্টি কলোনিয়াল এন্টি ইম্পেরিয়ালিস্ট মুভমেন্টের সঙ্গে জড়িত।  দীর্ঘকাল তারা ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। জেন-জিদের পক্ষে এই ধরণের বিপ্লব ঘটানো অসম্ভব। ইম্পসিবল।  বিপ্লব করেছে তারাই, যারা সমাজ, ইতিহাস ও বস্তবতা সম্পর্কে জানে। কোথায় জেন-জিরা বাংলাদেশের মতো বাংলাদেশে বিপ্লব করেছে আমাকে দেখান তো। তাছাড়া জেন-জি সংক্রান্ত কর্পোরেট ধারণার অনুমান হচ্ছে তারা তাৎখণিক ভাবে প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করতে, তারা রাষ্ট্র চালাতে অক্ষম।। বাংলাদেশে তরুণদের সম্পর্কেও একটা অত্যন্ত ভুল ধারণা আছে যে, তারা রাষ্ট্র চালাতে পারবে না। এটা বাজে কথা। তারা খুবই সক্ষম। 

যারা এই নেতৃত্ব দিয়েছে আমি তো প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। দীর্ঘকাল তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। তারা এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিচালনা করতে খুবই সক্ষম। এরা এই বিপ্লব ব্যররথ হতে দেবে না। এরা জেন-জি বা ফেন-জি না, এরা বিল গেটস ফিল গেটস বুঝে না। এরা জাকারবার্গ বুঝে না, জাকারবার্গকে ব্যভার করে মাত্র, টেকনলজি ওদের কাছে অস্ত্র মাত্র। কিন্তু তারা টেকনলজির প্রডাক্ট না। 

খবরের কাগজ: দেশে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে এই সরকারকে কতদিন সময় দেওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন? 

ফরহাদ মজহার: এটা আগে থেকে বলা মুশকিল। এ ক্ষেত্রে আপনি কিছু নীতিগত বিষয়ে একমত হতে পারেন। আমি যতটুকু জানি বিএনপি এবং জামায়াত অত্যন্ত ভালো পজিশন নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর পজিশন আরও ভালো। তারা বলছে, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি, তাদের ভালোর জন্য কাজ করি। চফলে এ সরকার যতদিন ভালো কাজ করবে আমরা তাদের সঙ্গে থাকব। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাইনি। হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, যেভাবেই হোক এই সরকারকে রক্ষা করতে হবে। আমরা ইসলামি সরকার চাইছি বলে ইন্ডিয়া যে ক্যাম্পেইন করছে, এটা ভুল ধারণা। 
যতোটকু বুঝি চরমোনাই পীরের যে দল তারাও চাইছে এই সরকার দীর্ঘকাল থাকুক। নির্বাচনের জন্য যখনই যারা চাপ দেবেন তখন আপনি বুঝবেন তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমরা কেমন দেশ চাই জনগণের কাছ থেকে তার রায় নিতে হবে। গঠনতন্ত্র জনগণের ইচ্ছাকে ধারণ করে, আর আইন জনগণের ইচ্ছাকে আইনি ভাষায় ব্যক্ত করে।

খবরের কাগজ: আপনি যে গঠনতন্ত্রের কথা বলছেন সেখানে আপনি কী কী দেখতে চান?

ফরহাদ মজহার: এক নম্বরে চাই ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করার অধিকার রাষ্ট্রের থাকবে না, ব্যাক্তির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা যাবে না। দ্বিতীয়ত চাই মানুষের জানমাল জীবিকা রক্ষা করবে রাষ্ট্র, তিন নম্বর আমাদের প্রাকৃতিক যত সম্পদ আছে, জনগণ সেই সম্পদের মালিক। এই সম্পদ যেন কোনোভাবে বিষাক্ত না হয়, নপষ্ট না হয়, বিদেশী শক্তি লুট করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এই সম্পদকে একটা শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে রূপান্তর করাই এখনকার কাজ। এরপর আদালত, প্রশাসন কীভাবে চলবে ঠিক করতে হবে, ইত্যাদি তো আছেই। 

খবরের কাগজ: বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যে ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছেন তাদের হত্যার বিচার কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে করা হবে। এই প্রক্রিয়াটি কী খুব সহজ হবে?

ফরহাদ মজহার: তিনি বলেছেন বাংলাদেশের আইনের অধীনে, এটা তিনি ভুল বলেছেন। আমি তো বলেছি বাংলাদেশের সংবিধান তো বেআইনি, তো এই সংবিধানের অধীনে প্রণিত সকল আইন ও সরকারও তো বেআইনি। বর্তমান সংবিধানের মাধ্যমে আপনি কী আইন করবেন? বাংলাদেশের যে আইনের অধীনে জামায়াতে ইসলামের নেতাদের বিচার হয়েছে সেটা আন্তর্জাতিক আইনের দিক থেকে ন্যায়বিচার হয় নি। তিনি কি সেই আইন দ্বারাই বিচার চাইছেন, এখনও তা পরিষ্কার না। 

এর আগে তো আমরা দেখেছি কী হয়েছে। প্যারালাল আইন দিয়ে আপনি অন্যায় কাজ করেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে আমরা বিতর্কিত হয়েছি। আপনি লোকজনকে ফাঁসিতে ঝোলাচ্ছেন। এটা কিন্তু ন্যায় বিচার হয়নি। আন্তর্জাতিক আইন তো আছে, আমরা কেন তাকে হেগে পাঠাতে পারব না। 
আমরা অবশ্যই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইসিসি বা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করব। 
খবরের কাগজ: ৫ আগস্ট গণভবন লুট, বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আগুন দেওয়া এবং সারা দেশে যে লুটপাট ও অগ্নি-সন্ত্রাস হয়েছে এই বিষয়গুলো কি নিয়ন্ত্রণ করা যেত না?

ফরহাদ মজহার: এটা করতে দেওয়া হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। গণভবন থেকে পাহারা তুলে নেওয়ার কোনো কারণ ছিল না। এটা কেন তুলে নেওয়া হলো? আমার প্রশ্ন আছে এখানে। গণভবন, বঙ্গভবন বা আমাদের আরও যত রাষ্ট্রীয় স্থাপনা আছে সেখান থেকে কি পাহারা তুলে নেওয়া যায়? মব তৈরি করা হয়েছে। এটা যারা আমাদের শত্রু হয়তো তারা করতে পারে। 

শ্রীলঙ্কা থেকে আমরা শিখেছি যে, কী করে পুরোনো সরকারকে ফেরত আনা হয়েছে। মডেল তো আছে ওদের কাছে। শেখ মুজিবের ৩২ নম্বরের মিউজিয়াম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শেখ মুজিবের প্রতি ঘৃণা থাকতে পারে, কিন্তু তার ওখানে মিউজিয়াম থাকলে সমস্যা কী? পোড়ানো হলো কেন? 
ডক্টর ইউনূস ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে কী সুন্দর একটা কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, সবার আগে আমরা মানুষ। আপনারা কে হিন্দু কে মুসলমান, কেন ভাগ হয়ে যান? আমরা তো একটা পরিবার। এই পরিবারটা রক্ষা করতে হবে। এই পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ থাকতে পারে। এই বোধটুকু আমাদের জাগিয়ে তোলা প্রয়োজন। আমাদের প্রয়োরিটি হচ্ছে এই গুজবগুলো বন্ধ করা এবং যেখানে-যেখানে সত্যিকার অর্থেই নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছে সেগুলো শক্ত হাতে বন্ধ করা। 

আমাদের বুকের ক্ষত বিশাল, এটা সহজে শুকাবে না। এই সময়টায় আমাদের ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। কোনো ব্যক্তির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা যাবে না। সেটা আওয়ামী লীগের হলেও না। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল ছিল বাংলাদেশের মানুষকে বিভাজিত রাখা। এটা তার রাজনৈতিক রণকৌশলের অন্তর্গত। এটা বলেই সে ক্ষমতায় ছিল এতদিন এবং দিল্লির সমর্থন পেয়েছে। 

খবরের কাগজ: আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। সে ক্ষেত্রে দেশের এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে জামায়াত-শিবিরের ভবিষ্যৎ আসলে কী?

ফরহাদ মজহার: যখন এটা ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন জামায়াত যে মন্তব্য করেছে, সেটা ছিল সঠিক, বুদ্ধিমান এবং দূরদর্শী। তারা বলেছে, আমরা আইন মেনে চলি- নিষিদ্ধ করলে নিষিদ্ধ হয়ে যাব, আর তো কিছু করার নেই। 

আমরা দেশকে ভালোবাসি, আমাদের কাজ করতে দিচ্ছে না। না দিলে কী করব, যখন কাজ করার সুযোগ পাব তখন কাজ করব। ড. ইউনূস সরকারের তো উচিত এই তথাকথিত নিষিদ্ধের বিষয়টি আইন করে তুলে দেওয়া। নিষিদ্ধ আবার কী? প্রতিটি সংগঠনের অধিকার আছে বাংলাদেশে রাজনীতি করার। 
কী নিয়ে রাজনৈতিক দল কাজ করবে, কি নিয়ে করতে পারবে না তার একটি ক্রাইটেরিয়া আমরা করে দিতে পারি। জামাতে ইসলামি কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পর একবারও বলেনি যে, আমরা একটা ইসলামি রাষ্ট্র চাই। এই যে রাজনৈতিক বিচক্ষণতা আমাদের ইসলামি দলগুলোর মধ্যে গড়ে উঠেছে, আমি এটাকে স্যালুট জানাই। এই সরকারকে মানুষ আরও সাধুবাদ জানাবে যদি তারা জামায়াতকে অনুরোধ করে যে, আপনারা জামায়াত ইসলামী নামটা বদলে ফেলেন। 

খবরের কাগজ: আওয়ামী লীগ ও হাসিনা সরকারকে কী কী ভুলের কারণে এভাবে ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে হলো?

ফরহাদ মজহার: পপুলারিজমে ভর করে যে ফ্যাসিজম গড়ে উঠেছিল এটা যে দুর্বল এবং ঠুনকো এই বিষয়টি তার শেখ হাসিনার মাথার মধ্যে ছিল না। আমরা দীর্ঘকাল থেকে এই ফ্যাসিজমের সমালোচনা করছি, বাকশাল থেকে এই হাসিনা সরকার পর্যন্ত। ধীরে ধীরে পিপলকে এডুকেট করেছি। পলিটিক্যাল এডুকেশন যে এরকম একটা পরিস্থিতিতে যেতে পারে, এটা তিনি অনুমান করতে পারেননি।
তিনি আমাদেরকে অপমান করেছেন। কিন্তু পলিটিক্যাল এডুকেশন তো সমাজের বিশাল একটা অংশ পেয়ে গেছে। এটা তিনি ধরতে পারেননি। তিনি মনে করেছেন, তার থ্রেটটা আসছে জামায়াত আর বিএনপি থেকে। 

দ্বিতীয় হচ্ছে আপনি যখন ড. ইউনূসের সঙ্গে পারসোনাল কনফ্লিক্টে গেছেন, ড. ইউনূস নোবেল পেয়েছেন আপনিও নোবেল পেতে চান, এই যে হাস্যকর বিষয়গুলো, এই সকল বালখিল্য বিষয়ের কারণে  আপনি ইন্টারন্যাশনালি আইসোলেটেড হয়ে গেছেন। 

তিন নম্বর হলো ছাত্রদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, তাদের যে রাজনৈতিক কৌশল, এটার শক্তি সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে ছাত্রদের এই প্রজ্ঞা ও কৌশলের হাতে পরাস্ত হয়েছে। 
খবরের কাগজ: বর্তমান বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের যে অবস্থা, তাতে তাদের আর ফিরে আসা সম্ভব কি না? ফিরে আসতে হলে কী কী বিষয় সংশোধন করা উচিত বলে আপনি মনে করেন? 

ফরহাদ মজহার: আমি তো একটু ভিন্ন ধরনের মানুষ। আমি মানুষে বিশ্বাস করি। এটা সংশোধনের ব্যাপার না। যখনই সিস্টেমটা আমরা শক্ত করব, তখন এই শক্ত ব্যবস্থার সুফল আওয়ামী লীগ নিজেও দেখবে। 

ওদের অনেকের মধ্যেই পরিবর্তন হবে। যেসব অপরাধ হয়েছে, তার ন্যায়বিচার হতে হবে। আমি এক তরফা বিচারের পক্ষপাতী নই। তারা যেন মনে বল পায়, তাদেরকে মব জাস্টিসের কাছে ছেড়ে দেওয়া ভুল হবে। 

খবরের কাগজ: ইনসাফ বা ন্যায় বিচার কীভাবে নিশ্চিত হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ফরহাদ মজহার: বিচারের আগে আমরা নেলসন ম্যান্ডেলার স্ট্র্যাটেজিটা একটু ভাবতে পারি। আমি বিনয়ের সঙ্গে চিন্তা করতে বলব যে, আমরা ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস কমিশনের মতো একটা কমিশন করতে পারি কি না, যাতে আওয়ামী লীগের নেতারা যারা ভুল করেছেন, তাদের বলব আসেন, আমরা ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস কমিশনে যাই। 

আমি এক তরফা বিচারের পক্ষে না। আমি নেলসন ম্যান্ডেলার লোক। ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস কমিশনের সবচেয়ে ভালো দিকটা হচ্ছে আমরা সত্যটা জানব। সত্য যখন আমরা জানি, তখনই কিন্তু জাস্টিস হয়। সত্য যখন আমরা জানি না, তখন আপনাকে আমি যতই শাস্তি দিলাম, তখন মনে হয় শাস্তিটা ঠিক হয়নি।

খবরের কাগজ: এই সরকারে আপনার স্ত্রী ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন। এতে কি আপনি কোনো সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন?

ফরহাদ মজহার: ডক্টর ইউনূস বা আমাদের ছাত্ররা যদি তাকে চান আমার তো কিছু বলার নেই। নিজের গুণে তিনি ওখানে আছেন এবং তিনি জানেন আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস কী। তিনি ডক্টর ইউনূসকে ভালোবাসেন, আমিও ডক্টর ইউনূসকে ভালোবাসি। 

খবরের কাগজ: আপনার নয়াকৃষি আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই? 

ফরহাদ মজহার: খুব ভালো। আমরা তো প্রায় ৩ লাখ কৃষক পরিবার নিয়ে কাজ করি। দীর্ঘকাল ধরে একটা বিপুল পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা অগ্রসর হয়েছি। এক একটা পর্যায়ে আমাদের কাজ বেড়ে গেছে। যদি আমরা নিজস্ব সরকার গঠন করতে সক্ষম হই তাহলে এই কৃষকদের নিয়ে অনেক বড় কাজ করার ইচ্ছা আছে। কারণ ডক্টর ইউনূস এগুলো নিয়ে চিন্তা করেন। কারণ তিনি তো গরিবদের নিয়েই কাজ করেন। 

ফলে অতি সহজে তাকে আমরা অনেক সমস্যার কথা জানাতে পারব। সার এবং কীটনাশক ছাড়া নয়াকৃষির যে দশটা নীতি, এটা দ্বারা উৎপাদন আড়াই থেকে তিন গুণ বাড়ানো যায়। আমাদের খাদ্যে সার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য আমরা কৃষিকে গুরুত্ব দেব। তথাকথিত মর্ডান কৃষি না। যেটা ক্ষতিকর। 

খবরের কাগজ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সময় আপনার লেখা ‘আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ ইতিহাসের সামনে’ কবিতাটি ভাইরাল হয়েছে। কবিতা, গান লেখার সময় বের করতে পারেন এখন?

ফরহাদ মজহার: হ্যাঁ, আমি সময় পেলেই লিখতে বসে যাই। লেখালেখি আমার থেমে নেই।

খবরের কাগজ: ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য।

ফরহাদ মজহার: আপনাকেও ধন্যবাদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলাপ করার জন্য।

> প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে ইউনূসের হাতে সব ক্ষমতা দিতে হবে: ফরহাদ মজহার

প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে ইউনূসের হাতে সব ক্ষমতা দিতে হবে: ফরহাদ মজহার

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩৪ এএম
আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:২৫ পিএম
প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে ইউনূসের হাতে সব ক্ষমতা দিতে হবে: ফরহাদ মজহার
ফরহাদ মজহার। ছবি: খবরের কাগজ

কবি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ফরহাদ মজহার। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পেছনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়। ইনসাফ কায়েম কমিটি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অন্তর্বর্তী সরকার, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, আগামী নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের পতনের কারণ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। তার দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের প্রথম কিস্তি প্রকাশ হলো শনিবার (১৭ আগস্ট)। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন খবরের কাগজের হেড অব ডিজিটাল গোলাম রাব্বানী

খবরের কাগজ: ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানকে কেউ কেউ বলছেন আগস্ট বিপ্লব। আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? 
ফরহাদ মজহার: মাসের হিশাবে‘জুলাই বিপ্লব’ বা ‘অগাস্ট বিপ্লব’ ইত্যাদি নানা নামে বলা হচ্ছে বটে, তবে এর রজনৈতিক চরিত্রটা বোঝা বিশেষ ভাবে জরুরী। এই বিপ্লব মর্মের দিক থেকে ব্যক্তির স্বাধীন সত্তা এবং রাজনৈতিক  আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার বিপ্লব। ব্যক্তির অধিকার ও পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্যই এই অভ্যুত্থান। এটা কোনো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব না। দেখুন, কিভাবে ‘রাজাকার’ বলায় তরুণরা অপমানিত বোধ করেছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা অভ্যুত্থানটা করে ফেলতে পেরেছে। এটা দেখে আমি অভিভূত। আমার চোখে পানি চলে এসেছিল। 

খবরের কাগজ: আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে। যদিও এই অভিযোগ হোয়াইট হাউস খারিজ করে দিয়েছে। আপনার মত কী?
ফরহাদ মজহার: এগুলো হালকা ষড়যন্ত্রের ব্যাখ্যা। আমাদের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকলে অসুবিধা কী? ভারত যদি শেখ হাসিনাকে না নিত এবং ষড়যন্ত্র না করত তাহলে তো আর তাদের সঙ্গেও আমাদের ঝগড়া কোন ঝগড়া হোত না।
খবরের কাগজ: আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন দিল্লি যদি উসকানি দিয়ে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ লাগানোর মতলব করে তাহলে ভারত টুকরা টুকরা হয়ে যাবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ‘সেভেন সিস্টার্স’ নিয়ে কথা বলেছেন। বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও ভারতকে ছাড় দিতে নারাজ। আপনার মূল্যায়ন কী?
ফরহাদ মজহার: রাষ্ট্র হিসেবে ভারত আর সে দেশের জনগণ- ‘ইটস টু ডিফারেন্ট ম্যাটার’। প্রচার ও লেখালিখির মাধ্যমে ভারতের জনগণকে বোঝাতে হবে যে, আমরা দিল্লির এখনকার পররাষ্ট্রনীতির বিরোধী। কিন্তু ভারতবিরোধী নই। এটা আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ। আমার হাতে যদি সিদ্ধান্ত থাকত তাহলে আমি অবিলম্বে সাংস্কৃতিক একটা অনুষ্ঠান করতাম তথ্য আদান-প্রদানের ও পরস্পরকে বোঝার জন্য। তাদের আপত্তির জায়গা, কী কী তথ্য সঠিক, কী কী বেঠিক, তারা নিজেরা এসে দেখতেন। আমাদের যে অভিন্ন স্বার্থ, পশ্চিম বাংলার স্বার্থ, ত্রিপুরার স্বার্থ এসব নিয়ে কথা বলতাম। ত্রিপুরা এখন যদি কিছু এক্সপোর্ট করতে চায়, তাহলে তাকে বহু জায়গা ঘুরে যেতে হয়। ত্রিপুরাকে আমরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দিতে চাই। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে ভারত সরকার আমাদের বন্দর ব্যবহার করবে আর আমাদের কিছুই দেবে না, বাংলাদেশকে তার কলোনি মনে করবে, ষড়যন্ত্র করবে বসে বসে, এটা তো হতে পারে না। 

খবরের কাগজ: এই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আপনার রাজনৈতিক বিশ্লেষণটা জানতে চাই। 
ফরহাদ মজহার: প্রথমত, এটা অসাধারণ ঘটনা। অভূতপূর্ব, সব অর্থেই। ভূ-রাজনীতি, বিশ্ব ইতিহাস, স্থানীয় রাজনীতি- সবদিক থেকেই এটা একেবারে নতুন ধরনের ঘটনা। ইউরোপে ফরাসি বিপ্লব হয়েছে। যেখানে ফিউডাল শ্রেণিকে পরাস্ত করে বুর্জোয়ারা ক্ষমতায় এসেছে। এখানে কিন্তু আরও বড় ঘটনা দেখতে পাচ্ছি। একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয়েছিল। নিউ লিবারেল ইকোনমিক অর্ডারের মাধ্যমে একে গড়ে তোলা হয়েছে। সিকিউরিটির অজুহাতে একটা হিংস্র রাষ্ট্র আমরা দেখেছি, র‍্যাব তৈরি করা হয়েছে, নির্যাতনের বহুরকম পদ্ধতি বের করা হয়েছে। ফলে এই গণঅভ্যুত্থান তো হওয়ারই কথা। 

খবরের কাগজ: ২০২৪-এর নির্বাচনের আগে আপনি জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি নামে একটি সংগঠন শুরু করেছিলেন। আপনাদের দাবি ছিল অন্তর্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন। ইনসাফ আর বৈষম্যবিরোধী তো একই ধারার আন্দোলন। এই গণঅভ্যুত্থানের পেছনে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়। আপনার মন্তব্য বলুন।
ফরহাদ মজহার: একটা পর্যায়ে আমার মনে হয়েছিল যে বিএনপিকে বোঝানো দরকার, জনগণ মৌলিক পরিবর্তনের জন্য তৈরি। বিএনপি বারবার ভুল করছিল এবং বারবার পিছিয়ে পড়ছিল। তারা কখনো রাজনীতিকে – অর্থাৎ জনগণের রাজনৈতিক চেতনা ও আকাংখাকে প্রাধান্য দেয়নি। তারা সব সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছে। জনগণ যে মৌলিক পরিবর্তন চায়, এটা কেন তারা বুঝেনি, সেটা এখনো আমার কাছে রহস্য। আমি তখন সাতটা কিস্তিতে তাদের একটা পর্যালোচনা করেছি। তাদের সমালোচনা করেছি, কোথায় কোথায় তাদের ভুল, কী করা দরকার। কিন্তু তখন তো তারা আমাদের কথা শোনেনি। অসুবিধা নেই, অতীত মানে অতীত। এখন আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই অভ্যুত্থানের শুরুতে বিএনপি কিছুটা বিভ্রান্ত থাকলেও পরে তারা বিচক্ষণ একটা পজিশন নিয়েছে। এখন তারা বর্তমান সরকারকে সময় দিতে চেয়েছে। তারা যদি ভিন্ন অবস্থান নেয় তাহলে প্রতিবিপ্লবীরা শক্তিশালী হতে পারে। আমার ধারণা এটা তারা বুঝতে পেরেছে। আমি দীর্ঘদিন খালেদা জিয়ার কাছাকাছি থাকায় তার রাজনৈতিক বাসনা বা ইচ্ছা বুঝতে পারতাম। তিনি কী চাইছেন, এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেটা আবারও প্রমাণ হলো।

খবরের কাগজ: খালেদা জিয়া ৭২-এর সংবিধান চান না, আপনি বলেছেন তার এই স্বপ্ন পূরণ হোক। 
ফরহাদ মজহার: ৭২-এর সংবিধান তো বাংলাদেশের সংবিধান না, এটা পাকিস্তানের সংবিধান। একটা মুক্ত দেশে পাকিস্তানের লোকজন দিয়ে সংবিধান বানানো হলো। অর্থাৎ যারা পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল তাদেরকেই স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদ সদস্য হিশাবে ঘোষণা দেওয়া হোল। এটা তো হতে পারে না। তার মানে, ৭২ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পাকিস্তানি এজেন্ট ছাড়া আর কিছু ছিল না। এমনকি বাংলাদেশও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার যুক্তিতে আরেকটি পাকিস্তানই ছিল। জনগণ যখন একটা দেশ স্বাধীন করেছে তখন আপনি জনগণকে বলবেন, তোমরাই এমন একটা গণপরিষদ নির্বাচিত কর যাতে তোমরা তোমাদের রাষ্ট্র গঠন করতে পার। যেখানে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিশাবে নতুনভাবে ‘গঠনতন্ত্র’ প্রণয়ন করব। ‘গঠনতন্ত্র’ কথাটাই ইংরেজি  Constitution কথাটির সঠিক অনুবাদ। ‘সংবিধান’ না। সংবিধান শব্দটা কাদের? কলোনিয়াল পাওয়ার সংবিধান রচনা করে, ইন্ডিয়া অ্যাক্ট যেমন- আপনি কলোনিয়াল শক্তি, পরাধীনদের শাসন করবার জন্য একটা বিধান বানালেন -- একটা ‘অ্যাক্ট’ করলেন সেরকমই। র্থাৎ দাবি করলেন, আমি কলোনিয়াল শাসক, অ্যাক্ট দ্বাবা সংবিধান দ্বারা আমি কলোনাইজ পিপলকে শাসন করব। এই রকম। কোনো গঠনতন্ত্র প্রণয়ন পরিষদ গঠন না করে আওয়ামী লীগ পরিষ্কার পাকিস্তানের গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত সদস্যদের দিয়ে বাংলাদেশে ‘সংবিধান’ বানিয়েছে। তো এই সংবিধান আমরা রাখব কেন? অনেক আগেই ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া উচিত ছিল। 

খবরের কাগজ: বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ৭২-এর সংবিধান কি বাদ দিতে পারবে বলে মনে করছেন?
ফরহাদ মজহার: অবশ্যই পারবে। কী সমস্যা? গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেছে। বাদ দিতে পারবে না কেন? লাথি মেরে ছিঁড়ে ফেলে দিবে। এখনো কেন করেনি, সেটাই আমি তাদের বরং প্রশ্ন করতে চাই। আমরা কি পাকিস্তানের সংবিধানে ফিরে যেতে চাই? অর্থাৎ পাকিস্তানের গণপরিষদের জন্য যারা নির্বাচিত তাদের বানানো সংবিধানে? 

আর দেখুন, আমাদের জনগণ কোথায় বলেছে যে তারা ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ চায়? কোথায় বলেছে তারা ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ চায়? কোথায় বলেছে যে তারা ‘সমাজতন্ত্র’ চায়? শেখ মুজিবের ৬ দফার মধ্যে এই সব ছিল? কি এগুলো? এইসব জঞ্জাল?  ৭২-এর সংবিধান ছিল একদিকে প্রণয়ণ প্রক্রিয়ার দিক থেকে পাকিস্তানিদের রচিত সংবিধান, কারন পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্যই তাদের নির্বাচিত করা হয়েছিল।অন্যদিকে সেটা ছিল ইন্ডিয়ানদের বাংলাদেশে শাসন করবার কলোনিয়াল হাতিয়ার। লিগ্যালি ছিল পাকিস্তানিদের আর পলিটিক্যালি ছিল ইন্ডিয়ানদের সংবিধান। এই সংবিধানকে তো অবশ্যই ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। 
এত বছর পর যখন সুযোগ এসেছে এখনো কেন তারা এটি ছিঁড়ে ফেলেনি সেটাই সন্দেহের। আমি বারবার বলেছি, ইমিডিয়েটলি ড. ইউনূসকে জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের প্রতিনিধি হিসেবে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হোক। যেন আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বাংলাদেশের জনগণের জন্য নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ণের জন্য দায়িত্ব পরিষ্কার বুঝিয়ে দিতে পারি। তিনি কার দ্বারা ‘নির্বাচিত’? অভ্যুত্থান যারা করেছে সেই জনগণ দ্বারা দ্বারা নির্বাচিত। 
প্রশ্ন হছে তাঁকে আমরা ‘নির্বাচিত’ বলছি কেন? তিনি কি কোনো ‘নির্বাচন’ করে এসেছেন? তিনি ‘নির্বাচিত কারণ জনগণই তাকে ‘নির্বাচিত’ করেছে। তাহলে তিনি কোন যুক্তিতে সংবিধানের অধীনে শপথ নিলেন? কারা করেছে, আমি জানতে চাই। যারা করেছে, তারা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত।

খবরের কাগজ: সংবিধান ছাড়া দেশ চলবে কীভাবে?
ফরহাদ মজহার: প্রথমত হলো, সভারেন উইল অব দ্য পিপল (Sovereign Will of the People), -- অর্থাৎ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় সেটা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ব্যক্ত, প্রকাশিত এবং বিজয়ী। তারই প্রতিনিধি হিসেবে ড. ইউনূস হচ্ছেন পিপলের সভারেন পাওয়ার বা জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিনিধি। অতএব, তিনি এখন যা কিছু বলেন বা আদেশ দেন, সেটাই কিন্তু আইন- লিগ্যালি এবং পলিটিক্যালি। 
এখন উকিলরা প্রতিবিপ্লব করার জন্য যে তর্কটা করে সেটা হোল সংবিধান ছাড়া কি দেশ চলবে? আমি তাদের জিজ্ঞেস করি, তাহলে ইংল্যান্ড কীভাবে চলে? সেখানে তো কোন লিখিত সংবিধান নাই। বাংলাদেশের যেসব উকিলরা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত, তাদেরকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি, আমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে, ইউকে সংবিধান ছাড়া কীভাবে চলে? বুঝিয়ে বলুন। বাংলাদেশও গঠনতন্ত্রকে লিখিত রূপ দেবার আগে অনায়াসেই চলতে পারবে। বিশ্বের বহু দেশ আছে সংবিধানই নেই। 

আসলে সংবিধান বা তথাকথিত আইন সব সময়ই সমাজে থাকে। সেটা লিখিত থাকতে হবে তার কোন যুক্তি নাই। আইন, বিধান, সংবিধান সমাজ থেকে কখনো চলে যায় না। পার্থক্যটা হলো- কোথাও এটা থাকে লিখিত, কোথাও এটা থাকে অলিখিত। আমাদের ক্ষেত্রে বিপ্লবের পরে অলিখিত সংবিধান জারি হয়ে গিয়েছে যা জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় ধারণ করে। মানে জনগণের অভিপ্রায়, এই অভিপ্রায়েরই নির্বাচিত প্রতিনিধি হচ্ছেন ড. ইউনূস। তাকে ঘিরে জনগণের ইচ্ছাটা অলিখিত রূপে আছে। এটাকে এখন লিখিত রূপ দিতে হবে। এটাই মূল ব্যাপার। 

খবরের কাগজ: আপনি কি আশা করছেন এই সরকার এটা করবে?
ফরহাদ মজহার: আমি জানি না। আমি আমার কথা বলে যাচ্ছি। আমি জনগণের পক্ষে কথা বলব। আমি সরকারের প্রতিনিধি না। এখন আমরা যেভাবে আইন বুঝতে অভ্যস্ত সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি ড.ইউনূস শুধু ঘোষণা দিয়ে বলবেন, এখন যা কিছু আইন আমাদের সমাজে আছে বা চলে আসছে তাদের সব আইনই নতুন বাংলাদেশ বহাল থাকবে। তবে কথা আছে। সেটা হোল যেসব আইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং সাংঘর্ষিক- সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে বিচারপতিরা নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ণ অবধি বিচার চালাবেন, আদালত চলবে, সব প্রশাসন চলবে। 

খবরের কাগজ: সরকারের এখন কোন কোন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
ফরহাদ মজহার: প্রধান প্রায়োরিটি সিকিউরিটি। ড. ইউনূস  দ্রুততম সময়ে যেটা করতে পারতেন একটা ন্যাশনাল ইয়ুথ সিকিউরিটি কাউন্সিল। বা বিপ্লবী তরুণ তরুণদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল। তারাই মুক্ত বাংলাদেশকে পাহারা দেবে। গণ অভ্যুত্থান যেন নস্যাৎ করা করা না যায় তার জন্য দিবারজনী তারাই বাংলাদেশ পাহারা দেবে। এটা তাদের বিপ্লব, তারাই সেটা রক্ষ করবে। যে তরুণরা বিপ্লবের মাধ্যমে তাকে সামনে নিয়ে এসেছেন, তাদেরকে বিপ্লবী গার্ড হিসেবে রাখা যেতে পারে- যেন কেউ প্রতিবিপ্লব করতে না পারে। 
ইউনূসকে কে বলেছে এরকম একটা সরকার গঠন করতে?  তিনি কি তরুণদের সঙ্গে পরামর্শ করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছেন? তাহলে তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ কেন? শেখ হাসিনার সংবিধানে কোথায় আছে যে,  অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা যায়? তরুণদের তিনি রাষ্ট্র শাসনে বা নতুন রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় রাখতে চাইছেন না, অথচ তরুণদের কি তিনি ট্রাফিক পুলিশ বানাতে চান? আমরা কি এত বেকুব? আমরা কি এতোই গর্দভ? না, এটা হবে না। 

ভারত যদি এখানে আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণ করতে পারে যে শেখ হাসিনা এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তাহলে আমরা কি করব? তারা আগে কেন বলেনি? তারা ভেবেছে, এটা গণঅভ্যুত্থানের সরকার, ফলে একটা বিপ্লবী সরকারই হবে, শেখ হাসিনার সংবিধানের অধীনস্থ সরকার নয়। কিন্তু তারা এখন দেখছে এরা বাংলাদেশে তো সবাই বোকা, এদেরকে তো আমরা আবারও চাইলে ফেলে দিতে পারব। ফলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলছে, শেখ হাসিনা এখনো প্রধানমন্ত্রী। আপনি তার মুখ বন্ধ করবেন কীভাবে? আবার শেখ হাসিনা কী বলছেন- ‘আমি যাবার সময় কিছু বক্তব্য দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি।’ আওয়ামী লীগের ভাষায়, ‘সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত একজন সরকারকে আপনি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করেছেন, আপনি তো আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ করেছেন।’ 
এরপর ছাত্রদের বলা হোল, উনি যে পদত্যাগ করেছেন তার কাগজ আছে। কই সেই পদত্যাগ পত্র? এই কাগজ যদি সরকার দেখাতে না পারেন, আজকে আপনি দিল্লিকে ঠেকাবেন কীভাবে? 
আপনি এখন পুলিশকে ডাকছেন, পুলিশ আসো রে, যোগদান কর রে, পুলিশ শেখ হাসিনার আমলে লাখ লাখ টাকা কামিয়েছে সে আবার আপনার চাকরি করতে আসবে কেন? এ পুলিশ তো শেখ হাসিনার পুলিশ! আপনি তাদের ডাকছেন কেন? যারা চলে গেছে তাদের দ্রুত ‘পলাতক’ ঘোষণা করেন। সেনাবাহিনীর অধীনে আমাদের ছেলেদের ট্রেনিং দেন কীভাবে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। এর ফলে আমাদের শক্তিশালী একটা জনসম্পদ তৈরি হবে। 

খবরের কাগজ: প্রতিবিপ্লবের একটা কথা শোনা যাচ্ছে। আপনি এই প্রসঙ্গে কথা বলছেন, তো প্রতিবিপ্লব সরকার ঠেকাতে পারবে কি?
ফরহাদ মজহার: প্রতিবিপ্লব যদি আমরা ঠেকাতে চাই তাহলে দ্রুত ড. ইউনূসের হাতে সব ক্ষমতা দিতে হবে। আমাদের এখনকার যে রাষ্ট্রপতি তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে হবে। আইনগত এবং প্রশাসনিক যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বললাম, এগুলো অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করুন। আপনি শেখ হাসিনার পুরোনো সংবিধান বহাল রাখবেন, তা হতে পারে না। এটা বিপজ্জনক।

খবরের কাগজ: কেউ কেউ এই সরকারকে বলছেন এনজিও সরকার। আবার অনেকে বলার চেষ্টা করছেন এটা এলিটদের সরকার, আপনি কী বলতে চান?
ফরহাদ মজহার: সরকারে কে আছে এটা দিয়ে কিন্তু সরকারের চরিত্র বোঝা যায় না। এটা গণঅভ্যুত্থানের সরকার। ড. ইউনূস যদি এই সরকারের প্রধান হতেন, তাহলে কিন্তু এই প্রশ্নটা উঠত না। তখন ছাত্র-জনতা ঠিক করত সত্যিকারের সরকারের সদস্য বা মন্ত্রী কে হবেন, কিম্বা কাদের অতীতের ভূমিকার কারনে  তারা হবেন না। এখন আপনাকে তিনটা কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে, একটা তালিকা এসেছে সেনাবাহিনী থেকে যেখানে ছিল পুরোনো আওয়ামী লীগের পছন্দের লোকগুলো, দ্বিতীয়টা এসেছে ছাত্রদের পক্ষ থেকে, আর তিন নম্বরটা এসেছে ড. ইউনূসের কাছ থেকে। তাকে যদি আমাদের প্রধান মানি তাহলে অবশ্যই তার পছন্দের তালিকা আমাদেরও পছন্দ হবে। আপনি বলতে পারবেন না এনজিও, এরা প্রত্যেকে তাদের স্ব স্ব কাজে স্বনামধন্য, ভালো কাজ আছে তাদের। তারা আমাদের সমাজের, দেশের সম্পদ। কিন্তু আপনি যদি এলিট ক্লাসের রিপ্রেজেন্টের কথা বলেন, তাহলে এটা তো সত্য, এখানে তো শ্রমিকের কোনো প্রতিনিধি নেই, কৃষকের প্রতিনিধি নেই, সাংবাদিকদের কোনো প্রতিনিধি নেই, আরও ভয়ঙ্কর হচ্ছে শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতির জগতের কোনো প্রতিনিধি নেই। তাহলে এ সরকারটা তো দুর্বল। এভাবে করলে হবে না।

খবরের কাগজ: গণমাধ্যম ভাঙচুর দখল চলছে। এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?
ফরহাদ মজহার: আপনি এখন ৭১ টিভি ভেঙে দিবেন, সময় টেলিভিশন ভেঙে দিবেন, এটা কি আমরা চাই? এটা আমরা চাই না। আমরা চাই প্রত্যেক মিডিয়া থাকুক। কিন্তু অবশ্যই তাদের খাসিলত বদলাতে হবে। অতীতে কে কী করেছে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের খাতিতে তা ভুলে গিয়ে এখন একসঙ্গে কাজ করবার পরিবেশ তৈরি করা দরকার। পাশাপাশি দরকার কঠোর নজরদারি। যেন কেউ আবার ছোবল দিতে না পারে। 

খবরের কাগজ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা দেশের ৫০ জন সাংবাদিকের একটি তালিকা তৈরি করে বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে।
ফরহাদ মজহার: না- ছাত্ররা এ তালিকা করেনি। ছাত্রদের ওপরে এর দোষ চাপাবেন না। ছাত্ররা ফ্যাসিস্ট না। এগুলো ফ্যাসিস্টরা করে। ইন্ডিয়ান বা হাসিনা সমর্থকরাই আমাদের বিভক্তিকে চিরস্থায়ী করবার জন্য এই সব নানান তালিকা ছড়াচ্ছে। এটা ভয়ঙ্কর, আমি দেখেছি এসব। একটা লোক অপরাধ করেছে ঠিক আছে, কিন্তু আপনি তো তাকে শোধরানোর সময় দেবেন। যারা ক্রিমিনাল , দাগী অপরাধী – তাদের কথা আলাদা। সেটা ভিন্ন জিনিস। ক্রিমিনালদের ডিল করার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটা সরকারের কাজ, আমাদের কাজ না। আমাদের কাজ হচ্ছে যারা ভুল করেছে বা যে কোন কারনে অন্যায় করেছে তাদের সংশোধিত হয়ে ফিরে আসার পরিবেশ তৈরি করা।  

(সাক্ষাৎকারের বাকি অংশ পড়ুন আগামীকাল )