টানা দ্বিতীয়বার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. তাজুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, এখন আইডি নম্বর ব্যতীত কোনো ‘কনস্ট্রাকশন’ কাজ হবে না। উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির যে হার, তা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি। গত বুধবার মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে এ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের বিশেষ প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন
খবরের কাগজ: একই মন্ত্রণালয়ে পুনরায় দায়িত্ব পাওয়া এবং নিজের কাজকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
তাজুল ইসলাম: দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই গত মেয়াদে কাজ করতে গিয়ে যেসব জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ হয়েছে, সেগুলোর আলোকে আগামী দিনের পথ চলাটা শক্তিশালী হবে বলে আমি মনে করি।
খবরের কাগজ: অতীতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকরা এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বিশেষ কোনো কারণ আছে কী?
তাজুল ইসলাম: সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকরাই এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন। সম্ভবত এটা একটা কারণ যে, এই মন্ত্রণালয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে বলব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করেছেন। আমি এর আগে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি।
খবরের কাগজ: আপনার মন্ত্রণালয়ের কাজ সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আপনি কী মনে করেন সাধারণ মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন?
তাজুল ইসলাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র এবং সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দায়িত্ব পালন করেছেন বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি গ্রাম-গঞ্জের উন্নয়ন এবং মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমি আমার মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তর ও সংস্থাগুলোকে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য তদারকি করে আসছি। ইতোমধ্যে দেশব্যাপী যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণের কাজগুলো আরও মানসম্পন্ন হয়েছে।
খবরের কাগজ: দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন কী?
তাজুল ইসলাম: কিছু নতুন বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। বটম লেভেলের প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার জন্য নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনা নিয়ে কাজ করছি।
খবরের কাগজ: দেশের অনেক জেলা পরিষদ অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে আপনি কিছু জানেন কী?
তাজুল ইসলাম: ইতোমধ্যে আমরা জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করেছি। জবাবদিহির জন্য এক্সটার্নাল অডিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও কিছু নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জেলা পরিষদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে।
খবরের কাগজ: ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম একটি অঙ্গীকার। এই কাজটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এই অঙ্গীকার পূরণের জন্য আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
তাজুল ইসলাম: এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি আমি। তবে এটা শুধু আমার মন্ত্রণালয়ের কাজই নয়। তাই কাজগুলো বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। আমরা একাধিক সভা করেছি। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
খবরের কাগজ: এই কর্মসূচির অগ্রগতি কেমন হয়েছে?
তাজুল ইসলাম: উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়নের কানেকটিভিটি শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের কানেকটিভিটিও সন্তোষজনক। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করেছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও কাজ করে যাচ্ছে।
খবরের কাগজ: আপনার মন্ত্রণালয়ের নতুন কোনো প্রকল্প আসছে কী?
তাজুল ইসলাম: স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আমরা নতুন প্রকল্প নিই। একটা প্রকল্প শেষ হলে আরেকটা প্রকল্প নেওয়া হয়।
খবরের কাগজ: উত্তরাঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নলকূপ। এ সম্পর্কে আপনি জানেন কী? কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
তাজুল ইসলাম: অবশ্যই এ সম্পর্কে আমি অবহিত। আমরা ‘ডাউনস্ট্রিমের কান্ট্রি’। এ কারণে সব সময় পানির অভাব ছিল। সারা বিশ্বে ‘আপস্ট্রিম’ কান্ট্রিগুলো তাদের চাহিদার কারণে পানি প্রত্যাহার করছে। বৃষ্টির আনুপাতিক হারও ইদানীং কমে যাচ্ছে। সে জন্য পানির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা বিকল্প চিন্তা করছি।
খবরের কাগজ: প্রথমবার অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে গুণগত মান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। এবার কী প্রাধান্য দিচ্ছেন?
তাজুল ইসলাম: মানুষের ‘অবজারভেশন’ ছিল যেসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়, তার স্থায়িত্বকাল কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ের নয়। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এগুলোর স্ট্রাক্চারাল ডিজাইন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে পরিবর্তন করেছি। এ ক্ষেত্রে আমরা ভালো ফলাফল পাচ্ছি।
খবরের কাগজ: একই সড়কের কাজ বারবার যাতে না হয়, সে জন্য সড়কের আইডি নম্বর চালু করেছিলেন। তার সুফল কী পাচ্ছেন?
তাজুল ইসলাম: অবশ্যই, এখন আইডি নম্বর ব্যতীত কোনো ‘কনস্ট্রাকশন’ কাজ হবে না। এই ব্যবস্থায় একই রাস্তা দেখিয়ে অনিয়ম করার সুযোগ আর নেই।
খবরের কাগজ: সিটি করপোরেশন এলাকায় একই সড়কে বারবার অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ফলে অপচয় হচ্ছে। অপচয় রোধে করপোরেশন এলাকার সড়কের আইডি নম্বর চালু করবেন কি না?
তাজুল ইসলাম: সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে রাস্তার আইডি নম্বর চালুর জন্য একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবং পৌরসভার জন্যও আমরা কাজ শুরু করেছি।
খবরের কাগজ: দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঠিকাদাররা কাজ সময়মতো শেষ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আপনি অবহিত কি না?
তাজুল ইসলাম: কিছু বৈশ্বিক কারণে এটা হয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম অনেক বেড়ে গেছে। ঠিকাদাররা যেসব দামে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, দেখা যাচ্ছে তা এখন বহুগুণে বেড়েছে। এ কারণে তারা কাজ করতে পারেনি। সে জন্য কিছু সময়ক্ষেপণ হয়েছে।
খবরের কাগজ: ডেঙ্গুর প্রকোপ আবার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে ডেঙ্গু বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবারের পরিকল্পনা কী?
তাজুল ইসলাম: ডেঙ্গু নিয়ে আমরা প্রতিবছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সভা করি। অবশ্য এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর তেমন প্রকোপ দেখা গেছে বলে মনে হয়নি। তার পরও আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। প্রতিদিন টিভিসি প্রচার করা হচ্ছে। স্প্রে করার জন্য যে পরিমাণ কীটনাশক থাকা দরকার, তা রয়েছে।
খবরের কাগজ: আপনি কী মনে করছেন সচেতনতামূলক প্রচারের কারণে মানুষ সতর্ক হচ্ছে এবং এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণ তাদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সহযোগিতা করছে?
তাজুল ইসলাম: অবশ্যই সচেতন হয়েছে এবং এখনো আমরা টিভিসি প্রচারের মাধ্যমে সচেতন করে যাচ্ছি। মাইকিং করা হয়েছে, ইমামদের কাছে গিয়েছি, স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের কাছে গিয়েছি। মসজিদের মাধ্যমে সচেতন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এবং নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররাও সমন্বিতভাবে কাজ করছেন।
খবরের কাগজ: উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ গত মঙ্গলবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, দুই ধাপের নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি কম। এই ধরনের ভোটার উপস্থিতিতে আপনি সন্তুষ্ট কী?
তাজুল ইসলাম: ভোটার উপস্থিতি যে রকম পরিমাণ দেখেছি, তা খুব বেশি কম বলে মনে হয় না। বিভিন্ন কারণেই মানুষ কেন্দ্রে আসতে পারে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় গড় ভোটার উপস্থিতি কম নয়। তাই নিরুৎসাহিত হওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই।
খবরের কাগজ: আপনি কী মনে করেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে?
তাজুল ইসলাম: একটা কারণ হতে পারে, বিরোধীরা এ নির্বাচনকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। তাদের তো কিছু লোকজন আছে, তারা এলে উপস্থিতির হার বাড়ত। অবশ্য তার পরও এখন যে হার, তাকে আমি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি।
খবরের কাগজ: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
তাজুল ইসলাম: খবরের কাগজের প্রতি রইল আমার শুভকামনা।