দেশে ডলারসংকট চলছে। আমদানি-রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থনীতির টানাপোড়েনে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে খরচ বেড়েছে। সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে রেকর্ড করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জনমুখী ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নের দাবি করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনীর কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন।
খবরের কাগজ: আপনার মতে আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল সূত্র কেমন হওয়া উচিত?
মাহবুবুল আলম: করোনা-পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মধ্যেও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরও সুদৃঢ় ও জোরদার করা জরুরি। অর্থনীতি সঠিক গতিতে চললেই সরকার তার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ করতে পারবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে একটি জনমুখী ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
খবরের কাগজ: আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দাবি করেছেন। আপনি শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে দাবিগুলো নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব দাবির কতটা আগামী বাজেটে আসবে বলে আশ্বাস পেয়েছেন?
মাহবুবুল আলম: আগামী বাজেটে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা নিয়ে সারা দেশের ব্যবসায়ীরা এফবিসিসিআইয়ের কাছে মতামত দিয়েছেন। এসব মতামত যাচাই-বাছাই করে তালিকা বানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। আমরা আশাবাদী আমাদের সুপারিশ প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হবে। তবে কোনো কারণে প্রতিফলিত না হলে চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য দাবি করছি।
খবরের কাগজ: এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাবে কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?
মাহবুবুল আলম: বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার মনিটরিং, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো, রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি আনা, রপ্তানি বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের নীতি প্রণয়নে জোর দিয়েছি। একই সঙ্গে ব্যবসা বহুমুখীকরণ, নতুন বাজার সংযোজন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সুদের হার কমানো এবং ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কার্যক্রম জোরদার, কর-জিডিপি রেশিও বাড়ানো, রাজস্ব নীতির সংস্কার এবং মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয়, সর্বস্তরে সুশাসন এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে জাতীয় অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা সহজ হবে।
খবরের কাগজ: জাতীয় বাজেট একটা জাতির এক বছরের অর্থনৈতিক রুপরেখা। যা পরের বছরগুলোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ মসৃণ করে। এ বিষেয় আপনার মতামত কী?
মাহবুবুল আলম: এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, এসডিজি অর্জন, নির্বাচনি ইশতেহার, স্মার্ট বাংলাদেশ ও সর্বোপরি ভিশন ২০৪১-কে সামনে রেখে আমাদের অর্থনৈতিক পলিসি সমন্বয় করা জরুরি। বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠু অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমুন্নত রাখতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রাখতে হবে।
খবরের কাগজ: ব্যবসায়ে খরচ বেড়েছে। খরচ কমানো হলে অনেকে নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে ইতিবাচক ধারা আনতে হলে আপনার পরামর্শ কী?
মাহবুবুল আলম: বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ কমিয়ে আনতে হবে। বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিকাঠামো উন্নয়নে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর আদায়ের ক্ষেত্রে হয়রানি ও জটিলতা দূর করে ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার সামনের দিকে আরও বড় হবে। তবে সেই অনুপাতে আমাদের সক্ষমতা হয়নি। রাজস্বসংক্রান্ত আইনকানুন আধুনিকায়ন করা এবং দেশের অর্থনীতির স্বার্থে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সরকারি এবং বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করার বিকল্প নেই। তাই আমরা মনে করি, শুধু এনবিআর নয় এবং দেশের সব বাণিজ্য সংগঠনের সক্ষমতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে; যাতে সরকারকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারে। এ লক্ষ্যে দেশের সব বাণিজ্য সংগঠনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে আগামী বাজেটে বিশেষ নজর দেওয়ার অনুরোধ করছি।
খবরের কাগজ: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আপনার সুপারিশ কী?
মাহবুবুল আলম: কর্মসংস্থানের স্বার্থে বিনিয়োগ, দেশীয় শিল্প ও সেবা এবং সিএমএসএমইকে শুল্ক করের যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা। বিশেষে অব্যাহতি বা বন্ড সুবিধা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ভিত্তিতে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের প্রয়াস অব্যাহত রাখা। ভোগ্যপণ্যসহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা। করনীতি, কর পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, অটোমেশন ও ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে করজাল সম্প্রসারণ করা। কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করা। আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও যথাযথ করনীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা। সমন্বিত শুল্ককর এবং মুদ্রা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার সুপারিশ করছি।
খবরের কাগজ: আগামী অর্থবছরের জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আরও কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
মাহবুবুল আলম: বিনিয়োগ বাড়াতে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার লক্ষ্যে সুদের হার স্থিতিশীল রাখতে হবে। বিনিয়োগের স্বার্থেই সুদের হার কমিয়ে আনতে হবে। বৈদেশিক অর্থায়নে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নগদ সহায়তার বিকল্প সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিকল্প সহায়তা হিসেবে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও পরিবহন খাতে প্রণোদনা বা বিশেষ সুবিধা বহাল রাখতে হবে। কোনো ধরনের চাপে তা কমানো বা বাতিল করা যাবে না।
খবরের কাগজ: অর্থ পাচার রোধে আপনার পরামর্শ কী?
মাহবুবুল আলম: অর্থ পাচার রোধে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব পদক্ষেপ কার্যকরে সবচেয় জরুরি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন।
খবরের কাগজ: রিজার্ভ বাড়াতে আপনার পরামর্শ কী?
মাহবুবুল আলম: প্রবাসী আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কযুক্ত। বিদেশে দক্ষ জনসম্পদ পাঠাতে পারলে প্রবাসী আয় বাড়বে। দক্ষ জনবল পাঠাতে পারলে মূল্য সংযোজন বেশি হয়। আগামী বাজেটে সম্ভাবনাময় এবং নতুন জনশক্তি রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে।
খবরের কাগজ: রাজস্ব আদায় বাড়াতে এফবিসিসিআই থেকে কী পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?
মাহবুবুল আলম: রাজস্ব বাড়াতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, সহায়ক নীতি, কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণ এবং করের আওতা বাড়াতে হবে। করহার কমিয়ে আয়কর এবং মূসকের আওতা সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সক্ষম করাদাতাদের আয়করের আওতায় আনতে হবে। আমদানি করা কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ যাবতীয় শিল্প-উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর এবং ভ্যাট আইনের আওতায় আগাম কর প্রত্যাহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে আগাম কর ভ্যাটও না আবার আয়করও না।
খবরের কাগজ: শোনা যাচ্ছে বাজেটে এনবিআর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এটা কতটা যৌক্তিক বলে মনে করেন?
মাহবুবুল আলম: শুল্ক, মূসক ও আয়কর কর্মকর্তাদের কর ফাঁকি বের করতে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর ফলে আইনের অপপ্রয়োগ হয়। অনেক সৎ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই সরকারি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা কমানোর জন্য পুরস্কার প্রথা বাতিল করে বিকল্প প্রণোদনার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করছি। রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটনে কর্মকর্তাদের বিকল্প উপায়ে যথাযথ স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এনবিআর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই।
খবরের কাগজ: অনেক অর্থনীতির বিশ্লেষক মনে করেন ১৬-১৭ কোটি মানুষের এই দেশে আয়কর আদায়ে আরও গুরুত্ব বাড়ানো উচিত। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
মাহবুবুল আলম: বর্তমান মূল্যস্ফীতি এবং নিম্ন আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় বিবেচনায় নিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ১ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সিনিয়র সিটিজেন ও নারীদের জন্য ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করছি। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ইটিআইএনধারী আছে। অথচ রিটার্ন দাখিল করে গড়ে ৩৫ লাখ। এভাবে রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে। সবাইকে রিটার্ন দাখিলের আওতায় আনতে হবে। শিল্প পরিচালনার ব্যয় কমানোর জন্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়করের হার ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছি। বর্তমান আইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যসামগ্রী যেমন- চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি, সকল প্রকার ফল ইত্যাদির সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে ২ শতাংশ হারে কর কর্তনের বিধান রয়েছে; যার কারণে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। সব কৃষিজাত নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতাবহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করছি। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পসহ সব রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখা। পাশাপাশি নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ হতে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের সুপারিশ করছি।
খবরের কাগজ: মূসক রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণও বাড়ানো হয়। যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপে। সাধারণ মানুষের ওপর মুসকের চাপ কমিয়ে আওতা বাড়াতে আপনার প্রস্তাব কী?
মাহবুবুল আলম: আমদানি করা উপকরণের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ ও ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি। এতে শিল্পের উৎপাদন খরচ কমবে। উৎসে কর্তনের হার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছি। কারণ আদর্শ ভ্যাট পদ্ধতির সঙ্গে এই পদ্ধতি বৈষম্যমূলক। অধিক ভ্যাট আদায়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সব সিটি করপোরেশন এলাকায় সব শপিংমলে যন্ত্র সরবরাহ করে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করার প্রস্তাব করছি। ইএফডি মেশিনকে অধিক কার্যকর করার লক্ষ্যে অনলাইন ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আনার প্রস্তাব করছি। বিশেষ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জুয়েলারি খাত, রেস্তোরাঁ এবং বিভিন্ন শপিংমলে অতি দ্রুত ইএফডি মেশিন সরবরাহ করে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছি।
খবরের কাগজ: ডলারসংকটের কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ে গতি কমেছে। শুল্ক খাতে নীতি-সহায়তা দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে গতি আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার সুপারিশ কী?
মাহবুবুল আলম: কোনো পরিবর্তন ছাড়াই সরাসরি ব্যবহৃত হয়- এমন তৈরি পণ্যের সর্বোচ্চ স্তর, মূসক নিবন্ধিত দেশে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ এবং মধ্যবর্তী কাঁচামালের ক্ষেত্রে শুল্ক, তালিকাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, মৌলিক এবং দেশে উৎপাদিত হয় না- এমন কাঁচামাল ক্ষেত্রে শুল্ক এবং তালিকাভুক্ত পণ্যের ওপর পরিমাণভিত্তিক মিশ্র শুল্ক কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছি। সম্পূরক শুল্ক কেবল বিলাসদ্রব্য, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তালিকাভুক্ত পণ্য এবং অনভিপ্রেত দ্রব্য ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করার প্রস্তাব করছি। আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্যে আমদানি সীমাবদ্ধ করার জন্য তালিকাভুক্ত পণ্য বা সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করছি। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং বাজার বহুমুখীকরণের উদ্দেশ্যে ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে কাঁচামালের উপকরণ প্রাপ্তি সহজীকরণ করার উদ্দেশ্যে আংশিক বন্ড চালু করা এবং সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস চালু করার প্রস্তাব করছি।