
ডলারসংকটের কারণে মোটরসাইকেলের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। বাড়তি দামের কারণে এটি জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিক্রি না বাড়ায় এ ব্যবসায় চলছে মন্দাভাব। পরিস্থিতি উত্তরণে এ খাতকে চাঙা করতে প্রণোদনা চান ব্যবসায়ীরা। খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে বাজাজ মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান উত্তরা মোটরর্সের চট্টগ্রাম সেল সেন্টারের শাখা প্রধান মুজিবর রহমান ভুঁইয়া মোটরসাইকেল ব্যবসার বিস্তারিত দিক তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টগ্রাম অফিসের স্টাফ রিপোর্টার আবদুস সাত্তার।
খবরের কাগজ : মোটরসাইকেল ব্যবসা কেমন চলছে ?
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া: মোটরসাইকেল ব্যবসা এখন আগের মতো নেই বললে চলে। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে মোটরসাইকেল। দিন দিন দাম বেড়ে যাচ্ছে। এক সময় সর্বনিম্ন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। এখন সেই গাড়িগুলো দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে মোটরসাইকেল বিক্রিতে।
খবরের কাগজ : মোটরসাইকেল ব্যবসা মন্দা হওয়ার কারণ কি ?
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল। আবার গাড়ির দাম বৃদ্ধিরও প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দামের প্রভাবও পড়েছে। এখন কম দামে গাড়িতো দেওয়া যাচ্ছে না। মানুষের চাহিদা টাকার ওপরও নির্ভর করে। গাড়ির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা কমে গেছে।
খবরের কাগজ : বাজাজ মোটরসাইকেলের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দাম কত ?
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : বাজাজ মোটরসাইকেল ১০০ সিসির গাড়ি সর্বনিম্ন দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আবার ২৫০ সিসির গাড়ি আছে সেগুলো ৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। বলতে গেলে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মধ্যে বাজাজ গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। বাজাজ গাড়ির গুণ ও মানের কথা বিবেচনায় এ দাম রাখা হয়েছে।
খবরের কাগজ : বাজাজের গাড়ি বিদেশে রপ্তানি হয় কি ?
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : বাজাজের গাড়ি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি হয় না। আমাদের ঢাকার মোটরসাইকেল কারখানাতে গাড়ি গুলো অ্যাসেম্বলি হয়। বাজাজের মূল কারখানা ভারতে।
খবরের কাগজ : বাজাজ পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয় গাড়ি প্রস্তুত করছে কি ?
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : অবশ্যই বাজাজের সব গাড়ি পরিবেশবান্ধব। জ্বালানি সাশ্রয় করে ১০০ ও ১২৫ সিসির বাইকগুলো বানানো। কিন্তু বেশি দামি বাইকগুলোতে জ্বালানি সাশ্রয় করা যাবে না। বেশি সিসির গাড়িগুলো সর্বসাধারণের জন্যও নয়। এগুলো স্পেশাল। এ গাড়িগুলো যারা চালাবে তারা জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করবে না।
খবরের কাগজ : বাংলাদেশের চাহিদার ওপর নির্ভর করে নতুন গাড়ি প্রস্তুত করা হবে কি না ?
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : আমাদের দেশের চাহিদার কথা বিবেচনা করে নতুন গাড়ি আনার প্রক্রিয়া চলছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রেখে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব গাড়ি আনা হবে। আবার বেশ কিছু ফ্যাশনেবল গাড়িও আসবে। তবে এ গাড়িগুলো মডেল বা মাইলেস এখানে বলা যাবে না। বাজাজ একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড তাই গুণগত মান ধরে রেখে নতুন গাড়ি আনা হবে।
খবরের কাগজ : ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স অফিসের কোনো ঝামেলা বা হয়রানি পোহাতে হয় কি না ?
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : উত্তরা মোটরসের সব গাড়ি শত ভাগ ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধের মাধ্যমে আমদানি ও বাজারজাত হয়ে থাকে। সুতরাং এখানে ভ্যাট ও ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের ঝামেলা করার মতো কিছুই নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়রানি করার চেষ্টা করা হলেও কাগজপত্র ঠিক থাকায় হয়রানির স্বীকার কম হতে হয়।
খবরের কাগজ : কয়েক বছর আগের তুলনায় এখন কি পরিমাণ গাড়ি বিক্রি হয় ?
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : করোনার আগে চট্টগ্রামে প্রতি বছর গড়ে ৭ হাজার পিস করে বাইক বিক্রি হয়েছে। সেটি নামতে নামতে এখন প্রতি বছর ৩০০০ পিসে চলে এসেছে। করোনা পরিস্থিতির পর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সেটির প্রভাব পড়েছে এই শিল্পে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। আর ক্রয়ক্ষমতা কমার ফলে মোটরসাইকেল বিক্রি কমে গেছে।
খবরের কাগজ : বাইক ব্যবসায় মন্দাভাবকে চাঙা করতে আপনার পরামর্শ কি ?
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : অবশ্যই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বাজাজ ছাড়াও যেসব কোম্পানির বাইক বাজারে পাওয়া যায় সবার অবস্থা একই। কারোর ব্যবসা ভালো না। সুতরাং এই মন্দাভাবকে চাঙা করতে হলে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। প্রণোদনা দিতে হবে ব্যবসায়ীদের।
খবরের কাগজ : আপনাকে ধন্যবাদ।
মুজিবর রহমান ভুঁইয়া : আপনাকেও ধন্যবাদ।