নকল প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে চর্মরোগ হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যা ১০ জনের মধ্যে তিনজনই। এসব রোগীর অনেকেই সারা জীবনের জন্য অসুস্থ হয়ে থাকবে। ওষুধ খেলে অনেকে আপাতত সুস্থ হলেও নকল প্রসাধনীতে ব্যবহৃত ক্ষতিকর রসায়নিকের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে মারাত্মক ক্ষতিকারক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অনেকের কিডনি রোগের অন্যতম কারণ নকল প্রসাধনী। গবেষণায় দেখা গছে, অনেকেরই নকল প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে ক্যানসারও হয়েছে। এক কথায় বলতে হয়, নকল প্রসাধনী মানবদেহের জন্য ভয়ানক বিপদ ডেকে আনছে। নকল প্রসাধনীর ক্ষতিকর দিক নিয়ে খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনীর কাছে সাক্ষাৎকারে রিমার্ক হারল্যানের কনসালট্যান্ট চর্মরোগবিষয়ক বিশেষজ্ঞ শার্মিনা হক এসব কথা বলেন।
খবরের কাগজ: কত দিন থেকে চর্মরোগ বিষয়ে কাজ করছেন?
শার্মিনা হক: প্রায় দুই যুগ চর্মরোগের চিকিৎসা দিচ্ছি। প্রায় প্রতি দিনই নকল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে আক্রান্তদের চিকিৎসা করছি।
খবরের কাগজ: বাজারে দেদার নকল প্রসাধনী বিক্রি হচ্ছে। অনেকে এসব কিনে প্রতারিত হচ্ছে। নকল প্রসাধনী এত নিখুঁতভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে যে আসলের থেকে তা আলাদা করা যায় না- এমন মতামত অনেকের। আপনি কী বলেন?
শার্মিনা হক: এটা ঠিক যে আসল ও নকল প্রসাধনী আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। নকল প্রসাধনী ব্যবহারের পর যখন বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা যায় তখন চিকিৎসকের কাছে আসে। আর তখন ধরা পড়ে যে নকল প্রসাধনীর কারণে এ অবস্থা হয়েছে।
খবরের কাগজ: নকল প্রসাধনী কিনে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
শার্মিনা হক: সাধারণ মানের দোকান থেকে কম দামে কেনা প্রসাধনী নকল বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে নকল প্রসাধনী। শপিং মল এবং নামিদামি দোকানে সাধারণত নকল কম হয়। তাই যেসব দোকানে ব্র্যান্ডের পণ্য থাকে সেখান থেকে প্রসাধনী কেনা উচিত।
খবরের কাগজ: প্রতারণা ঠেকাতে কী করা উচিত?
শার্মিনা হক: ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর খালি মোড়কে ক্ষতিকর রাসায়নিক ভরে নকল করা হচ্ছে। এসব এত নিখুঁতভাবে করা হয় যে, আসল ও নকলের পার্থক্য বের করা প্রায় অসম্ভব। এ জন্য প্রসাধনী ব্যবহারের পর মোড়ক নষ্ট করে ফেলে দিতে হবে। এতে নকল করার সুযোগ কমে যাবে।
খবরের কাগজ: নকল প্রসাধনী ব্যবহারে কী কী রোগ হয়? নকল প্রসাধনী কীভাবে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে?
শার্মিনা হক: নকল প্রসাধনীতে থাকে কিছু পারদসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক। পারদের কারণে চমড়ায় জ্বালা ধরে। অনেক রাসায়নিক আছে, যা চামড়ায় লাগালে পুড়ে যায়। ত্বকের মসৃণতা নষ্ট হয়ে যায়। ত্বক নষ্ট হয়ে যায়। অনেক আছে যা পেটে গেলে কিডনির কার্যক্ষমতা দ্রুত নষ্ট করে দেয়। একইভাবে অনেক রাসায়নিক আছে, যা ব্যবহারে ক্যানসার আক্রান্ত হয়।
খবরের কাগজ: নকল প্রসাধনী ব্যবসারে দীর্ঘমেয়াদে কী কী রোগ হয়?
শার্মিনা হক: নকল প্রসাধনী অল্প ব্যবহার করলে সাময়িক ক্ষতি হয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করলে বেশি ক্ষতি হয়। মুখের ত্বক একেবারে নষ্ট হয়ে যায়, যা ওষুধ ব্যবহার করেও ঠিক হয় নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শরীরে লোম বেড়ে যায়, যা কোনো ওষুধেই ভালো হয় না।
খবরের কাগজ: শিশুরা নকল প্রসাধনী ব্যবহার করে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। নকল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে শিশুদের অন্যতম রোগ কী কী?
শার্মিনা হক: শিশুদের চামড়া এমনিতেই নরম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে। বেশির ভাগ সময় নকল প্রসাধনী ব্যবহার করে শিশুদের মৃত্যু বেশি হয়।
খবরের কাগজ: দৈনিক যে পরিমাণ রোগী দেখেন তার মধ্যে কত শতাংশ নকল প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে অসুস্থ?
শার্মিনা হক: আমার কাছে প্রতিদিন যে পরিমাণ চর্মরোগী আসে তার প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩ জনই নকল প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে অসুস্থ হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, নকল প্রসাধনীর ভয়াবহতা কতটা ছড়িয়ে পড়েছে।
খবরের কাগজ: রিমার্ক হারল্যানের পণ্য কেন গুণগত মানের?
শার্মিনা হক: রিমার্ক বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের পণ্য তৈরির পর এসব আগে নিজেরা ব্যবহার করি। প্রতিষ্ঠানটির প্রসাধনী তৈরিতে অনেক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। চেষ্টা করা হয় প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরির।