ঢাকা ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
English

নকল প্রসাধনী ব্যবহারে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০২ এএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৭ এএম
নকল প্রসাধনী ব্যবহারে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে
শার্মিনা হক

নকল প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে চর্মরোগ হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যা ১০ জনের মধ্যে তিনজনই। এসব রোগীর অনেকেই সারা জীবনের জন্য অসুস্থ হয়ে থাকবে। ওষুধ খেলে অনেকে আপাতত সুস্থ হলেও নকল প্রসাধনীতে ব্যবহৃত ক্ষতিকর রসায়নিকের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে মারাত্মক ক্ষতিকারক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অনেকের কিডনি রোগের অন্যতম কারণ নকল প্রসাধনী। গবেষণায় দেখা গছে, অনেকেরই নকল প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে ক্যানসারও হয়েছে। এক কথায় বলতে হয়, নকল প্রসাধনী মানবদেহের জন্য ভয়ানক বিপদ ডেকে আনছে। নকল প্রসাধনীর ক্ষতিকর দিক নিয়ে খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনীর কাছে সাক্ষাৎকারে রিমার্ক হারল্যানের কনসালট্যান্ট চর্মরোগবিষয়ক বিশেষজ্ঞ শার্মিনা হক এসব কথা বলেন। 

খবরের কাগজ: কত দিন থেকে চর্মরোগ বিষয়ে কাজ করছেন? 
শার্মিনা হক: প্রায় দুই যুগ চর্মরোগের চিকিৎসা দিচ্ছি। প্রায় প্রতি দিনই নকল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে আক্রান্তদের চিকিৎসা করছি। 

খবরের কাগজ: বাজারে দেদার নকল প্রসাধনী বিক্রি হচ্ছে। অনেকে এসব কিনে প্রতারিত হচ্ছে। নকল প্রসাধনী এত নিখুঁতভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে যে আসলের থেকে তা আলাদা করা যায় না- এমন মতামত অনেকের। আপনি কী বলেন?
শার্মিনা হক: এটা ঠিক যে আসল ও নকল প্রসাধনী আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। নকল প্রসাধনী ব্যবহারের পর যখন বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা যায় তখন চিকিৎসকের কাছে আসে। আর তখন ধরা পড়ে যে নকল প্রসাধনীর কারণে এ অবস্থা হয়েছে।

খবরের কাগজ: নকল প্রসাধনী কিনে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
শার্মিনা হক: সাধারণ মানের দোকান থেকে কম দামে কেনা প্রসাধনী নকল বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে নকল প্রসাধনী। শপিং মল এবং নামিদামি দোকানে সাধারণত নকল কম হয়। তাই যেসব দোকানে ব্র্যান্ডের পণ্য থাকে সেখান থেকে প্রসাধনী কেনা উচিত।

খবরের কাগজ: প্রতারণা ঠেকাতে কী করা উচিত?
শার্মিনা হক: ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর খালি মোড়কে ক্ষতিকর রাসায়নিক ভরে নকল করা হচ্ছে। এসব এত নিখুঁতভাবে করা হয় যে, আসল ও নকলের পার্থক্য বের করা প্রায় অসম্ভব। এ জন্য প্রসাধনী ব্যবহারের পর মোড়ক নষ্ট করে ফেলে দিতে হবে। এতে নকল করার সুযোগ কমে যাবে। 

খবরের কাগজ: নকল প্রসাধনী ব‍্যবহারে কী কী রোগ হয়? নকল প্রসাধনী কীভাবে জনস্ব‍াস্থ‍্যের ক্ষতি করছে?
শার্মিনা হক: নকল প্রসাধনীতে থাকে কিছু পারদসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক। পারদের কারণে চমড়ায় জ্বালা ধরে। অনেক রাসায়নিক আছে, যা চামড়ায় লাগালে পুড়ে যায়। ত্বকের মসৃণতা নষ্ট হয়ে যায়। ত্বক নষ্ট হয়ে যায়। অনেক আছে যা পেটে গেলে কিডনির কার্যক্ষমতা দ্রুত নষ্ট করে দেয়। একইভাবে অনেক রাসায়নিক আছে, যা ব্যবহারে ক্যানসার আক্রান্ত হয়।
 
খবরের কাগজ: নকল প্রসাধনী ব‍্যবসারে দীর্ঘমেয়াদে কী কী রোগ হয়?
শার্মিনা হক: নকল প্রসাধনী অল্প ব্যবহার করলে সাময়িক ক্ষতি হয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করলে বেশি ক্ষতি হয়। মুখের ত্বক একেবারে নষ্ট হয়ে যায়, যা ওষুধ ব্যবহার করেও ঠিক হয় নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শরীরে লোম বেড়ে যায়, যা কোনো ওষুধেই ভালো হয় না। 

খবরের কাগজ: শিশুরা নকল প্রসাধনী ব‍্যবহার করে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। নকল প্রসাধনী ব‍্যবহারের ফলে শিশুদের অন‍্যতম রোগ কী কী?
শার্মিনা হক: শিশুদের চামড়া এমনিতেই নরম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে। বেশির ভাগ সময় নকল প্রসাধনী ব্যবহার করে শিশুদের মৃত্যু বেশি হয়। 

খবরের কাগজ: দৈনিক যে পরিমাণ রোগী দেখেন তার মধ‍্যে কত শতাংশ নকল প্রসাধনী ব‍্যবহারের কারণে অসুস্থ?
শার্মিনা হক: আমার কাছে প্রতিদিন যে পরিমাণ চর্মরোগী আসে তার প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩ জনই নকল প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে অসুস্থ হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, নকল প্রসাধনীর ভয়াবহতা কতটা ছড়িয়ে পড়েছে। 

খবরের কাগজ: রিমার্ক হারল্যানের পণ‍্য কেন গুণগত মানের?
শার্মিনা হক: রিমার্ক বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের পণ্য তৈরির পর এসব আগে নিজেরা ব্যবহার করি। প্রতিষ্ঠানটির প্রসাধনী তৈরিতে অনেক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। চেষ্টা করা হয় প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরির।

সাক্ষাৎকারে আবদুল আউয়াল মিন্টু বিএনপি আক্রোশের বশে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে নয়

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ এএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৬ এএম
বিএনপি আক্রোশের বশে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে নয়
আবদুল আউয়াল মিন্টু

রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা ক্ষেত্রেও সমান দক্ষতা তার। দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী গ্রুপ মাল্টিমোডের কর্ণধার ছাড়াও ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান তিনি। গত দুই দশক ধরে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ক্ষমতার পট পরিবর্তনে অনেকে বিতর্কে জড়ালেও আবদুল আউয়াল মিন্টু নিজেকে বিতর্কের বাইরে রাখার পাশাপাশি একজন সৎ ব্যবসায়ীর ভাবমূর্তিও ধরে রাখতে পেরেছেন। গত সোমবার নিজের ব্যবসায়িক কার্যালয়ে খবরের কাগজের মুখোমুখি হয়ে চলমান রাজনীতির পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েও কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনী। 

খবরের কাগজ: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি বিএনপির সমর্থন না করার কারণ কী? 

আবদুল আউয়াল মিন্টু: বিএনপি জনমানুষের দল। গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা করার পক্ষে রয়েছে এই দলটি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নির্যাতন ও গুম-খুন করা হয়েছে। তারপরও আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে না বিএনপি। সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সহনশীল পরিবেশে রাজনৈতিক চর্চা চাই। 

খবরের কাগজ: বর্তমান সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে চায়। সরকার কি সক্ষম হবে? 

আবদুল আউয়াল মিন্টু: প্রশ্ন হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার ইচ্ছে আছে কি না, ফিরিয়ে আনার আইনি সুযোগ আছে কি না এবং তা কত দিনে কার্যকর করা সম্ভব। আমরা জানি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। এই চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার আইনি সুযোগ আছে। সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে সরকারের কত দিন লাগবে। ভারতেও তো আইন আদালত আছে। সে দেশের আইন কী বলছে? শেখ হাসিনা ভারতের আদালতে গিয়ে যদি বলেন যে, বাংলাদেশে আমাকে ফেরত পাঠানো হলে আমার কঠিন শাস্তি হবে। তাহলে ভারতের আদালত কী রায় দেবে তা দেখতে হবে। 

খবরের কাগজ: বর্তমান সরকার বিভিন্ন খাতের ব্যাপক সংস্কারের কথা বলছে। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী? 

আবদুল আউয়াল মিন্টু: ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সংস্কারের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করেছে। সংস্কারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কার সার্থক করতে রাজনৈতিক লোকদের দিয়ে সংস্কার করাতে হবে। বিএনপি এতদিন আন্দোলন করেছে গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য। আশা করি সেই স্বপ্ন দ্রুতই পূরণ হবে। 

খবরের কাগজ: বিএনপি একদিকে সংস্কারের কথা বলছে। অন্যদিকে নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে…

আবদুল আউয়াল মিন্টু: আমার প্রশ্ন হচ্ছে যেসব সংস্কারের কথা বর্তমান সরকার বলছে তার সবটা কি তাদের পক্ষে শেষ করা সম্ভব? সব সংস্কার কি একটি অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষে করা সম্ভব? বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে না। কিন্তু নির্বাচন তো দিতে হবে। একটি রাজনৈতিক দল একটি দেশের অর্থনীতি বিকাশের জন্য খুব জরুরি। সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে তারা কত দিনে নির্বাচন দেওয়ার কথা ভাবছেন। নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ থাকতে হবে। কিছু সংস্কার তো নির্বাচিত সরকারের জন্যও রাখতে হবে। 

খবরের কাগজ: উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। বিগত সরকারের সময় থেকে পণ্যমূল্য বেড়েই চলেছে। বর্তমান সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কথা বললেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? 

আবদুল আউয়াল মিন্টু: বিগত সরকার পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ে প্রতিনিয়ত মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। মিথ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের বিভ্রান্ত করেছে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। এতে এলসি খোলা কমেছে। এলসি খোলা কমার কারণে আমদানি কমেছে। আমদানি কমার ফলে কাঁচামাল কম আসছে। ফলে উৎপাদন বাড়ছে না। আমদানি করা খাদ্যপণ্যও কম আসছে। কীভাবে মূল্যস্ফীতি কমবে? 

খবরের কাগজ: তাহলে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমানো সম্ভব? 

আবদুল আউয়াল মিন্টু: অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটাতে শিল্প খাতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশের উৎপাদন না বাড়ালে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। উৎপাদন বাড়াতে হলে কারখানা ও শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। ভালো বীজ, কৃষকের দক্ষতা এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে জমিতে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। ১৫ বছর আগে উৎপাদনশীলতা কমতে শুরু করে। গত পাঁচ বছরে তা আরও কমে গেছে। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নেই। উল্টো সামাজিক বিশৃঙ্খলা, শ্রমিক অসন্তোষ বেড়ে গেছে। কারখানাগুলোতে হামলা, আন্দোলন চলছে, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। এই পরিস্থিতির সমাধান দরকার। 

খবরের কাগজ: দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না। বিনিয়োগ বাড়াতে বর্তমান সরকারের কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন? 

আবদুল আউয়াল মিন্টু: বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা আছে। এ জন্য দরকার বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এ ছাড়া ব্যবসা শুরু করার যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময়সীমা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ও শুল্কহার কমাতে হবে। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ, অবকাঠামো- এসব খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বেশি আছে। বিনিয়োগের বাধা দূর করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। আমি বেশ আশাবাদী। কারণ প্রথমত, প্রতিবছর ২০ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন। তাই শ্রমের অভাব নেই। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের পণ্যের বাজার উন্নত দেশগুলোয়। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে যা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার পণ্যের শুল্ক কমাবে, যা বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে। তবে দেশের ৯৫-৯৬ শতাংশ বিনিয়োগ স্থানীয়। বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে যেতে পারছে না, যা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিষয়টি সরকারকে বিবেচনায় রাখতে হবে। 

খবরের কাগজ: সরকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কাজ করার কথা বলছে। ব্যবসায়ে গতি আনতে আপনার সুপারিশ কী?

আবদুল আউয়াল মিন্টু: আমি মনে করি দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিতে হলে সরকারকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা আরও বাড়াতে হবে। বেসরকারি খাতের সংগঠনগুলোকে দলীয় লেজুড়বৃত্তি থেকে বের করে আনতে হবে। এই সংগঠনগুলো আগেও ছিল। গত ১৫ বছরে দেশের ওপরের দিকের ব্যবসায়ীরা দুই ভাগে ভাগ হয়েছেন। একটি অংশ সম্পদ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। আরেকটি অংশ লুটপাট করে সম্পদের মালিক হয়েছেন। এরা অর্থনীতিতে ক্ষমতাবান, রাজনীতিতেও ক্ষমতাবান। তারা লুণ্ঠনের টাকা আবার পাচার করে দিচ্ছেন।

খবরের কাগজ: দেশে বেকারত্বের সমস্যা সমাধানে কী করা উচিত? 

আবদুল আউয়াল মিন্টু: প্রতিবছর দেশের চাকরির বাজারে কর্মক্ষম হয়ে আসে ২০-২২ লাখ মানুষ। এর সঙ্গে কৃষি খাতে বেকার হয়ে পড়া আরও এক-দুই লাখ লোক চাকরির জন্য বাজারে আসে। আমরা তো সবাইকে বিদেশে পাঠাতে পারব না। আমরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে দেশেই কর্মসংস্থান করি। সমস্যা হলো বিনিয়োগ যদি না হয়, তাহলে কর্মসংস্থান কীভাবে হবে? সরকারকে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সামাজিক মূলধন বাড়াতে হবে। 

খবরের কাগজ: সামাজিক মূলধন বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন? 

আবদুল আউয়াল মিন্টু: আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ যতটুকুই করি, তার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার সামাজিক মূলধন। সামাজিক মূলধন সৃষ্টি হয় মানুষের মাঝে একতা থাকলে, আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে হলে, একে অন্যকে বিশ্বাস করলে, যথাযথভাবে চুক্তির বাস্তবায়ন হলে। যে সমাজে একে অন্যকে বিশ্বাস করে না, এক দল আরেক দলকে শত্রু মনে করে, এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিষোদগার করে, মারামারিতে জড়িত থাকে সে সমাজে তো কখনো সামাজিক মূলধন সৃষ্টি হওয়া কঠিন।

সাক্ষাৎকারে এম এ মালিক দেশ গড়তে প্রশ্নহীন ঐক্য করতে চায় বিএনপি

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ পিএম
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ পিএম
দেশ গড়তে প্রশ্নহীন ঐক্য করতে চায় বিএনপি
এম এ মালিক

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক। বিএনপির নেতা হওয়ার কারণে ১৯ বছর তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। শুধু তাই নয় মা, বাবা এবং ছোট ভাইয়ের লাশও দেশে এনে কবর দিতে পারেননি তিনি। এসব কষ্টের কথা সম্প্রতি দেশে ফিরে খবরের কাগজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি। গুলশানের একটি হোটেলে এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনী

খবরের কাগজ: ১৯ বছর আপনার দেশে না ফেরার কারণ কী?
এম এ মালিক: শুধু বিএনপির রাজনীতি করার কারণে ১৯ বছর আমাকে ও আমার পরিবারকে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে নিজের জন্মস্থানে আসতে দেয়নি। আমার মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল, দেশের মাটিতে যেন তার কবর দেওয়া হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা আমাদের সে সুযোগ দেননি। আমার মায়ের লাশ দেশে আনতে পারিনি। এমনকি আমার বাবা ও ছোট ভাইয়ের লাশও দেশে এনে কবর দিতে পারিনি। মাতৃভূমির জন্য মন কেঁদেছে। চোখের পানি ফেলেছি। দেশে আসতে পারিনি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশে এসেছি। ১৯ বছর পর দেশের মাটিতে পা রেখেছি। এ আনন্দ-অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। 

খবরের কাগজ: দেশে ফেরার পর অনুভূতি কী?
এম এ মালিক: কর্মী ছিলাম, এটাই অপরাধ। শেখ হাসিনার সরকার আমার পাসপোর্ট আটকে রেখেছিল। আপনি বলেন, কেমন লাগবে- যদি কাউকে নিজের আত্মীয়স্বজন, পরিচিতজনসহ বন্ধুদের সঙ্গে ১৯ বছর দেখা করতে না দেওয়া হয়! নিজের বাড়িঘর দেখতে দেওয়া না হয়! আমি এই দেশের, মাটির মানুষ। মাটির প্রতি টান অনুভব করতাম। ছুটে চলে আসতে ইচ্ছা করত। কিন্তু পারিনি। দেশে আপনজনদের অনেকে অসুস্থ হয়েছেন। আমার দেখতে ইচ্ছা করেছে। অনেকে আমাকে দেখতে চেয়েছেন। কিন্তু পারিনি। আমার মা-বাবা ও ভাইকেও দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। তাদের অপরাধ ছিল, তারা আমার আপনজন। তারা বারবার দেশে আসতে চাইতেন। কিন্তু যখন দেখলেন যে, দেশে আসতে পারছেন না। তারা তখন আমাকে বলেছিলেন মারা গেলে দেশেই যেন কবর দেওয়া হয়। তাও সম্ভব হয়নি। অবশেষে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পাসপোর্ট ফিরে পেয়েছি। আমি দেশে আসার পর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও রাজনৈতিক নেতাসহ সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে। আমি আবেগাপ্লুত। 

খবরের কাগজ: শোনা যাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন…. 
এম এ মালিক: আমি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার মানুষ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমার বাথরুমের কমোড পর্যন্ত খুলে নিয়ে গিয়েছে। এখন দল যদি যোগ্য মনে করে, নমিনেশন দেয়, তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। বিদেশে যাওয়ার আগে দেশে সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। বিদেশে গিয়েও বিএনপির রাজনীতিতেই যোগ দিয়েছি। একসময় যুক্তরাজ্য বিএনপি শাখা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছি। 

খবরের কাগজ: বিদেশে বিগত সরকারের বিরুদ্ধে কতটা সোচ্চার ছিলেন? 
এম এ মালিক: আমি সব সময়েই জনমানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করেছি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সব সময়ে প্রতিবাদ করেছি। বিশেষভাবে ওয়ান-ইলেভেনের পরে যুক্তরাজ্যে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী নানা কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমরা প্রবাসে থেকেও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। প্রায় দিনই দেশের মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আন্দোলনের রূপরেখা দিয়েছি। ২০২৩ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের সময় ওয়াশিংটনে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছি। সে সময় কর্মসূচি প্রত্যাহার করার জন্য আমাকে আলোচনায় বসতে চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আমি তা প্রত্যাখ্যান করি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখে আমাকে চায়ের দাওয়াত দেওয়া হয়। আমার নেতা তারেক রহমানকে প্রবাসে থাকতে বাধ্য করেছে। তার সঙ্গে কিসের চা খাওয়া! গত ১৭ বছর এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সুমনসহ বিএনপির ৬ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। দেশটাকে একটা দল ও পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল। যারা তথাকথিত উন্নয়নের নামে আমাদের প্রত্যেকের কাঁধে দেড় লাখ টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে হাজার হাজার, লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সব সময় আমি সোচ্চার ছিলাম। 

খবরের কাগজ: আগামী দিনে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে?
এম এ মালিক: বিএনপি জনগণের দল। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফ্যাসিস্ট সরকার তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দেয়নি। কিন্তু তাকে কি দেশের জনগণের ভালোবাসা থেকে দূরে রাখতে পেরেছে? পারেনি। তারেক রহমান সারা দেশের লাখ-কোটি বিএনপির নেতা-কর্মীর সঙ্গে যুক্ত আছেন। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি এমনভাবে দলটিকে গড়ে তুলেছেন যে বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। সাংগঠনিক কাঠামো অত্যন্ত শক্তিশালী। তারেক রহমান সব আইনি বিষয় মোকাবিলা করে অচিরেই বাংলাদেশে আসবেন ইন্‌আশাল্লাহ।

খবরের কাগজ: বিএনপি সাধারণ মানুষের কতটা কাছের দল? 
এম এ মালিক: শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে দেশ থেকে পালিয়ে যাননি। জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বহুবার বিদেশে গিয়ে আরাম-আয়েশে জীবন কাটানোর সুযোগ পেয়েও যাননি। তিনিও জীবনবাজি রেখে দেশ গড়ার কাজ করেছেন। ফ্যাসিস্ট সরকার তার সঙ্গে কী করেছেন, তা আপনার দেখেছেন। তিনি প্রতিবাদ করেছেন। এরই নাম দেশপ্রেম। এমন দুই ব্যক্তির সন্তান তারেক রহমান। তার নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ। তারেক রহমান কখনো দেশ বিক্রি করে দেবেন না- এই বিশ্বাস ও আস্থা রাখা যায়।

খবরের কাগজ: ভারতের সঙ্গে বিএনপির কি বৈরী সম্পর্ক? ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক থাকলে সমস্যা হওয়ার কথা। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিগত অবস্থান কী? 
এম এ মালিক: বিএনপি কারও সঙ্গে বৈরিতায় বিশ্বাস করে না। ভারতের সঙ্গেও না। তবে সম্পর্ক হবে সম্মান ও বন্ধুত্বের। কারও কাছে নতিস্বীকার করে নয়। সেটা যত বড় রাষ্ট্রই হোক। কেউ বলতে পারবেন না যে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কারও কাছে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। একই কথা বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কেও কেউ বলতে পারবেন না। ভারতের কাছে নতিস্বীকার করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে বিএনপি চায় না। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ বজায় রেখে সম্পর্ক রাখতে চায় বিএনপি। 

খবরের কাগজ: বিএনপি দেশের কেমন সংস্কার দেখতে চায়? 
এম এ মালিক: আমার নেতা তারেক রহমান এরই মধ্যে জানিয়েছেন, বিএনপি সেই সংস্কার করতে চায় যার মাধ্যমে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। যে সংস্কার করলে বেকার সমস্যার সমাধান, নারীদের স্বাধীনতা ও অধিকার এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। যে সংস্কার করলে দেশের সন্তানরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাবে। 

খবরের কাগজ: আগামী নির্বাচনের পরে দেশ পরিচালনায় বিএনপি কী ভাবছে? 
এম এ মালিক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস অতিদ্রুত দেশে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন বলে বিএনপি আশা করে। তারেক রহমান জানিয়েছেন, প্রথাগত রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন অথচ দেশ গঠন, উন্নয়ন ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী এমন অসংখ্য জ্ঞানী মানুষকে দেশ গড়ার কাজে সম্পৃক্ত করা হবে। বিশেষ করে গুণী শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, মানবতাকর্মীদের কাজে লাগানো হবে। তাদের সেবা আর অবদান দেশের কাজে লাগাতে বিএনপি পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত করতে চায়। বিএনপি দেশ গড়তে প্রশ্নহীন জাতীয় ঐক্য করতে চায়। জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত করতে চায় বলে এরই মধ্যে আমার নেতা তারেক রহমান জানিয়েছেন। এ দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরও বিএনপি মূল্যায়ন করবে।

সাক্ষাৎকারে রাকিবুল আলম চৌধুরী ক্রেতা খুঁজে বের করতে টাস্কফোর্স গঠন জরুরি

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২২ এএম
আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৮ এএম
ক্রেতা খুঁজে বের করতে টাস্কফোর্স গঠন জরুরি
রাকিবুল আলম চৌধুরী

দেশের রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পোশাকশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত এই শিল্পের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ক্রয়াদেশগুলো অন্য দেশে কেন চলে যাচ্ছে, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নিলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের পোশাক ব্যবসায়ীরা টিকতে পারবেন না। পোশাকশিল্পের নানা দিক নিয়ে খবরের কাগজ চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ইফতেখারুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন বিজিএমইএর সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী

খবরের কাগজ: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় তিন মাসে গার্মেন্টস সেক্টরের কোনো প্রভাব পড়েছে কি? 

রাকিবুল আলম চৌধুরী:  ৫ আগস্টের পর পোশাকশিল্পে ইতিবাচক কোনো প্রভাব দেখছি না। ক্রেতাদের আস্থা এখনো পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে পারিনি। 

খবরের কাগজ: তার মানে ক্রয়াদেশ কমেছে?

রাকিবুল আলম চৌধুরী: প্রায় ৩০ শতাংশ ক্রয়াদেশ কমে গেছে। অস্থিরতা থাকলে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিতে চায় না। তারা যে ক্রয়াদেশ দেন তা হলো তাদের বিনিয়োগ। পৃথিবীর কোনো ব্যবসায়ী চায় না তার বিনিয়োগ কোনো দেশের রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক অস্থিরতার কারণে আটকে যাক। তাছাড়া বর্তমানে তাদের হাতে অনেক বিকল্প  অন্য অনেক দেশ আছে। যারা পোশাকশিল্পে খুব ভালো করছে। তারা তাদের কাছে চলে যাচ্ছে। এই যাওয়াটা স্বাভাবিক। সে তার বিনিয়োগের নিরাপত্তার স্বার্থে যাচ্ছে। যে কারণে আমাদের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরও কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তবে এরই মধ্যে কি পরিমাণ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সমীক্ষা চলছে।

খবরের কাগজ: জিএসপি সুবিধা নিয়ে কিছু বলুন। 

রাকিবুল আলম চৌধুরী: আমাদের আসলে বলতে হবে এক্সপোর্ট ডিউটি নিয়ে। আমার যে দেশে পণ্য রপ্তানি করি সেসব দেশ আমাদের কাছ থেকে ডিউটি আদায় করে। আমরা চাই ডিউটি কমানো হোক। দেশ এবং কাপড়ের আইটেমের ওপর ভিত্তি করে ডিউটি কম-বেশি হয়। যেমন পলিস্টারের তৈরি পোশাক বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় রপ্তানি করলে ৩২ শতাংশ ডিউটি দিতে হয়। ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীদের দিতে হচ্ছে ১৬ শতাংশ। যে কারণে তারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে। এসব বিষয়ে কাজ করতে হবে।

খবরের কাগজ: এই সমস্যা সমাধানে বিজিএমইএ কোনো উদ্যোগ নিয়েছে?

রাকিবুল আলম চৌধুরী: হ্যাঁ চেষ্টা তো অবশ্যই চলছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আমেরিকার সুসম্পর্কের কথা শোনা যায়। তার মাধ্যমে আমরা ডিউটি কমানোর চেষ্টা করছি। তবে শুধু প্রধান উপদেষ্টার কাঁধে পুরো দায়িত্ব দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এখানে অর্থ উপদেষ্টা আছেন, শ্রম উপদেষ্টা আছেন। তাদেরও আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। তারা উদ্যোগ নিলে প্রধান উপদেষ্টা হয়তো সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন। 

খবরের কাগজ: বিভিন্ন স্থানে পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে কেন?

রাকিবুল আলম চৌধুরী: এর জন্য রাজনীতি কিছুটা দায়ী হতে পারে। পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। পটপরিবর্তন হলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয় তা কেউ না কেউ পূরণ করবে। এই কাজটি করতে গিয়ে কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। শ্রমঘন এই শিল্পে শ্রমিকদের কেউ না কেউ হয়তো উসকানি দিচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যায়। 

খবরের কাগজ: গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, দেশে কেন তৈরি হয় না?

রাকিবুল আলম চৌধুরী: দেশে পোশাকশিল্পের কাঁচামাল নেই। যে কারণে এখানে কারখানা থাকলেও এক্সেসরিজ তৈরির জন্য কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয়। অন্যান্য এক্সেসরিজের কথা বাদ দিলাম, সামান্য কার্টন তৈরির পর্যাপ্ত কাঁচামালও বাংলাদেশে নেই। 

খবরের কাগজ: এই শিল্পে ডলারসংকট ও দুর্বল ব্যাংকের প্রভাব কি রকম? 

রাকিবুল আলম চৌধুরী: ডলারসংকট তেমন সমস্যায় ফেলছে না। জটিলতা সৃষ্টি করেছে দুর্বল ব্যাংকগুলো। এলসি খোলাসহ নানা বিষয়ে তারা আগের মতো সেবা দিতে পারছে না। 

খবরের কাগজ: সংকট থেকে উত্তরণে আপনার পরামর্শ কি?  

রাকিবুল আলম চৌধুরী: আমাদের দেশ থেকে কেন ক্রয়াদেশ অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। একসময় বাংলাদেশের পথে পথে ক্রেতারা ঘুরত। এখন ক্রেতাদের খুঁজে বের করে আমাদের কাপড় বিক্রি করতে হচ্ছে। এই সংকট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠন করে প্রথমে সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। তারপর সমাধানে হাত দিতে হবে। 

খবরের কাগজ: আপনার ব্যবসা কেমন চলছে?

রাকিবুল আলম চৌধুরী: মোটামুটি। দেশের অন্য ব্যবসায়ীদের ওপর যে প্রভাব পড়েছে, আমিও তাই বাইরে নই।  

খবরের কাগজ:  খবরের কাগজের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।  

রাকিবুল আলম চৌধুরী: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিচার বিভাগকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪০ এএম
আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪০ এএম
বিচার বিভাগকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণার রায়টি দিয়েছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা)। বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে কানাডা বসবাস করছেন। তার দেওয়া রায়টি দীর্ঘ সাত বছর পর নিষ্পত্তি হওয়ায় খবরের কাগজ কথা বলেছে সাবেক এই বিচারপতির সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন খবরের কাগজের সিলেট ব্যুরোপ্রধান উজ্জ্বল মেহেদী

খবরের কাগজ: বহুল আলোচিত বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে এখন থেকে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে এসেছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? 
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা: এটা নিয়ে এত হইচই হয়েছিল যে আমি আগেও বলেছিলাম একবার, হাসব কী কাঁদব! আসলে আইনের প্রতি মানুষের অজ্ঞতা দায়ী। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ-সাংবাদিক-বিচারক-আইনজীবী প্রত্যেকের জানার বাকি আছে। যেমন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এটা নিয়ে পানি এত ঘোলা করছে, খায়রুল হকের জাজমেন্ট ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি যে ওপিনিয়ন দিয়েছিলাম আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন হতে হবে। আইনের অজ্ঞতা, ইংরেজি না জানায় এত হইচই। শেখ হাসিনা তো বিরোধিতা করবেনই, আজীবন সরকারে থাকতে চাইছিলেন। তখন বিএনপি ঘরানার আইনজীবী কেউ কিছু বলেননি। দুঃখের বিষয় এটিই।

খবরের কাগজ: রায়-পরবর্তী তখনকার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা: এই জাজমেন্টটা দেওয়ার আগেই আমি জানতাম, হাসিনা সরকার গ্রহণ করবে না। কিছু বিচারকের মুখের ওপর মুলো ঝোলানো হয়েছিল। এরা মুখিয়ে ছিল। আমার ব্যক্তিত্বের ওপর চ্যালেঞ্জ করতে পারিনি। আমার রায়ে পরিষ্কার করে দিয়েছিলাম, নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করে দিয়েছিলাম। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মিটিং করে অ্যাপ্রুভ করে দিয়েছিলাম। 

খবরের কাগজ: আপনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালে এই রায় দিয়েছিলেন। এরপর রায়টি স্থগিত করা হয়েছিল। এখন আপিলে নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নিয়ে আপনার সেই প্রত্যাশা পূরণের পথ প্রসার হলো কি?
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা: যে জাজমেন্ট দিয়েছিলাম তারপর তারা রিভিউ আবেদন করেছে। সরকারের মধ্যে অনেকগুলো রায় দিয়ে দিলেই দপ্তরের প্রধান একটা রিভিউ পিটিশন ফাইল করত। রিভিউ আবেদন, রিভিউ পেন্ডিং কোর্টের কাজ বাড়ায়, চাপ বাড়ায়। সব দিক দিয়ে যখন পচন ধরে তখন তা বিচার বিভাগকে গ্রাস করে।

খবরের কাগজ: ‘গ্রাস’ থেকে মুক্তির কী পথ?
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা: ইলেকশন নিয়ে বিচারকদের সঙ্গে খেলবে পলিটিশিয়ানরা, এটা আমরা অ্যালাও করব না। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো- আমাদের দেশে, বিএনপি ধরেন, আওয়ামী লীগ ধরেন, ভালো লইয়ার, তাদের তারা রাখে না। যারা শিক্ষিত, জ্ঞানী, তাদের রাখে না। অবমূল্যায়ন করে। কিন্তু ভারতের দিকে তাকান, সেরা সেরা লইয়ার রাজনীতিবিদের সঙ্গে থাকেন। বিজেপিতে নামকরা লইয়ার তাদের প্যানেলে থাকেন। তাদের মূল্যায়ন করা হয়। আমেরিকায় ট্রাম্পও লইয়ার-নির্ভর। কিন্তু আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টা। 

খবরের কাগজ: বিচার বিভাগ ও পলিটিকস আলাদা হবে কি?
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা: বিচার বিভাগের জন্য পার্লামেন্ট বা পলিটিকস গুরুত্বপূণ কিছু না। আমি কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা বিচার বিভাগের জন্য এটি করিনি। আরও বড় ভাবনা থেকে করেছিলাম। আমি জানি, বাংলাদেশে গণতন্ত্র হবে না। পার্লামেন্ট স্থায়ী কিছু না। ২০০৭-০৮-এ পার্লামেন্ট ছিল না। ইলেকশন হলেই কিন্তু পার্লামেন্টে আস্থা রাখতে পারব না। বাংলাদেশে পার্লামেন্ট হলো হুজুগের পার্লামেন্ট। যখন নৌকা ক্ষমতায় থাকে, তখন কলাগাছ দাঁড়ালেও সুযোগ পায়। যখন ধানচড়া (ধানের শীষ) ঢেউ ওঠে, তখন ধান পাস করে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে নৌকার ইলেকশনে মানুষ পাগল। এসব নির্বাচনে যারা এমপি হয়, তাদের পার্লামেন্টে কিছু হয় না। বাংলাদেশের পার্লামেন্টে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ না থাকলে বিচারকদের নিয়ে পলিটিকস হবে। এই কারণে আমি অনেক চিন্তাভাবনা করে রায়টি দিয়েছিলাম, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক দল ব্যবহার করে বলে এই রায়। বিচার বিভাগকে পলিটিকসের বাইরে রাখতে হবে। 

খবরের কাগজ: বিচার বিভাগের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা: আমি আসার পর তিনজন বিচারককে বেঞ্চ না দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। শপথ নিয়েছিলেন তারা। বছরের পর বছর বেঞ্চ না দিয়ে বসিয়ে রাখা অন্যায়। তারা (বিচারক) যদি অন্যায় করে চার্জ আনো, বসিয়ে রাখতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সরকারও করেছে, এখন অন্তর্বর্তী সরকারও করছে। এটা খারাপ কালচার। 

খবরের কাগজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকারে ডা. শাহাদাত হোসেন নান্দনিক চট্টগ্রাম গড়ে তুলব

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১২ এএম
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫০ এএম
নান্দনিক চট্টগ্রাম গড়ে তুলব
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

তিন যুগের রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো মেয়র হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। শপথ নেয়ার আগে খবরের কাগজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার নতুন স্বপ্ন, পরিকল্পনা এবং উদ্যোগের মাধ্যমে নান্দনিক চট্টগ্রাম গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন খবরের কাগজের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ইফতেখারুল ইসলাম

খবরের কাগজ: কখনো চিন্তা করেছিলেন, আপনাকে মেয়র ঘোষণা করা হবে?

ডা. শাহাদাত হোসেন: আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল। অরাজকতা, ভোট ডাকাতির একদিন অবসান হবেই। কারণ সবকিছুরই শেষ আছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস ঘাটলেও দেখা যায় স্বৈরাচার, একদলীয় শাসনব্যবস্থা দীর্ঘদিন টিকতে পারেনি। যেমন এরশাদের পতন হয়েছিল। এদেরও একদিন না একদিন পতন হবে, সেই বিশ্বাস আমার ছিল। যে কারণে কেউ মামলা না করলেও আমি করেছি। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে ৬টি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন হয়। সে সময় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি আসনেও ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আমি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করি। যেকারণে ইভিএম সম্পর্কে আমার কিছু ধারণা হয়। চসিক নির্বাচনও ইভিএমের মাধ্যমে হয়। তারা মনে করেছিল আমি ভোটের ফলাফল সংগ্রহ করব না, কিংবা ফলাফল না দেখে প্রত্যাখ্যান করব। তাদের কাছে নির্বাচনের ফলাফল চাইলে তারা আমাকে তা হাতে লিখে দেন। হাতে লেখা ফল না মেনে আমি আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। সাড়ে তিন বছর আইনি লড়াই করার পর আদালত আমাকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন। আসলে সবকিছু আল্লাহতায়ালা নির্ধারণ করে রেখেছেন। 

খবরের কাগজ: দায়িত্ব নিয়ে কোন কাজটি প্রথমে শুরু করবেন?

ডা. শাহাদাত হোসেন: জনগণের যে কাজে সবচেয়ে বেশি চাহিদা সেই কাজটিতে হাত দিতে চাই। তা হলো জলাবদ্ধতা নিরসন। এর মূল কারণ চিহ্নিত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। যদিও প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের জন্য বিশাল সরকারি বরাদ্দ রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা বেশকিছু অর্থ খরচও করেছে। কিন্তু জলাবদ্ধতার জন্য সৃষ্ট দুর্ভোগের দায় সাধারণ মানুষ চসিকের ওপর চাপায়। এই দায়বদ্ধতা থেকেই চউকের সঙ্গে সমন্বয় করে চলতি শুষ্ক মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে চাই। মানুষ যাতে দৃশ্যমান একটি রেজাল্ট পায় সেই চেষ্টা থাকবে। 

খবরের কাগজ: অতীতে যারা চসিকের মেয়র ছিলেন তারাও চউকের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফলতা সেভাবে আসেনি। আপনি কতটুকু আশাবাদী? 

ডা. শাহাদাত হোসেন: মূল সমস্যা অন্য জায়গায়। সিটি গভর্নমেন্ট যদি বাস্তবায়ন করা যেত, তাহলে সব নাগরিকসেবা এক জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রণ হতো। তখন পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্ভব হতো। চট্টগ্রামের পরিকল্পিত উন্নয়ন তখনই সম্ভব হবে, যখন সিটি গভর্নমেন্ট বাস্তবায়ন হবে। সিটি গভর্নমেন্টের মূল কনসেপ্ট হলো সব সেবা সংস্থা এক ছাতার নিচে থাকবে। সব সেবাদানকারী সংস্থার সিদ্ধান্ত এক জায়গা থেকেই হবে। বর্তমানে দেখা যায়, সিটি করপোরেশন একটি সড়কের সংস্কার কাজ করল। এরপর চট্টগ্রাম ওয়াসা এসে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে দিল। পরে এল পিডিবি। কারণ কে কখন কোন সড়কে কাজ করবে তা অন্য সংস্থা জানে না। যদি সিদ্ধান্তটা এক জায়গা থেকে হতো তাহলে সব খোঁড়াখুঁড়ি শেষ করার পর সড়কটির সংস্কার করা হলে রাষ্ট্রের অর্থ যেমন বাঁচত, তেমনি জনদুর্ভোগও অনেক কম হতো। 

খবরের কাগজ: বর্তমান প্রেক্ষাপটে চসিকের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা কোনটি?

ডা. শাহাদাত হোসেন: দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরিচ্ছন্নতা। সাধারণ মানুষ যাতে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলতে না পারে সেজন্য সচেতনতা কর্মসূচির পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে। কোনো দোকানের সামনে ময়লা থাকলে ওই দোকানদারকে শাস্তি দেওয়া হবে। ককশিট এবং পলিথিনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলব। আমার নেতা-কর্মীসহ দলমত নির্বিশেষে শহরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এই আন্দোলনে শামিল করব। সবাইকে নিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই। তা ছাড়া পচনশীল আবর্জনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে তা সম্পদে পরিণত হয়। এগুলো ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। সেটি নিয়ে ভাবব। মোট কথা, একটি নান্দনিক চট্টগ্রাম গড়ে তুলব।

খবরের কাগজ: দেশের একমাত্র সিটি করপোরেশন হলো চসিক যেখানে নগরবাসীকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। একজন চিকিৎসক হিসেবে এই খাতের উন্নয়নে আপনি কি করবেন?

ডা. শাহাদাত হোসেন: চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের অবস্থা খুবই বাজে। এখানে ৪১টি ওয়ার্ডে যেসব কমিউনিটি ক্লিনিক ছিল সেসবের কাঠামোগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি চসিকের মেমন হাসপাতাল যেখানে মাতৃসেবা এবং শিশুদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এই হাসপাতালের অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয়। এগুলোকে সেবাদানের উপযোগী করা হবে। স্বাস্থ্যসেবাকে গতিশীল করব। 

খবরের কাগজ: চসিক এখনো চলছে মান্ধাতার আমলের জনবলকাঠামো দিয়ে। এখানে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন?

ডা. শাহাদাত হোসেন: জনবল কাঠামো নিয়ে আমি স্টাডি করা শুরু করছি। জনবলের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কোথাও ছদ্ম বেকার আছে কি না, কিংবা কেউ কাজ না করে বেতন নিয়ে যাচ্ছে কি না সবকিছু গুরুত্বসহকারে দেখব। কারণ আমি নগর পিতা নই, সেবক হতে এসেছি। চসিকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সেবকের মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।

খবরের কাগজ: চসিকের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি নেই। অর্থনৈতিকভাবে ধুঁকছে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

ডা. শাহাদাত হোসেন: আয়বর্ধক যেসব প্রকল্প নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলোকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে এনে চসিকের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করব। তা ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের আয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে যায়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চসিক যে রাজস্ব পায় তা ন্যায্য নয়। তারা এতদিন ধরে চসিককে ঠকিয়ে যাচ্ছে। অথচ বন্দরের সব ধরনের ভারী যানবাহন চসিকের সড়কগুলো ব্যবহার করছে। তাতে সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। সড়ক মেরামতে চসিককে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আমরা বন্দরকে যে লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছি আশা করছি তার বিনিময় তারাও চসিককে দেবে। 

খবরের কাগজ: নির্বাচনি ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার সব মনে আছে?

ডা. শাহাদাত হোসেন: ‘নগর পিতা নয়, নগর সেবক হতে চাই’ এই স্লোগানে ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম। ২০২১ সালে নির্বাচনে স্বাস্থ্যবান্ধব নগর গড়তে জলাবদ্ধতা নিরসন, শিশু হাসপাতাল, মাতৃসদন, ট্রমা সেন্টার ও বিশেষায়িত হাসপাতাল, গ্রিন ও ক্লিন সিটি, মাদক সন্ত্রাস নির্মূলসহ আমার ৭৫টি প্রতিশ্রুতি ছিল। অল্প সময়ে তা বাস্তবায়ন কঠিন হলেও চেষ্টা করে যাব।

খবরের কাগজ: সরকার পতনের পর চসিকে এখন কাউন্সিলর নেই। তাদের ছাড়া কাজ কীভাবে আগাবেন?

ডা. শাহাদাত হোসেন: নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি তারা যথেষ্ট দক্ষ ও আন্তরিক। তাদের নিয়ে কাজ করতে তেমন অসুবিধা হবে না। 

খবরের কাগজ: চসিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান নিম্নমুখী। এ বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

ডা. শাহাদাত হোসেন: শিক্ষার মান বাড়ানোর বিকল্প নেই। প্রয়োজনে দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দেব। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি এবং ক্লাসের পড়া ক্লাসে যাতে আদায় হয় তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করব। নিজেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারপ্রাইজ ভিজিট করব। 

খবরের কাগজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা. শাহাদাত হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });