ঢাকা ৮ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
English

একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. আলী রীয়াজ ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার সুপারিশ দেবে সংবিধান সংস্কার কমিশন

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ এএম
আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার সুপারিশ দেবে সংবিধান সংস্কার কমিশন
সংবিধান সংস্কার কমিশনপ্রধান ড. আলী রীয়াজ

৭ জানুয়ারি শেষ হবে সংবিধান সংস্কারবিষয়ক কমিশনের কার্যকালের মেয়াদ। ওয়েবসাইট ও খানা জরিপের মাধ্যমে কমিশনের কাছে ৯৬ হাজারের বেশি মতামত এসেছে। তাতে ক্ষমতার ভারসাম্য এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পক্ষে সবচেয়ে বেশি মত দিয়েছেন অংশীজনরা। এই কমিশনের প্রতিবেদন তৈরির সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন কমিশনপ্রধান ড. আলী রীয়াজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শাহনাজ পারভীন এলিস। 

খবরের কাগজ: কমিশনের প্রতিবেদন তৈরির অগ্রগতি কত দূর? নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দেওয়া কি সম্ভব হবে? নাকি সরকারের কাছে বাড়তি সময় চাইবেন?

ড. আলী রীয়াজ: বাড়তি সময়ের দরকার হবে না। আমাদের কাজ হলো সংবিধান পর্যালোচনা, সারাংশ নির্ধারণ ও যৌক্তিক কিছু সুপারিশ তৈরি করা। পর্যালোচনা শেষ করে এরই মধ্যে আমরা সুপারিশ লেখা শুরু করেছি। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা কাজ শেষ করতে পারব। ৭ জানুয়ারি সরকারের কাছে জমা দেওয়ার সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। 

খবরের কাগজ: কমিশনের পক্ষ থেকে মতামত সংগ্রহের ধাপগুলো কী ছিল। এ পর্যন্ত কতজন মতামত ও মন্তব্য পাঠিয়েছেন?

ড. আলী রীয়াজ: কমিশনের ওয়েবসাইটে গত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৫০ হাজার ৫৭৩ জন মতামত দিয়েছেন। গত ৫ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে এ বিষয়ে খানা জরিপ পরিচালিত হয়। তাতে মতামত দিয়েছেন ৪৫ হাজার ৯২৪ জন। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫টি রাজনৈতিক দল এবং ৩টি রাজনৈতিক জোটের মতামত এসেছে। ৭ জন সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ৪৩টি সংগঠনের অংশীজন, ১০ তরুণ চিন্তাবিদের সঙ্গে সভা করে মতামত নিয়েছি।

খবরের কাগজ: সংবিধান সংস্কারকাজে আপনাদের কাজের ধাপগুলো কেমন ছিল?

ড. আলী রীয়াজ: আমরা দুভাগে কাজটি করছি। একটি পর্যালোচনা, অন্যটি সুপারিশমালা তৈরি। পর্যালোচনায় নিজেদের সংবিধান ছাড়া আরও ১২০টি দেশের সংবিধান আমাদের গবেষণা টিম পর্যবেক্ষণ করেছে। এর মাধ্যমে বিগত ৫২ বছরে আমাদের সংবিধানের দুর্বল ও সবল দিকগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা আমরা করেছি। অংশীজনদের কাছ থেকে সংগৃহীত মত এবং কমিশনের সব সদস্যের মত একত্রিত করে সুপারিশ তৈরি করা হচ্ছে। জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সুপারিশমালায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য, সংবিধানকে গণতান্ত্রিক ডকুমেন্টে পরিণত করা, তার যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করা, ক্ষমতা যাতে এককেন্দ্রীকরণ না হতে পারে সেসব বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। আমাদের সুপারিশে কোনো সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে না। সরকার সেগুলোকে একসঙ্গে নাকি পর্যায়ক্রমে- কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করবে, সেটা তারা নির্ধারণ করবে। 

খবরের কাগজ: কমিশনের সুপারিশমালায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে কোন কোন বিষয়?

ড. আলী রীয়াজ: অংশীজনদের মতামত প্রাধান্য দিয়ে আমরা গণতান্ত্রিক ও নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা হবে এমন কিছু বিষয়কে সংস্কারে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তার মধ্যে রয়েছে- ক্ষমতার ভারসাম্য, পঞ্চদশ সংশোধনী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, আনুপাতিক হারে ভোটের বিধান দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালু, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শাসনকাল, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, বাহাত্তরের সংবিধান, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থানীয় সরকারব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ ও ক্ষমতায়ন, গণভোট প্রভৃতি। বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা কমিয়ে আনার পক্ষে আমাদের সুপারিশ থাকবে। কারণ কমিশন মনে করে, বর্তমান বাংলাদেশে সংসদে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো প্রয়োজন। তারা যাতে সংসদে তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এ জন্য তরুণদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে মত দেব।
 
খবরের কাগজ: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে কমিশনের বিশ্লেষণ কী?

ড. আলী রীয়াজ: অতীতে এ দেশে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো নজির আমরা দেখিনি। সেগুলোতে জনমতের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। প্রতিটিতে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতাসীন দলই বিজয়ী হয়েছে। কাজেই দেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমি মনে করি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিকল্প নেই। 

খবরের কাগজ: সম্প্রতি আপনি বলেছেন ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবেন। সে বিষয়ে পরিকল্পনা কত দূর এগিয়েছে?

ড. আলী রীয়াজ: ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানকে কোনোভাবেই তো অস্বীকার করা যাবে না। আজ রাষ্ট্র সংস্কারে এতগুলো কমিশন হয়েছে তার সবই সম্ভব হয়েছে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে। কাজেই আমরা চাই সংবিধানে এর স্বীকৃতি থাকতে হবে। সেটা কীভাবে কোন স্থানে সংযোজন করা হবে, তা এখনো আমরা জানি না। তবে কোনো না কোনো উপায়ে এই বিষয়টা যাতে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় আমরা সেই সুপারিশ রাখব। একই সঙ্গে এই গণ-অভ্যুত্থান ঘিরে দেশবাসীর যে আকাঙ্ক্ষা তার প্রতিফলন সংস্কারের বিভিন্ন সুপারিশে উল্লেখ করা হবে।

খবরের কাগজ: যতগুলো ধাপে সংবিধান সংস্কারের মতামত এসেছে তাতে সংবিধান কি পুনরায় লিখতে হবে, নাকি কিছু সংযোজন-বিয়োজন করলেই চলবে বলে আপনি মনে করেন? 

ড. আলী রীয়াজ: সেটা আমাদের আওতার মধ্যে পড়ে না, সংবিধানের খসড়া আমরা তৈরি করছি না। সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কাজেই কমিশন সে বিষয়ে সুপারিশও দেবে না। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সংবিধান পর্যালোচনা, সারাংশ নির্ধারণ ও যৌক্তিক কিছু সুপারিশ তৈরি করা। আমরা সেই সব সুপারিশ সরকারকে দেব। আমাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। পরে সরকার রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে তারা সংবিধান পুনর্লিখন করবেন না সংযোজন-বিয়োজন করে সংশোধনী এনে সংকট সমাধানের পথ খুঁজবেন, অগ্রসর হবেন- সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।

খবরের কাগজ: বিগত দিনে এ দেশের সংবিধান ১৭ বার পরিবর্তন হয়েছে। সেসব পরিবর্তন কী কারণে করা হয়েছে বলে মনে করছেন?

ড. আলী রীয়াজ: কমিশনের পর্যালোচনা বলছে, শুরু থেকে এ পর্যন্ত সংবিধানে যতগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে তার গ্রহণযোগ্য কোনো যুক্তি কেউ দেখাতে পারেনি। মূলত ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সংবিধান বারবার সংশোধন করা হয়েছে। সেগুলোতে নাগরিক অধিকার ও জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। সংসদীয় ব্যবস্থা পাল্টে দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা যেমন প্রবর্তন করা হয়েছিল, অন্যদিকে দুবার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে। আমি বারবার বলেছি, চলমান সংবিধানে একনায়কত্ব কায়েমের পথ আছে। আর এ কারণেই সংবিধানকে সামনে রেখেই এ দেশে বারবার একনায়কত্ব ও এক ব্যক্তির শাসন চলেছে। যার ফলাফল সুখকর ছিল না। এসব কারণে রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল দুই বছর বহাল থাকলেও পরিবর্তন আসতে পারে প্রধানমন্ত্রীর শাসনকালের মেয়াদে। 

খবরের কাগজ: সংবিধান বারবার পরিবর্তন করা কতটা যৌক্তিক?

ড. আলী রীয়াজ: কোনো সংবিধান পারফেক্ট নয়, এটা কোনো ঐশীবাণী না, এটা জনগণের আকাঙ্ক্ষার ফসল, রাষ্ট্রের জন্য দিকনির্দেশনা। রাষ্ট্র ও জন-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তা পরিবর্তন হতেই পারে। এক-তৃতীয়াংশ সংবিধান আপনি বদলাতে দেবেন না- এটা নৈতিক, আইনি, রাজনৈতিক কোনো দিক থেকেই সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আর সেটাই করা হয়েছে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। কাঠামোগত ও মর্মবস্তুর দিক থেকে আমি মনে করি, এ দেশের সংবিধান দুবার পুনর্লিখন হয়েছে। তার একটি হলো ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে চতুর্থ সংশোধনী, যা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। অপরটি ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের খোলনলচে পাল্টে দেওয়া হয়েছে। বলা যায়, ওই দুটি সংশোধনীর মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে একদলীয় শাসনব্যবস্থা ও জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে, যা এ দেশের মানুষ গ্রহণ করেনি।

খবরের কাগজ: ১৯৭২ সালের সংবিধানকে অনেকেই সর্বজন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করে থাকেন। আপনার বিশ্লেষণ কী?

ড. আলী রীয়াজ: আমি তা মনে করি না। বাহাত্তরের সংবিধান তৈরির প্রক্রিয়াই ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কারণ জরুরি অবস্থার সময় যেভাবে গণপরিষদ তৈরি করা হয়েছিল, তা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বেশির ভাগ প্রতিনিধিত্ব ছিল একটি দলের। মাত্র তিনজন ছিলেন অন্য দলের। ফলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতের প্রতিফলন তাতে ছিল না। এ ছাড়া কন্টেন্টের দিক থেকেও বাহাত্তরের সংবিধানের নাগরিকদের অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে। 

খবরের কাগজ: সংবিধানে নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের প্রাধান্য থাকা বা রাষ্ট্রধর্ম নির্ধারণ করে দেওয়াকে আপনি কীভাবে দেখেন? 

ড. আলী রীয়াজ: আমি মনে করি, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থা বিরাজমান। সেটা ধর্মের দিক থেকে, নৃতাত্ত্বিকভাবে, বিশ্বাসের দিক থেকে। তাই শব্দের বিচার-বিবেচনায় না জড়িয়ে বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থাকে সংরক্ষণ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আর সে জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা সরকারকে করতে হবে। আমাদের এমন সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়া দরকার, যেখানে বহুত্ববাদী এই সমাজে সবার অধিকার রক্ষিত হবে।    

খবরের কাগজ: শত ব্যস্ততার মধ্যেও মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. আলী রীয়াজ: খবরের কাগজ পরিবারের জন্য শুভ কামনা করছি।

ক্রেতার আস্থার ঠিকানা বনফুল

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১১:২৬ এএম
ক্রেতার আস্থার ঠিকানা বনফুল
আমানুল আলম

মো. আমানুল আলম বনফুল অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে আছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। বর্তমানে তিনি এই গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সেমাই ও মিষ্টান্ন তৈরির কোম্পানি বনফুলের সেমাইয়ের নানা দিক নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ইফতেখারুল ইসলাম

খবরের কাগজ: কখন এবং কোন উদ্দেশ্য নিয়ে বনফুলের যাত্রা শুরু হয়?

আমানুল আলম: একসময় ঈদ উৎসবে মানুষ বাংলা সেমাই খেতেন। স্থানীয়ভাবে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে এই সেমাই তৈরি হতো। কিন্তু সেভাবে তৈরি করা সেমাইয়ের বেশির ভাগই ছিল অস্বাস্থ্যকর। খাদ্য জগতের মানোন্নয়ন এবং ক্রেতার কাছে মানসম্পন্ন সেমাই পৌঁছে দেওয়াই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। তাই বলা যায়, সেমাই ও মিষ্টির জগতে বনফুল বাংলাদেশির পথিকৃৎ। ১৯৮৯ সালে বনফুলের যাত্রা। সময়ের আবর্তে এই খাতকে আরও আধুনিকতার ছোঁয়া আমরা দিতে পেরেছি। আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে বনফুল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে ভালো মানের স্বাস্থ্যসম্মত সেমাই পরিবেশন করার ফলে ধীরে ধীরে ক্রেতাদের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে বনফুল। এখন তো এই শিল্পে আমরা আরও আধুনিক মেশিন ব্যবহার করছি। 

খবরের কাগজ: আপনারা কি সারা বছর সেমাই তৈরি করেন?

আমানুল আলম: আমাদের সেমাইয়ের চাহিদা সারা বছর আছে। তাই কম পরিসরে সারা বছর সেমাই তৈরি করি। তবে ঈদের সময় সেমাইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। 

খবরের কাগজ: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আপনাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এসেছে। তাদের কীভাবে মোকাবিলা করছেন?

আমানুল আলম: আমরা গুণগত মান এবং স্বাস্থ্যসম্মত সেমাই উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকি। ভালো মানের পণ্য তৈরি করলে অন্য কোম্পানি বাজারে কী নিয়ে আসছে তা নিয়ে আর ভাবতে হয় না। এই নীতি অনুসরণের কারণে বাকিদের নিয়ে আমাদের ভাবতে হচ্ছে না। 

খবরের কাগজ: সেমাই শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি কী?

আমানুল আলম: খুব ভালো। সেমাইয়ের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। আমরা চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লা এবং উত্তরবঙ্গে কারখানা করেছি। বাজার প্রসার হওয়ায় ক্রেতা বেড়েছে। ক্রেতারা ভালো পণ্যের কদর করছেন। সারা দেশে আমাদের পরিবেশক রয়েছে। 

খবরের কাগজ: সেমাইয়ের সরবরাহ এবং দাম কি ক্রেতাদের নাগালে আছে?

আমানুল আলম: দাম আমরা সব সময় ক্রেতা সাধারণের নাগালে রাখার চেষ্টা করি। এটা কিন্তু বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আমরা কম লাভ করে ক্রেতার মন জয় করার চেষ্টা করি। এই কাজ করতে গিয়ে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। যেমন কাঁচামালের সংকট অনেক সময় আমাদের বিপাকে ফেলে দেয়। গম আমদানি কমে যায়। অনেক সময় গমের দাম মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যায়। মাঝে মধ্যে ঘি-এর সংকট হয়। যে কারণে অনেক সময় উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু আমরা তা ক্রেতাকে বুঝতে দিই না।

খবরের কাগজ: এই শিল্পের আরও সমৃদ্ধি অর্জনে সরকারের করণীয় কিছু আছে?

আমানুল আলম: সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কলকারখানা চালানো কঠিন। গ্যাসের অপর্যাপ্ত সরবরাহ উৎপাদন কাজে বিঘ্ন ঘটায়। পর্যাপ্ত গ্যাস পেলে আমরা আরও ভালোভাবে উৎপাদন করতে পারতাম। আর ভ্যাট ট্যাক্সের কথা বলতে গেলে, যদি সরকার তা বাড়ায় তখন আমরা পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হই।

খবরের কাগজ: বনফুলকে কি আর কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে?

আমানুল আলম: মাঝে মাঝে কিছু অসাধু ব্যক্তি আমাদের ব্র্যান্ড নকল করছে। যা আমাদের বিব্রত অবস্থায় ফেলে। কোনো ক্রেতা একবার নকল সেমাই কিনলে আসল সেমাইয়ের প্রতি তার আগ্রহ হারিয়ে যাবে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় নকল ব্র্যান্ড প্রতিরোধ করার চেষ্টা করি। তবে যেসব ক্রেতা আমাদের সেমাই নিয়মিত খান তিনি প্যাকেট ধরলেই বুঝতে পারবেন কোনটি আসল আর কোনটি নকল। 

খবরের কাগজ: বনফুল এতদূর এগিয়ে যাওয়ার পেছনে আর কোনো রহস্য আছে?

আমানুল আলম: অবশ্যই আছে। আজ এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম এবং প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপির অবদান অপরিসীম। এই কারখানার মাধ্যমে আজ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। চেয়ারম্যানের মেধা-শ্রম এবং একাগ্রতার ফল হিসেবে আমরা এতদূর অগ্রসর হতে পেরেছি। পণ্যের মানের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সব সময় কঠোর। মান নিয়ে তিনি কখনো আপস করেননি।

খবরের কাগজ: ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?

আমানুল আলম: আমরা তিন যুগ ধরে মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করে ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে আসছি। এত দীর্ঘ সময় ধরে ক্রেতা সাধারণ আমাদের ওপর আস্থা রাখার জন্য তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করছি, ভবিষ্যতেও তারা আমাদের ওপর আস্থা রাখবেন। আমরা তাদের কাছে মানসম্পন্ন পণ্য পৌঁছে দেব। 


খবরের কাগজ: আপনাকে ধন্যবাদ

আমানুল আলম: আপনাকেও ধন্যবাদ

সাক্ষাৎকারে রিজওয়ানা হাসান নারীকে শিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৪২ পিএম
আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৩ পিএম
নারীকে শিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: সংগৃহীত

নারীর চলার পথ এখনো মসৃণ না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও দেশের নারীরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। নারী যত এগিয়েছে, প্রতিবন্ধকতাও তত শক্তিশালী হয়েছে। নারীকে শিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সরকারকেও নারীর অধিকার আদায়ে দায়িত্বশীল হতে হবে। ধর্ষকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গত বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তুলে ধরা হলো এখানে- 

খবরের কাগজ: স্বাধীনতার অনেকগুলো বছর পার করে ফেলেছি আমরা। দেশে নারীর অবস্থান কেমন বলে মনে করছেন? 

রিজওয়ানা হাসান: দেশে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা বেড়েছে। সমাজ-সংসারে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ছে। চাকরিজীবী নারীর সংখ্যা বাড়ছে। তাহলে কি ধরে নেব যে নারীর চলার পথ মসৃণ হয়েছে? না, নারীকে এখনো পরিবারে ও পরিবারের বাইরে- সব জায়গায় বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। রাস্তাঘাটে, গণপরিবহনে, অফিস-আদালতে, বেড়াতে গেলে, শপিংয়ে, শিক্ষাক্ষেত্রে- প্রায় সবখানেই নেতিবাচক পরিবেশের মুখে পড়তে হচ্ছে। 

খবরের কাগজ: নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হলে আপনার পরামর্শ কী? 

রিজওয়ানা হাসান: নারীকে স্বাবলম্বী হতে হবে। নিজের চলার খরচ নিজেকেই জোগাড় করতে হবে। তাকে আয় করতে জানতে হবে। তবেই নারী মর্যাদা পাবে। নারীকে শিক্ষা অর্জন করতে হবে। শিক্ষিত নারী নিজের জন্য, সমাজের জন্য শক্তি। তবে নারীর অধিকার অর্জনে তাড়াহুড়া করা যাবে না। 

খবরের কাগজ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ধর্ষণ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ থেকে মুক্তির উপায় কী?

রিজওয়ানা হাসান: যৌন হয়রানি বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি দিতে হবে। নারীকে সেক্সিস্ট ইমেজ থেকে বের করে আনতে হবে। একসময়ে ১ টাকার ছবিতে নারী কী পরে ছিল! আর এখন নারীর পোশাক নিয়ে এত কথা কেন! তাহলে কি আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি! নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগাতে হবে। মনে রাখতে হবে নারীও মানুষ। 

খবরের কাগজ: আপনি তো সব সময় নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলেছেন। এখন সরকারের অনেক বড় দায়িত্বশীল পদে কাজ করছেন। আজকের এই অবস্থানে আসতে আপনাকে কেমন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে? 

রিজওয়ানা হাসান: আমি ওই সব নারীর মতো, যাদের সামনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে থামিয়ে দেওয়া যায় না, যারা সহজে ভেঙে পড়ে না। যত বাধা এসেছে, আমি আরও ভালোভাবে নিজেকে তৈরি করে এগিয়েছি। ধরুন, আমি একটা গাড়ি থেকে নামলাম, আমি হয়তো শাড়িটা পায়ের কাছে ঠিক করলাম। তখন ওইটাই ভিডিও করে ভাইরাল করে দিল। বলা হয়, সুন্দরী উপদেষ্টা, আরও কত কিছু। যা হয়তো মুখেও আনা যায় না। এসব করা হয় মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য। এসবে নারীর হয়তো কিছু হয় না। কিন্তু তার পরিবারের লোকেরা কিছু মনে করলেও করতে পারে। 

খবরের কাগজ: আপনি আপনার বাবা-মা-সন্তান, স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকদের কাছ থেকে কী ধরনের বাধার মুখে পড়েছেন?

রিজওয়ানা হাসান: আমি ভাগ্যবতী নারী। আমার স্বামী আমার কাজে সমর্থন দেন। আমাকে পরিবারের কাজে সহযোগিতা করেন। আমি বিদেশে পড়তে যেতে চেয়েছিলাম। আমার বাবা রাজি হননি। একজন মেয়েকে একা বিদেশে ছাড়তে চাননি। ছেলে হলে নিশ্চয় ছাড়তেন। তবে আমি আমার মেয়েকে বিদেশে পড়তে যেতে দিয়েছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আস্থা বেড়েছে। শুধু তা-ই না, আমার মেয়েকে যেখানে পড়িয়েছি, আমার দুই ছেলেকে সেখানে পড়াইনি। মেয়েকে সুবিধা বেশি দিয়েছি। আবার আমার যা সম্পদ আছে, তা তিন সন্তানের মধ্যে সমান ভাগ করে দেওয়ার কথা বলেছি। মেয়ে বলে কম দেওয়া হবে না। আমার সন্তানরা ভাইবোনের সমান অধিকারে বিশ্বাস করে। আমি কাজ সেরে বাসায় গেলে আমার কন্যা বিভিন্ন প্রশ্ন করে। সে লক্ষ্য রাখে নারীর পক্ষে আমি কী বলছি। এটাই তো নারীর এগিয়ে চলা। মায়ের চেয়ে মেয়ে তার ন্যায্য পাওনা বেশি পাবে। আমার পরিবার জানে আমি কতটা সততার সঙ্গে কাজ করছি। তাই তারা আমার পাশে থাকে, সহযোগিতা করে। 

খবরের কাগজ: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর এ দেশে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। নতুন সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক। বর্তমান সরকার নারীদের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কী করছে? 

রিজওয়ানা হাসান: বর্তমান সরকার নারীবান্ধব। নারীর সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানে কাজ করছে। নারী ফুটবল খেলার ক্ষেত্রে বাধা এলে তার সমাধান কিন্তু এই সরকার করেছে। শুধু তা-ই না, সরকারের বড় বড় পদে অনেক যোগ্য নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যা যা করার সবই করছে বর্তমান সরকার। বিশেষভাবে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এযাবৎকাল নারীর ক্ষামতায়নের জন্য, নারীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কী কী করেছেন তা আপনারা জানেন। আমি যখন উপদেষ্টা হইনি, তখনো নারীর অধিকার আদায়ে অনেক কিছু করেছি। এখনো আমি নারীর অধিকার আদায়ের পক্ষে জোরালো। এখন অনেক টিএনও, ডিসি কিন্তু নারী। 

খবরের কাগজ: পরিবার থেকে নারীর অধিকার রক্ষায় কীভাবে সহযোগিতা করা উচিত বলে আপনি মনে করেন? শিক্ষাক্ষেত্রে ভূমিকা কী হতে পারে? 

রিজওয়ানা হাসান: পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। সে যেন থানায় গিয়ে নিজের সমস্যা জানাতে পারে। কোথাও যৌন হয়রানির শিকার হলে সে যেন প্রতিবাদ করতে পারে। নারীর অধিকার আদায়ে পরিবারকে নারীর পাশে থাকতে হবে। পরিবার পাশে থাকলে নারীর পক্ষে যুদ্ধে জয় সহজ হয়। একইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর যৌনপীড়নের ঘটনাকে ঢেকে বা গোপন না করে সবার সামনে আনতে হবে। অপরাধীকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।
 
খবরের কাগজ: যৌন হয়রানির পাশাপাশি নারীর প্রতি শারীরিক নির্যাতন ও মানসিক নিপীড়ন থামছেই না। আপনি কী মনে করেন? 

রিজওয়ানা হাসান: শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি- এখনো চলছে। একই সঙ্গে নেগেটিভ কথা বলে নারীকে আটকে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের নারীরা তো পাহাড়ে উঠেছে। তারা প্রমাণ করেছে তারা পারে। বিমান চালাচ্ছে। ক্রিকেট খেলছে। অস্ত্র কাঁধে যুদ্ধে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে। সরকারের ওপরের পদে কাজ করছে। তাহলে নারীকে কেন ছোট করা হবে? নারীকে কেন ভোগের বস্তু ভাবা হবে? নারীকে নিয়ে ফেসবুকে নোংরামি করা যাবে না। চটকদার রিল বানানো যাবে না। মনে রাখতে হবে, নারী একজন মানুষ। তাকে মর্যাদা দিতে হবে।

বছরে ৬০০ কোটি টাকার সিসি ক্যামেরা আমদানি

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৮ এএম
আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
বছরে ৬০০ কোটি টাকার সিসি ক্যামেরা আমদানি
রাখাল চন্দ্র নাথ

চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে সেন্ট্রাল শপিং কমপ্লেক্সের পাওয়ার লাইন কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী রাখাল চন্দ্র নাথ ২০০৬ সাল থেকে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ব্যবসা করছেন। খবরের কাগজের সঙ্গে এই ব্যবসার নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যুরো প্রধান ইফতেখারুল ইসলাম-

খবরের কাগজ: দেশে সিসি ক্যামেরার চাহিদা কেমন?
রাখাল চন্দ্র নাথ: মানুষ এখন বাসা, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সব জায়গায় ক্যামেরা লাগাচ্ছে। যে কারণে প্রচুর চাহিদা বাড়ছে। মূলত নিরাপত্তার জন্যই মানুষ এই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে। ২০০৬ সালে আমরা এই ব্যবসা শুরু করি। ওই সময় মানুষ শুধু অফিসগুলোতে ক্যামেরা লাগাত। কেউ বাসায় লাগালেও হয়তো গেটে লাগাত। এক সময় মানুষ ভবন নির্মাণ করার সময় ডিশের লাইন বাধ্যতামূলক রাখত। এখন সিসিটিভি ক্যামেরার লাইনও বাধ্যতামূলক লাগাচ্ছে। 

খবরের কাগজ: বছরে কত কোটি টাকার সিসি ক্যামেরা আমদানি করা হচ্ছে?
রাখাল চন্দ্র নাথ: বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার সিসি ক্যামেরা আমদানি হয়। এটি প্রতিবছর বাড়ছে।

খবরের কাগজ: এই বাজার এখনো পুরোটাই আমদানিনির্ভর, দেশীয় উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে কি না?
রাখাল চন্দ্র নাথ: সব চায়না থেকে আসে। আমাদের দেশের শুধু ক্যামেরার কেবল তৈরি হচ্ছে। সাভারে শেখ রাসেল টেকনোলজি পার্কে এসব কেবল তৈরি হচ্ছে। তবে সাভারে একটি ক্যামেরা কারখানা হচ্ছে বলে আমরা জানি। যেটা উৎপাদনে যেতে হয়তো বছরখানেক সময় লাগতে পারে। 

খবরের কাগজ: তার মানে এই খাতে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে।
রাখাল চন্দ্র নাথ: অবশ্যই, এখন যারা ডিশের লাইন দেয়, ইন্টারনেটের লাইন দেয় তারাও এখন ক্যামেরার কাজ করছে। তারাও এই কাজে অভিজ্ঞ হয়ে যাচ্ছে। নতুন একটা কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। 

খবরের কাগজ: কোন কোন দেশ থেকে সিসি ক্যামেরা আমদানি করা হচ্ছে? দাম কেমন? 
রাখাল চন্দ্র নাথ: চীন ছাড়া আগে তাইওয়ান থেকে এডিটেক নামে একটি ব্র্যান্ডের সিসিটিভি ক্যামেরা আসত। এখন আসে না। তাইওয়ানের ব্র্যান্ডটা টিকতে পারেনি। সব ক্যামেরা আসে চীন থেকে। বিভিন্ন দামের ক্যামেরা আছে। বাসা বাড়িতে সাধারণত যেসব ক্যামেরা লাগানো হয় তার দাম ১৪০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আবার শিল্প কারখানা এবং করপোরেট অফিসের চার হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার ক্যামেরাও লাগানো হয়।

খবরের কাগজ: কোন ধরনের সিসি ক্যামেরার চাহিদা বেশি? 
রাখাল চন্দ্র নাথ: যে ক্যামেরা সহজে ব্যবহার করা যায়, মানুষ সেটিই সবচেয়ে বেশি লাগায়। এইচডি ক্যামেরার হাইস্পিড ইন্টারনেট লাগে না। মোবাইলে দেখা যায়। তাই এ ধরনের ক্যামেরার চাহিদা বেশি। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশে এই ক্যামেরার বাজার কত বড়?
রাখাল চন্দ্র নাথ: বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী মাত্র ১২ শতাংশ সিসি ক্যামেরার আওতায় এসেছে। বাকি ৮৮ শতাংশ খালি আছে। বিশাল সম্ভাবনা একটি বাজার। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ক্যামরা আমদানি হচ্ছে। এক সময় মানুষ একটি বাটন ফোনের ওপর নির্ভরশীল ছিল। পরে স্মার্টফোনে অভ্যস্ত হয়। এখন ইন্টারনেট মাস্ট হয়ে গেছে। একইভাবে সিসিটিভিও জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে যাচ্ছে।

খবরের কাগজ: অপরাধ তদন্তে সিসি ক্যামেরার কার্যকারিতা সম্পর্কে বলুন।
রাখাল চন্দ্র নাথ: অপরাধ তদন্তে এবং অপরাধীদের ধরতে এই প্রযুক্তি জুড়ি নেই। হাইওয়েতে ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। কেউ অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালালে ক্যামেরায় ওঠে যাবে। এ নিয়ে ৭০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। গাড়ির ডকুমেন্ট ফেইল থাকলেও ক্যামেরায় উঠে যাবে। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের মতই সিসি ক্যামেরার এই প্রকল্পটি সরকার বাস্তবায়ন করছে। যেখানে হাইওয়েতে কেউ অপরাধ করলে পার পাবে না। তা ছাড়া বাসা বাড়ি এবং অফিসে যেসব ক্যামেরা লাগানো হয় এবং যাদের ক্যামেরা সচল থাকে। সেখানে চুরি, ডাকাতি কিংবা যেকোনো হামলার ঘটনা ঘটলে তা সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। অপরাধীকে পাকড়াও করার কাজটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সহজ হয়ে যাচ্ছে।

খবরের কাগজ: সিসি ক্যামেরাকে আরও জনপ্রিয় করতে সরকারের কাছে কোনো প্রত্যাশা আছে?
রাখাল চন্দ্র নাথ: অনেক উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আইপি ক্যামেরা ১৫ শতাংশ, সিসি ক্যামেরায় ৬৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি থেকে অনেকবার আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না। শুল্ক কমিয়ে যদি দাম আরও কমানো যেত, তাহলে ব্যবহার আরও অনেক বেশি বেড়ে যেত।

খবরের কাগজ: সিসি ক্যামেরা নিয়ে সরকারের কাছে কম্পিউটার সমিতির পক্ষ থেকে কেন দেন দরবার করেন?
রাখাল চন্দ্র নাথ: আমরা যারা কম্পিউটারের ব্যবসা করি। তারাই আবার সিসি ক্যামেরার ব্যবসা করি। সিসি ক্যামেরার আমদানিকারক এবং বিক্রেতাদের কোনো আলাদা সমিতি নেই। তাই কম্পিউটার সমিতির পক্ষ থেকেই সরকারের কাছে তারা আবেদন নিবেদন করেন। 

খবরের কাগজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
রাখাল চন্দ্র নাথ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

কৃষি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে দেশে ছোলা উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৭ এএম
আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৬ এএম
কৃষি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে দেশে ছোলা উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব
বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ। ছবি: খবরের কাগজ

গত বছর হঠাৎ করে ছোলার দাম বাড়তে শুরু করে। এবার অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর ছোলা আমদানি হয়েছে। বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দামও কমছে। বাজার কি স্থিতিশীল থাকবে। না রমজানের আগে আবার হঠাৎ করে দাম বাড়বে। এসব ব্যাপারে জানতে খবরের কাগজ কথা বলেছে বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম।

খবরের কাগজ: রমজান এলেই ছোলার দাম বাড়ে, কারণ কি?

শফি মাহমুদ: গত বছর ডলারসংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি খুলেনি। তাই ছোলা ও ডালের আমদানি কমে যায়। চাহিদার তুলনায় বাজারে ছোলার সরবরাহ কমে যায়। এ কারণে দাম বেড়ে যায়। এটাই প্রধান কারণ। তবে গত বছর যেভাবে ছোলার দাম বেড়েছে এবার রমজানের আগেই কমেছে। প্রচুর আমদানি হওয়ায় দাম কমেছে। 

খবরের কাগজ: কারা ছোলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে? 

শফি মাহমুদ: অনেকে নাবিল গ্রুপ, আকিজ গ্রুপের কথা বললেও এবার বিভিন্ন ছোট ছোট কোম্পানি ডাল আমদানি করেছে। তাদের কাছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও লালবাগের ডালপট্টিতে পাইকারিভাবে বিক্রি করা হয়। নারায়ণগঞ্জসহ অন্য এলাকাতেও পাইকারি পর্যায়ে ছোলা বিক্রি করা হয়। আমাদের ৩ হাজার ৭০০ টাকা বস্তা খরচ পড়েছে। কিছু লাভ তো করতে হবে। এ জন্য ১০৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। 

খবরের কাগজ: খুচরা পর্যায়ে ছোলা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। কারা এত বেশি লাভ করছে। 

শফি মাহমুদ: খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের কাছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি ছোলা বিক্রি করছে। তাহলে বলা যায় তারাই বেশি লাভ করছে। আমরা কেজিতে ২-৩ টাকার বেশি করি না। আমার জানা মতে, পাইকারি ব্যবসায়ীরাও কেজিতে এই রকম ২-৩ টাকা লাভ করে। তাহলে বুঝায় যাচ্ছে খুচরা পর্যায়ে বিক্রেতারা বেশি লাভ করছে। যা ঠিক না। কারণ লাভেরও একটা সীমা আছে। তা পার করা ঠিক না। এটা বেশি মনে হলে অভিযান করে ভোক্তা অধিদপ্তরকে দেখা দরকার। 

খবরের কাগজ: বাজারে ছোলার সরবরাহ বাড়লে দাম কি আরও কমবে? 

শফি মাহমুদ: ছোলার দাম আরও কমতে পারে। কারণ হলো গত বছর এই সময়ে ডলারের দাম ১২০ টাকার মতো ছিল। বর্তমানে ১২২ টাকায় ডলার পাওয়া যায় না। এক কেজিতে কয় টাকা বেড়েছে হিসাব করলেও জানা যাবে। তাহলে কীভাবে কমবে আমদানিকৃত এই পণ্যের দাম। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দর কমেছে। এ জন্য কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। চিন্তার কিছু নেই। ভবিষ্যতে দাম আরও কমতে পারে। কারণ আমদানি বন্ধ হয়নি। কানাডা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ছোলা আমদানি করা হচ্ছে। 

খবরের কাগজ: সরকার কি পদক্ষেপ নিলে ছোলার দাম কমবে?

শফি মাহমুদ: ছোলায় তেমন শুল্ক আরোপ করা নেই। আবার দেশেও তেমন উৎপাদন হয় না ছোলা। তাই দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলা যায়। কারণ আমদানি পর্যায়ে ৯৫ টাকা কেজি খরচ পড়ছে। কিছু তো লাভ করতে হবে। লোকসান করে তো কেউ ব্যবসা করবে না। তবে সরকার বাজারে অভিযান করলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি লাভ করতে পারবে না। এতে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা কমতে পারে। আবার ডলারের সংকট দূর করতে পারলে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমতে পারে। 

খবরের কাগজ: দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানো যায় না?

শফি মাহমুদ: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোলার আবাদ হয়। তবে এটা খুবই নগণ্য। এ জন্য আমদানি করতে হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে এটার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কারণ ধানের মতো এটার ব্যাপারে কৃষকের আগ্রহ কম। এ জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। 

কাঁচামালের অভাবে রপ্তানি বাড়ছে না

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২২ এএম
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৮ এএম
কাঁচামালের অভাবে রপ্তানি বাড়ছে না
তরিকুল ইসলাম জহির

হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারকদের বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)র পরিচালক তারিকুল ইসলাম জহির। তিনি খুলনার চিংড়ি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান আছিয়া সি ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চিংড়ি শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএফএফইএ এর পরিচালক তারিকুল ইসলাম জহিরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খুলনা প্রতিনিধি মাকসুদ রহমান। 

খবরের কাগজ: একসময়ে বাংলাদেশে চিংড়ি চাষ খুব লাভজনক ছিল। এখন আর আগের মতো নেই। আপনি কি মনে করেন। 

তারিকুল ইসলাম জহির: চিংড়ি চাষ লাভজনক না হওয়ার দুটা কারণ রয়েছে। একদিকে চিংড়ির উৎপাদনে ও প্যাকেজিংয়ে ব্যয়ভার বেড়েছে। ব্যাংকের সুদ ৯ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হয়েছে। বিদ্যুতের বিল বেড়ে গেছে। শ্রমিকের ব্যয় বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান অবমূল্যায়ন হয়েছে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বে চিংড়ির দাম যেটা ছিল বিগত এক যুগ ধরে তা একই অবস্থায় রয়ে গেছে। এর কোনো হেরফের হয়নি। এ ছাড়া আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হয় হাইব্রিড প্রজাতির ভেনামি চিংড়ির সঙ্গে। যেখানে আমরা পিছিয়ে। সেই সঙ্গে সনাতনী পদ্ধতি চাষাবাদে কমছে চিংড়ির উৎপাদনও। পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাবে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো। নানা সংকটে বাগদা-গলদায় আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিরা। 

খবরের কাগজ: চিংড়ি রপ্তানিতে আসার আপনার অন‍্যতম কারণ কি?

তারিকুল ইসলাম জহির: চিংড়ি রপ্তানি এক সময় লাভজনক ছিল। আমি ২০০৪ সালে এ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। চিংড়ি চাষের সঙ্গে আমি সরাসরি জড়িত। তখন চিংড়ি রপ্তানিতে যারা এসেছিলেন তারা এই শিল্পের পাশাপাশি তাদের বিজনেস বাড়িয়েছেন। কেউ ব্যাংকের ডিরেক্টর হয়েছেন কেউ টেক্সটাইল করেছেন। কেউ গার্মেন্টস করেছেন কেউ প্রিন্টিংস প্যাকেজিং ব্যবসা করেছেন। নানামুখী ব্যবসা প্রসারিত করেছেন। এসব কারণেই চিংড়ি রপ্তানিতে আসা। কিন্তু এখন চিংড়ির ব্যবসা সংকুচিত হয়ে গেছে। 

খবরের কাগজ: চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অন‍্যতম সমস‍্যাগুলো কি কি? 

তারিকুল ইসলাম জহির: আমাদের সকল চিংড়ি ব্যবসায়ীদের মোট ঋণ আছে আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো। এই সেক্টর থেকে টাকা অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এমন নজির নেই। এখানে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র কাঁচামালের অভাবে চিংড়ি রপ্তানি বাড়ছে না। আমরা বিভিন্ন প্রস্তাবনা দিয়েছি। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়েছে। চিংড়ি চাষের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে- পরিবেশবাদীরা বিভিন্ন জায়গায় লবণপানি উত্তোলনে বাধা দিচ্ছেন। নদী নালা ভরাট হয়ে গেছে সেগুলো নতুন করে খনন করা হচ্ছে না। এ খাতে বিশ্বব্যাংকের ১ হাজার কোটি টাকার অনুদান লুটপাট হয়েছে। চিংড়ি উৎপাদন কমে যাওয়ায় রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে ভেনামি চিংড়ি চাষাবাদ জনপ্রিয় করা গেলে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়বে। 

খবরের কাগজ: চিংড়ি ব‍্যবসায় বিরাজমান সমস‍্যা সমাধানে আপনার সুপারিশ কি ? 

তারিকুল ইসলাম জহির: চিংড়িকে লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত করতে হলে সরকারি ভাবে রপ্তানিকারকদের ভর্তুকি দিতে হবে। বিদ্যুতে ও অন্যান্য উৎপাদন খরচে ভর্তুকি দিতে হবে। চাষিদের দিতে হবে সহজ শর্তে ব্যাংকের ঋণ। ভেনামি চাষ কোনো শর্ত ছাড়াই সহজতর করতে হবে। বর্তমানে চিংড়িতে বড় সংকট উৎপাদন কমে যাওয়া। সেক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। বর্তমানে মোংলা বন্দরে মাসে ২-৩টা জাহাজ আসে। কিন্তু আমরা কাঁচামালের অভাবে চিংড়ি রপ্তানি করতে পারছি না।

খবরের কাগজ: আন্তর্জাতিক বাজারে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশে ভেনামি চাষ বাড়াতে হলে কি করা উচিত? 

তারিকুল ইসলাম জহির: খুলনায় ২০২১ ও ২০২২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ভেনামি চিংড়ি চাষ হয়। ২০২১ সালে পাইকগাছা উপজেলায় এবং ২০২২ সালে পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা ও কয়রায় ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষ হয়। একই ঘের বা জমিতে অন্য চিংড়ির তুলনায় ভেনামি উৎপাদন হয় অনেক বেশি। প্রতি একরে সর্বোচ্চ ৫ টন চিংড়িও উৎপাদন হয়। এই চিংড়ির উৎপাদন বাড়লে দেশের বাজারে সরবরাহ বাড়বে। কিন্তু ভেনামি উৎপাদনে চাষিদের নানা শর্তের বেড়াজালে আটকে ফেলা হয়েছে। উৎপাদনে আগ্রহী চাষিদের পরিবেশের সার্টিফিকেট ভ্যাটের সার্টিফিকেট ট্যাক্সের সার্টিফিকেট দিতে হয়। এক্ষেত্রে সাধারণ চাষিরা এই জটিলতায় থাকতে চায় না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক, দক্ষ চাষিও তৈরি করা হয়নি। কোনো শর্ত ছাড়াই ভেনামি চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ করা দরকার।

খবরের কাগজ: ভারতে চিংড়ির চাষ বাড়ছে। বাংলাদেশ কেন পারছে না?

তারিকুল ইসলাম জহির: ভারতে চিংড়ি উৎপাদনে জড়িত সব সেক্টরকে একত্রিত করে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারতের বিদ্যুৎ বিল আমাদের থেকে কম। সেখানে চিংড়িকে কৃষি খাতের আওতায় আনা হয়েছে। চিংড়ির খাবার তারা নিজেরাই উৎপাদন করে। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশে চিংড়ির খাবার আমদানি করা হয়। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ে। বাংলাদেশে চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধিতে সমন্বিত পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।