ঢাকা ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫
English

গুঁড়ো দুধে শুল্ক কমাতে হবে

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ এএম
আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
গুঁড়ো দুধে শুল্ক কমাতে হবে
মো. কবির হোসেন।ছবি: খবরের কাগজ

নিত্যপণ্যের মতো শিশুখাদ্যের মধ্যে দুধের দামও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে দামও বাড়ছে। কমে না। ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকের সংসারে বাজেট কাটছাঁট করতে হচ্ছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি তথা টাকার অবমূল্যায়নের কারণেই বাড়ছে দাম। কি করলে কমবে শিশু দুধের দাম। এ সব ব্যাপারে খবরের কাগজ কথা বলেছে নেসলে বাংলাদেশ এর কারওয়ান বাজারের পাইকারি দুধ ব্যবসায়ী মো. কবির হোসেনের সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম।

খবরের কাগজ: বাচ্চাদের গুঁড়ো দুধের দাম একবার বাড়লে আর কমে না কেন?

মো. কবির হোসেন: এই মুহূর্তে বাচ্চাদের গুঁড়ো দুধের দাম বাড়েনি। তবে কয়েক মাস আগে বেড়েছে। সঠিকভাবে মনে পড়ে না। কারণ কোম্পানি থেকে ভাওচার দেওয়া হলেও তা লিখে রাখা হয় না। অনেক সময় ফেলে দিই। কোম্পানি থেকেই বাড়ানো হয়। কাজেই তারাই বলতে পারবেন বাড়ানোর পর আর কমে না কেন।

খবরের কাগজ: সরকার কি পদক্ষেপ নিলে গুঁড়ো দুধের দাম কমতে পারে।

মো. কবির হোসেন: এটা কোম্পানি বলতে পারবে। তবে আমার মনে হচ্ছে গুঁড়ো দুধ যেহেতু আমদানি করতে হয়। সরকার বিভিন্ন জায়গায় শুল্ক আরোপ করেছে। বর্তমানে ডলারের দাম বেশি। এ জন্য আমদানি করা পণ্যের দামও বেশি। তাই সরকারের উচিত হবে ট্যাক্স ও ভ্যাট কমিয়ে মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা। শুল্ক কমালে দুধের দাম কমতে পারে।

 খবরের কাগজ: বাজারে কোন দুধের চাহিদা বেশি?

মো. কবির হোসেন: মানুষ পছন্দমতো পণ্য কিনে থাকে। বাচ্চাদের দুধের ক্ষেত্রেও তারা পছন্দকে অগ্রাধিকার দেয়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে ল্যাকটোজেন দুধই বেশি বিক্রি হয়। আমরা সামান্য লাভ করে তা বিক্রি করে থাকি। কি পরিমাণ বিক্রি হয় তা বলা যাবে না। তবে মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ হবে ল্যাকটোজেন দুধ বিক্রি।

খবরের কাগজ: ভোক্তাদের অভিযোগ দুধের অনেক বেশি দাম নেওয়া হয়। কে বেশি লাভ করেন?

মো. কবির হোসেন: কোম্পানি তাদের কাঁচামালের খরচ ধরে উৎপাদন খরচের সঙ্গে কিছু লাভ ধরে বিক্রি করার জন্য সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য-এমআরপি নির্ধারণ করে। তাদের লাভের একটা অংশ আমাদের দেওয়া হয়। আমরা পাইকারি পর্যায়ে খুবই কম লাভ করি। যেমন ৪০০ গ্রাম টিনজাত নান দুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১১০০ টাকা লেখা আছে। আমরা ১০৩৫ টাকায় বিক্রি করি। কোম্পানিই বেশি লাভ করে। এরপর খুচরা বিক্রেতারা।

খবরের কাগজ: বিভিন্ন কোম্পানির শিশুখাদ্য বাজারে আছে। এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি নেসলের দাম বেশি কি?

মো. কবির হোসেন: আমরা পাইকারি ব্যবসা করি। ল্যাকটোজেন, নান, ডানো, রেড কাউ, ডিপ্লোমা দুধ বিক্রি করি। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য নিয়ে আসে। নেসলে বেশি চলে। এ জন্য তারা বেশি করে নিয়ে আসে দুধ। দাম বেশি না কম এটা ক্রেতারা বলতে পারবে। আমি বিক্রি করার কাজ বিক্রি করি। খুচরা বিক্রেতারা আমার কাছ থেকে নিয়ে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন।

খবরের কাগজ: গুঁড়ো দুধের দাম বেড়ে গেছে। বিক্রিতে কি প্রভাব পড়েছে?

মো. কবির হোসেন: কিছু দিন থেকে দেশের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। আমরা ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছি না। অনেক জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে বিক্রিও কমে গেছে। তবে এটা সঠিকভাবে বলা যাবে না। তবে আগের চেয়ে ২০ শতাংশ বিক্রি কম হতে পারে। অন্য পণ্যেরও বিক্রি কমে গেছে।

খবরের কাগজ: আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু নির্ভরযোগ্য?

মো. কবির হোসেন: বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আমাদের দুধ সরবরাহ করা হয়। আমরা প্যাকেট কেটে বিক্রি করি। সামান্য লাভ করি। কাজেই ভালো মন্দ বা এর কোয়ালিটি কেমন তা কোম্পানি বলতে পারবে। বাজারে বায়ো মিল্ক, বেবি কেয়ার, বেবি কেয়ার এমএফ, নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডের ল্যাকটোজেন, নান, ডানো দুধ রয়েছে। কাজেই এর গুণাগুণ কোম্পানি বলতে পারবে।

বিশেষ সাক্ষাৎকারে ডা. শাহাদাত হোসেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প ত্রুটিপূর্ণ

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প ত্রুটিপূর্ণ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে যে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। স্লুইস গেটগুলোর প্রশস্ততা কম। যে কারণে পানি নিষ্কাশন কম হবে। তা ছাড়া প্রকল্পের কাজ শেষে সেটির পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের বিষয়টি প্রকল্পের মধ্যে নেই। অথচ এটি পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে বিশাল অঙ্কের অর্থ এবং জনবলের প্রয়োজন, যা প্রকল্পটির বড় ত্রুটি। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা এবং তা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের চট্টগ্রামের ব্যুরোপ্রধান ইফতেখারুল ইসলাম
 
খবরের কাগজ: কীভাবে চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে চান?
ডা. শাহাদাত হোসেন: তিন ধাপে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে চাই। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি। প্রাথমিক ধাপে শহরের ৫৬টি খালের মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৩৬টি খালের সংস্কারকাজ করছে। চসিক করছে বারৈপাড়া খাল খননের কাজ। বাকি খালগুলোও আমাদের সংস্কার করতে হবে। প্রাথমিক স্টেজে আমরা আবর্জনা পরিষ্কার করছি। যাতে আসন্ন বর্ষা আমরা সামাল দিতে পারি। আমাদের কাজ ঠিকমতো চলছে। এই কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারলে জলাবদ্ধতার অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের মধ্যে রয়েছে ২১টি খালের সংস্কারকাজ। এ নিয়ে চায়না পাওয়ারসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। তারা খাল সংস্কার করে দেবে।

খবরের কাগজ: চসিক শতভাগ আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারে না। অন্যদিকে মানুষও খাল-নালায় ময়লা ফেলে। এ বিষয়ে চসিকের পরিকল্পনা কী?
ডা. শাহাদাত হোসেন: তৃতীয় পর্যায় তথা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই কাজটি করছি। আপনারা দেখেন, জনগণকে এত সচেতন করার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। জনগণ প্লাস্টিক, পলিথিন, ককশিট ব্যবহার করছে। খালকে গার্বেজ স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা আমাদের বড় সমস্যা। ময়লাকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, জাপানের বেশ কিছু কোম্পানি এই কাজে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের সঙ্গে একমত হলে আমরা চুক্তিতে যাব। তারা আবর্জনা থেকে বায়ুগ্যাস এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। তখন আবর্জনা আর খালে পড়বে না। আমরা এ কাজে শিশুদেরও সম্পৃক্ত করতে চাই। তাদের হেলথ কার্ড দিচ্ছি। আবর্জনা কোথায় ফেলবে, কীভাবে পরিষ্কার হবে সেসব শেখানোর চেষ্টা করছি। এই কর্মসূচিতে সিটি করপোরেশনের স্কুলের পাশাপাশি বাইরের স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে শিশুরা সচেতন হলে তারা যখন বড় হবে নগরবাসী তখন এর সুফল পাবে। তা ছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান করার চিন্তা করছি।

খবরের কাগজ: আমরা জানি সিডিএও মাস্টারপ্ল্যান করছে। তাতে কি চসিকের সঙ্গে সিডিএর কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হবে না?
ডা. শাহাদাত হোসেন: আমাদের স্টাডিতে থাকবে কোন খাল কোন পয়েন্ট থেকে উৎপন্ন হয়ে কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে। তার শাখা খাল কী ছিল সব কটি বের করা। আমরা শুধু ৫৭টি খাল নিয়ে কাজ করব। পানিপ্রবাহের বাধা কোথায়। এসব বের করব। তাই দ্বন্দ্ব হওয়ার সুযোগ নেই।

খবরের কাগজ: শহরের খালে নৌযান চালানোর কোনো পরিকল্পনা আছে?
ডা. শাহাদাত হোসেন: আমার বাড়ি বাকলিয়া ডিসি রোডের পাশে। ছোটকাল থেকেই দেখেছি চাক্তাই খালে নৌযান প্রবেশ করছে। আমার আগে যারা মেয়র ছিলেন, তারা মনে করেছেন খালের তলা পাকা করলে আবর্জনা জমবে না। কিন্তু এই ভুল সিদ্ধান্ত খালের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তলা পাকা করার কারণে ভূগর্ভে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। যে কারণে খালের চরিত্র পরিবর্তন হয়ে গেছে। আল্লাহ একেক জিনিসকে একেকভাবে সৃষ্টি করেছেন। নদী, খাল, পাহাড়, ছড়ার ওপর গবেষণা করতে গিয়ে যদি উল্টাপাল্টা করে ফেলি, তাহলে তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া হবে। নদীপ্রবাহ বন্ধ করছি, পাহাড় কাটছি, তার প্রতিশোধ প্রকৃতি নেবে। আমাদের দোষে আমরা কষ্ট পাচ্ছি। মহেশ খালে এখনো নৌযান চলে। অন্যান্য খালেও নৌযান চালানোর পরিকল্পনা আছে।

খবরের কাগজ: খাল বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছেন। এ নিয়ে আলোচনা এবং সমালোচনা দুটিই আছে। 
ডা. শাহাদাত হোসেন: জিইসি মোড়ে জলাবদ্ধতা হয়। অনেক প্রকৌশলীকে সেখানে পাঠিয়েছি। তারা ধরতে পারেননি। খাল বিশেষজ্ঞ ঠিকই সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। আগ্রাবাদ বক্স কালভার্ট এবং নাসির খাল আগ্রাবাদ এলাকার পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বক্স কালভার্টটি নির্মাণের ২৭ বছর পর প্রথমবার পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে খাল বিশেষজ্ঞ শাহরিয়ার খালেদের পরামর্শে। তাকে নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন, তার পরামর্শ কেন নিচ্ছি। তিনি যা জানেন এখানে অনেক প্রকৌশলীও তা জানেন না। তিনি যদি খুনি না হন। রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর না হন। তাহলে নগরবাসীর স্বার্থে তার পরামর্শ নিতে অসুবিধা কোথায়। অতীতে খাল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আমরা নিইনি। অস্ট্রেলিয়ার ড্রেনেজ এবং জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক গবেষক ড. আবদুল্লাহ আল মামুনকে নিয়ে এসেছি। তাতে আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি। 
 
খবরের কাগজ: সিডিএর কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন?
ডা. শাহাদাত হোসেন: মানুষ এত বেড়ে গেছে যে, সড়ক এবং খাল দখল করে আমরা ভবন নির্মাণ করছি। সিডিএর একটি বিল্ডিং কোড আছে। কত শতাংশ জমি ছাড়তে হবে তা নির্ধারণ করা আছে। কেউ তা মানছে না। সিডিএকে শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে। আজ অনেক জায়গায় ভবন হেলে পড়ছে। দেবে যাচ্ছে। কারণ ভূগর্ভ ফাঁপা হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না। সব পাকা করে ফেলছি। এখন আমরা খাবারের জন্য যুদ্ধ করছি। একসময় আমাদের পানির জন্য যুদ্ধ করতে হতে পারে। 

খবরের কাগজ: মেগা প্রকল্পের সুফল নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
ডা. শাহাদাত হোসেন: স্লুইস গেটগুলো পরিকল্পিতভাবে হয়নি। আবার সব কটির কাজও শেষ হয়নি। সেগুলোর নির্মাণে ত্রুটি আছে। শেষ প্রান্তে গিয়ে খাল সংকুচিত হয়ে গেছে। তা ছাড়া স্লুইস গেটগুলো মেইনটেইন এবং ম্যানেজমেন্ট করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। লোকবল নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই কাজের জন্য চসিকের একটি বিশাল বাজেট লাগবে। প্রকল্পে এই বিষয়টি নেই। সেটি কীভাবে আসবে, কোথা হতে আসবে তা আমার জানা নেই। খালগুলো চসিককে বুঝিয়ে দেওয়ার পর লোকবল প্রশিক্ষণের জন্য তারা কোনো বাজেটও দেয়নি। এটি প্রকল্পের বড় ধরনের ত্রুটি। অর্থ এবং লোকবল তারা প্রকল্পে রাখেনি। তা প্রকল্পের সাফল্যের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।

খবরের কাগজ: ২৯৮ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি না পাওয়ার জন্য সরকারকে দুষছেন?
ডা. শাহাদাত হোসেন: ২০২২ সালে ৩৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১০০ কোটি টাকা কেটে ২৯৮ কোটি টাকা করা হয়। এই টাকা দিয়ে খাল-নালা পরিষ্কারের ইক্যুইপমেন্ট কেনার কথা ছিল। বর্তমানে চসিকে যেসব ইক্যুইপমেন্ট রয়েছে, সেগুলো বেশির ভাগ দুর্বল। এসব ঘন ঘন নষ্ট হয়। তা মেরামত করতে প্রচুর টাকা এবং সময় নষ্ট হয়। তারা যদি টাকা দিতে না চায়, তাহলে ইক্যুইপমেন্ট কিনে দিলেও হয়। কী কী জিনিস লাগবে প্রকল্পে সব লেখা আছে।

খবরের কাগজ: জলাবদ্ধতা সমস্যার আসল সমাধান কোথায়?
ডা. শাহাদাত হোসেন: এখন যে সমস্যাগুলো তার সব কটি মানবসৃষ্ট। খাল-নালায় আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। পাহাড় কাটার কারণে পাহাড় থেকে বালু এসে খাল ভরে যাচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধান করতে সচেতনতার বিকল্প নেই। প্রকৃতিকে যত ধ্বংস করব, প্রকৃতি তত বেশি প্রতিশোধ নেবে। তবে শেষ কথা হলো শহরের খালগুলো চসিককেই পরিষ্কার করতে হবে। সিডিএকে সব দায়িত্ব দিলে হবে না। যার কাজ তাকে করতে হবে। বর্তমান জলবদ্ধতা হলো অপরিকল্পিত নগরয়াণের ফসল। এই সমস্যা সমাধানে দরকার নগর সরকার। নগর সরকার না হলে পরিকল্পিত নগরায়ণ সম্ভব নয়।

বিশেষ সাক্ষাৎকার চট্টগ্রাম শহরে মেগা প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি সুফল নিয়ে সংশয় আছে

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১০:১৩ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১১:০৪ এএম
চট্টগ্রাম শহরে মেগা প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি সুফল নিয়ে সংশয় আছে
মো. আবু ঈসা আনছারী

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাময়িক উপকার পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল নিয়ে সংশয় রয়েছে। পরিকল্পনার মাধ্যমে শহরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা না গেলে জলাবদ্ধতার সমস্যা সহজে সমাধান হবে না। এ নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন বাংলাদেশ প্ল্যানার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিডিএর ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনছারী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজ চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ইফতেখারুল ইসলাম 

খবরের কাগজ: চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে যে প্রকল্পের কাজ চলছে তার সুফল নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
মো. আবু ঈসা আনছারী: জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পে সাময়িক উপকার হলেও দীর্ঘমেয়াদি এর সুফল নিয়ে সংশয় রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরের মতো একটি শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি প্রকল্প যতটা টেকসই হওয়া দরকার, বর্তমানে চলমান প্রকল্পটি ততটা টেকসই নয় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। 

খবরের কাগজ: সংশয়ের কারণ কী?
মো. আবু ঈসা আনছারী: ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। সেটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার অনেক পরে সেই মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে কিছু কাজ করা হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যানটি যখন তৈরি করা হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপট এবং চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান চিত্রের মধ্যে তুলনা করলে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি খুব বেশি সুফল আশা করা ঠিক হবে না। ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের মেয়াদ চলে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম ওয়াসা সেই পরিকল্পনাটা স্টাডি করে কিছু পরিকল্পনার কথা বলেছে। সিডিএ তাদের সেই প্রস্তাবনাটা নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এখানে নতুন কিছু নেই। 

খবরের কাগজ: আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন?
মো. আবু ঈসা আনছারী: ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামের চিত্রটা যদি একবার চিন্তা করেন, সেসময় আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, বগারবিল, অক্সিজেনের আশপাশসহ এমন অনেক নিচু এলাকা ছিল, যেখানে শহরের পানি ধারণ করতো। সে সময় শহরের পানি প্রথমে সেখানে জমা হতো। সেখান থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন খালের মাধ্যমে কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়ত। প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হলেও শহরের কোনো সমস্যা হতো না। গত তিন দশকে সেসব নিচু এলাকা ভরাট হয়ে আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। পানি ধারণ করার জায়গাগুলোতে স্থাপনা হয়ে গেছে। সেই পানি এখন উপচে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। 

খবরের কাগজ: সমস্যা সমাধানের উপায় কী?
মো. আবু ঈসা আনছারী: বর্ষায় কর্ণফুলীতে পানি নেই। অথচ শহরে জলাবদ্ধতা। তার মানে কোথাও পানিটা আটকে আছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। পানির একটি সাধারণ ধর্ম হলো, উঁচু থেকে নিচের দিকে যাবে। নিচু এলাকার পানি উঁচু জমিতে আসতে পারবে না। নিচু জমিগুলো ভরাট করে উঁচু করা হয়েছে। নগরায়ণের মাধ্যমে মালভূমি তৈরি করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে বেশ কিছু নতুন খাল খননের প্রস্তাবনা ছিল। এ ছাড়া বেশ কিছু জলাধার খননেরও প্রস্তাব ছিল। ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান তৈরির সময় তাদের ধারণা ছিল, নিচু এলাকাগুলোতেও একসময় নগরায়ণ হবে। সেটা ধরে নিয়েই তারা নতুন খাল এবং জলাধার খননের প্রস্তাব রেখেছিল। তা ছাড়া বিদ্যমান খালগুলো বড় করতে বলেছে। যেমন: বাড়ৈপাড়া খালের পাশে ৯ হেক্টরের একটি জলাধার খননের প্রস্তাব মাস্টারপ্ল্যানে ছিল। কারণ পরিকল্পনাবিদরা তখন মনে করেছিলেন, বারৈপাড়া খাল হয়তো দ্রুত পানি নিষ্কাশন করতে পারবে না। তাই কিছুক্ষণের জন্য পানি জমা রাখতে এই জলাধারের প্রস্তাব। পানির সঙ্গে যানবাহনের গতিকে মেলাতে পারেন। সেখানে পার্থক্য হলো, গাড়ি উপচে পড়ে না। পানি উপচে পড়ে। স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম শহরে অনেক নতুন সড়ক হয়েছে। ছোট সড়কগুলোর প্রশস্ততা বেড়েছে। কিন্তু নতুন কয়টি খাল খনন হয়েছে? কয়টি জলাধার খনন হয়েছে? ৭২টি খালের কথা বলা হচ্ছে। কখনো ৫৭টি খালের কথা বলা হচ্ছে। বাস্তবে সেটা হওয়া উচিত ছিল, দ্বিগুণেরও বেশি খাল। স্বাধীনতার পর খাল খনন করা হয়নি। বরং ভরাট করা হয়েছে। নগরায়ণ হওয়া স্বাভাবিক। এটাকে আটকানোর সুযোগ নেই। তার সঙ্গে সঙ্গে নতুন খাল, জলাধার খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক খাল থেকে অন্য খালে পানি নেওয়ার জন্যও খাল দরকার। সেটা কখনো হয়নি। সেই কাজটি করতে হবে।

খবরের কাগজ: ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানের নতুন যে তিনটি খাল খননের প্রস্তাব ছিল, তা কি এখনো কার্যকর?
মো. আবু ঈসা আনছারী: হ্যাঁ। এর মধ্যে তো একটি খাল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন খনন করছে। সেটি বহদ্দারহাট বারৈপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত। এ ছাড়া চান্দগাঁও শমসেরপাড়া আইইউসি ডেন্টাল কলেজের পাশ দিয়ে একটি নতুন খাল খননের প্রস্তাব ছিল। শমসের পাড়া লেভেল ক্রসিং থেকে বাহির সিগন্যাল পর্যন্ত ২ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। সেটি হয়নি। এ ছাড়া সল্টগোলা থেকে কাঠগড় পর্যন্ত ৩ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার খাল খননের পাশাপাশি কিছু সেকেন্ডারি খালের প্রস্তাব ছিল, যা কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। এসব করতে পারলে শহরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে কিছুটা নিষ্কৃতি পাবে।

চট্টগ্রামে হিজড়া খালের ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা রয়ে গেছে: প্রকল্প পরিচালক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৮:৫৮ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ০৯:২২ এএম
চট্টগ্রামে হিজড়া খালের ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা রয়ে গেছে: প্রকল্প পরিচালক
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ

নির্ধারিত সময়েই চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতির চেয়ে কাজের অগ্রগতি অনেক বেশি। প্রকল্পের নানা বিষয় কথা বলেছেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজ চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ইফতেখারুল ইসলাম

খবরের কাগজ: এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের সুফল কতটুকু মিলবে?
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ: প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যে শুক্রবার (৩০ মে) ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু তাতেও জলাবদ্ধতা হয়নি। সেদিক থেকে বলা যায়, আমরা ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজের সুফল পেতে শুরু করেছি। 

খবরের কাগজ: প্রকল্পের কাজ কখন শেষ হবে?
লে. ক. ফেরদৌস আহমেদ: প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের জুনে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে। তবে শুধু একটি খালের ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা আছে। সেটি হলো হিজড়া খাল। সরকার কিংবা সিডিএ যদি আমাদের জায়গা বুঝিয়ে দেয়, তাহলে কাজ করতে দেরি হবে না।

খবরের কাগজ: প্রকল্পের আর্থিক ও কাজের অগ্রগতি কত শতাংশ?
লে. ক. ফেরদৌস আহমেদ: দেড় মাস ধরে আমাদের কোনো টাকা নেই। জনগণের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ চালিয়ে গিয়েছি। কোথাও কাজ বন্ধ করিনি। তাই আর্থিক অগ্রগতিতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তবে কাজের অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ। কারণ, আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে কাজ চালিয়েছি। এমনকি বৃষ্টির সময় কোথাও পানি আটকে যাচ্ছে কি না, তাও আমরা দেখছি। যদিও এটি সিটি করপোরেশনের কাজ। আমাদের লোকজন সারাক্ষণ ডিউটি করেন। তার সুফলও মিলছে। 

খবরের কাগজ: সিটি করপোরেশন বলছে, পরিচালনা ব্যয় এবং ম্যানুয়েল কিছুই তারা পাচ্ছে না।
লে. ক. ফেরদৌস আহমেদ: পরিচালনা ব্যয় প্রকল্পের মধ্যে নেই। এখন প্রতি মাসে আমাদের ২ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল খরচ হয়। এটা আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে বহন করা হয়। পরিচালনা ম্যানুয়েল আমাদের কাছে রেডি আছে। তাদের অনেক আগে থেকেই কাজ শেষ হওয়া খালগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা নেয়নি। খাল বুঝে নিলে সঙ্গে পরিচালনা ম্যানুয়েলও দিয়ে দিতাম। তারা তো নিচ্ছে না। তবে এতে তাদেরও দোষ দেওয়ার কিছু নেই। 

খবরের কাগজ: স্লুইসগেটগুলো পরিচালনার জন্য সিটি করপোরেশনের কী পরিমাণ জনবল লাগতে পারে?
লে. ক. ফেরদৌস আহমেদ: স্লুইসগেট পরিচালনার জন্য ইঞ্জিন রুম, মেইনটেন্যান্স, জেনারেটর ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন করে জনবল লাগতে পারে। আবার শিফট ভাগ করলে আরও বেশি জনবল লাগতে পারে। তবে বর্তমানে আমরা খুব কম লোক দিয়েই কাজটি করিয়ে নিচ্ছি। কারণ ওই খাতে আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। 

খবরের কাগজ: পরিচালনা ব্যয় প্রকল্পে ধরা হয়নি, এটা কি প্রকল্পটির ত্রুটি?
লে. ক. ফেরদৌস আহমেদ: অতীতে কী হয়নি সেটা না ভেবে, বিষয়টি সামনে কীভাবে সমাধান করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য, কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা। 

খবরের কাগজ: খালে বাঁশের বেষ্টনী দিয়েছেন। এটি কি খালকে নিরাপদ করবে?
লে. ক. ফেরদৌস আহমেদ: খালে ৯৭ কিলোমিটার রেলিংয়ের কাজ আছে। খালগুলোতে রেলিং দিলে পরিষ্কার করতে কষ্ট হয়। তাই এখনো রেলিং বসানো হয়নি। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে বাঁশের রেলিং দিয়েছি। সব খালের কাজ শেষ হলে রেলিংগুলো দিয়ে দেব।

মোবাইল ব্যাংকিং নীতি কাঠামো প্রণয়ন জরুরি

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ০৯:৪১ এএম
আপডেট: ০১ জুন ২০২৫, ১০:০৯ এএম
মোবাইল ব্যাংকিং নীতি কাঠামো প্রণয়ন জরুরি
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। এর অধিকাংশই এখনো ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছে। ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বা এমএফএস। বর্তমানে এই এমএফএস খাতের গ্রাহক ২৪ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বিকাশমান এই খাতটির সম্ভাবনা, প্রতিবন্ধকতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মৃত্তিকা সাহা। 

খবরের কাগজ: মোবাইল ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে কিছু বলুন।

ইফতেখারুজ্জামান: বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং অত্যন্ত বিকাশমান একটি খাত হিসেবে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বিশেষ করে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তবে নীতি কাঠামোর দুর্বলতা, সুনির্দিষ্ট কলাকৌশল এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর কর ভূমিকার অভাবে বিকাশমান এই খাতটিতে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। এতে বিগত কতৃত্ববাদী সরকারের আমলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যাপক প্রচার এবং প্রসারের সময়ে অপব্যবহার বেশি হয়েছে। তারা নিজেরাই খাতটিকে এমনভাবে করায়ত্ত করেছে, যা খাতটিকে প্রতিযোগিতামূলক করার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি করেছে।এ জন্য সঠিক নীতি কাঠামো বা আইন প্রণয়ন দরকার। যার মাধ্যমে এটি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই এই নীতি কাঠামো তৈরি করে দিতে হবে। আর মূল নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে সেগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

খবরের কাগজ: ব্যাংকের তুলনায় এমএফএসে খরচ কয়েকগুণ বেশি। তারপরও কেন মানুষ এই খাতে লেনদেন করছে?

ইফতেখারুজ্জামান: সম্প্রতি এই বিষয়ে আমাদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এমএফএস খাতে গ্রাহকদের সেবা পেতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের থেকে প্রায় ৭-১৫ গুণ বেশি সেবামূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। ২০২৪ সালে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা ‘ক্যাশআউটের’ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের থেকে কমপক্ষে ৪ হাজার ৪১০ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা পর্যন্ত সেবামূল্য আদায় করা হয়েছে, যেখানে সমপরিমাণ নগদ উত্তোলনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সেবামূল্য আদায় করেছে মাত্র ৬৩৯ কোটি টাকা। এই খরচ অনেক বেশি। এমনকি প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে এমএফএস সেবামূল্য সর্বোচ্চ। কিন্তু তারপরও সহজে সেবা পাওয়ার জন্যই ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত সাধারণ গ্রাহক এই খাতটিকে ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে খরচ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে গ্রাহকের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা ও আইনি কাঠামোর মাধ্যমে পুরো খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে।

খবরের কাগজ: মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কি ধরনের অবৈধ লেনদেন হচ্ছে?

ইফতেখারুজ্জামান: এমএফএস ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। সেই সঙ্গে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স, প্রতারণা, ঘুষের অর্থ লেনদেন, অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেন ও পাচারের চিত্রও পাওয়া গেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহ বিভিন্ন সময়ে অনলাইন জুয়া ও বেটিং সংক্রান্ত ওয়েবসাইট, অ্যাপ, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেও এমএফএসগুলো এই ধরনের লেনদেন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র ২০২২ সালেই এমএফএস ব্যবহার করে প্রায় ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। 

খবরের কাগজ: অবৈধ লেনদেন বন্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার

ইফতেখারুজ্জামান: ঘুষ, অর্থপাচার, অনলাইন জুয়া, ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনে এমএফএস ব্যবহার করা হচ্ছে। যা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। এসব সন্দেহজনক লেনদেন ও হুন্ডি কার্যক্রম শনাক্ত এবং প্রতিরোধে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা নেই বললেই চলে। এ জন্য যারা মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত অর্থাৎ প্রতিটি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবধারীকে আয়করের আওতায় আনতে পারলে এখানে কোনো ধরনের সন্দেহজনক লেনদেন হচ্ছে কিনা তা আর্থিক দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) খতিয়ে দেখতে পারবে। এতে বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আয়, কর ফাঁকি এবং ঘুষ লেনদেনের বিষয়সমূহ চিহ্নিত করা যাবে।

খবরের কাগজ: রেমিট্যান্স বাড়াতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভূমিকা সম্পর্কে বলুন

ইফতেখারুজ্জামান: বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রেমিট্যান্সে যে রেকর্ড তৈরি হয়েছে, তার অন্যতম কারণ এমএফএস ব্যবহার করে অবৈধ হুন্ডি লেনদেন নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। যদিও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার কারণে নয়, এ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে এমএফএস ব্যবহার করে অর্থপাচারে জড়িত অপশক্তির পতনের ফলে। কাজেই এখন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি এই বিষয়ে সঠিক নীতি কাঠামো তৈরি করে দিতে না পারে, যেখানে এই ধরনের অপশক্তি কোনোভাবেই সক্রিয় হতে না পারে। 

আম রপ্তানিতে চীনের জটিল শর্ত

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ০৮:৫৯ এএম
আপডেট: ২৫ মে ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম
আম রপ্তানিতে চীনের জটিল শর্ত
মোহাম্মদ মনসুর

বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবলস এক্সপোর্টার্স অ্যাসেসিয়েশনের পাঁচ শতাধিক রপ্তানিকারক আমসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করছেন। তারা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, কানাডাসহ সারা বিশ্বে সুনামের এসব পণ্য রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। আম রপ্তানিতে সম্ভাবনা কেমন, সমস্যা কোথায়- এসব বিষয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স মনসুর জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনসুরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম

খবরের কাগজ: আম রপ্তানি বাড়ছে না কেন?

মোহাম্মদ মনসুর: চীন সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির আগ্রহ দেখিয়েছে। এটা ভালো দিক। তবে আম রপ্তানি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কারণ হচ্ছে তারা অনেক শর্তের কথা বলছে। বিশেষ করে যে দামের কথা বলছে বাংলাদেশে এ দরে আম কিনতে পারে। তাই অনেকেই চীনে আম রপ্তানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ জন্য রপ্তানি বাড়বে না। 

খবরের কাগজ: প্রধান সমস্যা কী? 

মোহাম্মদ মনসুর: চীনে আম রপ্তানিতে অনেক জটিলতা রয়েছে। বায়ারদের অনেক জটিল রিকোয়ারমেন্ট (চাহিদা ও শর্ত)। বিশেষ করে ট্রিটমেন্টপ্লান্ট দিয়ে ওয়াশিং করার কথা বলছে। যা আমাদের দেশে নেই। এখনো হয়নি। এটা লম্বা প্রসেস। তাদের এসব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না। কারণ তাদের রেটের চার পাঁচ গুণ বেশি দরে ইউরোপে আম পাঠানো যায়। 

খবরের কাগজ: আম রপ্তানিতে বিমানের ভাড়া কেমন?

মোহাম্মদ মনসুর: আমের রপ্তানি বাড়ে না। বরং প্রতিবছর কমছে। কারণ হলো, বাংলাদেশ থেকে বিমানে পণ্য যায় বিদেশে। এখানে ভাড়া খুবই বেশি। ৯৯ শতাংশ পণ্য আকাশ পথে রপ্তানি হয়। কিন্তু কোনো রপ্তানি নীতিমালা নেই। লাগামহীনভাবে এয়ার লাইনস ভাড়া বাড়াচ্ছে। সকালে এক রকম, বিকেলে আরেক রকম। সারা পৃথিবীতে বিমানের ভাড়া বাড়াল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু আমাদের দেশে তারা এর কোনো ধার ধারে না। কোনো কিছু নেই। সকালে ১ ডলার সন্ধ্যায় ২ ডলার ভাড়ার কথা বলে। আগে ২ ডলারে রেট হয়েছে। এখন বিমান ৩ ডলার ভাড়া চাচ্ছে। এটাত বায়াররা দিবে না। তাহলে আমরা তো প্রতারক হয়ে যাচ্ছি। এই বাড়তি টাকা কে দেবে? তারা তো দেবে না। আমরা কীভাবে দেব। এ জন্য রপ্তানি দিন-দিন কমছে। আম রপ্তানিতে পরিবহন তথা বিমান ভাড়া সমস্যা হচ্ছে মূল সমস্যা।

খবরের কাগজ: সমাধানে সরকার কি করতে পারে?

মোহাম্মদ মনসুর: সরকারকেই এটার সমাধান করতে হবে। বিমানের ভাড়ার লাগাম টানতে হবে। আম যেহেতু কৃষিপণ্য। তাই কৃষি মন্ত্রণালয়কে শুধু মিটিং করলে হবে না, সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশের আমের গুনগতমান সম্পর্কে বিদেশে ধারণা কেমন?

মোহাম্মদ মনসুর: বাংলাদেশের আমের মান নিয়ে সন্দেহ নেই। মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশে আম রপ্তানি হয়। সৌদি আবর, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, দুবাই, ইউরোপের লন্ডন, ইতালি, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি হয়। ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। দেখা গেছে ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে কমে গেছে। আবার ২০২৩ সালে ২০২৪ সালে রপ্তানি কমে গেছে। কোনো নীতিমালা নেই। তা না থাকার কারণেই মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগেও আম রপ্তানির এই দশা। তাই সরকারকে ভাবতে হবে। কারণ শুধু বাংলাদেশ থেকেই আম রপ্তানি হয় না। ভারতসহ অন্য দেশ থেকে ওই সব দেশে আম রপ্তানি হয়। ভারত থেকে ইউরোপের বিমানভাড়া ২ ডলার। আর আমাদের লাগে ৩ ডলার। তাহলে কীভাবে টিকব আমরা। এসব বাধার কারণেই দিন-দিন রপ্তানি কমছে। 

খবরের কাগজ: বিদেশে আমের প্রক্রিয়াজাত খাবারের কেমন চাহিদা।

মোহাম্মদ মনসুর: বিদেশে আমের প্রক্রিয়াকরণ খাবারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসর আমসত্ত্বসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করছে। প্রাণ কোম্পানিও বিভিন্নভাবে আমের পণ্য রপ্তানি করছে। কাজেই বলা যায় বিশ্বে আমের বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা দিন-দিন বাড়ছে। সেদিকে নজর দিতে হবে।