
নিত্যপণ্যের মতো শিশুখাদ্যের মধ্যে দুধের দামও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে দামও বাড়ছে। কমে না। ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকের সংসারে বাজেট কাটছাঁট করতে হচ্ছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি তথা টাকার অবমূল্যায়নের কারণেই বাড়ছে দাম। কি করলে কমবে শিশু দুধের দাম। এ সব ব্যাপারে খবরের কাগজ কথা বলেছে নেসলে বাংলাদেশ এর কারওয়ান বাজারের পাইকারি দুধ ব্যবসায়ী মো. কবির হোসেনের সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম।
খবরের কাগজ: বাচ্চাদের গুঁড়ো দুধের দাম একবার বাড়লে আর কমে না কেন?
মো. কবির হোসেন: এই মুহূর্তে বাচ্চাদের গুঁড়ো দুধের দাম বাড়েনি। তবে কয়েক মাস আগে বেড়েছে। সঠিকভাবে মনে পড়ে না। কারণ কোম্পানি থেকে ভাওচার দেওয়া হলেও তা লিখে রাখা হয় না। অনেক সময় ফেলে দিই। কোম্পানি থেকেই বাড়ানো হয়। কাজেই তারাই বলতে পারবেন বাড়ানোর পর আর কমে না কেন।
খবরের কাগজ: সরকার কি পদক্ষেপ নিলে গুঁড়ো দুধের দাম কমতে পারে।
মো. কবির হোসেন: এটা কোম্পানি বলতে পারবে। তবে আমার মনে হচ্ছে গুঁড়ো দুধ যেহেতু আমদানি করতে হয়। সরকার বিভিন্ন জায়গায় শুল্ক আরোপ করেছে। বর্তমানে ডলারের দাম বেশি। এ জন্য আমদানি করা পণ্যের দামও বেশি। তাই সরকারের উচিত হবে ট্যাক্স ও ভ্যাট কমিয়ে মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা। শুল্ক কমালে দুধের দাম কমতে পারে।
খবরের কাগজ: বাজারে কোন দুধের চাহিদা বেশি?
মো. কবির হোসেন: মানুষ পছন্দমতো পণ্য কিনে থাকে। বাচ্চাদের দুধের ক্ষেত্রেও তারা পছন্দকে অগ্রাধিকার দেয়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে ল্যাকটোজেন দুধই বেশি বিক্রি হয়। আমরা সামান্য লাভ করে তা বিক্রি করে থাকি। কি পরিমাণ বিক্রি হয় তা বলা যাবে না। তবে মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ হবে ল্যাকটোজেন দুধ বিক্রি।
খবরের কাগজ: ভোক্তাদের অভিযোগ দুধের অনেক বেশি দাম নেওয়া হয়। কে বেশি লাভ করেন?
মো. কবির হোসেন: কোম্পানি তাদের কাঁচামালের খরচ ধরে উৎপাদন খরচের সঙ্গে কিছু লাভ ধরে বিক্রি করার জন্য সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য-এমআরপি নির্ধারণ করে। তাদের লাভের একটা অংশ আমাদের দেওয়া হয়। আমরা পাইকারি পর্যায়ে খুবই কম লাভ করি। যেমন ৪০০ গ্রাম টিনজাত নান দুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১১০০ টাকা লেখা আছে। আমরা ১০৩৫ টাকায় বিক্রি করি। কোম্পানিই বেশি লাভ করে। এরপর খুচরা বিক্রেতারা।
খবরের কাগজ: বিভিন্ন কোম্পানির শিশুখাদ্য বাজারে আছে। এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি নেসলের দাম বেশি কি?
মো. কবির হোসেন: আমরা পাইকারি ব্যবসা করি। ল্যাকটোজেন, নান, ডানো, রেড কাউ, ডিপ্লোমা দুধ বিক্রি করি। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য নিয়ে আসে। নেসলে বেশি চলে। এ জন্য তারা বেশি করে নিয়ে আসে দুধ। দাম বেশি না কম এটা ক্রেতারা বলতে পারবে। আমি বিক্রি করার কাজ বিক্রি করি। খুচরা বিক্রেতারা আমার কাছ থেকে নিয়ে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন।
খবরের কাগজ: গুঁড়ো দুধের দাম বেড়ে গেছে। বিক্রিতে কি প্রভাব পড়েছে?
মো. কবির হোসেন: কিছু দিন থেকে দেশের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। আমরা ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছি না। অনেক জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে বিক্রিও কমে গেছে। তবে এটা সঠিকভাবে বলা যাবে না। তবে আগের চেয়ে ২০ শতাংশ বিক্রি কম হতে পারে। অন্য পণ্যেরও বিক্রি কমে গেছে।
খবরের কাগজ: আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু নির্ভরযোগ্য?
মো. কবির হোসেন: বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আমাদের দুধ সরবরাহ করা হয়। আমরা প্যাকেট কেটে বিক্রি করি। সামান্য লাভ করি। কাজেই ভালো মন্দ বা এর কোয়ালিটি কেমন তা কোম্পানি বলতে পারবে। বাজারে বায়ো মিল্ক, বেবি কেয়ার, বেবি কেয়ার এমএফ, নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডের ল্যাকটোজেন, নান, ডানো দুধ রয়েছে। কাজেই এর গুণাগুণ কোম্পানি বলতে পারবে।