
গত বছর হঠাৎ করে ছোলার দাম বাড়তে শুরু করে। এবার অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর ছোলা আমদানি হয়েছে। বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দামও কমছে। বাজার কি স্থিতিশীল থাকবে। না রমজানের আগে আবার হঠাৎ করে দাম বাড়বে। এসব ব্যাপারে জানতে খবরের কাগজ কথা বলেছে বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম।
খবরের কাগজ: রমজান এলেই ছোলার দাম বাড়ে, কারণ কি?
শফি মাহমুদ: গত বছর ডলারসংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি খুলেনি। তাই ছোলা ও ডালের আমদানি কমে যায়। চাহিদার তুলনায় বাজারে ছোলার সরবরাহ কমে যায়। এ কারণে দাম বেড়ে যায়। এটাই প্রধান কারণ। তবে গত বছর যেভাবে ছোলার দাম বেড়েছে এবার রমজানের আগেই কমেছে। প্রচুর আমদানি হওয়ায় দাম কমেছে।
খবরের কাগজ: কারা ছোলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে?
শফি মাহমুদ: অনেকে নাবিল গ্রুপ, আকিজ গ্রুপের কথা বললেও এবার বিভিন্ন ছোট ছোট কোম্পানি ডাল আমদানি করেছে। তাদের কাছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও লালবাগের ডালপট্টিতে পাইকারিভাবে বিক্রি করা হয়। নারায়ণগঞ্জসহ অন্য এলাকাতেও পাইকারি পর্যায়ে ছোলা বিক্রি করা হয়। আমাদের ৩ হাজার ৭০০ টাকা বস্তা খরচ পড়েছে। কিছু লাভ তো করতে হবে। এ জন্য ১০৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
খবরের কাগজ: খুচরা পর্যায়ে ছোলা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। কারা এত বেশি লাভ করছে।
শফি মাহমুদ: খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের কাছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি ছোলা বিক্রি করছে। তাহলে বলা যায় তারাই বেশি লাভ করছে। আমরা কেজিতে ২-৩ টাকার বেশি করি না। আমার জানা মতে, পাইকারি ব্যবসায়ীরাও কেজিতে এই রকম ২-৩ টাকা লাভ করে। তাহলে বুঝায় যাচ্ছে খুচরা পর্যায়ে বিক্রেতারা বেশি লাভ করছে। যা ঠিক না। কারণ লাভেরও একটা সীমা আছে। তা পার করা ঠিক না। এটা বেশি মনে হলে অভিযান করে ভোক্তা অধিদপ্তরকে দেখা দরকার।
খবরের কাগজ: বাজারে ছোলার সরবরাহ বাড়লে দাম কি আরও কমবে?
শফি মাহমুদ: ছোলার দাম আরও কমতে পারে। কারণ হলো গত বছর এই সময়ে ডলারের দাম ১২০ টাকার মতো ছিল। বর্তমানে ১২২ টাকায় ডলার পাওয়া যায় না। এক কেজিতে কয় টাকা বেড়েছে হিসাব করলেও জানা যাবে। তাহলে কীভাবে কমবে আমদানিকৃত এই পণ্যের দাম। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দর কমেছে। এ জন্য কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। চিন্তার কিছু নেই। ভবিষ্যতে দাম আরও কমতে পারে। কারণ আমদানি বন্ধ হয়নি। কানাডা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ছোলা আমদানি করা হচ্ছে।
খবরের কাগজ: সরকার কি পদক্ষেপ নিলে ছোলার দাম কমবে?
শফি মাহমুদ: ছোলায় তেমন শুল্ক আরোপ করা নেই। আবার দেশেও তেমন উৎপাদন হয় না ছোলা। তাই দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলা যায়। কারণ আমদানি পর্যায়ে ৯৫ টাকা কেজি খরচ পড়ছে। কিছু তো লাভ করতে হবে। লোকসান করে তো কেউ ব্যবসা করবে না। তবে সরকার বাজারে অভিযান করলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি লাভ করতে পারবে না। এতে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা কমতে পারে। আবার ডলারের সংকট দূর করতে পারলে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমতে পারে।
খবরের কাগজ: দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানো যায় না?
শফি মাহমুদ: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোলার আবাদ হয়। তবে এটা খুবই নগণ্য। এ জন্য আমদানি করতে হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে এটার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কারণ ধানের মতো এটার ব্যাপারে কৃষকের আগ্রহ কম। এ জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।