ঢাকা ১১ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে প্রাইম ব্যাংক বদ্ধপরিকর

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে প্রাইম ব্যাংক বদ্ধপরিকর
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল

বাংলাদেশে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রসার একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিফলন। প্রাইম ব্যাংক সর্বদা গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কার্ডের ব্যবহার, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মৃত্তিকা সাহা

প্রশ্ন: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। ক্যাশলেস লেনদেনে এগিয়ে আসছে। এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

উত্তর: উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রসার একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিফলন। প্রাইম ব্যাংক সর্বদা গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং দিয়ে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি, ক্যাশলেস লেনদেন শুধু সময় সাশ্রয়ই করে না বরং এটি নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ ও দ্রুত লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকার ডিজিটাল পেমেন্টকে উৎসাহিত করছে, যা অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে। প্রাইম ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব গ্রাহককে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছি, যাতে তারা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত এবং আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

প্রশ্ন: দেশে কত শতাংশ মানুষ কার্ডে লেনদেন করে?

উত্তর: দেশে মানুষের মাঝে কার্ডের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ব্যাংকগুলোও কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে, আমাদের ব্যাংকের কার্ডের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থা এবং ডিজিটাল পেমেন্ট বৃদ্ধির প্রতিফলন। এখন অনেক গ্রাহকই আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী, যা আমাদের কার্ডের সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা এবং সুবিধার প্রতিফলন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। 

প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা কার্ড দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি নিশ্চিত করতে একাগ্রচিত্তে কাজ করে যাচ্ছে। দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ক্যাশলেস লেনদেন এবং ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার নিশ্চিতকরণে আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষামূলক প্রচারসহ নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছি। আর্থিক সাক্ষরতা এবং ডিজিটাল চ্যানেল ব্যবহার প্রসারণের মাধ্যমে, আমরা বাংলাদেশ সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর।

প্রশ্ন: পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কোন ধরনের অফার দিচ্ছেন?

উত্তর: এই বিশেষ সময়ে গ্রাহকদের চাহিদা মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন খাতে বিশেষ মূল্যছাড় এবং ক্যাশব্যাক দিচ্ছি। ইফতার এবং সাহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফারের পাশাপাশি রয়েছে বাই-ওয়ান-গেট-ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা। এ ছাড়া গ্রোসারি এবং রিটেইল দোকানগুলোতে রয়েছে বিশেষ মূল্যছাড় এবং ক্যাশব্যাক। 

আমাদের কার্ডহোল্ডারা যাতে ঈদের এই আনন্দঘন মুহূর্ত তাদের পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করতে পারে তাই প্রধান টিকেটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে রয়েছে প্রাইম ব্যাংক কার্ডে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার। সামগ্রিকভাবে, আমাদের ব্যাংক গ্রাহকদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে রমজান এবং ঈদের এই উৎসবের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে গ্রাহকদের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে সেবা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব।

এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ মাইপ্রাইমের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে ফান্ড ট্রান্সফার করা যায় নিমিষেই। এক্ষেত্রেও আমরা সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধা নিশ্চিত করে থাকি। কোনো ধরনের অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপআপ সুবিধা। কার্ডভেদে আমাদের গ্রাহকরা দেশে বিদেশে ১৪০০-এর অধিক এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন। 

প্রশ্ন: কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আর কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

উত্তর: গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল ও ক্যাশলেস অর্থনীতির লক্ষ্য বিবেচনা করে কার্ডের সংখ্যা বাড়াতে আমরা বেশকিছু কৌশলগত উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা আবেদন প্রক্রিয়া সাবলীল ও সরলীকরণের দিকে মনোনিবেশ করছি। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে, আমরা আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ, ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কার্ড অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে ইস্যু করা পর্যন্ত একটি নিরবচ্ছিন্ন সেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। 

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে আমরা আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টহোল্ডার এবং ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ অন্যান্য অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা দিচ্ছি। এ ছাড়া এমএসএমই গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আনা হয়েছে ভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ড। আমাদের বিশ্বাস এই কার্ডগুলো গ্রাহকদের কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে এবং সন্তুষ্টি অর্জনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আমরা প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দিচ্ছি যা গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনের প্রতি আরও বেশি সক্ষম এবং আগ্রহী করে তুলছে। 

সমাজের সব শ্রেণির লোকদের জন্য ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আমরা করপোরেট প্রি-পেইড কার্ড দিচ্ছি, বিশেষ করে সেই সব গার্মেন্টস কর্মীদের, যারা নগদ অর্থে মজুরি পেয়ে আসছেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের সর্বজনীন ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসছি। এ ছাড়া যেসব অঞ্চলে সীমিত ব্যাংকিং সেবা বিদ্যমান রয়েছে সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক ডেবিট কার্ড ইস্যু এবং অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এজেন্ট ব্যাংকিং, দুর্গম অঞ্চলে আর্থিক সেবা প্রসারণের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত জনসাধারণকে ব্যাংকিং সেবা এবং ডিজিটাল পেমেন্টের আওতাভুক্ত করছে।

এসব উদ্যোগের পাশাপাশি, আমরা আমাদের গ্রাহক সেবা প্রতিনিধিদের ক্রমাগত প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি, যেন তারা গ্রাহকদের আবেদনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সব কার্যক্রমে সর্বাত্মক গ্রাহক সেবা ও নির্দেশনা দিতে পারেন। গ্রাহক অভিজ্ঞতা এবং সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে, আমরা গ্রাহকদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।

পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে কমবে দাম

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৪ এএম
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫২ এএম
পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে কমবে দাম
মো. আব্দুল মাজেদ

দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। তারপরও ভরা মৌসুমে প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, যৌক্তিক পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দাম ৩৪ থেকে ৫০ টাকা কেজি। কয়েক হাত ঘুরে খুচরা পর্যায়ে তা ৬০ টাকা ছাড়িয়েছে। পেঁয়াজের বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও দাম বাড়ার কারণ ইত্যাদি বিষয় জানতে খবরের কাগজ কথা বলেছে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সহ-সভাপতি, শ্যামবাজার পেঁয়াজ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স মিতা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাজি মো. আব্দুল মাজেদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম।

খবরের কাগজ: ভরা মৌসুমেও বেড়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম। এর কারণ কি?

মো. আব্দুল মাজেদ: কৃষকের হালি (নতুন) পেঁয়াজ উঠে গেছে। দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভারত সরকার ৩১ মার্চের পর আইপি (আমদানি অনুমতিপত্র) দেওয়া বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে ব্যাংকও এলসি খুলছে না। এ সুযোগে বিভিন্ন মোকামে (হাট) বড় বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো বাড়াচ্ছে পেঁয়াজের দাম। তাদের বেঁধে দেওয়া দামে ঢাকার আড়তে বিক্রি করতে হচ্ছে পেঁয়াজ। কয়েক হাত বদল হয়ে ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। 

খবরের কাগজ: সিন্ডিকেটে কারা জড়িত? 

মো. আব্দুল মাজেদ: কারা সিন্ডিকেটে জড়িত সরকার জানে। পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুরসহ কয়েকটা মোকামের বড় ব্যবসায়ীরা এ কাজটা করছেন। মধ্যস্বত্বভোগী বা ব্যাপারীরা পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। তারা আমাদের শুধু কেজিপ্রতি ১ টাকা কমিশন দেন। এর বেশি আমাদের কিছু থাকে না। সেটা থেকে দোকান ভাড়া, কর্মচারী খরচ দিয়ে চলতে হয়। এক বস্তায় ৫৫ থেকে ৬৫ কেজি পেঁয়াজ থাকে। 

খবরের কাগজ: চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ার পরও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন?

মো. আব্দুল মাজেদ: দেখেন, কৃষক উৎপাদনের পর তারা পেঁয়াজ ধরে রাখতে পারেন না। তা ছাড়া এবার যে পেঁয়াজ হয়েছে সেটা ভারতের হাইব্রিড পেঁয়াজ। সেটা কৃষকরা ধরে রাখতে পারেন না। বিভিন্ন মোকামের ব্যাপারীরা কিনে মাচা করে রাখছেন। তারা সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করছেন। 

খবরের কাগজ: সরকার কি করলে দেশে কমতে পারে পেঁয়াজের দাম। 

মো. আব্দুল মাজেদ: দেশে প্রচুর হালি (নতুন) পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। ভারতেও পেঁয়াজের দাম কম। কিন্তু সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) বন্ধ রেখেছে। তা খুলে দিতে হবে। তা না হলে দাম আরও বেড়ে যাবে। ভারত থেকে পেঁয়াজ এলে শ্যামবাজারে ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় নেমে আসবে। খুচরা বাজারে তা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়েও সিন্ডিকেট রয়েছে। বন্দরেই ব্যাপারীরা কিনে তারা বেশি দামে ঢাকাতে বিক্রি করে। তাই বন্দরে পেঁয়াজ কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে। যারা এলসি করে তারা সরাসরি ঢাকাতে পেঁয়াজ পাঠালে কম দামে আমরা পেতে পারি। এর ফলে ভোক্তারাও কম দামে পাবেন পেঁয়াজ। 

খবরের কাগজ: কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সার, বীজ, শ্রমিকের মজুরিসহ সবকিছু বিবেচনা করে পাইকারি পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের যৌক্তিক মূল্য ৩৪ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করার ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাজারে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তা ৫০ টাকার ওপরে। কারণ কি?

মো. আব্দুল মাজেদ: পেঁয়াজের রেট দিয়ে কাজ হবে না। আমরাও চাই ভোক্তারা যাতে কম দামে পেঁয়াজ খেতে পারেন। কারণ বেশি দামে বিক্রি হলেও তো সেই লাভ আমরা পাই না। মোকামে সিন্ডিকেট করে লুটে নিচ্ছে বাড়তি দাম। কাজেই সরকারকে ধরতে হবে। আরও তৎপর হতে হবে। 

খবরের কাগজ: বেশি দাম নেওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাজারে তো অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর জরিমানা করছে। তারপরও বাড়ছে দাম। কারণ কি?

মো. আব্দুল মাজেদ: দেখেন, যারা সিন্ডিকেট করছে তারা কাউকে মানে না। এ জন্যই দাম কমে না। জরিমানা করা হলেও সেই টাকা জনগণের কাছ থেকে তারা তুলে নিচ্ছে। এ জন্যই বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ছে দাম। কৃষকের উৎপাদন খরচ ২৫ থেকে ২৮ টাকা। সেই পেঁয়াজ বিভিন্ন হাত ঘুরে ভোক্তাদের ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। 

খবরের কাগজ: বর্তমানে শ্যামবাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কেমন হচ্ছে? 

মো. আব্দুল মজিদ: আগে দিনে ৫০ থেকে ৬০ গাড়ি পেঁয়াজ আসত। এক গাড়িতে ১৫ টন থাকে। ১ টনে ১ হাজার কেজি। বর্তমানে কমে গেছে। ১০ থেকে ১৫ গাড়ি আসছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। এর প্রভাবে বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ছে।  

খবরের কাগজ: আপনাকে ধন্যবাদ। 

মো. আব্দুল মজিদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

পণ্য বৈচিত্র্যকরণ আমার ব্যবসার কৌশল

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৪ এএম
পণ্য বৈচিত্র্যকরণ আমার ব্যবসার কৌশল
আহসান খান চৌধুরী

১৯৯২ সাল, ২২ বছরের তরুণ আহসান খান চৌধুরী। আমেরিকায় ব্যবসায় প্রশাসনে পড়ালেখা শেষ করেছেন মাত্র। সে দেশেই একাধিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরির ডাক এলেও ফিরে আসেন শিকড়ের টানে। তরুণ আহসান খান দেশেই কিছু করতে চান। মনের মধ্যে অদম্য ইচ্ছা, এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করবেন; যার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি আসবে। আশির দশকে বাবা আমজাদ খান চৌধুরীর গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে যোগ দেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা ও কথা দিয়ে কথা রাখার মতো গুণাবলি তাকে সফলতার শিখরে নিয়ে গিয়েছে। আজকে প্রাণ-আরএফএল দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাবার অভিজ্ঞতা আর ছেলের কর্মপরিকল্পনার সমন্বয়ে এগিয়ে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়েও বর্তমানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্য শতাধিক দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছে দেশি বিদেশি বহু পুরস্কার। একাধিকবার দেশের শ্রেষ্ঠ জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এখানেই থামতে রাজি নন ব্যবসায়ী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী। পরনির্ভরতা ছেড়ে অফুরন্ত সম্ভাবনার এ দেশটিকে আরও এগিয়ে নিতে চান। বাবার আদর্শকে লালন করে যেতে চান বহুদূর। নিজের ব্যবসা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী কথা বলেছেন খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনীর সঙ্গে।

খবরের কাগজ: বিদেশে পড়ালেখা করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সাধারণত সবাই চাকরি করে থাকে। আপনি কেন ব্যবসায় এলেন? 

আহসান খান চৌধুরী: শুধু নিজে ভালো থাকব, এমন চিন্তা কখনোই আসেনি। বরাবরই চেষ্টা ছিল সবাইকে নিয়ে বাঁচব। ব্যবসা করে দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিল। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব। বেকারত্ব দূর করব। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করে কৃষি খাতের ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাব। এর ফলে কৃষকের উন্নয়ন হবে। 

খবরের কাগজ: ছোট বেলা থেকে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এবং আভিজাত্যের মধ্যে বেড়ে উঠলেও আমরা দেখেছি যে, আপনি বরাবরই সাধারণ জীবনযাপন করেন। আপনার শিক্ষাজীবনের কথা কিছু বলেন, যা জেনে তরুণ উদ্যোক্তারা ব্যবসায়ে আগ্রহী হবে। 

আহসান খান চৌধুরী: সেন্ট যোসেফ স্কুল এবং নটর ডেম কলেজের পাঠ শেষে আমেরিকায় ওয়ার্ট বার্গ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে উচ্চশিক্ষা নিয়েছি। বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ পাই। কিন্তু দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিল। তাই ২২ বছর বয়সে মাটির টানে দেশে চলে আসি। কী করব ভাবতে থাকি। এমন কিছু করতে চাই; যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের দেশটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনামের সঙ্গে পরিচিতি পাবে। যাই করব, তাতেই সেরা হতে হবে, এমন আকাঙ্ক্ষা ছিল মনের মধ্যে। কী করব, তা নিয়ে বিভিন্ন হিসাব কষতে শুরু করি। 

খবরের কাগজ: এর পর কীভাবে বাবার ব্যবসায়ে যোগ দেন? 

আহসান খান চৌধুরী: ৮০-এর দশকে গড়ে ওঠা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ছিল আমার জন্য সব চেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম। বাবাকেও সে সময় সাহায্য করার প্রয়োজন ছিল। অনেক ভেবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে যোগ দিই। শুরু হয় নতুন পথচলা। বাংলার ঘরে ঘরে প্রাণের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সারা বিশ্বে প্রাণের পণ্য ছড়িয়ে দেওয়া ছিল আমার লক্ষ্য, অঙ্গীকার ও চ্যালেঞ্জ। 

খবরের কাগজ: কী কৌশল সামনে রেখে ব্যবসা করতে থাকেন? 

আহসান খান চৌধুরী: পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ছিল আমার ব্যবসার কৌশল। ব্যবসার শুরু থেকেই নানা সমস্যা সামনে এসেছে। এখনো আছে। প্রতিটা সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, এসব চ্যালেঞ্জ দক্ষতা ও মেধার সঙ্গে যে মোকাবিলা করতে পারবে সে-ই এগিয়ে যাবে। চ্যালেঞ্জগুলোকে আমি সবসময় আনন্দের সরঙ্গ গ্রহণ করেছি। তা বিচার-বিশ্লেষণ করে কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি, নিয়মানুবর্তিতা, পরিশ্রম ও কঠোর অধ্যবসায় থাকলে যেকোনো ব্যবসায় সফলতা অর্জন করা সম্ভব। সর্বোপরি আমি যে কাজ করি তা সততার সঙ্গে মনেপ্রাণে করি।

খবরের কাগজ: বাবার কোন উপদেশ সব সময় মনের মধ্যে থাকে? 

আহসান খান চৌধুরী: বাবা আমজাদ খান চৌধুরীর উপদেশ, ‘জীবনে সফলতার জন্য সংক্ষিপ্ত কোনো পথ নেই।’ আমি এই কথাগুলো অনুসরণের চেষ্টা করি। আমি বিশ্বাস করি, যেকোনো অর্জনের পেছনে থাকতে হবে কঠিন পরিশ্রম, সততা ও অধ্যবসায়। জীবনে চলার পথে পাহাড়সমান সমস্যা আসবে। তাতে বিচলিত না হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বাবার উপদেশই আমার জীবনের পাথেয়। বাবাই আমার আদর্শ। ব্যবসা পরিচালনায় তার বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি, অভিজ্ঞতা, উপদেশ সবগুলোই সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। অনেক ক্ষেত্রে অর্জন করতে পেরেছি। তবে বাকি আছে অনেক কিছু। তা অর্জনে কঠিন পরিশ্রম করি, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

খবরের কাগজ: আপনার বাবা বাংলাদেশের ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যতম দিকপাল। তার আর কোন বিষয় আপনাকে প্রভাবিত করেছে? 

আহসান খান চৌধুরী: এ দেশে অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা আছে, তা আমি মনে করি না। বরং অসম্ভব সম্ভাবনাময় একটি দেশ বাংলাদেশ। আমি বাবার কথায় কথা মিলিয়ে বলব, ‘আমাদের দিগন্তবিস্তৃত আবাদি ও উর্বর জমি, অবারিত নদী, আর আছে কর্মঠ এক বিশাল জনগোষ্ঠী। এত সুবিধা খুব কম দেশেই রয়েছে।’ এমন অনেক দেশ আছে পৃথিবীতে মাইলের পর মাইল জমি রয়েছে কিন্তু তাতে আবাদ হয় না। আর এ দেশে, ঘরের ভেতরে টবের মধ্যে দুটো বীজ লাগালেও চারা গজিয়ে যায়। একটু পরিচর্যা করলে সেখান থেকে ফলও পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের উর্বর জমি কাজে লাগাতে না পারলে তা হবে আমাদের ব্যর্থতা। আর একটি বিষয় ত্যাগ করতে হবে, নিজের ব্যর্থতার জন্য অন্যকে দায়ী করার মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশের উন্নয়ন আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। 

খবরের কাগজ: দেশের অর্থনীতির জন্য দক্ষ জনশক্তি কতটা প্রয়োজন? 

আহসান খান চৌধুরী: এ দেশে মানুষের অভাব নেই। কিন্তু দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এ দেশের মানুষকে এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ দায়িত্ব সবার, বিশেষভাবে নতুন প্রজন্মে ওপর এর দায়টা বেশি। 

খবরের কাগজ: তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে কিছু বলেন। 

আহসান খান চৌধুরী: গত ১০ বছরে ব্যবসায়ের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। একটি ছেলে বা মেয়ে পড়ালেখা শেষ করে ভবিষ্যৎ জীবন-জীবিকার জন্য চাকরি করাটা নিরাপদ মনে করত একসময়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে ব্যবসাকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণের নিশ্চয়তা এখন রয়েছে। লেখাপড়া জানা উদ্যোক্তারা আসছেন। এতে ব্যবসায়ে গুণগত মানের উন্নয়ন হয়েছে। যে ধরনের ব্যবসায় আসার পরিকল্পনা থাকবে সে বিষয়ে পড়ালেখা করেই কাজে যোগ দেওয়া উচিত। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে বিশ্ব এখন এক মঞ্চে। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ এখন মুহূর্তের ব্যাপার। ভোক্তারাও জানতে পারছেন কোন দেশে কী পাওয়া যাচ্ছে। তাই প্রতিযোগিতাও আগের চেয়ে বেশি। যে ব্যবসায়ী গুণগত মানের বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য উৎপাদন করবেন তাকে মুনাফা নিয়ে ভাবতে হবে না। তাই ভোক্তার কাছে পণ্যের গুণগত মানের পণ্য পৌঁছে দেওয়াই সব চেয়ে বড় নীতি হওয়া উচিত একজন ব্যবসায়ীর।

খবরের কাগজ: রপ্তানিতে সুফল আনতে কী করতে হবে? 

আহসান খান চৌধুরী: দেশের ভাবমূর্তি ভালো হলে পণ্য রপ্তানিতেও সুফল পাওয়া যায়। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে ভিসা সুবিধা পান, সে বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। এ ছাড়া কাঁচামাল আমদানি খরচও কমাতে হবে। 

খবরের কাগজ: আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু বলেন। 

আহসান খান চৌধুরী: প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ দেশের অন্যতম কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান। আশির দশকের শুরুতে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের যাত্রা শুরু। রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডই ছিল এর প্রথম পরিচয়। দারিদ্র্যপীড়িত উত্তরাঞ্চলের জনগণের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি ও সেচের পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল) গড়ে উঠে। পরবর্তী সময়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদন শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি, ইলেকট্রনিকস, হালকা প্রকৌশল, ফার্নিচার, টয়লেট্রিজ, পোশাকসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে এগিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে ছয় হাজারের অধিক পণ্য রয়েছে। খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে উৎকৃষ্টমানের কাঁচামাল সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। খাদ্যপণ্যের কাঁচামাল দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কাছে থেকে সংগ্রহ করা হয়। এ জন্য সারা দেশে এক লাখ চুক্তিবদ্ধ কৃষক সরাসরি আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। 

খবরের কাগজ: আপনার প্রতিষ্ঠানের গুণগতমান ধরে রাখতে কী করছেন। 

আহসান খান চৌধুরী: শিল্পোন্নত দেশের কারখানাগুলোতে স্বল্প সময়ে গুণগতমানের সর্বোচ্চ সংখ্যার পণ্য তৈরি করতে পারে তার অন্যতম কারণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। সারা দেশে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ৩০টির অধিক স্থানে থাকা অত্যাধুনিক কারখানাতেও ব্যবহার করা হয় বিশ্বসেরা প্রযুক্তি। এসব কারখানায় সরাসরি কর্মসংস্থানের হয়েছে প্রায় দেড় লাখ নারী-পুরুষের। পরোক্ষভাবেও এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজে জড়িত রয়েছে বড় অঙ্কের জনগোষ্ঠী। এভাবে সব মিলিয়ে ১৫ লাখের অধিক মানুষের জীবিকা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে প্রাণের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। 

খবরের কাগজ: আপনার প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? 

আহসান খান চৌধুরী: আমাদের গ্রুপের লক্ষ্য হলো লাভজনক ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে মানুষের মর্যাদা ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি করা। অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায় সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদের ব্যবসায় অগ্রসর হওয়া। এ ক্ষেত্রে আমরা গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কর্মীদের মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ৬০ শতাংশেরও বেশি। আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়তা করে আসছি। কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নে সার-বীজ সরবরাহ, উন্নত চাষের জন্য প্রশিক্ষণ এবং উৎপন্ন ফসল বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করে থাকি। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং গৃহস্থালি পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের পরিধি আরও বাড়াতে কাজ করছি। স্থানীয় বাজারে বিক্রি বাড়ানো সঙ্গে রপ্তানি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। আমার ইচ্ছা প্রাণের ব্র্যান্ডে বাংলাদেশের সুনাম বাড়বে। পৃথিবী জানুক এ দেশের কৃষকের কথা। এতে যেমন কৃষক উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। 

খবরের কাগজ: অবসর সময় কীভাবে কাটে? 

আহসান খান চৌধুরী: অবসর কাটে বই পড়ে এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে।

খবরের কাগজ: আপনাকে ধন্যবাদ 

আহসান খান চেীধুরী: আপনাকেও ধন্যবাদ


এক নজরে প্রাণ-আরএফএল

প্রতিষ্ঠা: যাত্রা শুরু ১৯৮১ সালে

প্রতিষ্ঠাতা: মেজর জেনারেল আমজাদ খান চৌধুরী (অব.)

বর্তমান চেয়ারম্যান ও সিইও: আহসান খান চৌধুরী    

করপোরেট ব্রত: ‘দারিদ্র্য ও ক্ষুধা জীবনের অভিশাপ। আমাদের লক্ষ্য: লাভজনক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিপূর্বক মানুষের মর্যাদা ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি করা’।   

প্রাণ-আরএফএলের মোট পণ্য: বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রায় ৬০০০ পণ্য

মোট কর্মী: ১,৪৫,০০০ (এক লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার)    

চুক্তিভিত্তিক কৃষক: প্রাণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ১,০০,০০০ (এক লাখ) 

রিটেইল চেইনশপ: ৩০০০-এর অধিক নিজস্ব চেইন শপ। যেমন বেস্ট বাই, ডেইলি শপিং, টেস্টি ট্রিট, মিঠাই, রিগ্যাল, ভিশন ইত্যাদি। 

প্রথম রপ্তানি: ফ্রান্স, ১৯৯৭ সালে, পণ্য-পাইনআপেল ক্যানড

মোট রপ্তানিকৃত দেশ: ১৪৫টি

২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের রপ্তানি আয়: প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার                                                                                                                            
বড় পাঁচটি রপ্তানিকৃত দেশ: ভারত, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, আরব-আমিরাত ও মালয়েশিয়া 

জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন: ২১ বার 

সিএসআর কার্যক্রম: 

-    প্রাণ-আরএফএল পাবলিক স্কুল- নরসিংদী ও হবিগঞ্জ

-    আমজাদ খান চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতাল, নাটোর

-    সান হেলথ কেয়ার

-    কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট

প্লাস্টিক খাত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫২ এএম
প্লাস্টিক খাত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ
সামিম আহমেদ

দিন দিন জীবনে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। এটি দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম খাত। এ শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) সভাপতি সামিম আহমেদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্পের বর্তমান অবস্থা কেমন? 

সামিম আহমেদ: প্লাস্টিক খাত একটি উল্লেখযোগ্য এবং দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প। প্লাস্টিকশিল্প দ্রুত প্রসার লাভ করছে। প্লাস্টিক সেক্টরের ক্রমসম্প্রসারণশীল প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য ও দৃশ্যমান পরিবর্তন অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করছে। প্লাস্টিক খাতের অন্যান্য সাব-সেক্টরগুলোর মধ্যে প্যাকেজিং, পিপি ওভেন, টয়েজ, ক্রোকারিজ, ফার্নিচার, রিসাইক্লিং উল্লেখযোগ্য। ......
অভ্যন্তরীণভাবে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এই সেক্টর সরকারের কোষাগারে প্রতিবছর আনুমানিক প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকে। প্লাস্টিক সেক্টরের রপ্তানির পরিমাণ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। রপ্তানি প্রতিবছর বাড়ছে। বর্তমানে সরাসরি ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিতে দেশের প্লাস্টিকশিল্প খাতের অবস্থান ষষ্ঠ। অন্যদিকে দেশে ছোট বড় মিলিয়ে বর্তমানে ৬ হাজার প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। এই খাতের ওপর ১২ লাখের বেশি মানুষ নির্ভরশীল। প্লাস্টিক পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ সমগ্র ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, ভারত, নেপালসহ ১২৬টি দেশের বাজারে রপ্তানি হয়ে আসছে। প্লাস্টিক খাতের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে।

খবরের কাগজ: বিপিজিএমইএ বর্তমানে কোন কোন ধরনের নীতি-সহায়তা বা সুবিধা প্রয়োজন? 

সামিম আহমেদ: সরকার দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্লাস্টিক দ্রব্য রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ প্রদান করে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে নগদ সহায়তা কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এতে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই শিল্পের ক্রমবিকাশ ধরে রাখতে হলে ক্যাশ ইনসেনটিভ বা নগদ-সহায়তা আরও বাড়াতে হবে। 
পুরান ঢাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স সমস্যা দীর্ঘদিনের। আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে- যতক্ষণ না পুরান ঢাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো শিল্পনগরীতে স্থানান্তর করা যায় ততক্ষণ ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু যেন অব্যাহত থাকে। মন্ত্রণালয় থেকে পুরান ঢাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তালিকা চাওয়ার প্রেক্ষিতে বিপিজিএমইএ থেকে তৈরি করা প্লাস্টিকশিল্প কারখানার একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে।
বিএসটিআই সম্প্রতি একটি প্যাকেজিং অ্যাক্ট প্রণয়ন করেছে। স্টেকহোল্ডারদের কোনো মতামত ছাড়া এ ধরনের আইন বাস্তবায়ন করা দুরূহ হতে পারে। পণ্যের মান, স্থায়িত্ব, মূল্য, প্রাপ্যতা, ব্যবহারের সুবিধা, আন্তর্জাতিক নীতি, সামগ্রিক অর্থনৈতিক সুবিধা, শিল্পায়নের সুবিধা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে একটি সময়োপযোগী ‘প্যাকেজিং অ্যাক্ট’ বিশেষ প্রয়োজন।
সিরাজদিখানে চলমান কেমিক্যালপল্লিতে সরকার ৯০ একর জমি প্লাস্টিক সেক্টরকে আলাদা প্লাস্টিক জোন স্থাপন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পের আওতায় জিইটিসি স্থাপনের জন্য ১০ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, প্রকল্পের কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। ওই প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করার অনুরোধ করছি। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে কী কী বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

সামিম আহমেদ: প্লাস্টিক পণ্য থেকে আয়ের প্রবৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ বাধাগ্রস্ত করছে। এই চ্যালেঞ্জগুলোকে উৎপাদন-সম্পর্কিত, নিয়ন্ত্রক, আর্থিক, পরিবেশগত এবং লজিস্টিকাল সমস্যায় শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে।
কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা এবং উচ্চ ব্যয়, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং উচ্চ জ্বালানি ব্যয়, দক্ষ শ্রম ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির অভাব, পরিবেশগত উদ্বেগ এবং নিয়ন্ত্রক সমস্যা, আর্থিক ও বিনিয়োগ সীমাবদ্ধতা, রপ্তানি বাধা এবং প্রতিযোগিতা, ব্র্যান্ডিং এবং বিপণন কৌশলের অভাব অন্যতম।
এই চ্যালেঞ্জগুলো সত্ত্বেও সঠিক নীতি, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্পের প্রবৃদ্ধির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার এবং বেসরকারি খাতকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষ শ্রম ও আধুনিক যন্ত্রপাতিতে বিনিয়োগ এবং শিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলকতা বৃদ্ধির জন্য টেকসই অনুশীলন গ্রহণের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

খবরের কাগজ: প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারে সমস্যাগুলো কী? 

সামিম আহমেদ: বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লাস্টিক খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারলে বিশ্ববাজারের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে আরএফএল ও বেঙ্গলের মতো বড় প্রতিষ্ঠান রিসাইকেল প্ল্যান্ট চালু করছে। এটা ইতিবাচক। তবে ফেলে দেওয়া বা বাসায় অব্যবহৃত প্লাস্টিক সংগ্রহ করে রিসাইকেল প্ল্যান্টে নিয়ে আসা একটা বড় সমস্যা। এর জন্য একটা কার্যকর ইকো সিস্টেম চালু করতে হবে। ব্যবসায়ী ও সরকার মিলে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক পণ্য সঠিকভবে সংগ্রহ করতে না পারলে রিসাইকেল প্ল্যান্টগুলো কাজে আসবে না। উন্নত অনেক দেশে ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

খবরের কাগজ: রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি প্লাস্টিক পণ্যের প্রধান বাজার কোন কোন দেশ? 

সামিম আহমেদ: প্লাস্টিক পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশসহ সমগ্র ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, ভারত, নেপালসহ ১২৬টি দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে। প্লাস্টিক খাতের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে ভিন্ন কৌশল নিচ্ছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস্ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) এ জন্য শুধু পণ্যমেলা নয়, পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে। 
প্লাস্টিক পণ্যমেলায় প্রতিবছর বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ অংশগ্রহণ করে। রপ্তানি বাড়ানো এই মেলা আয়োজনের লক্ষ্য। এ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন বিমসটেক, সাপটা, আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোতে যাতে প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বাড়ে সেই লক্ষ্যে ওই দেশগুলোর বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। বিপিজিএমইএ সদস্যরা বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করে। একই সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক আলোচনায়ও যাতে রপ্তানি পণ্যে প্লাস্টিক অগ্রাধিকার পায় সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে বিপিজিএমইএ। 
দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক দেশগুলোর মধ্যে ভারতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্লাস্টিক রপ্তানি হয়। কিন্তু নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় ততটা বাড়েনি। এই দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে চেষ্টা চালাচ্ছে সংগঠন। বাংলদেশ থেকে যেসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয় বা রপ্তানির তালিকায় যেসব পণ্য প্রথম দিকে রয়েছে তার মধ্যে ১২তম পণ্য হচ্ছে প্লাস্টিক। রপ্তানির তালিকায় এখনো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে তৈরি পোশাক আর দ্বিতীয় স্থানে আছে মাছ। আবাসিক ও অফিস আসবাব, হোম ডেকোরেটর, নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজের সামগ্রী তৈরি হয় এমন ছোট বড় মাঝারি সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার প্লাস্টিক কারখানা আছে দেশে। প্রতিবছর কমপক্ষে ২০ শতাংশ করে বাণিজ্য বাড়ছে। এই খাতে কাজ করে ১২ লাখ শ্রমজীবী মানুষ। 
বর্তমানে রপ্তানিতে প্লাস্টিক পণ্যের অবস্থান ১২তম। কিন্তু প্রচ্ছন্ন রপ্তানির (যার মধ্যে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ উল্লেখযোগ্য) হিসাব এর সঙ্গে যুক্ত হলে রপ্তানিতে প্লাস্টিক পণ্যের অবস্থান হবে ষষ্ঠ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিগত ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট প্লাস্টিক রপ্তানি ছিল ৬৮ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলার। (২০২২-২০২৩) প্লাস্টিক রপ্তানি ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ২০৯ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলার, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশে প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ (রিসাইক্লিং) শিল্প কতটা উন্নত? 

সামিম আহমেদ: বাংলাদেশে বর্তমানে প্লাস্টিকের বর্জ্য ব্যাপক পরিমাণে রিসাইক্লিং (পুনঃচক্রায়ন) হচ্ছে। দেশে বর্তমানে বিভিন্নভাবে প্রায় ৭০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগৃহীত হয়ে থাকে এবং তা থেকে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে দানা তৈরি করে বিভিন্ন প্লাস্টিক দ্রব্য তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্র সাশ্রয় হচ্ছে। দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্জের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এতে রিসাইক্লিং ব্যবস্থার সুন্দর হয়। প্লাস্টিক পচনশীল নয়। তাই এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পুনঃচক্রায়ন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বর্তমানে ফেরিওয়ালা, ভ্যান সংগ্রহকারী, ডাস্টবিন টোকাই, ডিসিসি সংগ্রহকারি, ডাম্প টোকাই বর্জ্য সংগ্রহ করে। এদের মাধ্যমে পুরোনো এই পদ্ধতিতে বর্জ্য কালেকশন আশানুরূপ হচ্ছে না। তাই বর্জ্য কালেকশন সিস্টেমকে উন্নত করা প্রয়োজন। প্লাস্টিককে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে বারবার ব্যবহার করা যায়। তবে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সিটি করপোরেশনকে বাস্তবভিত্তিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

খবরের কাগজ: কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে প্লাস্টিক শিল্প কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?

সামিম আহমেদ: বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লাস্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইপিইটি)-এর স্থায়ী ক্যাম্পাস ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ক্যাম্পাসটি ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কনটেইনার পোর্ট রোড, আইন্তায় ১২৯.৩২ ডেসিমল নিজস্ব জমির ওপর নির্মিত হয়েছে। মেশিনারিসহ প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম আংশিকভাবে স্থাপন করা হয়েছে। শিগগিরই এই স্থায়ী ক্যাম্পাসে ভর্তি ও প্রশিক্ষণ শুরু হতে যাচ্ছে।
বিপিজিএমইএর পল্টন অফিসে সাময়িকভাবে বিপেট প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্লাস্টিকশিল্প প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে একক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করা হচ্ছে, যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে এই খাতের ভূমিকা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
ভারতের অভিজ্ঞতার আলোকে, ১৯৬৮ সালে ভারতের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব প্লাস্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (সিআইপিইটি) স্থাপন করা হয়, যা ভারতের প্লাস্টিক খাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা, দক্ষ জনবল এবং গবেষণা ও উন্নয়ন নীতিমালার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে বিপিজিএমইএ বিপেট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বিপেট একটি সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান, যেখানে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বিটিইবি)-এর অনুমোদিত কারিকুলাম অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এই প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

ক্রেতার আস্থার ঠিকানা বনফুল

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১১:২৬ এএম
ক্রেতার আস্থার ঠিকানা বনফুল
আমানুল আলম

মো. আমানুল আলম বনফুল অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে আছেন প্রায় তিন যুগ ধরে। বর্তমানে তিনি এই গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সেমাই ও মিষ্টান্ন তৈরির কোম্পানি বনফুলের সেমাইয়ের নানা দিক নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ইফতেখারুল ইসলাম

খবরের কাগজ: কখন এবং কোন উদ্দেশ্য নিয়ে বনফুলের যাত্রা শুরু হয়?

আমানুল আলম: একসময় ঈদ উৎসবে মানুষ বাংলা সেমাই খেতেন। স্থানীয়ভাবে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে এই সেমাই তৈরি হতো। কিন্তু সেভাবে তৈরি করা সেমাইয়ের বেশির ভাগই ছিল অস্বাস্থ্যকর। খাদ্য জগতের মানোন্নয়ন এবং ক্রেতার কাছে মানসম্পন্ন সেমাই পৌঁছে দেওয়াই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। তাই বলা যায়, সেমাই ও মিষ্টির জগতে বনফুল বাংলাদেশির পথিকৃৎ। ১৯৮৯ সালে বনফুলের যাত্রা। সময়ের আবর্তে এই খাতকে আরও আধুনিকতার ছোঁয়া আমরা দিতে পেরেছি। আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে বনফুল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে ভালো মানের স্বাস্থ্যসম্মত সেমাই পরিবেশন করার ফলে ধীরে ধীরে ক্রেতাদের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে বনফুল। এখন তো এই শিল্পে আমরা আরও আধুনিক মেশিন ব্যবহার করছি। 

খবরের কাগজ: আপনারা কি সারা বছর সেমাই তৈরি করেন?

আমানুল আলম: আমাদের সেমাইয়ের চাহিদা সারা বছর আছে। তাই কম পরিসরে সারা বছর সেমাই তৈরি করি। তবে ঈদের সময় সেমাইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। 

খবরের কাগজ: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আপনাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এসেছে। তাদের কীভাবে মোকাবিলা করছেন?

আমানুল আলম: আমরা গুণগত মান এবং স্বাস্থ্যসম্মত সেমাই উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকি। ভালো মানের পণ্য তৈরি করলে অন্য কোম্পানি বাজারে কী নিয়ে আসছে তা নিয়ে আর ভাবতে হয় না। এই নীতি অনুসরণের কারণে বাকিদের নিয়ে আমাদের ভাবতে হচ্ছে না। 

খবরের কাগজ: সেমাই শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি কী?

আমানুল আলম: খুব ভালো। সেমাইয়ের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। আমরা চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লা এবং উত্তরবঙ্গে কারখানা করেছি। বাজার প্রসার হওয়ায় ক্রেতা বেড়েছে। ক্রেতারা ভালো পণ্যের কদর করছেন। সারা দেশে আমাদের পরিবেশক রয়েছে। 

খবরের কাগজ: সেমাইয়ের সরবরাহ এবং দাম কি ক্রেতাদের নাগালে আছে?

আমানুল আলম: দাম আমরা সব সময় ক্রেতা সাধারণের নাগালে রাখার চেষ্টা করি। এটা কিন্তু বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আমরা কম লাভ করে ক্রেতার মন জয় করার চেষ্টা করি। এই কাজ করতে গিয়ে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। যেমন কাঁচামালের সংকট অনেক সময় আমাদের বিপাকে ফেলে দেয়। গম আমদানি কমে যায়। অনেক সময় গমের দাম মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যায়। মাঝে মধ্যে ঘি-এর সংকট হয়। যে কারণে অনেক সময় উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু আমরা তা ক্রেতাকে বুঝতে দিই না।

খবরের কাগজ: এই শিল্পের আরও সমৃদ্ধি অর্জনে সরকারের করণীয় কিছু আছে?

আমানুল আলম: সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কলকারখানা চালানো কঠিন। গ্যাসের অপর্যাপ্ত সরবরাহ উৎপাদন কাজে বিঘ্ন ঘটায়। পর্যাপ্ত গ্যাস পেলে আমরা আরও ভালোভাবে উৎপাদন করতে পারতাম। আর ভ্যাট ট্যাক্সের কথা বলতে গেলে, যদি সরকার তা বাড়ায় তখন আমরা পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হই।

খবরের কাগজ: বনফুলকে কি আর কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে?

আমানুল আলম: মাঝে মাঝে কিছু অসাধু ব্যক্তি আমাদের ব্র্যান্ড নকল করছে। যা আমাদের বিব্রত অবস্থায় ফেলে। কোনো ক্রেতা একবার নকল সেমাই কিনলে আসল সেমাইয়ের প্রতি তার আগ্রহ হারিয়ে যাবে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় নকল ব্র্যান্ড প্রতিরোধ করার চেষ্টা করি। তবে যেসব ক্রেতা আমাদের সেমাই নিয়মিত খান তিনি প্যাকেট ধরলেই বুঝতে পারবেন কোনটি আসল আর কোনটি নকল। 

খবরের কাগজ: বনফুল এতদূর এগিয়ে যাওয়ার পেছনে আর কোনো রহস্য আছে?

আমানুল আলম: অবশ্যই আছে। আজ এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম এবং প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপির অবদান অপরিসীম। এই কারখানার মাধ্যমে আজ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। চেয়ারম্যানের মেধা-শ্রম এবং একাগ্রতার ফল হিসেবে আমরা এতদূর অগ্রসর হতে পেরেছি। পণ্যের মানের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সব সময় কঠোর। মান নিয়ে তিনি কখনো আপস করেননি।

খবরের কাগজ: ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?

আমানুল আলম: আমরা তিন যুগ ধরে মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করে ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে আসছি। এত দীর্ঘ সময় ধরে ক্রেতা সাধারণ আমাদের ওপর আস্থা রাখার জন্য তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করছি, ভবিষ্যতেও তারা আমাদের ওপর আস্থা রাখবেন। আমরা তাদের কাছে মানসম্পন্ন পণ্য পৌঁছে দেব। 


খবরের কাগজ: আপনাকে ধন্যবাদ

আমানুল আলম: আপনাকেও ধন্যবাদ

সাক্ষাৎকারে রিজওয়ানা হাসান নারীকে শিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৪২ পিএম
আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৩ পিএম
নারীকে শিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: সংগৃহীত

নারীর চলার পথ এখনো মসৃণ না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও দেশের নারীরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। নারী যত এগিয়েছে, প্রতিবন্ধকতাও তত শক্তিশালী হয়েছে। নারীকে শিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সরকারকেও নারীর অধিকার আদায়ে দায়িত্বশীল হতে হবে। ধর্ষকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গত বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তুলে ধরা হলো এখানে- 

খবরের কাগজ: স্বাধীনতার অনেকগুলো বছর পার করে ফেলেছি আমরা। দেশে নারীর অবস্থান কেমন বলে মনে করছেন? 

রিজওয়ানা হাসান: দেশে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা বেড়েছে। সমাজ-সংসারে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ছে। চাকরিজীবী নারীর সংখ্যা বাড়ছে। তাহলে কি ধরে নেব যে নারীর চলার পথ মসৃণ হয়েছে? না, নারীকে এখনো পরিবারে ও পরিবারের বাইরে- সব জায়গায় বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। রাস্তাঘাটে, গণপরিবহনে, অফিস-আদালতে, বেড়াতে গেলে, শপিংয়ে, শিক্ষাক্ষেত্রে- প্রায় সবখানেই নেতিবাচক পরিবেশের মুখে পড়তে হচ্ছে। 

খবরের কাগজ: নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হলে আপনার পরামর্শ কী? 

রিজওয়ানা হাসান: নারীকে স্বাবলম্বী হতে হবে। নিজের চলার খরচ নিজেকেই জোগাড় করতে হবে। তাকে আয় করতে জানতে হবে। তবেই নারী মর্যাদা পাবে। নারীকে শিক্ষা অর্জন করতে হবে। শিক্ষিত নারী নিজের জন্য, সমাজের জন্য শক্তি। তবে নারীর অধিকার অর্জনে তাড়াহুড়া করা যাবে না। 

খবরের কাগজ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ধর্ষণ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ থেকে মুক্তির উপায় কী?

রিজওয়ানা হাসান: যৌন হয়রানি বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি দিতে হবে। নারীকে সেক্সিস্ট ইমেজ থেকে বের করে আনতে হবে। একসময়ে ১ টাকার ছবিতে নারী কী পরে ছিল! আর এখন নারীর পোশাক নিয়ে এত কথা কেন! তাহলে কি আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি! নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগাতে হবে। মনে রাখতে হবে নারীও মানুষ। 

খবরের কাগজ: আপনি তো সব সময় নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলেছেন। এখন সরকারের অনেক বড় দায়িত্বশীল পদে কাজ করছেন। আজকের এই অবস্থানে আসতে আপনাকে কেমন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে? 

রিজওয়ানা হাসান: আমি ওই সব নারীর মতো, যাদের সামনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে থামিয়ে দেওয়া যায় না, যারা সহজে ভেঙে পড়ে না। যত বাধা এসেছে, আমি আরও ভালোভাবে নিজেকে তৈরি করে এগিয়েছি। ধরুন, আমি একটা গাড়ি থেকে নামলাম, আমি হয়তো শাড়িটা পায়ের কাছে ঠিক করলাম। তখন ওইটাই ভিডিও করে ভাইরাল করে দিল। বলা হয়, সুন্দরী উপদেষ্টা, আরও কত কিছু। যা হয়তো মুখেও আনা যায় না। এসব করা হয় মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য। এসবে নারীর হয়তো কিছু হয় না। কিন্তু তার পরিবারের লোকেরা কিছু মনে করলেও করতে পারে। 

খবরের কাগজ: আপনি আপনার বাবা-মা-সন্তান, স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকদের কাছ থেকে কী ধরনের বাধার মুখে পড়েছেন?

রিজওয়ানা হাসান: আমি ভাগ্যবতী নারী। আমার স্বামী আমার কাজে সমর্থন দেন। আমাকে পরিবারের কাজে সহযোগিতা করেন। আমি বিদেশে পড়তে যেতে চেয়েছিলাম। আমার বাবা রাজি হননি। একজন মেয়েকে একা বিদেশে ছাড়তে চাননি। ছেলে হলে নিশ্চয় ছাড়তেন। তবে আমি আমার মেয়েকে বিদেশে পড়তে যেতে দিয়েছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আস্থা বেড়েছে। শুধু তা-ই না, আমার মেয়েকে যেখানে পড়িয়েছি, আমার দুই ছেলেকে সেখানে পড়াইনি। মেয়েকে সুবিধা বেশি দিয়েছি। আবার আমার যা সম্পদ আছে, তা তিন সন্তানের মধ্যে সমান ভাগ করে দেওয়ার কথা বলেছি। মেয়ে বলে কম দেওয়া হবে না। আমার সন্তানরা ভাইবোনের সমান অধিকারে বিশ্বাস করে। আমি কাজ সেরে বাসায় গেলে আমার কন্যা বিভিন্ন প্রশ্ন করে। সে লক্ষ্য রাখে নারীর পক্ষে আমি কী বলছি। এটাই তো নারীর এগিয়ে চলা। মায়ের চেয়ে মেয়ে তার ন্যায্য পাওনা বেশি পাবে। আমার পরিবার জানে আমি কতটা সততার সঙ্গে কাজ করছি। তাই তারা আমার পাশে থাকে, সহযোগিতা করে। 

খবরের কাগজ: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর এ দেশে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। নতুন সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক। বর্তমান সরকার নারীদের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কী করছে? 

রিজওয়ানা হাসান: বর্তমান সরকার নারীবান্ধব। নারীর সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানে কাজ করছে। নারী ফুটবল খেলার ক্ষেত্রে বাধা এলে তার সমাধান কিন্তু এই সরকার করেছে। শুধু তা-ই না, সরকারের বড় বড় পদে অনেক যোগ্য নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যা যা করার সবই করছে বর্তমান সরকার। বিশেষভাবে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এযাবৎকাল নারীর ক্ষামতায়নের জন্য, নারীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কী কী করেছেন তা আপনারা জানেন। আমি যখন উপদেষ্টা হইনি, তখনো নারীর অধিকার আদায়ে অনেক কিছু করেছি। এখনো আমি নারীর অধিকার আদায়ের পক্ষে জোরালো। এখন অনেক টিএনও, ডিসি কিন্তু নারী। 

খবরের কাগজ: পরিবার থেকে নারীর অধিকার রক্ষায় কীভাবে সহযোগিতা করা উচিত বলে আপনি মনে করেন? শিক্ষাক্ষেত্রে ভূমিকা কী হতে পারে? 

রিজওয়ানা হাসান: পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। সে যেন থানায় গিয়ে নিজের সমস্যা জানাতে পারে। কোথাও যৌন হয়রানির শিকার হলে সে যেন প্রতিবাদ করতে পারে। নারীর অধিকার আদায়ে পরিবারকে নারীর পাশে থাকতে হবে। পরিবার পাশে থাকলে নারীর পক্ষে যুদ্ধে জয় সহজ হয়। একইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর যৌনপীড়নের ঘটনাকে ঢেকে বা গোপন না করে সবার সামনে আনতে হবে। অপরাধীকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।
 
খবরের কাগজ: যৌন হয়রানির পাশাপাশি নারীর প্রতি শারীরিক নির্যাতন ও মানসিক নিপীড়ন থামছেই না। আপনি কী মনে করেন? 

রিজওয়ানা হাসান: শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি- এখনো চলছে। একই সঙ্গে নেগেটিভ কথা বলে নারীকে আটকে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের নারীরা তো পাহাড়ে উঠেছে। তারা প্রমাণ করেছে তারা পারে। বিমান চালাচ্ছে। ক্রিকেট খেলছে। অস্ত্র কাঁধে যুদ্ধে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে। সরকারের ওপরের পদে কাজ করছে। তাহলে নারীকে কেন ছোট করা হবে? নারীকে কেন ভোগের বস্তু ভাবা হবে? নারীকে নিয়ে ফেসবুকে নোংরামি করা যাবে না। চটকদার রিল বানানো যাবে না। মনে রাখতে হবে, নারী একজন মানুষ। তাকে মর্যাদা দিতে হবে।