
বাংলাদেশে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রসার একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিফলন। প্রাইম ব্যাংক সর্বদা গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কার্ডের ব্যবহার, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মৃত্তিকা সাহা
প্রশ্ন: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। ক্যাশলেস লেনদেনে এগিয়ে আসছে। এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
উত্তর: উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রসার একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিফলন। প্রাইম ব্যাংক সর্বদা গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং দিয়ে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি, ক্যাশলেস লেনদেন শুধু সময় সাশ্রয়ই করে না বরং এটি নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ ও দ্রুত লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকার ডিজিটাল পেমেন্টকে উৎসাহিত করছে, যা অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে। প্রাইম ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব গ্রাহককে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছি, যাতে তারা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত এবং আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
প্রশ্ন: দেশে কত শতাংশ মানুষ কার্ডে লেনদেন করে?
উত্তর: দেশে মানুষের মাঝে কার্ডের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ব্যাংকগুলোও কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে, আমাদের ব্যাংকের কার্ডের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থা এবং ডিজিটাল পেমেন্ট বৃদ্ধির প্রতিফলন। এখন অনেক গ্রাহকই আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী, যা আমাদের কার্ডের সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা এবং সুবিধার প্রতিফলন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা কার্ড দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি নিশ্চিত করতে একাগ্রচিত্তে কাজ করে যাচ্ছে। দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ক্যাশলেস লেনদেন এবং ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার নিশ্চিতকরণে আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষামূলক প্রচারসহ নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছি। আর্থিক সাক্ষরতা এবং ডিজিটাল চ্যানেল ব্যবহার প্রসারণের মাধ্যমে, আমরা বাংলাদেশ সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর।
প্রশ্ন: পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কোন ধরনের অফার দিচ্ছেন?
উত্তর: এই বিশেষ সময়ে গ্রাহকদের চাহিদা মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন খাতে বিশেষ মূল্যছাড় এবং ক্যাশব্যাক দিচ্ছি। ইফতার এবং সাহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফারের পাশাপাশি রয়েছে বাই-ওয়ান-গেট-ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা। এ ছাড়া গ্রোসারি এবং রিটেইল দোকানগুলোতে রয়েছে বিশেষ মূল্যছাড় এবং ক্যাশব্যাক।
আমাদের কার্ডহোল্ডারা যাতে ঈদের এই আনন্দঘন মুহূর্ত তাদের পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করতে পারে তাই প্রধান টিকেটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে রয়েছে প্রাইম ব্যাংক কার্ডে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার। সামগ্রিকভাবে, আমাদের ব্যাংক গ্রাহকদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে রমজান এবং ঈদের এই উৎসবের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে গ্রাহকদের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে সেবা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ মাইপ্রাইমের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে ফান্ড ট্রান্সফার করা যায় নিমিষেই। এক্ষেত্রেও আমরা সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধা নিশ্চিত করে থাকি। কোনো ধরনের অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপআপ সুবিধা। কার্ডভেদে আমাদের গ্রাহকরা দেশে বিদেশে ১৪০০-এর অধিক এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
প্রশ্ন: কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আর কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
উত্তর: গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল ও ক্যাশলেস অর্থনীতির লক্ষ্য বিবেচনা করে কার্ডের সংখ্যা বাড়াতে আমরা বেশকিছু কৌশলগত উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা আবেদন প্রক্রিয়া সাবলীল ও সরলীকরণের দিকে মনোনিবেশ করছি। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে, আমরা আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ, ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কার্ড অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে ইস্যু করা পর্যন্ত একটি নিরবচ্ছিন্ন সেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে আমরা আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টহোল্ডার এবং ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ অন্যান্য অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা দিচ্ছি। এ ছাড়া এমএসএমই গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আনা হয়েছে ভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ড। আমাদের বিশ্বাস এই কার্ডগুলো গ্রাহকদের কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে এবং সন্তুষ্টি অর্জনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আমরা প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দিচ্ছি যা গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনের প্রতি আরও বেশি সক্ষম এবং আগ্রহী করে তুলছে।
সমাজের সব শ্রেণির লোকদের জন্য ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আমরা করপোরেট প্রি-পেইড কার্ড দিচ্ছি, বিশেষ করে সেই সব গার্মেন্টস কর্মীদের, যারা নগদ অর্থে মজুরি পেয়ে আসছেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের সর্বজনীন ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসছি। এ ছাড়া যেসব অঞ্চলে সীমিত ব্যাংকিং সেবা বিদ্যমান রয়েছে সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক ডেবিট কার্ড ইস্যু এবং অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এজেন্ট ব্যাংকিং, দুর্গম অঞ্চলে আর্থিক সেবা প্রসারণের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত জনসাধারণকে ব্যাংকিং সেবা এবং ডিজিটাল পেমেন্টের আওতাভুক্ত করছে।
এসব উদ্যোগের পাশাপাশি, আমরা আমাদের গ্রাহক সেবা প্রতিনিধিদের ক্রমাগত প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি, যেন তারা গ্রাহকদের আবেদনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সব কার্যক্রমে সর্বাত্মক গ্রাহক সেবা ও নির্দেশনা দিতে পারেন। গ্রাহক অভিজ্ঞতা এবং সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে, আমরা গ্রাহকদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।