
বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবলস এক্সপোর্টার্স অ্যাসেসিয়েশনের পাঁচ শতাধিক রপ্তানিকারক আমসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করছেন। তারা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, কানাডাসহ সারা বিশ্বে সুনামের এসব পণ্য রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। আম রপ্তানিতে সম্ভাবনা কেমন, সমস্যা কোথায়- এসব বিষয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স মনসুর জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনসুরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম
খবরের কাগজ: আম রপ্তানি বাড়ছে না কেন?
মোহাম্মদ মনসুর: চীন সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির আগ্রহ দেখিয়েছে। এটা ভালো দিক। তবে আম রপ্তানি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কারণ হচ্ছে তারা অনেক শর্তের কথা বলছে। বিশেষ করে যে দামের কথা বলছে বাংলাদেশে এ দরে আম কিনতে পারে। তাই অনেকেই চীনে আম রপ্তানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ জন্য রপ্তানি বাড়বে না।
খবরের কাগজ: প্রধান সমস্যা কী?
মোহাম্মদ মনসুর: চীনে আম রপ্তানিতে অনেক জটিলতা রয়েছে। বায়ারদের অনেক জটিল রিকোয়ারমেন্ট (চাহিদা ও শর্ত)। বিশেষ করে ট্রিটমেন্টপ্লান্ট দিয়ে ওয়াশিং করার কথা বলছে। যা আমাদের দেশে নেই। এখনো হয়নি। এটা লম্বা প্রসেস। তাদের এসব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না। কারণ তাদের রেটের চার পাঁচ গুণ বেশি দরে ইউরোপে আম পাঠানো যায়।
খবরের কাগজ: আম রপ্তানিতে বিমানের ভাড়া কেমন?
মোহাম্মদ মনসুর: আমের রপ্তানি বাড়ে না। বরং প্রতিবছর কমছে। কারণ হলো, বাংলাদেশ থেকে বিমানে পণ্য যায় বিদেশে। এখানে ভাড়া খুবই বেশি। ৯৯ শতাংশ পণ্য আকাশ পথে রপ্তানি হয়। কিন্তু কোনো রপ্তানি নীতিমালা নেই। লাগামহীনভাবে এয়ার লাইনস ভাড়া বাড়াচ্ছে। সকালে এক রকম, বিকেলে আরেক রকম। সারা পৃথিবীতে বিমানের ভাড়া বাড়াল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু আমাদের দেশে তারা এর কোনো ধার ধারে না। কোনো কিছু নেই। সকালে ১ ডলার সন্ধ্যায় ২ ডলার ভাড়ার কথা বলে। আগে ২ ডলারে রেট হয়েছে। এখন বিমান ৩ ডলার ভাড়া চাচ্ছে। এটাত বায়াররা দিবে না। তাহলে আমরা তো প্রতারক হয়ে যাচ্ছি। এই বাড়তি টাকা কে দেবে? তারা তো দেবে না। আমরা কীভাবে দেব। এ জন্য রপ্তানি দিন-দিন কমছে। আম রপ্তানিতে পরিবহন তথা বিমান ভাড়া সমস্যা হচ্ছে মূল সমস্যা।
খবরের কাগজ: সমাধানে সরকার কি করতে পারে?
মোহাম্মদ মনসুর: সরকারকেই এটার সমাধান করতে হবে। বিমানের ভাড়ার লাগাম টানতে হবে। আম যেহেতু কৃষিপণ্য। তাই কৃষি মন্ত্রণালয়কে শুধু মিটিং করলে হবে না, সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
খবরের কাগজ: বাংলাদেশের আমের গুনগতমান সম্পর্কে বিদেশে ধারণা কেমন?
মোহাম্মদ মনসুর: বাংলাদেশের আমের মান নিয়ে সন্দেহ নেই। মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশে আম রপ্তানি হয়। সৌদি আবর, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, দুবাই, ইউরোপের লন্ডন, ইতালি, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি হয়। ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। দেখা গেছে ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে কমে গেছে। আবার ২০২৩ সালে ২০২৪ সালে রপ্তানি কমে গেছে। কোনো নীতিমালা নেই। তা না থাকার কারণেই মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগেও আম রপ্তানির এই দশা। তাই সরকারকে ভাবতে হবে। কারণ শুধু বাংলাদেশ থেকেই আম রপ্তানি হয় না। ভারতসহ অন্য দেশ থেকে ওই সব দেশে আম রপ্তানি হয়। ভারত থেকে ইউরোপের বিমানভাড়া ২ ডলার। আর আমাদের লাগে ৩ ডলার। তাহলে কীভাবে টিকব আমরা। এসব বাধার কারণেই দিন-দিন রপ্তানি কমছে।
খবরের কাগজ: বিদেশে আমের প্রক্রিয়াজাত খাবারের কেমন চাহিদা।
মোহাম্মদ মনসুর: বিদেশে আমের প্রক্রিয়াকরণ খাবারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসর আমসত্ত্বসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করছে। প্রাণ কোম্পানিও বিভিন্নভাবে আমের পণ্য রপ্তানি করছে। কাজেই বলা যায় বিশ্বে আমের বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা দিন-দিন বাড়ছে। সেদিকে নজর দিতে হবে।