ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

সিরামিক শিল্পের বিকাশে গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ০৯:০৭ এএম
সিরামিক শিল্পের বিকাশে গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি
আকিজ বসির গ্রুপের বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ডিভিশনের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম

বাংলাদেশে গত এক দশকে সিরামিক শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। এ খাতে বড় বড় শিল্প গ্রুপও বিনিয়োগ করেছে। গ্যাস, বিদ্যুৎসংকট এবং গত আগস্ট মাসে সরকার পরিবর্তন হলে সিরামিক শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। সিরামিক শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে আকিজ বসির গ্রুপের বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ডিভিশনের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. জাহাঙ্গীর আলম।

খবরের কাগজ: বর্তমানে বিভিন্ন শিল্প খাতে অস্থিরতা চলছে। সিরামিক শিল্প কেমন চলছে?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: বর্তমানে সিরামিক শিল্প কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। মহামারি কোভিড থেকে শুরু করে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং 
সাম্প্রতিক ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ সব কিছুর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের সংকট এবং আমদানির জটিলতা মিলিয়ে পুরো খাতে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। তবে নানা প্রতিকূলতার পরও আকিজ সিরামিকস দৃঢ়ভাবে বাজারে অবস্থান করছে। আমাদের উৎপাদন ও ডিস্ট্রিবিউশন চেইন সচল রয়েছে। আমরা মানের বিষয়ে কখনোই আপস করি না, ফলে বাজারে আমাদের একটা শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে।

খবরের কাগজ: বিক্রি কমে যাওয়ায় ডিলাররা বলছেন লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দাম কমিয়ে বিক্রি বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: আমরা ডিলারদের পরিস্থিতি বুঝি এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আকিজ সিরামিকস বাজার অনুযায়ী কিছু প্রমোশনাল অফার চালু করেছে। তবে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরাসরি মূল্য হ্রাস করা কঠিন। বিক্রি বাড়াতে আমরা অফার, ইনসেনটিভ এবং ক্রেতা-সচেতনতা কর্মসূচির দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। মূল্য কমিয়ে বিক্রি বাড়ানো যায় না।

খবরের কাগজ: সিরামিক শিল্পে আকিজ গ্রুপের বিনিয়োগ কত এবং ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: সিরামিক খাতে আকিজ গ্রুপের বিনিয়োগ ইতিমধ্যেই প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে গেছে। আমরা শুধু স্থানীয় চাহিদা নয়, আন্তর্জাতিক বাজারের কথাও মাথায় রেখে বিনিয়োগ করেছি। ভবিষ্যতে রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তি হালনাগাদ, নতুন প্লান্ট স্থাপন ও পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

খবরের কাগজ: সরকার পরিবর্তনের পর বিক্রিতে ভাটা এসেছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকে। আপনার উৎপাদন কীভাবে চলছে?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং পটপরিবর্তনের পর একটা বড় চাপ সব শিল্পের ওপর পড়েছে। আমরা এখনো ফুল-ক্যাপাসিটিতে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও কিছু স্লো মুভিং প্রোডাক্টের উৎপাদন সাময়িকভাবে কমানো হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে আমরা বাজার ধরে রাখার চেষ্টা করছি। আকিজ সিরামিকস দীর্ঘমেয়াদে বাজারের বিশ্বাস অর্জন করেছে, যা আমাদের এগিয়ে রাখছে।

খবরের কাগজ: দেশি টাইলস ও স্যানিটারি আইটেমের চাহিদা কেমন? আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে কি?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: দেশীয় পণ্যের চাহিদা এখন অনেক বেশি। ভোক্তারা বুঝতে পেরেছেন যে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর গুণগত মান আন্তর্জাতিক মানের। আকিজ সিরামিকস ‘ভ্যালু ফর মানি’ কনসেপ্টে কাজ করছে। চাহিদা বাড়ানোর জন্য আমরা রিজিওনাল মার্কেট ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ বাড়িয়েছি।

খবরের কাগজ: টাইলস রপ্তানি কী পর্যায়ে আছে? আকিজ কি রপ্তানি করে?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিরামিকের মধ্যে টাইলসও রপ্তানি হচ্ছে। আকিজ সিরামিকস ইতোমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু এখনো এই ক্ষেত্রে বলার মতো সাফল্য অর্জত হয়নি। আমরা আশাবাদী এগিয়ে যাব। রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা বাড়লেও আমরা মান (কোয়ালিটি) ও নকশার দিক থেকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করছি।

খবরের কাগজ: বর্তমানে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহে ঘাটতি এবং কাঁচামালের দাম। এ ছাড়া ডলারের সংকটে আমদানি করতে গিয়ে অনেক সময় দেরি হচ্ছে, যা উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারও শিল্পের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খবরের কাগজ: সর্বশেষ কখন টাইলসের দাম বেড়েছে? সামনে দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: গত বছর কয়েক দফা উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় কিছু সেগমেন্টে দাম সামান্য বাড়াতে হয়েছে। তবে বর্তমানে আমরা দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছি। পণ্য বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন প্রমোশন এবং অফার চালু রাখা হয়েছে। চাহিদার বিপরীতে যোগানের সক্ষমতা যখন বেশি থাকে তখন মূল্য বৃদ্ধি অনেক কঠিন হয়ে যায়। সিরামিকস শিল্পের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

খবরের কাগজ: মন্দার মধ্যেও আকিজ সিরামিকসের নাম শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। ব্যবসা কেমন চলছে?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: আকিজ সিরামিকসের প্রতি মানুষের আস্থা আমাদের প্রেরণা। চাহিদা কিছুটা কমলেও আমরা সাপ্লাই চেইন ও গ্রাহকসেবা ঠিক রেখে কাজ করছি। আমারা এখন গ্রাহকদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছি।

খবরের কাগজ: সরকার কী করলে এই শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক। ব্যাংক ঋণের সুদ কমানো 
হোক। আমদানি প্রক্রিয়ায় ডলার যাতে আরও সহজলভ্য হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানির জন্য প্রণোদনা বাড়ানো হলে এ শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

খবরের কাগজ: আপনারা সিরামিক এক্সপো আয়োজন করতে যাচ্ছেন। এটা কি মন্দা কাটাতে সাহায্য করবে?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: নিশ্চয়ই। সিরামিক এক্সপো আমাদের দেশি পণ্য ও উদ্ভাবন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরবে। এক্সপোর মাধ্যমে রপ্তানি বাজারে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং দেশের বাজারেও একটা পজিটিভ সিগন্যাল যাবে।

খবরের কাগজ: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: আপনাকেও ধন্যবাদ।

বেশিরভাগ ট্যানারি পরিবেশবান্ধব নয়

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ পিএম
বেশিরভাগ ট্যানারি পরিবেশবান্ধব নয়
সাখাওয়াত উল্লাহ।

তৈরি পোশাকের পরই চামড়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। এই শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আছে নানা প্রতিবন্ধকতাও। প্রধান সমস্যা বেশির ভাগ ট্যানারির পরিবেশ মানসম্মত নয়। ফলে কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি বাড়ছে না। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মৃত্তিকা সাহা

খবরের কাগজ : চামড়াশিল্প নিয়ে সামগ্রিকভাবে আপনার মূল্যায়ন কী? খাতটি বর্তমানে কী অবস্থায় আছে?

সাখাওয়াত উল্লাহ: তৈরি পোশাকশিল্পের পরই চামড়া খাতটি আমাদের দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত। এটি সম্পূর্ণরূপে দেশীয় কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের মুসলিমপ্রধান দেশে কোরবানির সময় বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া সহজেই সংগ্রহযোগ্য, যেটা অন্য দেশে এত সহজলভ্য নয়। কিন্তু ২০১৭ সালে সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরের পর থেকে সমস্যা শুরু হয়েছে। এই স্থানান্তর সঠিকভাবে হয়নি।
এর প্রধান কারণ, কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র (সিটিপি) ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ আজও অসম্পূর্ণ। ফলে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও ট্যানারি মালিকরা ক্ষতির মুখে। পরিবেশগত মান (কমপ্লায়েন্স) না থাকার কারণে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা হারাচ্ছি আমরা। অথচ এই খাতে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন সম্ভব হয়।

খবরের কাগজ :  এসব সমস্যা পাঁচ বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে। সমাধান হচ্ছে না কেন?

সাখাওয়াত উল্লাহ: সরকারের এখানে কিছু করণীয় রয়েছে। সিটিপির অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করতে হবে। অনেক ট্যানারি ইতোমধ্যে পরিবেশগত মান বজায় রেখে কাজ করছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ না থাকায় গত কয়েক বছর তেমন অগ্রগতি হয়নি।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা বিষয়টি আবার তুলে ধরেছি। এর পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় মূল্যায়ন শুরু হয়েছে— কী সমস্যা আছে, কী করণীয়, সবকিছু বিশ্লেষণ করার জন্য। এটা বিগত সরকারের আমলে হয়নি।

খবরের কাগজ : ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় কাজটি অনেক আগেই শুরু হওয়ার কথা ছিল?

সাখাওয়াত উল্লাহ : হ্যাঁ, কাজটি এখন চলছে। যেহেতু এটি বড় পরিসরের একটি প্রকল্প, সেহেতু কিছুটা সময় লাগছে। হয়তো কয়েক মাস থেকে এক বছর সময় লাগতে পারে পুরো মূল্যায়ন শেষ করতে।

তাদের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেই সাভারের চামড়া শিল্পনগরীকে পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব করা সম্ভব। এর সুফল হবে বহুমাত্রিক। এখন যেখানে আমরা চামড়াজাত পণ্য ৬০-৬৫ ডলারে বিক্রি করি, সেটি ৯০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে। আমাদের কাছে এমন ক্রেতাও আছে, যারা এক থেকে দেড় বছরের উৎপাদন আগাম সংরক্ষণ করতে চায়, কিন্তু আমরা দিতে পারছি না।

খবরের কাগজ : আপনারা কি মনে করেন, সরকার যদি এই পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলোর সমাধান করে, তা হলে খাতটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

সাখাওয়াত উল্লাহ : অবশ্যই। যদি সিটিপি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ সম্পন্ন হয়, তা হলে আগামী ১-১.৫ বছরের মধ্যে ২০-২৫টি ট্যানারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। ফলে আমাদের রপ্তানি বাজার অনেকটা সম্প্রসারিত হবে। বর্তমানে যে তিনটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানে বিক্রি করছে, তারা কিন্তু অনেক ভালো দাম পাচ্ছে। সেই আলোকে এই আশা করাই যায়। 

এই শিল্পের সঙ্গে পাঁচ লাখের মতো শ্রমিক ও অসংখ্য ব্যবসায়ী জড়িত। এই খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে এখনই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। গার্মেন্টসের মতো বড় না হলেও এর পরই চামড়াশিল্পের স্থান হতে পারে।

খবরের কাগজ : রপ্তানির ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রধান প্রতিবন্ধকতা কী?

সাখাওয়াত উল্লাহ : একমাত্র প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো আন্তর্জাতিক মানের সনদপত্রের অভাব। আমাদের বেশিরভাগ ট্যানারি পরিবেশগত মানে উত্তীর্ণ নয়। এটাই রপ্তানির প্রধান বাধা।

খবরের কাগজ : আমরা এখন কোন ধরনের চামড়া বেশি রপ্তানি করি?

সাখাওয়াত উল্লাহ : আমরা প্রধানত আধা-প্রক্রিয়াজাত (ওয়েট ব্লু) ও প্রস্তুত চামড়া (ফিনিশড লেদার) রপ্তানি করি।

খবরের কাগজ : প্রস্তুতকৃত চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে আমরা পিছিয়ে আছি কেন?

সাখাওয়াত উল্লাহ : যারা পণ্য প্রস্তুত করে যেমন জুতা বা ব্যাগ কারখানা, তারাও শতভাগ দেশীয় চামড়া ব্যবহার করতে পারে না। কারণ আমাদের চামড়া এখনো কমপ্লায়েন্স মানে উত্তীর্ণ নয়। তাই তাদের চামড়া আমদানি করতে হয়।

খবরের কাগজ : এ্যাপেক্স বা বাটার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও কি আমদানি করা চামড়া ব্যবহার করে?

সাখাওয়াত উল্লাহ: না, এ্যাপেক্স দেশীয় চামড়া ব্যবহার করে এবং মূলত দেশীয় বাজারের জন্যই পণ্য তৈরি করে। তবে যারা রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান, তারা বাধ্য হয়েই বিদেশি চামড়া ব্যবহার করছে।

খবরের কাগজ : বাটা কি রপ্তানি করে?

সাখাওয়াত উল্লাহ: বাটা বাংলাদেশে উৎপাদন করে মূলত দেশীয় বাজারের জন্য। রপ্তানির ক্ষেত্রে তারা আমদানি করা চামড়া ব্যবহার করে, তবে রপ্তানির পরিমাণ খুব সীমিত।

খবরের কাগজ : আমাদের দেশের কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় বাজার তো বাংলাদেশ নিজেই। তা হলে আমরা এটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি না কেন?

সাখাওয়াত উল্লাহ : হ্যাঁ, এটা আমাদের জন্য বিশাল সুযোগ- আশীর্বাদ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এই সম্পদ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি না।

খবরের কাগজ : অনেকের ধারণা, আমাদের কাঁচা চামড়া ভারতে পাচার হয়। এটা কি সত্য?

সাখাওয়াত উল্লাহ : না, ব্যাপকভাবে পাচার হয় না। সীমিত কিছু পরিমাণ যেতে পারে, কিন্তু বড় আকারে চামড়া ভারতে পাচার হচ্ছে না।

খবরের কাগজ : তা হলে কী হচ্ছে? চামড়াগুলো কি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?

সাখাওয়াত উল্লাহ : হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই চামড়া সংগ্রহ হয়; কিন্তু ঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত বা ব্যবহৃত না হওয়ায় শিল্পবঞ্চিত হচ্ছে, ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

খবরের কাগজ : সরকার যদি এক বিলিয়নের বদলে ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্য নির্ধারণ করে, সেটা কি সম্ভব?

সাখাওয়াত উল্লাহ : যদি সাভার শিল্পনগরীকে পরিবেশগত মানে উন্নীত করা যায়, তা হলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি কঠিন  নয়।

 

প্রবৃদ্ধির জন্য এসএমই খাতে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫২ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৪ এএম
প্রবৃদ্ধির জন্য এসএমই খাতে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে
মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউল হাসান

মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউল হাসান দেশের একজন অভিজ্ঞ ব্যাংকার। এই খাতে তার অভিজ্ঞতা ৪১ বছরেরও বেশি। তিনি ২০১৪ সাল থেকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন। বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে ব্যাংকটির এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি ২৬ বছর অতিক্রম করেছে ব্যাংকটি। এই দীর্ঘ যাত্রার পথপরিক্রমা, সমস্যা ও সম্ভাবনাসহ ব্যাংক খাতের নানা দিক নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মৃত্তিকা সাহা। 

খবরের কাগজ: মার্কেন্টাইল ব্যাংকের গত ২৬ বছরের যাত্রা কেমন ছিল? এ সময়ে ব্যাংকটির বড় অর্জন কী?
মতিউল হাসান: আমাদের ব্যাংক অনেক খাতেই গত ২৬ বছরে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। ১৫২টি শাখা, ৪৭টি উপশাখা, ১৮৮টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট, ২০০টি এটিএম বুথ, ৪টি সিআরএমসহ বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে সারা দেশে গ্রাহকদের পরিপূর্ণ সেবা দিতে পারছে। এ ছাড়া ৩টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি রয়েছে। ইউকে এক্সচেঞ্জ হাউস সাফল্যের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের ব্যাংকে ইসলামী পরিসেবা চালু আছে। ৪৫টি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো আছে। দিলকুশায় ১টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং শাখা আছে। প্রায় ১৫ লাখ গ্রাহক, ৩৪ হাজার কোটি টাকার ডিপোজিট, ৩০ হাজার কোটি টাকার অ্যাডভান্সসহ মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটের আকার এখন ৪৫ হাজার কোটি টাকা। গত ২৬ বছরে ব্যাংকিং খাতে রক্তক্ষরণের মুহূর্তে গ্রাহকের আমানতের আস্থা ধরে রাখতে পেরেছে আমাদের ব্যাংক। এটাই গত ২৬ বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।

খবরের কাগজ: দেশের ব্যাংকিং খাতে সংকট চলছে। এ অবস্থায় আপনাদের ব্যাংক কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে?
মতিউল হাসান: ব্যাংকিং খাতে সংকট চলছে, এটা সত্যি। এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংক সুদৃঢ় অবস্থানে আছে। আমরা গ্রাহকের আমানতের দাবি পরিপূর্ণভাবে পালন করতে পেরেছি। প্রায় ২০০ শাখা-উপশাখায় গত দুই যুগে আমানতকারীর কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। 

খবরের কাগজ: কর্পোরেট থেকে বের হয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক গত কয়েক বছর সিএমএসএমই, কৃষিসহ ছোট ঋণে গুরুত্ব দিয়েছে। এক্ষেত্রে অগ্রগতি কতটুকু? 
মতিউল হাসান: গ্রাহকের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক পণ্য ও সেবা, যেমন- চাকা, নারী উদ্যোক্তা ঋণ- অনন্যা, সমৃদ্ধি, মৌসুমি, সঞ্চালক, উন্মেষ, উদয়ন, কৃষি ঋণ- নবান্ন ইত্যাদি চালু করেছে। এসএমই এবং কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বেড়েছে ১২১ দশমিক ৫ এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ২৫ শতাংশ এসএমই খাতে বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি খাতে বিতরণের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যে লক্ষ্য দিয়েছিল, মার্কেন্টাইল ব্যাংক তার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে।

খবরের কাগজ: দেশে বড় আকারের বিনিয়োগে ধীরগতি চলছে। এ অবস্থায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সিএমএসএমই খাতে বাড়তি মনোযোগ ও সহায়তার প্রয়োজন আছে কী? 
মতিউল হাসান: কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বড় আকারের বিনিয়োগের চেয়ে এমএসএমই খাতের বিনিয়োগ বেশি ভূমিকা পালন করে। এই খাতে দক্ষ, কমদক্ষ বা অদক্ষ শ্রমিকেরও কর্মসংস্থান সম্ভব। দেশের শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই এমএসএমই খাতে হয়। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়লে আয় বাড়ে, আয় বাড়লে সামষ্টিক অর্থনীতিতে একটা গুণিতক প্রভাব কাজ করে যা প্রবৃদ্ধি বাড়ায়। তবে ফরওয়ার্ড লিংকেজ হিসাবে এসএমই খাতের বিকাশের জন্য বড় আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের মতো শ্রমঘন দেশের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এমএসএমই খাতকে একটা অপরিহার্য খাত বলা যেতে পারে। তাই এই খাতে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের দেশে সিএমএসএমই খাতে অর্থায়ন এখনো ব্যাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত অনুপাত অর্জন করতে পারেনি। এ খাতে আরও অর্থায়নের সুযোগ রয়েছে। 

খবরের কাগজ: এমএসএমই খাতের অনেক উদ্যোক্তা এখনো ব্যাংকঋণ পাচ্ছেন না। তাদের জন্য ঋণের সুবিধা নিশ্চিত করতে আপনাদের ভাবনা বা উদ্যোগ কেমন?
মতিউল হাসান: পর্যাপ্ত তথ্য এবং সহায়ক জামানতের অভাব এমএসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ সুবিধার বাইরে থাকার অন্যতম কারণ। তথ্য সরবারহের বিষয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারও কিছু ভূমিকা পালন করতে পারে। জামানতের বিষয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ছাড়া ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের মতো ঝুঁকি মোকাবিলায় আরও কিছু স্কিম চালু করা যেতে পারে যা জামানতের বিকল্প হিসাবে কাজ করবে। তবে এক্ষেত্রে গ্রাহকদেরও ভূমিকা রয়েছে। ঋণ পরিশোধে গ্রাহকদের আরও নিষ্ঠাবান হতে হবে, যা তাদেরকে পরবর্তী ঋণ প্রাপ্তিতে সহয়তা করবে।

খবরের কাগজ: এ মুহূর্তে ব্যাংকের কোন দিকগুলোর অগ্রগতিকে বেশি প্রধান্য দিচ্ছেন?
মতিউল হাসান: ব্যাংকের মূল লক্ষ্য হলো দেশের আপামর জনসাধারণকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনে দেশের অর্থনীতির গতিকে বেগবান করা। সে লক্ষ্যে শুরু থেকেই আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করছি। মার্কেন্টাইল ব্যাংককে আরও এগিয়ে নিতে আমাদের যেসব নতুন পরিকল্পনা রয়েছে তার মধ্যে অগ্রাধিকার খাতগুলো হচ্ছে- শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় জোরদার করা। আর্থিক খাতে বিদ্যমান ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংক তহবিল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। অত্যাধুনিক ডিজিটাল পণ্য ও সেবার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা সহজীকরণ করা। ঋণ বিতরণে কৃষি ও এসএমই খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং প্রান্তিক এলাকায় উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা।

খবরের কাগজ: খেলাপি ঋণের উচ্চহার দেশের ব্যাংক খাতের বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অবস্থা কেমন? 
মতিউল হাসান: দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জের কারণে ২০২১ সাল থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়েছে। এর প্রভাবে কয়েক বছর ধরেই ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকও এ ঝুঁকি থেকে শতভাগ মুক্ত নয়। তবে আমরা এ ঝুঁকি মোকাবিলার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে আমরা শতভাগ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে পেরেছি। আমাদের ব্যাংকের কোনো মূলধন ঘাটতি নেই। এতে ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। খেলাপি ঋণকে ভালো ঋণে রূপান্তর করতে আমরা বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করেছি। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে ঋণ আদায়, পুনঃতফসিলীকরণের মাধ্যমে ঋণের গুণগত মান ভালো রাখার লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করছি। 

খবরের কাগজ: মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসির ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলেন।
মতিউল হাসান: মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং যাত্রা শুরু করে ২০২০ সালের ২৯ জুন, ১০টি ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডোর মাধ্যমে। ‘তাক্বওয়া’ নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে যার স্লোগানটি হচ্ছে, ‘ধর্মীয় আস্থায় ব্যাংকিং’। ‘মার্কেন্টাইল ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংকিং’-এর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য দেশের খ্যাতনামা শরীয়াহ্ স্কলারদের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বতন্ত্র শরীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি রয়েছে। উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করার মাধ্যমে গ্রাহকদের ভালো সাড়া পাওয়ায় আমরা বর্তমানে একটি পূণার্ঙ্গ ‘ইসলামিক ব্যাংকিং শাখা’ ও ৪৫টি ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডোর মাধ্যমে ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছি। চট্টগ্রামে আরও একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক ব্যাংকিং শাখা (খুলশি শাখা) চালু হতে যাচ্ছে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বর্তমানে এই শাখাটিতে প্রচলিত ব্যাংকিং থেকে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তা ছাড়া ঢাকার দিলকুশায় অবস্থিত আমাদের পূণার্ঙ্গ ইসলামিক ব্যাংকিং শাখার মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে সারা দেশে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সকল শাখা ও উপ-শাখায় ইসলামিক ব্যাংকিং সার্ভিস ডেস্কের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণ করেছি। বর্তমানে ১৫২টি শাখা ও ৪৭টি উপশাখার মাধ্যমে আমরা ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছি। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খবরের কাগজ: মার্কেন্টাইল ব্যাংক ঘিরে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মতিউল হাসান: মার্কেন্টাইল ব্যাংকের স্লোগান হলো ‘বাংলার ব্যাংক’। গত ২৬ বছরে ব্যাংকটি ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়াতে পেরেছে। দীর্ঘ এ সময়ে ব্যাংকটি গ্রাহকদের আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক হতে পেরেছে। প্রযুক্তিতে মার্কেন্টাইল ব্যাংক বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে। এ প্রযুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে আমরা ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের প্রোডাক্ট চালু করতে পারব। নিরবচ্ছিন্ন আইটি সার্ভিস নিশ্চিত করতে ধানমন্ডিতে নিজস্ব ভবনে এমবিএল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ডিজিটাল অ্যাপ ‘রেইনবো’ দিয়ে আমরা গ্রাহকদের ১৬টি সেবা দিতে পারি, যা বাংলাদেশে শীর্ষ ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর সেবার সমকক্ষ। আমাদের পরিকল্পনা হলো সারা দেশের আনাচে-কানাচে তথা সব এলাকার মানুষ যেন ব্যাংকিং সেবা পায় সেই প্রচেষ্টা চালু রাখা। এটি এ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই স্বপ্ন ছিল। আগামীতে তার সফল বাস্তবায়ন হবে। ২০২৫ সালের মধ্যেই আমরা পুরোপুরি সেন্ট্রালাইজেশন মডেলে নিয়ে আসতে চাই।

খবরের কাগজ: মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আমানতকারীসহ গ্রাহকদের উদ্দেশে আপনার বক্তব্য কি? 
মতিউল হাসান: ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমরা আশাবাদী। আমাদের কর্মকৌশলের মূলে থাকবে সর্বাধুনিক সেবা নিশ্চিত করা, গ্রাহককেন্দ্রিকতা, পরিচালন দক্ষতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল রূপান্তর। দক্ষ মানবসম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যমে ঝুঁকি ও মুনাফার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সুদৃঢ় অবস্থান আরও সুসংহত করার প্রয়াস চালিয়ে যাব। এ লক্ষ্যে ঋণ ও অগ্রিমের ক্ষেত্র বিকেন্দ্রীকরণ নীতি অনুসরণ অব্যাহত থাকবে। তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক সুষম আমানত কাঠামো মজবুত করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে রিটেইল আমানত বৃদ্ধির মাধ্যমে করপোরেট আমানতের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোয় জোর দেওয়া হবে। আমরা ব্যাংকের যেসব ব্যয় নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছিলাম, তা কমিয়েছি এবং ফি ও কমিশনভিত্তিক ব্যবসার ওপর জোর দিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, শুরু থেকেই মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাফল্য ও প্রবৃদ্ধির পেছনে গ্রাহকই অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন এবং সামনের দিনগুলোয় তাদের এ সহযোগিতা ও আস্থা অব্যাহত থাকবে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মূল স্লোগান হচ্ছে ‘বাংলার ব্যাংক’। বাংলার আপামর জনসাধারণ, আমানতকারী ও ব্যবসায়ীদের আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিতে চাই।

সাক্ষাৎকারে অনুপ কুমার সেন আমদানি পর্যায়ে চূড়ান্ত ভ্যাট নিলে দাম কমবে

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম
আমদানি পর্যায়ে চূড়ান্ত ভ্যাট নিলে দাম কমবে
অনুপ কুমার সেন

দেশে বাসাবাড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কমায় এলপিজির (তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এটি সাধারণত রান্নার কাজে এবং যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও অভিযোগ রয়েছে এই গ্যাসের দাম অনেক বেশি। এলপিজি গ্যাসের বাজার, বর্তমান অবস্থা, সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন ওরিয়ন গ্যাস লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার ইঞ্জিনিয়ার অনুপ কুমার সেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মৃত্তিকা সাহা

খবরের কাগজ: বর্তমানে বাংলাদেশের এলপি গ্যাসের বাজার সম্পর্কে কিছু বলুন।
অনুপ কুমার সেন: বাংলাদেশের বাজারে এলপিজির চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ২৪টি কোম্পানি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এলপিজি বাজারজাতকরণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১২-১৩টি কোম্পানি প্রতি মাসে এলপিজি আমদানি করে থাকে। বিভিন্ন কোম্পানির বর্তমানে গ্যাসের সিলিন্ডার বাজারে রয়েছে প্রায় ৪ দশমিক ৫ কোটি, যেখানে অধিকাংশই হচ্ছে ১২ কেজির সিলিন্ডার। বর্তমানে বাজারে প্রতি মাসে ১ লাখ ৪০ হাজার টন এলপিজির চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক গ্যাসের তীব্র সংকট থাকায় বর্তমানে শিল্প-কারখানা এবং মোটরযানে এলপিজির ব্যবহার ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

খবরের কাগজ: এ খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী বলে আপনি মনে করেন?
অনুপ কুমার সেন: দুর্ঘটনা রোধে অবৈধ ক্রস ফিলিং বন্ধ করা, অটো গ্যাস স্টেশন থেকে সিলিন্ডার গ্যাস ফিলিং, এলপিজি সিলিন্ডার কেটে ফেলা, অ-অনুমোদিত স্যাটেলাইট ফিলিং স্টেশন থেকে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা সুবিধার ব্যবস্থা না নিয়ে সিলিন্ডার ফিলিং করা ইত্যাদি, রেটিকুলেশন পদ্ধতিতে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সিমলেস এসএস পাইপের পরিবর্তে জিআই পাইপ ব্যবহার করা। এসবের ফলে অগ্নি দুর্ঘটনার সুযোগ থাকে এবং ফলে অনেক প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে।

খবরের কাগজ: সুলভ মূল্যে এলপি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের কোন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
অনুপ কুমার সেন: এলপিজি সরবরাহ প্রায় পুরোপুরি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান বাজারের চাহিদা থেকে আরও বেশি পরিমাণে সরবরাহ করার সক্ষমতা ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। তাই সুলভ মূল্যে বাজারে এলপিজি সরবরাহ করতে গেলে (বিইআরসি, বিপিসি, বিএসটিআই, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, কারখানা পরিদর্শক, অগ্নিনির্বাপক অধিদপ্তর) বাৎসরিক ফি কমাতে হবে। এলপিজি যেহেতু পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো টেস্টিংয়ের দরকার নেই। এটি অযথাই অতিরিক্ত খরচ যোগ করে, যা ভোক্তার ওপর পড়ে। ভ্যাটের টাকা আমদানি মূল্যের ওপর অগ্রিম নিয়ে নিলে সরকার ও ভোক্তা উভয় লাভবান হবে। 

খবরের কাগজ: আপনার প্রতিষ্ঠান কত বছর ধরে এলপি গ্যাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কবে থেকে শুরু হয়?
অনুপ কুমার সেন: ওরিয়ন গ্যাস লিমিটেড ২০১৮ সালে এলপি গ্যাস ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে আমরা প্রায় আট বছর ধরে সুনামের সঙ্গে এই ব্যবসায় জড়িত আছি।

খবরের কাগজ: বর্তমান নীতিমালা কি এলপি গ্যাস ব্যবসার জন্য সহায়ক?
অনুপ কুমার সেন: বর্তমান নীতিমালাকে আরও ব্যবসাবান্ধব করতে হবে এবং এলপিজি ব্যবহারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অ্যাক্সেসরিজগুলোর মানদণ্ড নির্ধারিত করে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এসব ব্যাপার আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। কিন্তু বাস্তব নীতিমালা ও প্রয়োগ এর কোনোটাই এখনো পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে হয়নি।

খবরের কাগজ: এ খাতের বিকাশে সরকারের কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত।
অনুপ কুমার সেন: আমরা সবাই জানি এলপি গ্যাস সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর জ্বালানি, যা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি করছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে এলপিজির আমদানির ক্ষেত্রে প্রাধান্যের নির্দেশ দেওয়া, মোংলা পোর্ট চ্যানেল নিয়মিত ড্রেজিং পরিচালনা করতে হবে। রাতে এসটিএস অপারেশন চালু রাখা এবং মোংলা পোর্টের নিজস্ব অর্থায়নে এলপিজি অপারেটরদের জেটি সংলগ্ন জায়গায় ড্রাফট সার্ভে করতে হবে। বর্তমানে এর খরচ প্রতি ছয় মাস অন্তর অপারেটরদের নিজ খরচে ড্রাফট সার্ভে করতে হয়। এলপিজি ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে একক ঋণ গ্রহীতার লিমিট বৃদ্ধি করা এবং প্রকল্প ঋণের পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হবে।

খবরের কাগজ: বর্তমানে এলপিজি খাতে ২৫-৩০টি কোম্পানি কাজ করছে। ছোট বাজারে এতগুলো কোম্পানি টিকে থাকতে পারবে?
অনুপ কুমার সেন: এলপিজি ব্যবসা মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চালিত হলেও এলপিজি বাজারমূল্য বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত। বর্তমান বিইআরসি প্রাইস ফর্মুলা ২০২১ সালের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ধারিত। কিন্তু এর ফলে মূল্যস্ফীতিতে যে পরিবর্তন হয়েছে তার কোনো প্রতিফলন এই প্রাইসের মধ্যে নেই। তাই নির্ধারিত প্রাইসে বিক্রি করে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। তাই বিইআরসি যদি প্রাইস পুনর্মূল্যায়ন না করে তবে এই ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে পারবে না। 

খবরের কাগজ: সম্প্রতি এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে দুর্ঘটনা ও আগুন লাগার ঘটনা বেশি ঘটছে। এর কারণ কী? দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে?
অনুপ কুমার সেন: এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বিভিন্ন কারণে ঘটে থাকে। প্রধান কারণ হিসেবে দেখা গেছে নিম্নমানের অথবা পানির লাইনের হোস পাইপ ব্যবহার করায় লিকেজ থেকে গ্যাসের দুর্ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। এ ছাড়া অনেক সময় ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটররা সিলিন্ডার যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করার কারণে সিলিন্ডার ফেটে যেতে পারে। বদ্ধ স্থানে সিলিন্ডার রেখে ব্যবহার, গ্যাসের সাপ্লাই লাইনের পাইপিং শতভাগ লিক প্রুফ না করা, অনিরাপদ পরিবেশে ক্রস ফিলিং করা- এসব কারণেও সিলিন্ডারে গ্যাস বের হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো অবশ্যই প্রতিপালন করতে হবে। এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের সঙ্গে সঠিক হোস পাইপ ও রেগুলেটর ব্যবহার করতে হবে। খোলা ও নিরাপদ স্থানে রেখে সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হবে। ক্রস ফিলিং প্রতিরোধে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে, এলপিজি অপারেটরদের সহযোগিতা করতে হবে। এলপিজি ব্যবহারের পাইপলাইন শতভাগ লিক প্রুফ হয়েছে কি না সেটা নিশ্চিত করতে হবে। জনসচেতনতা তৈরিতে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও এলপিজি কোম্পানি বিইআরসি, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে ক্যাম্পেইন করতে হবে। 

খবরের কাগজ: এলপিজি গ্যাসের কাঁচামাল আমদানি সহজলভ্য করতে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুপ কুমার সেন: এলপিজি গ্যাস বলতে বোঝায়, প্রোপেন এবং বিউটেনের মিশ্রণ। আমরা বর্তমানে এরামকো কর্তৃক নির্ধারিত প্রাইসে গ্যাস কিনি। কিন্তু বড় জাহাজে করে সরাসরি অপারেটরদের টার্মিনালে নিয়ে আসা যেত তবে এর খরচ অনেক কম হতো। তদুপরি রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যদি ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু থাকত তবে এলপি গ্যাস বর্তমানের তুলনায় কম দামে কেনা যেত। 

খবরের কাগজ: এলপিজি গ্যাসের দাম অনেক বেশি। গ্যাসের দাম কমিয়ে আনতে হলে সরকারের ভূমিকা কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন।
অনুপ কুমার সেন: বর্তমানে এলপিজির অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। সেক্ষেত্রে এর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের অনেক ভূমিকা অবশ্যই আছে। সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাটের পরিমাণ কমিয়ে আনা যেতে পারে এবং এটি আমদানি মূল্যের ওপর আরোপিত করলে এর কিছুটা সুফল ভোক্তা পেতে পারে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটি দেশের সঙ্গে এক্সক্লুসিভ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক চুক্তি করে এলপিজি ক্রয়মূল্য এবং জাহাজ ভাড়া কমিয়ে আনার ব্যাপারে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে সরকার সাহায্য করতে পারে। আমাদের প্রতি বছর সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য অনেক টাকা দিতে হয়। যার প্রভাব ভোক্তার ওপর পড়ে। 

খবরের কাগজ: বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রতি ভেজাল এলপিজি গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভেজাল প্রতিরোধে আপনার মতামত কী?
অনুপ কুমার সেন: ভেজাল এলপিজি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। মূলত ভেজাল এলপিজি এবং মাপে কম দেওয়ার ক্ষেত্রে আসল কারণ বিভিন্ন অবৈধ ক্রস ফিলিং কারখানা এবং গুটিকয়েক অটোগ্যাস স্টেশন। এসব বন্ধ করা এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে যেন আর না করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে ক্রস ফিলিং, সিলিন্ডার কাটা, অটো গ্যাস স্টেশন থেকে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার গ্যাস ভর্তি করে বাজারজাত করা এসব ব্যাপারে সরাসরি কোনো আইনের ধারা নেই। ফলে আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে অবৈধ কাজগুলো বন্ধ করতে চাইলেও প্রশাসনের কাঙ্ক্ষিত সহায়তা পাওয়া যায় না।

সাক্ষাৎকারে আহসান হাবিব হিরক আর কোনো নতুন কোম্পানি নয়

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১১:১৭ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫, ১১:২২ এএম
আর কোনো নতুন কোম্পানি নয়
আহসান হাবিব হিরক

বাংলাদেশে এলপি গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রসার ঘটেছে এ শিল্পের। উৎপাদন পর্যায়ে অতিরিক্ত ভ্যাট, উচ্চ সুদে ঋণ, কাঁচামালের সংকটসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত এই শিল্প। এলপি গ্যাসের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন গ্রিন টাউন এলপি গ্যাস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার আহসান হাবিব হিরক। নিচে তার সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।

খবরের কাগজ : বর্তমানে বাংলাদেশের এলপি গ্যাসের বাজার সম্পর্কে কিছু বলুন।
আহসান হাবিব হিরক : বর্তমান বাংলাদেশে এলপি গ্যাসের বাজার ১২ কেজি, ৩৫ কেজি এবং ৪৫ কেজি সিলিন্ডারে গৃস্থালিতে, হোটেলে ব্যবহৃত এবং অটো গ্যাস ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার সহ মাসে প্রায় ১২৫,০০০ মেট্রিক টন এলপি গ্যাসের বাজার আছে।

খবরের কাগজ : এ খাতে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী বলে আপনি মনে করেন?
আহসান হাবিব হিরক : বর্তমানে বাংলাদেশে এলপিজি খাতের মূল চ্যালেঞ্জ হলো সিলিন্ডার ভর্তুকি মূলে বিক্রয় করতে হয় এবং সিলিন্ডার কেটে অসৎ ব্যবসায়ীরা স্ক্র্যাপ করে বেশি মুনাফার আশায় বিক্রি করা হয়। 

খবরের কাগজ : সুলভ মূল্যে এলপি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারে কি ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
আহসান হাবিব হিরক : আমি মনে করি যে, সরকার একটা সহজ নির্দেশনা জারি করবে এই মর্মে যে, বিদ্যমান এলপি গ্যাস কোম্পানিগুলোকে সহজ শর্তে ব্যাংক যেন ঋণ প্রদান করে এবং আর যেন নতুন কোনো কোম্পানিকে এলপি গ্যাসের অপারেটরের লাইসেন্স প্রদান না করে।

খবরের কাগজ : আপনার প্রতিষ্ঠান কত বছর ধরে এলপি গ্যাস ব্যবসার সঙ্গে জরিত। কবে থেকে শুরু?
আহসান হাবিব হিরক : আমার প্রতিষ্ঠান গ্রিন টাউন এলপি গ্যাস লিমিটেড প্রায় কম-বেশি দশ বছর হলে এলপি গ্যাসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে।

খবরের কাগজ : বর্তমান নীতিমালা কী এলপি গ্যাস ব্যবসার জন্য সহায়ক?
আহসান হাবিব হিরক : মুটেই না, কারণ এলপি গ্যাসের সেলস ভ্যাট অনেক বেশি এবং কিছু ক্ষেত্রে এলপি গ্যাসের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো অহেতুক হয়রানি করে।

খবরের কাগজ : এ খাতের বিকাশে সরকারের কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত।
আহসান হাবিব হিরক : এ খাতে বিকাশে সরকারের করণীয় হচ্ছে, কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা, অধিক বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, সেলস ভ্যাট কমানো। কারণ এলপি গ্যাস ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতি থেকে দেশ রক্ষা পায়, গাছ কাটা কম হয়।

খবরের কাগজ : বর্তমানে এলপিজি খাতে ২৫-৩০টি কোম্পানি কাজ করছে। ছোট বাজারে এতগুলো কোম্পানি টিকে থাকতে পারবে?
আহসান হাবিব হিরক : না, পারবে না। বর্তমানে প্রায় ৫০ শতাংশ এলপিজি কোম্পানি রুগ্ন শিল্পের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতায় এলসি সঠিক সময়ে না হওয়া, সিলিন্ডার কেটে ফেলা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতা। ক্রস ফিলিং চক্রকে সরকার আইনের আওতায় না নিয়ে আসা।

খবরের কাগজ : সম্প্রতি এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে দুর্ঘটনা ও আগুন লাগার ঘটনা বেশি ঘটছে। এর কারণ কি?
আহসান হাবিব হিরক : কারণগুলো হচ্ছে, ব্যবহারকারীদের যথাযত সচেতন না করা বা প্রশিক্ষণ না দেওয়া। মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা না দেওয়া। আমার মনে হয় ব্যবহারকারীকে বিক্রয়ের সময় বলে দিতে হবে ব্যবহার করার পর রেগুলেটর খুলে বা বন্ধ করে রাখতে হবে, বাতাস চলাচল যাতে পর্যাপ্ত হয় এমন জায়গায় রাখতে হবে। বদ্ধ ঘরে সিলিন্ডার রাখা যাবে না, চুলা ও পাইপের দিকে নজর দিতে হবে যেন লিকেজ না থাকে।

খবরের কাগজ : এলপিজি গ্যাসের কাঁচামাল আমদানি সহজলভ্য করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে?
আহসান হাবিব হিরক : কাঁচামাল আমদানি সহজলভ্যতা করতে হলে এলসির ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সংশ্লিষ্ট এলপি গ্যাস কোম্পানিকে সহজ শর্তে এলসি খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে এলপি গ্যাস কোম্পানিগুলো রুগ্ন শিল্পে পরিণত না হয়।

খবরের কাগজ : এলপিজি গ্যাসের দাম অনেক বেশি। গ্যাসের দাম কমিয়ে আনতে হলে সরকারের ভূমিকা কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
আহসান হাবিব হিরক : আসলে সত্য কথা হলো, বিশ্বব্যাপী (সিপি) এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে সৌদি আরামকো নামক প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকারের কোনো হাত নাই। তবে সরকার যদি সেলস ভ্যাট কমায় তাহলে অনেকটা দাম কমে আসবে।

খবরের কাগজ : বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রতি ভেজাল এলপিজি গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভেজাল প্রতিরোধে আপনার মতামত কী? 
আহসান হাবিব হিরক : বর্তমানে বিদ্যমান এলপি গ্যাস কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ হুমকির মধ্যে ফেলছে ক্রস ফিলিং চক্র এবং সিলিন্ডার কেটে অসৎ ব্যবসায়িরা বেশি মুনাফার লোভে এই শিল্প খাতকে প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সরকার দৃষ্টিপাত না করলে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এভাবে চলতে থাকলে এলপি গ্যাস কোম্পানিগুলোর ধ্বংস অনিবার্য।

সাক্ষাৎকারে কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান ব্যবসা করি দেশ ও মানুষের জন্য

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ১১:৫৮ এএম
আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ১২:০৮ পিএম
ব্যবসা করি দেশ ও মানুষের জন্য
কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান

কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, সততা, কথা দিয়ে কথা রাখার অসাধারণ গুণাবলি রয়েছে কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমানের। হাঁটিহাঁটি পা পা করে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কৃষি খাতের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। সমাজসেবী হিসেবেও পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বামা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ব্যবসা করেন দেশের জন্য, মানুষের জন্য। গড়ে তুলেছেন ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার গ্রুপ লিমিটেড ওয়ান ফার্মা লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠান। তিনি মনে করেন, ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা, সমৃদ্ধি ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনীর কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান তার এগিয়ে চলার গল্প। জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীদের এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কী পরিকল্পনা নিয়েছেন। 

খবরের কাগজ: নিজের ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি দেশের মানুষের জন্য, বেসরকারি খাতের জন্য এরই মধ্যে অনেক কিছু করেছেন। ভবিষ্যতের জন্য আরও অনেক কিছু করতে চান। এ বিষয়ে কিছু বলেন।
মোস্তাফিজুর রহমান: পড়ালেখা শেষ না করতেই জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যবসা শুরু করেছি। কঠোর পরিশ্রম করেছি। অনেক বাধা এসেছে, হার মানিনি। নতুন উদ্যমে বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে চলেছি। ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। বেসরকারি খাতের বিকাশে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের মুখপাত্র হয়ে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে। আমি মনে করি, এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের জন্য, বেসরকারি খাতের জন্য অনেক কিছু করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী যোগ্য নেতৃত্ব। এফবিসিসিআইকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারলে দেশের সামগ্রীক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমি বেসরকারি খাতের বিকাশে ভূমিকা রাখতে চাই। এ জন্য এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী।  

খবরের কাগজ: এফবিসিসিআইকে আপনি কেমন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান? 
মোস্তাফিজুর রহমান: দেশের অর্থনীতির বিকাশে এফবিসিসিআইয়ের ভূমিকা বাড়াতে হবে। এফবিসিসিআইকে গতিশীল করা সম্ভব হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। বেসরকারি খাত গতিশীল হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। সরকারের অর্থসংকট কমবে। দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গতিশীল হবে। আমি এফবিসিআইয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই। 

খবরের কাগজ: আপনি একই সঙ্গে ওষুধ শিল্প ও কৃষি খাতের ব্যবসায়ে জড়িত। এই খাতের উন্নয়নের কীভাবে ভূমিকা রাখতে চান? 
মোস্তাফিজুর রহমান: ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ ও অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের উন্নয়নে নীতি সহায়তা দরকার। এলডিসি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে ফার্মাসিউটিক্যাল ও অ্যাগ্রো ক্যামিক্যাল কৃষি রসায়ন শিল্প (কীটনাশক)- দুই খাতেরই গুরুত্ব বাড়াতে হবে। এলডিসি সুবিধা প্রত্যাহার হলে এ দুই খাত কী ধরনের সমস্যা পড়বে, তা চিহ্নিত করে এর সমাধান করতে হবে। এলডিসি সুবিধা না থাকলে কোনো কোম্পানি যেন দুই খাতে পেটেন্ট সুবিধার অপব্যবহার করে একচেটিয়া ব্যবসা করতে না পারে, তার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। বেসরকারি খাতকেও সহযোগিতা করতে হবে। এখন দেশের ওষুধ খাতের ব্যবসা প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার। ১৬০টির মতো দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আমেরিকা, জাপান, জার্মানির মতো উন্নত দেশও আছে এ তালিকায়। এখনই ওষুধ ও কৃষি খাতের উন্নয়নে নজর দিলে অনেক ধরনের প্রতিকূলতা এড়ানো সম্ভব হবে। 

খবরের কাগজ: কৃষি রসায়ন শিল্পের অন্যতম সমস্যা কী?
মোস্তাফিজুর রহমান: কৃষি রসায়ন শিল্পের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো বালাইনাশকশিল্প। দেশীয় বালাইনাশকশিল্প বিকাশে বিদ্যমান বিভিন্ন বাধা যেমন- সোর্স উন্মুক্তকরণ, কাঁচামালের আমদানি ও নিবন্ধন নবায়ন, সালফার আমদানি, এলসি খোলা, কাঁচামাল উৎপাদন, পেটেন্ট স্বত্ব নিবন্ধনের সরকারি ফি কমানো ও নবায়নের সময় বৃদ্ধি। এসব সমস্যা দূর করতে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। 

খবরের কাগজ: এসব ব্যবসা এগিয়ে নিতে আপনার আরও কী পরামর্শ আছে?
মোস্তাফিজুর রহমান: এনবিআরের রেকর্ড অনুযায়ী বাংলাদেশে গত বছর প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন কীটনাশক আমদানি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ফিনিশড না হয়ে শুধু এ খাতের কাঁচামাল আমদানি করত, তাহলে ১ লাখ টনের পরিবর্তে ১৫ থেকে ২০ টন আমদানি করলেই হতো। এ হিসাব আমলে এনে সরকারকে কাঁচামাল আমদানিতে আরও সুবিধা দিতে হবে। 

খবরের কাগজ: দেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের ভূমিকা কেমন? এ ভূমিকা বাড়াতে আপনার পরামর্শ কী?
মোস্তাফিজুর রহমান: কৃষি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি প্রদানের উপকরণ। দেশের অর্থনীতি বহুলাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের শ্রমশক্তি গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩ শতাংশের বেশি। কৃষির উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। কৃষি আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তাই সরকারকে বাজেটে কৃষি খাতের বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।

খবরের কাগজ: অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে আপনি আরও কী বলবেন? 
মোস্তাফিজুর রহমান: বর্তমানে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, জনসংখ্যা বাড়ছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সরকারকে কৃষির উন্নয়নে জরুরিভাবে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষির উন্নয়নে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার, গুণগত মানসম্পন্ন ফসলের বীজ উৎপাদন, সারের মূল্য হ্রাস, সুষম সার প্রয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বেসরকারি কোম্পানিদের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বেসরকারি খাতে দেশে মানসম্পন্ন সবজি বীজ উৎপাদন করে বীজের যোগান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। 

খবরের কাগজ: কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বাড়াতে আপনি কী পরামর্শ দেবেন? 
মোস্তাফিজুর রহমান: কৃষি যান্ত্রিকীকরণ আরও গতিশীল করা দরকার। এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এলাকা উপযোগী ফসলের জাত উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, সেচ অবকাঠামো নির্মাণের দ্বারা সেচের আওতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি মৎস্য গবেষণার মাধ্যমে দেশে মাছের নতুন জাত উদ্ভাবন, এসব জাতের পোনা ব্যবহার করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাবে। এসব ক্ষেত্র গতিশীল করতেও সরকারকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। 

খবরের কাগজ: গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগি পালনও কৃষির অংশ। এ সব ব্যবসা সম্প্রসারণে কী করতে হবে? 
মোস্তাফিজুর রহমান: গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগি পালনের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে এ বিষয়ে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎপাদিত কৃষি উন্নয়নের নতুন নতুন পদ্ধতি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন করা সম্ভব। পতিত জমি কাজে লাগানো, এক জমিতে বছরে চার ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে পারলে কৃষিবিপ্লব হবে। কৃষির উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তন, খরা, বন্যা, লবণাক্ততা, পোকামাকড়, পশু ও ফসলের রোগ নিরাময়ে গুরুত্ব দিয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।

খবরের কাগজ: কৃষি খাতের উন্নয়ন হলে কী প্রভাব পড়বে?
মোস্তাফিজুর রহমান: আশা করি আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ ও উন্নত হবে বাংলাদেশ।

খবরের কাগজ: কৃষি খাতে শ্রমিক সংকট বাড়ছে। এ সংকট দূর করতে আপনার পরামর্শ কী?
মোস্তাফিজুর রহমান: শ্রমিক সংকটসহ কৃষি কাজের সার্বিক উন্নয়নে যান্ত্রিকীকরণ ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। আমাদের কৃষিতে যে কয়টি বড় সমস্যা আছে তার মধ্যে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়া একটি বড় সমস্যা যার ফলে কৃষকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফসল সংগ্রহে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হলে শ্রমিকের খরচ বাঁচবে, অন্যদিকে অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে শস্য ঘরে তোলা যাবে, কাজটা সুক্ষ্মভাবে হওয়ায় ফসল অপচয় কম হবে এবং দ্রুত মাঠ খালি হয়ে যাওয়ায় আরেকটি ফসলের জন্য মাঠকে তৈরি করা যাবে। এসব বিষয়ে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশে এখন ফসল কাটার মৌসুমে অনেক সময় শ্রমিক সংকট দেখা যায়। এতে অনেক সময় কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত হয়। ধান কাটার আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারে শুধু ধান উৎপাদন সহজ হয় তা নয়, একই সঙ্গে এসব যন্ত্র ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে একটি উদ্যোক্তা শ্রেণি তৈরি হবে। এতে দেশে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ বাড়বে। 

খবরের কাগজ: কৃষিপণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্যকরণের গুরুত্ব কেমন? 
মোস্তাফিজুর রহমান: সরকারকে কৃষিপণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্যকরণে এবং সংরক্ষণে সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। কৃষির ওপর এদেশের অর্থনীতির নির্ভরতা অনেক বেশি। কৃষি অর্থনীতির আওতা বাড়াতে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বাজার সম্প্রসারণে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এতে কৃষিপণ্য দীর্ঘ সময়ে সংরক্ষণ করা সম্ভব। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য রপ্তানিতে আশা দেখাচ্ছে। ২০২০-১১ অর্থবছরে এই খাতের রপ্তানি ছিল ৩৩ কোটি ডলার। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে ১১৬ কোটি ডলারে উঠেছে। বাংলাদেশের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নিশ্চিতকরণ, স্বল্প খরচে উন্নত ও গুণগত মানের পণ্য ভোক্তাদের কাছে সরবরাহে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। 

খবরের কাগজ: আপনার ছোটবেলা, শিক্ষাজীবন নিয়ে কিছু বলুন। 
মোস্তাফিজুর রহমান: আমার দেশের বাড়ি বগুড়া জেলায়। আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছে গ্রাম এবং শহরে দুই জায়গাতেই। সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া থেকে। আমি এইচ এস সি পাস করার পর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি বিসিএজি তে ভর্তি হই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সফলতার সঙ্গে পড়ালেখা শেষ করেছি। এরপর একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করার সুযোগ হয়েছিল।

খবরের কাগজ: কর্মজীবন শুরু করেন কবে?
মোস্তাফিজুর রহমান: স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগেই আমি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ নামক একটি উন্নয়ন গবেষণা সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমার কর্মজীবন শুরু করি।

খবরের কাগজ: কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ে কীভাবে এলেন? কেন কৃষি সম্পর্কিত ব্যবসায় জড়িত হলেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের আর্থনীতি এগিয়ে নিতে হলে কৃষি খাতের উন্নয়ন করতে হবে। কৃষক এ দেশের প্রাণ। কৃষক ভালো থাকলে, কৃষি ভালো থাকলে তবেই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। এসব ভাবনা থেকে কৃষি উপকরণের ব্যবসায়ে যোগ দিই। এ ছাড়া বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং ব্যবসা প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক শিক্ষালব্ধ জ্ঞানও আমাকে এই ব্যবসায়ে সফলতা পেতে সহায়তা করে।

খবরের কাগজ: কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ে সফলতা পেতে আপনি কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: সব ভাবনা-চিন্তা শেষে ২০০০ সালের দিকে আমি অত্যাবশ্যকীয় কৃষি উপকরণ ব্যবসা করতে মনস্থির করি। ব্যবসা শুরু করার আগেই এ সংক্রান্ত জরিপ কাজ সম্পূর্ণ করেছিলাম। যেখানে এই উপকরণগুলোর মোট চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে পার্থক্য কি? প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো কীভাবে কাজ করছে? এ খাতের চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় হচ্ছে? প্রতিযোগী কোম্পানির সার্ভিস এবং পণ্যের মধ্যে গ্যাপ কী রয়ে গেছে? এদের কোনো ক্রেতা সন্তুষ্টির দুর্বল জায়গা আছে কি না? এই বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করেছি। এই ব্যবসায় যে সম্ভাবনা আছে তা কাজে লাগাতে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত নিয়ে কাজ করেছি। সব কিছু যাচাই-বাছাই করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি একটি ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে কাজ শুরু করি।

খবরের কাগজ: এদেশে এত হিসাব কষে বেশির ভাগ মানুষ ব্যবসা শুরু করেন না। আশপাশের মানুষদের দেখে বা পরিস্থিতি দেখে ব্যবসা করেন। অনেকে পারিবারিকভাবেও ব্যবসা করেন। হয়তো বাবার ব্যবসা ছেলে দায়িত্ব নেন। কিন্তু আপনি তো অন্যভাবে ব্যবসা শুরু করলেন।
মোস্তাফিজুর রহমান: প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত থেকে গবেষণা জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আমি ২০০২ সালে পণ্য নির্বাচন করে ব্যবসা শুরু করি। যে সব পণ্য কৃষকের কাছে চাহিদা আছে অথচ বাজারে নেই, সেসব পণ্য দিয়েই আমি ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার নামে একটি কোম্পানি করি। আমার প্রতিষ্ঠানের স্লোগান ঠিক করি ‘বাংলার কৃষকের কোম্পানি’। এই স্লোগান ছিল আমার ব্যবসার শক্তি। স্লোগানটি অনেকে পছন্দ করেন। ব্যবসায় শুরু করার আগেই কতগুলো বিষয় সত্য ধরে একটি ফিলোসফিক্যাল স্ট্যান্ডিং ঠিক করা হয়েছিল যেমন আমরা বিশ্বাস করতাম “Business Is All About People, Business Is Build Up On Trust & Truth Is Always Beautiful” and “Customer Is The King” এই সব তত্ত্ব জ্ঞানকে উপজীব্য করে এবং গ্যাপ মার্কেটকে টার্গেট করে আমরা নির্দিষ্ট কিছু পণ্য নির্বাচন করেছিলাম। এসবের আলোকে আমরা একটা চমৎকার কর্মী বাহিনী গড়ে তুলি। আমার প্রতিষ্ঠানের পণ্য অল্প দিনে জনপ্রিয় হয়। ক্রেতা আগ্রহ নিয়ে কৃষি উপকরণ কিনে থাকে। অনেক ভেবেচিন্তে ব্যবসা শুরু করি বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।

খবরের কাগজ: ব্যবসার স্বীকৃতি পেয়েছেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: জাতীয় অর্থনীতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে সিআইপি পদক পেয়েছিলাম এবং ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি শিল্প উন্নয়ন পদক পেয়েছি।

খবরের কাগজ: ওষুধ ব্যবসায়ে কবে আসেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: দেশি বিদেশি স্বীকৃতির পর আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। আমাদের এই সফলতা এবং আত্মবিশ্বাস আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়। ২০১৫ সালে ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি হিসেবে নতুন ডাইভারসেফিকিশনে ‘ওয়ান ফার্মা লিমিটেড’ এর যাত্রা আমরা শুরু করি। ওষুধ ব্যবসায় আমাদের আসার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই ব্যবসার সম্ভাবনা আছে তা কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া।

খবরের কাগজ: বাংলাদেশে ওষুধ ব্যবসায় সম্ভাবনা কেমন?
মোস্তাফিজুর রহমান: সম্ভাবনার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেটা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরও বিস্তৃত করা সম্ভব। বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ভালোভাবে এগিয়ে চলছে। তবে সমস্যাও আছে।

খবরের কাগজ: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওষুধ ব্যবসা কেমন চলছে?
মোস্তাফিজুর রহমান: বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ওষুধ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। ওষুধ খাতের উদ্যোক্তাদের নীতি আদর্শ, যোগ্যতা, দক্ষতা দিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতকে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। তাই আমরা ওষুধ উৎপাদনকারী ও দেশ-বিদেশে বাজারজাতকরণের লক্ষ্য মাথায় রেখে কাজ করে চলছি।

খবরের কাগজ: আপনার এই যে সফলতার পেছনে কার কার অবদান আছে?
মোস্তাফিজুর রহমান: আমার জীবনে সফলতার পেছনে আমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগকে সবচেয়ে বেশি মনে করি। এরপর আমার পরিবার। পরিবারের মধ্যে আমার স্ত্রী, আমার বড় ভাইয়ের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। বন্ধুবান্ধব এবং আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক আমার বড় ভাই ও ছোট ভাইর সহযোগিতা আমি মনে রেখেছি।

খবরের কাগজ: এদেশে ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম সমস্যা কী বলে মনে করেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: ব্যবসা বাণিজ্যের মূল সমস্যার মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো দক্ষ ও বিশ্বাসী জনবলের অভাব। ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি হিসেবেও আমাকে একই ধরনের সমস্যা প্রতিনিয়ত পড়তে হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। সময়ের মধ্য দিয়ে সঠিক পরিকল্পনা, কর্মী ও দল গঠনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা করতে হয়েছে।

খবরের কাগজ: ব্যবসায় সফলতা পেতে হলে আরও কী কী বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
মোস্তাফিজুর রহমান: উন্নত আদর্শ ও মূল্যবোধ সমস্যার সমাধানের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। আমাদের ক্ষেত্রেও সফলতার জন্য কোম্পানির নীতি, আদর্শ, নৈতিকতা, উন্নত মূল্যবোধ আমাদের সহযোগিতা করেছে। কোম্পানির প্রধান ব্যাক্তির নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধের প্রতিফলন কোম্পানিতে সবসময় পরে। তাই আপনি যা আপনার কোম্পানির পণ্যও তাই এবং আপনি যা আপনার কোম্পানিও তাই। মানুষ উন্নত প্রানি। তাই পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও সকল বিষয় বোঝার মতো ক্ষমতা যোগ্যতা দিয়েই সকল মানুষ।

খবরের কাগজ: ওষুধ শিল্প এগিয়ে নিতে আপনার আর কী কী পরামর্শ রয়েছে?
মোস্তাফিজুর রহমান: ওষুধ শিল্পকে এগিয়ে নিতে ভালো সিভিল প্রশাসন দরকার যারা দেশের চাহিদা ও দেশের প্রয়োজনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য শিল্প কলকারখানার পরিচালনার নীতিমালা বিধিমালা প্রণয়নে সহায়তা করতে পারে। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর পরিদপ্তরের কর্মকর্তা ব্যক্তিকেও ওষুধ উৎপাদনের অতীত ইতিহাস, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশের সক্ষমতা এবং করণীয় নিয়ে বিস্তর জ্ঞান আহরণ করতে হবে। তারপর দেশে উৎপাদিত ওষুধকে বিশ্বদরবারে কীভাবে এই শিল্পকে বিকশিত করবে সে বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের একটি কমপ্রিহেন্সিভ ৫ বছরের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধের মূল্য বেশি প্রায়ই পত্র পত্রিকা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই ধরণের অভিযোগ শোনা যায় কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা সম্পূর্ণ উল্টো। পৃথিবীর যে কোনো দেশের উৎপাদিত ওষুধ এর চেয়ে বাংলাদেশে ওষুধের মূল্য কম। এর প্রধান কারণ হলো আমাদের দেশের  সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবল আছে। তবে তাদের বেতন অনেক দেশের তুলনায় কম।

খবরের কাগজ: এ খাতের উন্নয়নে আর কী করা প্রয়োজন?
মোস্তাফিজুর রহমান: উন্নত দেশ এবং মধ্যম আয়ের দেশের চেয়ে আমাদের লেবার মার্কেট প্রাইস অনেক কম। এই সুবিধা নিয়েই আমরা ওষুধের মূল্য কম করতে পেরেছি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, চীন- এই দেশগুলোর চেয়েও আমাদের দেশের উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে লেবার সুবিধার জন্য। আমরা ৩৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ বাংলাদেশে উৎপাদন করতে পারি। এ ওষুধই আমেরিকার বাজারে দাম হলো পাঁচ গুণ বেশি। আমেরিকা থেকে যদি এটা আমাদের দেশে আমদানি করা লাগত, তবে দেশের সমগ্র অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। উৎপাদন না করে বা যেকোনো দেশ থেকে আমদানি করতে হলে আমাদের কয়েক লাখ কোটি টাকার ওষুধ আমদানি করতে হতো। সে বিবেচনায় আমাদের দেশে ওষুধের মূল্য অনেক কম। ওষুধ সাধারণ কমোডেটি প্রোডাক্ট না, এটাতো উৎপাদনের প্রতিটি স্তর আপনার WHO-এর যে বিধিমালা, নীতিমালা এবং আমাদের দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সরকারের যে নীতিমালা, বিধিমালা এবং আইনের আলোকে এর যে গাইডলাইন করা হয়েছে, তার আলোকে ওষুধ উৎপাদন করতে হয়। এই গুণগত মানের যে পণ্য আপনার ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রস প্রোডাকশন করে, তার যে খরচ, সেটা কিন্তু আমাদের অনেক কম মূল্য দিতে হচ্ছে। এটার মূল্য যে অনেক বেশি, এটা সঠিক নয়। 

খবরের কাগজ: আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
মোস্তাফিজুর রহমান: আমার সহকর্মীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আছে। তাদের নিজের পরিবারের সদস্য মনে করি। মনে করি, আপনার বার্জার পেইন্টস আমার আরেকটা পরিবার।

খবরের কাগজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
মোস্তাফিজুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।