পোশাক আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পোশাকের মাধ্যমেই মানুষের ব্যক্তিত্ব ও রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। গরমের এ সময় নির্দিষ্ট কোনো ফ্যাশনধারা অনুসরণের চেয়ে আরাম, স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বস্তিদায়ক পোশাক পরতে সবাই পছন্দ করেন। বর্তমানে জামার সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্টাইলিশ ও একই সঙ্গে আরামদায়ক প্যান্ট, পায়জামা ও স্কার্ট নারীদের প্রতিদিনের সঙ্গী।
বাড়ির কাজ, অফিসের কাজ, বাইরে দৌড়াদৌড়ির জন্য চাই আরামদায়ক পোশাক। পরিবেশ অনুযায়ী পোশাকের ধরনও বদলে যায়। এখন তো নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রাখার জন্য ফ্যাশনেবল ও আরামদায়ক পায়জামা খুঁজছে তরুণ প্রজন্ম। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পায়জামার জগতে এসেছে নানা পরিবর্তন। ডিজাইন, প্যাটার্ন ও রঙের ক্ষেত্রেও এসেছে নতুনত্ব। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল পায়জামা ডিজাইন করছেন ডিজাইনাররা। করপোরেট সংস্কৃতিতে সোজা কাটের প্যান্ট বা পায়জামা বেশ মানানসই। বাসায় আরামের জন্য পালাজ্জো পরা হয়। দাওয়াতের জন্য সারারা বা স্কার্ট-জাতীয় পালাজ্জো বেছে নেন অনেকে। এ ছাড়া প্যান্ট কাট, পেনসিল কাট, ধুতি পায়জামার পাশাপাশি বেল বটম, হারেম প্যান্ট বা ঢোল কাটের পায়জামা বেশ জনপ্রিয়।
বৈচিত্র্যময় কাট
পায়জামার হেমলাইন, নকশা এবং কাটছাঁটেও এসেছে পরিবর্তন। ঘেরওয়ালা ঢোল পায়জামা বা ধুতি পায়জামা তো বটেই, সোজা কাটের পায়জামা ও পালাজ্জোর মতো ঢিলেঢালা পায়জামায় বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। ধুতি পায়জামার ওপর দিকটা ঢোলা রেখে নতুনত্ব আনা হয়েছে। পালাজ্জোতে স্কার্টের মতো ঘের, কম ঘের ও মাঝামাঝি ঘের রেখে আবার লেয়ার ব্যবহার করে ডিজাইন করা হয়েছে। কয়েক স্তরের কুঁচি দেওয়া সারারা ছাড়াও ডিজাইন করা হয়েছে বায়াস কাটের সারারা। বায়াস কাট হলো কুঁচি ছাড়া, রুমাল ছাঁটের মতো গোল কাট। স্কার্টে রাখা হয়েছে বায়াস কাট। এ ছাড়া কুঁচি দেওয়া একাধিক স্তরের স্কার্ট ডিজাইন করা হয়েছে। ম্যাক্সি স্কার্ট খুবই আরামদায়ক পোশাক। আবার ফ্যাশনেবলও।
ক্যাজুয়াল টি-শার্ট, টপের সঙ্গে ঢিলেঢালা এই স্কার্ট আনবে আলাদা স্টাইল। কিছু সালোয়ারের নিচের দিকে কুচি, লেইস, কাট ওয়ার্কসহ পছন্দের নকশা করা হয়েছে। ফ্যাশনেবল দেখতে সালোয়ার কিংবা পালাজ্জোর মতো হলেও ডিজাইনাররা একে প্যান্ট বলতেই বেশি পছন্দ করেন। এসব প্যান্টের পেছনে ইলাস্টিক, সামনে বাটন কিংবা বেল্টও থাকে। কিছু প্যান্টের কোমর ও নিচের দিকে চাপানো থাকে। এ জন্য প্যান্টের অংশগুলো ভাঁজ হয়ে থাকে। এগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো বছরের যেকোনো সময়ই পরা যায়, সব পোশাকের সঙ্গেই মানানসই বলে এর চাহিদাও অনেক। এ ছাড়া জামার সঙ্গে ম্যাচিং করার ঝামেলাও পোহাতে হয় না।
প্যাটার্ন ও মোটিফ
জ্যামিতিক, ফুল ও ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন মোটিফের নানা রকম পায়জামা এনেছে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। কিছু কিছু ফ্যাশন হাউস পায়জামার নিচে স্ক্রিনপ্রিন্ট বা এমব্রয়ডারি, প্যাচওয়ার্ক, ডিজিটাল প্রিন্ট, সুতার রঙিন কাজ, ব্লকপ্রিন্ট ও টাই-ডাইয়ের কাজ করা থাকে। আবার কিছু ফ্যাশন হাউস একরঙা কিংবা চেক নকশার ফরমাল প্যান্ট ডিজাইন করে থাকে। এ ছাড়া যারা স্কার্ট পছন্দ করেন তারা লং ড্রেস কিংবা ক্রপ টপস বা ফতুয়ার সঙ্গে নানা কাটের স্কার্ট বেছে নিতে পারেন। বর্তমানে রিকশা আর্ট মোটিফে ডিজাইন করা স্কার্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাশাপাশি শাপলা, ক্যাটার্স, জঙ্গলা ফুল, নীলকমল এবং ফোক আর্ট মোটিফে (ফুল, লতা, পাতা, পাখি) ডিজাইন করা স্কার্টগুলো বেশ আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল।
বিভিন্ন কাটের ও আরামদায়ক পায়জামা এনেছে সারা লাইফস্টাইল। সারা লাইফস্টাইলের হেড অব ডিজাইন শামীম রহমান জানান, পায়জামায় রয়েছে বৈচিত্র্যময় ভাঁজ আর ফ্রিল। সুতি, ভিসকস, সামু সিল্ক ও সিল্ক কাপড়ের পায়জামায় স্ক্রিনপ্রিন্ট, মেশিন এমব্রয়ডারি এবং হাতের কাজ রয়েছে। কারচুপির কাজও পাওয়া যাচ্ছে। ফুলের মোটিফ, জ্যামিতিক মোটিফ কিংবা টাই-ডাইয়ের আর ভারী নকশার পায়জামায় উজ্জ্বল রং যেমন নীল, হলুদ, কমলা ধাঁচের রংগুলোও প্রাধান্য দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে।
কাপড়ের ধরন
বর্তমানে ট্রেন্ডি ও ফ্যাশনেবল কাপড়ের সঙ্গে আরামের ব্যাপারটি বিশেষভাবে বিবেচনায় রেখে সুতির ওপর পায়জামা ডিজাইন করা হয়েছে। সুতির পাশাপাশি লিনেন, গ্যাবার্ডিনের কাপড়ের প্যান্টও পাওয়া যাচ্ছে। পায়জামায় বিভিন্নতা আনতে ভিসকস আর লিনেন কাপড়ের ওপর স্ক্রিনপ্রিন্টের নকশা করা হয়েছে। খাদি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পায়জামা। একরঙা খাদি কাপড়ে বুনন আর বয়নের কল্যাণে ফুটে ওঠে ভিন্নতর রূপ। এ ছাড়া ট্রেন্ডি প্যান্টে চেরি জর্জেট, ডাবল জর্জেট, জিন্সের পাতলা ফেব্রিক্স, মাইশা কটন ও তসর সিল্ক ফেব্রিক্সের ব্যবহারও দেখা মিলছে। এ ছাড়া লেগিংসে নিট কাপড়ের ব্যবহার হচ্ছে। স্কার্টের ক্ষেত্রে টিস্যু মসলিন, তসর ও কাতান কাপড় দিয়ে তৈরি হয়েছে।
রঙের ভিন্নতা
পায়জামা বা প্যান্টের রঙে এসেছে ভিন্নতা। যেকোনো জামা বা টপসের চেয়ে এক শেড গাঢ় রঙের পায়জামা পরলে ভালো দেখায়। রঙের ক্ষেত্রে সবুজ, হালকা বেগুনি, পাউডার পিংক, ব্লু কিংবা ক্রিমরোজ ইয়েলো রঙের প্যান্ট প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নিউট্রাল রঙের বাইরেও লাল, সবুজ, নীল, নিয়ন, শর্ষে হলুদ, হট পিঙ্কের মতো উজ্জ্বল কিংবা গাঢ় রঙের প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে।
কোথায় পাবেন
পোশাকের ব্র্যান্ড সারার কো-ব্র্যান্ড টেউ, অঞ্জন’স, নিপুণ, সাদা-কালো, বিবিয়ানা, বালুচর, ভারগোসহ যেকোনো শোরুম, হরীতকী, সরলা, কারভিকিউসহ বিভিন্ন অফলাইন ও অনলাইন ব্র্যান্ডে পালাজ্জো, স্কার্ট পালাজ্জো, ফরমাল প্যান্ট, ফ্লেয়ার প্যান্ট, হারেম প্যান্ট, বিভিন্ন কাটিংয়ের সালোয়ার ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া যমুনা ফিউচার পার্ক, এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, বঙ্গবাজার, পান্থপথের বসুন্ধরা শপিংমল, ধানমন্ডির মেট্রো শপিংমল, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, গুলিস্তানসহ যেকোনো মার্কেটে পাবেন এ সময়ের সব মানানসই পায়জামা বা প্যান্ট।
কলি