রূপচর্চায় ফুলের ব্যবহার আদিকাল থেকেই চলে আসছে। চুলের যত্নে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ফুল নানাভাবে ব্যবহার করা হয়। ফুলে থাকা ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বক মেরামত করার পাশাপাশি ব্রণের ভাবও কমায়। ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে ফুল। ফুলের ছোঁয়াতেই ত্বক হয়ে উঠে ফুলের মতো কোমল। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং মুখের দাগ কমাতে ফুল বেশ উপকারী। কখনো গোসলের পানিতে ফুলের পাপড়ি আবার কখনো মুলতানি মাটির সঙ্গে ফুলের বিভিন্ন অংশের উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা হয় ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য উপটান কিংবা ঘরোয়া প্যাক। আবার ফুল থেকে তেলের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মাথাব্যথা এবং হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় ফুল। প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্যের চাহিদা পূরণ করে ত্বককে হাইড্রেট করতে সহায়তা করে। ফুল দিয়ে ত্বক চর্চা সম্পর্কে জানিয়েছেন রেড বিউটি স্টুডিও অ্যান্ড স্যালনের স্বত্বাধিকারী রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন।
গোলাপ
গোলাপের পাপড়ি ত্বকে প্রশান্তি ছড়ায়। প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের দাগ বা ছোপ দূর করার কাজে সহায়তা করে। দীর্ঘ সময় ধরে গোলাপজল ত্বকের যত্নের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঘরোয়া রূপ চর্চায় গোলাপের ব্যবহার করা হয়। গোলাপ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
গোলাপে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ যা আপনার ত্বকের সুস্থতা ধরে রাখে। গোলাপের পাপড়ির ফেসপ্যাক তৈরি করতে গোলাপের পাপড়ি বাটা ১ টেবিল চামচের সঙ্গে আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এই প্যাকটি সপ্তাহে ১ দিন লাগাতে পারেন। রোদেপোড়া ভাব দূর হবে, ফিরে আসবে ঔজ্জ্বল্য। এই একই প্যাক কিন্তু শরীরের অন্য কোথাও দাগ ছোপ থাকলে সেখানেও প্রয়োগ করা যায়। টোনার হিসেবে গোলাপের বেশ উপকারী, প্রাকৃতিক উপায়ে টোনার তৈরি করতে কিছু গোলাপের পাপড়ি মাঝারি আঁচে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে পানিতে ৪৫ মিনিটে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ঠাণ্ডা হলে একটি স্প্রে বোতলে পানি ছেঁকে নিয়ে এর মধ্যে কয়েক ফোঁটা রোজ এসেনশিয়াল তেল এবং ভিটামিন ই যুক্ত তেল যোগ করতে হবে। মিশ্রণটি ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করা যাবে। ব্যবহারের আগে অবশ্যই ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।
জুঁই
জুঁই ফুল ত্বকের জন্যে খুবই উপকারী। বিভিন্ন প্রসাধনী, যেমন লোশন, সাবান এমনকি মুখের ক্রিমগুলোতেও জুঁই ফুল ব্যবহৃত হয়। এটি ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক মেরামত করতে সাহায্য করে। জুঁই ফুল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বক নরম করে। এক টেবিল চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে একমুঠো জুঁই ফুল পিষে নিতে হবে। এই মিশ্রণটি মুখে ম্যাসাজ করে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে। তারপর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।এতে ত্বক পুষ্ট হবে এবং কোমল দেখাবে।
গাঁদা ফুল
ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে গাঁদা ফুল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাঁদা ফুলে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এটি ত্বকের ভেতরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। মুখের দাগ দূর করতেও এই ফুল ভালো কাজ করে। গাঁদা ফুল ব্যবহারের আগে ভালো করে পাপড়িগুলো ধুয়ে নিতে হবে।
পরের ধাপে এর থেকে নির্যাস বের করে নিতে হবে। এ ছাড়া কিছু শুকনা গাঁদা ফুলের পাপড়ির গুঁড়া, আধা চা-চামচ হলুদ ও এক টেবিল চামচ দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। পেস্টটি মুখে লাগিয়ে সঠিকভাবে ম্যাসাজ করে ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। চাইলে এক মুঠো গাঁদা ফুল পানিতে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিতে পারেন। পানি ঠাণ্ডা করে ছেঁকে নিন। একটি তুলার প্যাড দিয়ে আপনার মুখে টোনার হিসাবে পানিটি প্রয়োগ করতে পারেন। এছাড়া এক কাপ গাঁদা ফুলের রসের সঙ্গে এক টেবিল চামচ মেথি এবং মৌরি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন তা পেস্ট করে স্কাল্পে লাগিয়ে রাখলেই খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
জবা ফুল
জবা ফুল ত্বক চর্চায় পরিচিত একটি ফুল। এই ফুল চুলের যত্নের পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও বেশ উপকারী। জবা ফুলে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, অ্যাসিড, ফ্যাট যা ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও বলিরেখা দূর করে। ফেসপ্যাক বানাতে জবা ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে প্রাকৃতিকভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে গুঁড়া করে পাউডারটি মুলতানি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী মধু, দই বা গোলাপজল যোগ করতে হবে। একটি ব্রাশ ব্যবহার করে মুখে মিশ্রণটি ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে।
এরপর সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া চুলের জন্য ছয়টি জবা ফুলের সঙ্গে আধা কাপ অ্যালোভেরার নির্যাস, টক দই ও একটি ডিম নিতে হবে। সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে মাথায় লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে একবার ব্যবহারে চুল হয়ে উঠবে ঘন ও কালো।
কলি