হেমন্তে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় শুষ্ক আবহাওয়া ও অযত্নে চুল হয়ে যায় প্রাণহীন। এ ছাড়া চুল পড়া, আগা ফাটা তো আছেই। এমন হাজারও সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে চুল পরিষ্কার রাখা খুব জরুরি। তাই ধরন বুঝে চুলের যত্নে মনোযোগী হওয়া উচিত। এ জন্য চুলের নিয়মিত পরিচর্যার বিকল্প নেই। এ সময় চুলের যত্ন কেমন হতে পারে, সেই সম্পর্কে লিখেছেন তানজিলা মীম
প্রতিদিন চুল পরিষ্কার করতে হবে
প্রতিদিন যারা বাইরে বের হন, তাদের উচিত মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করা। বেশির ভাগ সময় ঘরেই থাকেন, তাদেরও ধুলোবালিতে চুল তেমন ময়লা হয় না। তারা এক দিন পরপর চুল পরিষ্কার করতে পারেন। তবে ঘন ঘন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়। তাই চুলের প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই ক্ষার বা সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার না করে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এতে চুল দীর্ঘ সময় ঝরঝরে থাকবে।
কন্ডিশনার ব্যবহার
এ আবহাওয়ায় চুল তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে তাই ভালোমতো চুল পরিষ্কারের পর কন্ডিশনিংয়ের প্রয়োজন। চুলের রুক্ষতা দূর করতে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুলের ক্ষতি কম হবে। প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কলা ব্যবহার করতে পারেন। কলা চুলের রুক্ষতা সহজেই দূর করে। এর জন্য একটা পাকা কলার সঙ্গে দুই চা চামচ মধু ও অর্ধেক কাপ নারকেল অথবা আমন্ড তেল মিশিয়ে চুলে ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এ ছাড়া চায়ের লিকারের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলেও চুল মসৃণ হবে। তবে যাদের চুল বেশি রুক্ষ তারা পার্লারে হেয়ার স্পা করাতে পারেন।
চুলের ময়েশ্চার করা
চুলের ময়েশ্চারকে ধরে রাখতে ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট হতে পারে দারুণ কার্যকরী। বাড়িতেই প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে সহজেই একটা ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক বানিয়ে নিতে পারবেন। অ্যাভোকাডোর পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এর সঙ্গে ২ টেবিল চামচ নারকেলের দুধ, ১টা ডিম, ১ চা চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এর পর মাস্কটি চুলের গোড়া এবং পুরো চুলে লাগিয়ে নিন। ৪০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে বাজারে পাওয়া যায় এমন কোনো ভালো মানের কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে অন্তত একবার এভাবে ব্যবহার করুন, চুল স্বাস্থ্যকর ও মসৃণ থাকবে।
আরও পড়ুন: কফি দিয়ে রূপচর্চা
চুলে তেল ব্যবহার করুন
এ সময় অনেকেই খুশকি, চুলকানিসহ নানান সমস্যায় ভোগেন। এ সমস্যার সমাধানে চুলে তেল দেওয়ার মতো ঘরোয়া পদ্ধতিই সবচেয়ে কার্যকর। সপ্তাহে দু-এক দিন তেল মাথায় লাগিয়ে নিতে হবে। এর জন্য প্রথমে স্টিলের বাটিতে তেল নিতে হবে। অন্য একটি বড় পাত্রে গরম পানি নিতে হবে। এর ওপর তেলের বাটি রাখতে হবে। তেলটা উষ্ণ হয়ে উঠলে বাটি নামিয়ে নিতে হবে। চাইলে লেবুর রস যোগ করতে পারেন। সব ধরনের চুলের জন্যই তেলে লেবুর রস দেওয়া ভালো। এই তেল ভালোভাবে মালিশ করে নিতে হবে। তেল মালিশের পর গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে মাথায় জড়িয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট। যেদিন হেয়ার প্যাক লাগাবেন, সেদিন তোয়ালে সরিয়ে রাখার পর প্যাকটি লাগাবেন। সপ্তাহে অন্তত এক দিন চুলের গোড়ায় এবং পুরো চুলে তেল দিতে হবে। চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হলে দুদিন পরপর তেল ম্যাসাজ করা ভালো। তেল দিয়ে এক ঘণ্টার মতো রেখে চুল শ্যাম্পু করে ফেলবেন। এতে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। চুলের রুক্ষতা দূর করে চুলে আলাদা আর্দ্রতা জোগাতে তেল ভালো কাজ করে।
খুশকি দূর করার প্যাক
স্বাভাবিক চুলের জন্য
১ টেবিল চামচ ত্রিফলার গুঁড়া নিন, সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মেথি, আধা কাপ টক দই ও একটি ডিম নিন। সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে প্যাক তৈরি করুন। প্যাক লাগানোর আধা ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। কন্ডিশনারও ব্যবহার করুন। এ ছাড়া ৩ টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে ৫ টেবিল চামচ জলপাই তেল মিশিয়ে মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এভাবে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে চুল স্বাভাবিক উপায়ে ধুয়ে নিন। যাদের চুল শুষ্ক, উপকার পাবেন।
শুষ্ক চুলের জন্য
প্যাক তৈরি করতে প্রয়োজন হবে ১ টেবিল চামচ ত্রিফলার গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ মেথি, আধা কাপ টক দই, অ্যালোভেরার নির্যাস আধা কাপ। সঙ্গে নিন ১টি ডিম। সব উপকরণ ব্লেন্ড করে প্যাক বানিয়ে ফেলুন। এই প্যাকও আধা ঘণ্টা পর ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। এ ছাড়া সপ্তাহে দুই দিন নারকেল তেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস অথবা নিমপাতার রস মিশিয়ে চুলে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেললে খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
চুলে যন্ত্রের ব্যবহার
চুল সাজাতে হেয়ার ড্রায়ার, আয়রন বা কার্লারের মতো অনেক ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। খুব প্রয়োজন না হলে এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। এতে চুল ড্যামেজ হয়ে যায়। তবে একেবারে বাদও দেওয়া যাবে না। তবে এসব যন্ত্র চুলে ব্যবহার করলে চুলের ওপর দিয়ে ধকল যায়। সে ক্ষেত্রে নিতে হবে বাড়তি যত্ন। নিয়মিত গরম তেল মালিশ এবং চুলের ধরন বুঝে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করে যন্ত্র ব্যবহারের কারণে চুলের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। গরম বাতাসের হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে ঠাণ্ডা বাতাসেরটি ব্যবহার করতে হবে। আর আয়রন বা হেয়ার কার্লারের তাপ চুলে লাগানোর পর বাড়ি ফিরে ডিপ কন্ডিশনিং করতে হবে।
সঠিক খাবার-দাবার
শুধু বাহ্যিক যত্ন করলেই কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে না তাই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ যত্নেরও আছে প্রয়োজন। চুল এবং স্কাল্প হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পানি, জুস পান করুন। এ ছাড়া কাঠবাদাম, মৌসুমি ফল খাবারের তালিকায় রাখুন। সবুজ শাকসবজি, এ সময় হতে পারে আপনার চুলের বন্ধু। কারণ, এসব খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমিষ, আঁশজাতীয় পদার্থ ও গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন থাকে, এতে চুল হয়ে উঠবে আরও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও সুন্দর।
কলি