টানা আট ঘণ্টা অফিসের পর পরিবারকে সময় দেওয়া এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মতো। আর কর্মব্যস্ততার জন্য অনেকে তার পরিবারকেই ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না। পরিবারকে যথাযথ সময় না দিলে সংসারে অশান্তি হয়, ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে। এ ছাড়া সন্তানরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই সবার উচিত শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় করে পরিবারকে কিছুটা সময় দেওয়া। এ সম্পর্কে লিখেছেন তামান্না মুন
একসঙ্গে খাবার খাওয়া
প্রতিদিন অন্তত একবেলা পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সাধারণত সকাল ও দুপুরে কর্মব্যস্ততার কারণে একসঙ্গে খেতে বসা সম্ভব হয় না অনেকের। সেক্ষেত্রে সন্ধ্যার নাশতা কিংবা রাতের খাবার একসঙ্গে খেতে পারেন। সবার সময়সূচির সঙ্গে সমন্বয় করে খাওয়ার সময় নির্ধারণ করুন।
একসঙ্গে সময় কাটান
পরিবারের সদস্যরা মিলে একসঙ্গে সময় কাটানোর ওপর গুরুত্ব দিন। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার মন-মানসিকতা ভালো থাকবে। সারা দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আড্ডা দিন, সিনেমা দেখুন কিংবা লুডো ও ক্যারামের মতো ঘরোয়া গেম খেলতে পারেন। নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় মোবাইল ফোন বা অন্যান্য গ্যাজেট দূরে রাখুন। এতে সবার শারীরিক ও মানসিক উপস্থিতি নিশ্চিত হবে এবং সময়টা উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
কথা বলুন সবার সঙ্গে
প্রচুর কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলুন। বিশেষ করে পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিদের আলাদাভাবে সময় দিলে তারা খুশি হবেন। পরিবারের ছোট সদস্যদেরও অবহেলা করা যাবে না। ছোটরা যদি কোনো কিছু বলতে চায়, তবে তাদের কথাও গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। এ ছাড়া আপনার জীবনে নানা সমস্যার বিষয়ে তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করুন। পরিবারের অন্য সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করুন। তাদেরকে সব সময় আগলে রাখুন।
সন্তানদের সময় দিন
সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন। হয়ে উঠুন তার ভরসার জায়গা। শিশুর সঙ্গে কথা বলুন নিয়মিত। ভাগ করে নিন নিজের কথা। আপনার শৈশব কেমন ছিল, ওর বয়সে আপনি কী করতেন, এমন নানান কথা আলাপ করুন। ওকে নিয়ে বই পড়ুন, ওর সঙ্গে ছবি আঁকুন কিংবা খেলুন। বর্তমানে বাবা-মা নিজেদের বিশ্রাম বা অন্য কোনো কাজের অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে সন্তানের হাতে স্মার্ট ডিভাইস ধরিয়ে দেন। এটা করা যাবে না। এতে সন্তানদের বাবা-মায়ের ওপর আস্থা কমে যাবে। তাই যখন সন্তান বাবা-মায়ের কাছে আসতে চাইবে তখন হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও তাকে কিছুটা সময় দিতে হবে, যেন সে বুঝতে পারে পরিবারে তার কথা শোনার মানুষ আছে।
পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করা
এ সময়ে স্বামী-স্ত্রী-সন্তান সবাই নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোয়ালিটি সময় কাটানোও দুষ্কর হয়ে যায় তাদের জন্য। কিন্তু সুস্থ পারিবারিক সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য সময় দিতে হবে পরস্পরকে। পরিবারে একে অপরের কাজে সহযোগিতা করতে পারেন। তাই সবাই একসঙ্গে মিলে ঘরের বিভিন্ন কাজ করে ফেলুন। এর ফলে ছুটির দিন বা সুযোগ পেলেই পরস্পরকে ঘরের কাজে সাহায্য করলে একসঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটানো যায়। এ ছাড়া পারিবারিক সম্পর্ক দৃঢ় করার একটি উপায় হলো সন্তানকে পরিবারের কাজের অংশ করা। তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ছোট ছোট কাজ দেওয়া যেতে পারে। এতে তাদের নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং তারা পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হতে শিখবে। ছোট ছোট কাজের মধ্য দিয়ে পারিবারিক সংযোগ বাড়ে, যা পরে বড় সমস্যা সহজে সমাধান করে।
মাঝে মাঝে বিশেষ কিছু করুন
পরিবারের সদস্যদের মাঝে মধ্যে চমকে দিন। উপহার দেওয়ার মাধ্যমে তাদের জানিয়ে দিন যে আপনি তাদের ভালোবাসেন। উপহার হতে পারে আপনার সাধ্যমতো। আবার একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার মতো সাধারণ উপহার হতে পারে। না চাইতে আকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু করার মাধ্যমেও চমক দেওয়া যেতে পারে।
উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করুন
উৎসবমুখর পরিবেশ সব সময়ই পরিবারকে আরও কাছে আনে। জীবনের নানা ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারের সঙ্গে বিশেষ দিনগুলো উদযাপন করলে পারিবারিক সম্পর্ক মজবুত হয়। নিজেদের ব্যস্ততার সময়কে দূরে ঠেলে দিয়ে পরিবারের যেকোনো অনুষ্ঠানে নিজেদের মধ্যে আনন্দঘন মুহূর্তগুলো উপভোগ করুন। এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের যেকোনো অর্জনের জন্য তাকে শুভকামনা জানান।
কলি