সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদনে ২০২২ সালে বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম থাকলেও, ২০২৩ সালে বায়ুদূষণে বাংলাদেশের নাম শীর্ষে উঠে আসে। আর নগর হিসেবে বিশ্বে বায়ুদূষণে ঢাকার দ্বিতীয় অবস্থান । বায়ুদূষণের এই সমস্যা এখন পুরো বাংলাদেশে। যেসব এলাকায় বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানার উপস্থিতি রয়েছে, রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চলমান, মেট্রোরেলের কাজ চলমান, ফ্লাইওভারের কাজ চলছে এবং কয়েকটি রাস্তার সংযোগ যেখানে ঘটেছে সেসব জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত হারে বায়ুদূষণ হচ্ছে। বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বড় হুমকিস্বরূপ। এ দূষিত বায়ুর কারণে সর্দি-কাশি, এলার্জি, ফুসফুসের সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট, স্ট্রোক, মানসিক অবসাদ, হৃদরোগ ও নিউমোনিয়ার মতো নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বায়ুদূষণে নিজেকে সুস্থ রাখবেন যেভাবে-
মাস্ক সবসময়
বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে মাস্ক ব্যবহার করা। তবে কেমন ধরনের মাস্ক ব্যবহার করছেন, সেটা দেখাও জরুরি। সার্জিক্যাল মাস্ক, এন ৯৫ মাস্ক খুব কাজ করে। বাহারি, ফ্যাশনেবল মাস্ক সেই কাজ করতে পারে না। পাশাপাশি সার্জিক্যাল মাস্ক একদিন ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া বাসা থেকে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে বের হলেও মুখে মাস্ক থাকা চাই।
এয়ার ফিল্টার কিনুন
ইন্ডোর এয়ার ফিল্টার বায়ুদূষণের সঙ্গে মোকাবিলা করার সেরা উপায়গুলোর মধ্যে একটি। এই পিউরিফায়ারগুলো কেবল ক্ষতিকারক দূষিত বায়ু এবং অ্যালার্জেনগুলো আটকায় না বরং সামগ্রিক বায়ুর গুণমানকে উন্নত করে। কিছু এয়ার ফিল্টার সুন্দর সুগন্ধযুক্ত হয়, যা আপনাকে ফ্রেশ বাতাস নিতে সাহায্য করে। এইচইপিএ ফিল্টারযুক্ত এয়ার পিউরিফায়ারগুলো সবচেয়ে কার্যকর বলে পরিচিত।
ঘরে-বাইরে, অফিসে গাছ লাগান
ঘর ও অফিসের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য অনেকেই ছোট ছোট গাছ রোপণ করেন। সেখানে প্রাধান্য পেতে পারে বায়ু বিশুদ্ধকরণ উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা, আইভি, স্পাইডার প্লান্ট জাতীয় গাছ বায়ু বিশুদ্ধকরণ উদ্ভিদ হিসেবে জনপ্রিয়। এতে ঘরের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পেল, তেমনই ঘরে সুস্থ পরিবেশও বজায় থাকল।
শরীরের টক্সিন দূর করার জন্য যেসব পানীয় পান করবেন
শরীরের টক্সিন করতে বিভিন্ন ধরনের পানীয় পান করতে পারেন। পানির সঙ্গে আখের গুড় ও তেঁতুলের ক্বাথ মিশিয়ে পান করতে পারেন। আখের গুড়ে দূষণ প্রতিরোধী ক্ষমতা থাকে। এই দুইয়ের মিশ্রণে যে পানীয় তৈরি হয় তা শরীরে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। পানির মধ্যে কয়েকটা তুলসীপাতা, আদা, চামচ আখের গুড় প্রাকৃতিকভাবেই জীবাণুনাশক। এই মিশ্রণ কিছুক্ষণ ফুটিয়ে দু’বেলা খালি পেটে গরম গরম খেতে পারেন। এ ছাড়া শরীরকে বিষমুক্ত রাখতে দারুণ কাজ করে গ্রিন টি বা সবুজ চা। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শুধু ত্বকের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, টক্সিন দূর করে শরীরকে বিষমুক্ত রাখে।
ভিটামিন-সি গ্রহণ করুন
বায়ুদূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঠেকাতে সহায়তা করে ভিটামিন-সি। ভিটামিন-সি উৎকৃষ্ট অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি ক্যানসার প্রতিরোধ করে ও ক্যানসার সৃষ্টিকারী ভাইরাসকেও কার্যকরভাবে প্রতিহত করতে পারে। লেবু, আমলকি, পেয়ারা, জাম্বুরা, আনারস, আমড়া, আম, আঙুর, কাঁচা মরিচ, জলপাই, বরই, কামরাঙা, টমেটো, বাঁধাকপি, কমলালেবু ইত্যাদি ভিটামিন-সির গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এ ছাড়া ভিটামিন-সি আমাদের দেহে লৌহ বা আয়রন শোষণে সাহায্য করে। মাছ বা মাংস অর্থাৎ আমিষজাতীয় খাবার খাওয়ার সময় সঙ্গে লেবু খেলে দেহের লৌহ শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।
জানালা বন্ধ রাখুন
বাসায় যেহেতু জানালা দিয়েই মূলত ধুলা এবং দূষিত বাতাস ঘরে আসে, তাই জানালা বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন। এই দূষিত বাতাস আপনার নাকে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট এবং ক্রমাগত হাঁচির সমস্যা হতে পারে। আপনার বাথরুমের একটি জানলা খোলা রাখুন যাতে ঘরে ভালোভাবে বাতাস যাতায়াত করে। আর্দ্রতা রুখতে বাথরুমের ভেন্টিলেশন খোলা রাখুন।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করুন
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ধুলার অ্যালার্জি থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখে। বাড়ি ফেরার পর সর্বদা মেডিকেটেড সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে আপনার হাত ধুয়ে নিন। এ ছাড়া ময়লা এবং দূষণ থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি হট শাওয়ার নিন।
ধূমপান থেকে বিরত থাকুন
ধূমপান বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। যতদূর সম্ভব ধূমপান এড়িয়ে চলুন। এতে যেমন ধূমপায়ী নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি আশপাশের মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমানভাবে।
কলি