মা-মেয়ের সম্পর্ক দারুণ এক সম্পর্ক। বেশির ভাগ মেয়েরই সবচেয়ে কাছের বন্ধু তার মা। মায়ের সঙ্গেই তাদের সখ্য সবচেয়ে বেশি। মেয়ে তার আবদার, চাওয়া-পাওয়া, ভালো লাগা, মন্দ লাগা ভাগাভাগি করে নেয় মায়ের সঙ্গে। অনেক সময় ব্যতিক্রমও দেখা যায়। মা ও মেয়ের সম্পর্ক ভালো না হলে মা কিছু বললেই মেয়ে ঝাঁজিয়ে উঠবে। কথায় কথায় তর্ক করবে, সব ব্যর্থতার জন্য মাকে দায়ী করবে এবং মায়ের কোনো নির্দেশ সে পালন করতে চাইবে না। মায়ের বিরোধিতা করাই হবে তার প্রধান কাজ। তাই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হওয়া জরুরি।
পাশে থাকুন, কথা শুনুন
মেয়ে জীবনে অনেক ভুল করবে, এটাকে স্বাভাবিক ধরে নিতে হবে। ভুলের কারণে মানসিক বা শারীরিক শাস্তি দেওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। সবসময় তাকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তার সব কর্মকাণ্ড নিয়ে কটূক্তি, সমালোচনা বন্ধ করতে হবে। সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করতে হবে। মেয়েদের নানা বয়সে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তার কথা শোনার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিবন্ধকতার সমাজে কোনো মেয়ে তার আস্থাশীল জায়গায় মাকে যদি না পায় তাহলে তার সুন্দরভাবে বিকশিত হওয়া খুব সহজ হবে না। তাই মা হিসেবে সবসময় চেষ্টা করতে হবে মেয়ের পাশে থাকার। মাকে এমন হতে হবে যেন মেয়ে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো বিষয় মাকে শোনাতে পারে। কোনো ভুল করে থাকলে, প্রথমে সাহায্যের জন্য মায়ের কাছে আসতে পারে।
মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব
মায়ের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ক হতে হবে সহজ এবং সাবলীল। বয়ঃসন্ধিকালীন সামাজিক ব্যবস্থায় মা-মেয়ের সম্পর্ক কিছুটা শীতল থাকে। এ সময় তাদের মধ্যে একটা মানসিক ও সম্পর্কগত দূরত্ব তৈরি হয়। এ সময় মাকে মেয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যাতে মেয়ে মায়ের সঙ্গে যেকোনো বিষয় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারে। মা-মেয়ের সম্পর্ক সাবলীল রাখার চেষ্টা করতে হবে। মেয়ে যেভাবে পৃথিবী দেখতে চায় তা জানার চেষ্টা করতে হবে। কৈশোর সময়ে সম্পর্ক কঠিন থাকলে পরবর্তী সময়ে মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় আনা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মা-মেয়ে দুজন দুজনকে বুঝতে হবে। তাহলেই মেয়ে যতই বড় হোক না কেন, চিরজীবন সে মায়ের আঁচলেই সব শান্তি, স্বস্তি, সাহস আর সবটুকু সুখ খুঁজে পাবে।
আরও পড়ুন:ফোনে কথা বলার আদবকেতা
শিখতে-জানতে অনুপ্রাণিত করতে হবে
মেয়েকে শেখার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। শৈশব থেকেই চেষ্টা করতে হবে তাকে সৃজনশীল কাজে যুক্ত করতে। স্কুল-কলেজের সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেওয়া যাবে না। নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। বই পড়া, ম্যাগাজিন পড়া, স্কুল-কলেজে স্কাউটিং-গার্লস গাইডের মতো সহ-শিক্ষামূলক কাজে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। মেয়েকে একাকী পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে তাকে নানান কৌশল জয় করার কৌশল শেখাতে হবে। গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে সে যেন পাহাড় জয় করতে পারেন এমনভাবে তৈরি করতে হবে। বাস্তব দুনিয়ার নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে মাকেই মানুষ হিসেবে তাকে পথ চেনাতে হবে।
নিজের চাপ চাপিয়ে না দেওয়া
অনেক মা নিজের চাওয়া মেয়ের ওপরে চাপিয়ে দেন। নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন মেয়ের মাধ্যমে পূরণ করতে চান। আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বা আশা তাদের সন্তানের মাধ্যমে অর্জন করতে চাওয়া, এটা ঠিক না। মেয়ে যা করতে চায়, মায়ের উচিত তাকে করতে দেওয়া। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মানুষই মেধাবী, তবে ধরনটা শুধু আলাদা। বাস্তবতা মেনে তার পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। মেয়ের পছন্দ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা যাবে না। বরং তার পরিবেশকে নতুনভাবে গ্রহণ করতে হবে। মা যদি মেয়ের পছন্দকে গুরুত্ব দেন, মেয়েও তার মায়ের পছন্দকে গুরুত্ব দেবে। এভাবেই তাদের সম্পর্ক হবে মজবুত।
অতিরিক্ত কঠোর না হওয়া
কোনো সন্তানের ভুল ধরিয়ে দেওয়া কিংবা সমালোচনা করাটা মোটেই খারাপ কিছু নয়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে কঠোরতার মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। ছোটখাটো বিষয়ে অতিরিক্ত কঠোর হলে তার মনে তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় মায়ের কঠোরতার কারণে মেয়ের জেদ কাজ করতে পারে। তাই সে একই ভুল বারবার করবে। মায়ের উচিত হবে মেয়ের এমন আচরণ মাথায় রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। তার ছোটখাটো ভুলগুলো মাফ করে দিয়ে বুঝিয়ে বলা।
মানসিক দিক খেয়াল রাখতে হবে
মেয়ের মধ্যে কোনো মানসিক চাপ বা দ্বন্দ্ব রয়েছে কি না, জানার চেষ্টা করতে হবে। বাড়িতে, স্কুলে বা অন্যত্র সে কোনো ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছে কি না সেই সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। মেয়ের মধ্যে যদি কোনোরকম বিষণ্নতা, উৎকণ্ঠা, পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, কনডাক্ট ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যা লক্ষ করেন, তা হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
আবেগীয় সম্পর্ক
মেয়ে কারও সঙ্গে আবেগীয় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত না হয়ে তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে হবে। তার অনুভূতিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। যদি তার এই সম্পর্ক পড়ালেখা বা ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর হয়, তবে তাকে তার সম্পর্ক বুঝতে সহায়তা করতে হবে। সম্পর্কের কারণে মেয়ে কোনো বিপদে পড়ে কি না সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে, বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে তার ওপর অতিরিক্ত নজরদারি করা যাবে না, যাতে সে নিজেকে আবদ্ধ মনে করে।
কলি