শিশুরা স্বভাবতই কৌতূহলী। তাদের কাছে প্রশ্নের অভাব নেই। এমন অনেক প্রশ্ন থাকে, যা তার মনে নির্দিষ্ট বয়সের পরই উদ্ভব হয়। নতুন কোনো কিছু অনুভব করলেই শিশু প্রশ্ন করে। শিশুর প্রশ্নের সঙ্গে অনেক ধরনের উপাদান জড়িয়ে থাকে। শিশু কিছু প্রশ্ন অবচেতন মনেই করে বসে, যা তার মনোজগতের দুর্বোধ্যতাকে প্রকাশ করে। তাই শিশুর প্রশ্নের উত্তর না দিলে এবং প্রশ্ন করায় তাকে শাস্তি দিলে, শিশুর বড় জায়গায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা একটু একটু করে নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং শিশুর প্রশ্ন করার অভ্যাসকে নিরুৎসাহিত করা যাবে না।
বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ
যেসব শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে, তারাই বেশি বেশি প্রশ্ন করে। শিশুদের একটা নির্দিষ্ট বয়সে নির্দিষ্ট বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। আর ওই বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায় শিশুর প্রশ্নের মাধ্যমে। যে শিশুদের বুদ্ধি বেশি, তারা প্রশ্নও বেশি করে। কারণ শিশুটির জানার আগ্রহ থাকে, সে তার চারপাশের সবকিছু সম্পর্কে সচেতন হতে চায়, বুঝতে চায় ও পরখ করে দেখতে চায়। কোনো বিষয় ‘এমনি এমনি হয়’ মনে না করে কারণ খুঁজতে চায়। বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক দেখতে চায়। যে শিশু যত বেশি কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে পায়, সে তত বেশি বুদ্ধির পরিচয় দিতে থাকে।
জ্ঞানের বিকাশ
পৃথিবী সম্পর্কে সতর্ক দৃষ্টির পাশাপাশি তার মনে যেসব প্রশ্ন জাগে- সে নানাভাবে তার উত্তর জানে, এতে তার জ্ঞানের পরিধি আরও বড় হতে থাকে। তার বিভিন্ন মাত্রার বুদ্ধির বিকাশ ঘটে এবং সেসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে থাকে তার জন্য নতুন নতুন জ্ঞানের ক্ষেত্র; যেখানে বিচরণ করতে করতে সে জীবনের নতুন মাত্রা উন্মোচন করতে সক্ষম হয়।
জ্ঞানের পিপাসা
নতুন নতুন বিষয় জানতে শুরু করলে শিশুর জ্ঞানপিপাসা বেড়ে যায়। আর বড়রা তার জানার আগ্রহকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারলে, শিশুর সঠিক শিক্ষালাভ সহজ হয়ে যায়। এ ছাড়া তারা যদি বুঝতে পারে বই ও পড়াশোনার মধ্যে জানার এই প্রক্রিয়ার সহজ সমাধান আছে, তা হলে তারা পড়াশোনায়ও আগ্রহী হয়ে ওঠে।
ভাষিক দক্ষতা
বড়দের কাছে তার নতুন নতুন উপলব্ধি সম্পর্কে প্রকাশ করতে গিয়ে তাকে নানা ধরনের শব্দ চয়ন করতে হয়। কখনো কখনো সঠিকভাবে প্রশ্ন করে উত্তর লাভ করতে ব্যর্থও হয়। এসব ট্রায়াল অ্যান্ড এরোর এর মধ্য দিয়ে শিশু ভাষাও শেখে। কীভাবে প্রশ্ন করতে হবে, কোন ধরনের শব্দ ব্যবহার করলে বড়রা তাকে ভুল না বুঝে তার প্রশ্নের উত্তর দেবে- এসব সে নিজের ভেতরে বারবার অনুশীলন করে। এতে তার ভাষাগত উন্নয়ন হয়।
আরও পড়ুন:খেলতে খেলতে শিশুর শেখা
ভালো সম্পর্ক
শিশুর প্রশ্নের উত্তর দিলে শিশু অভিভাবকদের প্রতি আস্থা অনুভব করে। আর আন্তরিকতার সঙ্গে সব প্রশ্নের উত্তর দিলে শিশু তার মনোজগতের যেকোনো দ্বিধাকে সহজে অভিভাবকদের সামনে খুলে বলতে আত্মপ্রত্যয় অনুভব করে। এতে শিশু ও অভিভাবকের সম্পর্ক মধুর হয়ে ওঠে। এ ছাড়াও যেহেতু প্রশ্নের উত্তর দিলে শিশুরা মনের কথা সহজে প্রকাশ করে, তাই তাদের লালন-পালনে কোথায় ঘাটতি হচ্ছে তা সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় এবং সমাধানও করা যায়। এতে করে শিশুর পূর্ণাঙ্গ আস্থার জায়গা তৈরি হয় তার পরিবারে।
উত্তর না দিলে
শিশুর প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দিলে শিশু সন্তুষ্ট হয় না। ইতিবাচক আচরণে মনোযোগ না পেয়ে শিশু রাগ-জিদসহ নানা নেতিবাচক আচরণ করতে পারে। ইতিবাচক দিকে আগ্রহের বৃদ্ধি না ঘটলে, সে নেতিবাচক বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। শুধু তাই নয়, শিশু বাবা-মা বা পরিবারের সঙ্গে কথা শেয়ার না করে শুধু বন্ধুবান্ধবদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করে কৌতূহল নিবারণের চেষ্টা করে। এতে ভুল তথ্য ও ভুল জায়গার তথ্য পেয়ে ভুলভাবে পরিচালিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাই প্রত্যেক বাবা-মা ও অভিভাবকের উচিত, সন্তানের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে দেওয়া। তবে অবশ্যই বয়স অনুযায়ী ও শিশুর কাছে বোধগম্যভাবে উত্তরগুলো দিতে হবে। কীভাবে উত্তর দেবেন বুঝতে না পারলে প্রয়োজনে অন্য বাবা-মায়ের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে কিংবা বিভিন্ন বইপুস্তকের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
কলি