হেমন্ত এসেছে। এই ঋতুতে না থাকে গরম, না থাকে ঠাণ্ডা, একটি মিষ্টি হাওয়া বিরাজ করে আবহাওয়াজুড়ে। এ আবহাওয়ার কারণে পোশাক ও সাজসজ্জায় আসে পরিবর্তন। এই সময় নিমন্ত্রণ রক্ষায় সহজ সাজে রাঙিয়ে নেওয়া যায় নিজেকে। তবে এমন পোশাক বেছে নিতে হবে, যা ট্রেন্ডি এবং দাওয়াতে পরে যাওয়ার জন্য উপযোগী। তাই আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন পোশাকে সেজে উঠেছে ফ্যাশন হাউসগুলো।
কেমন হবে পোশাক
দাওয়াতে মূলত আবহওয়া, সময় ও স্থানের সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নিতে হয় পোশাক। নিজের রুচি অনুযায়ী শাড়ি, কুর্তি সালোয়ার-কামিজ, লেহেঙ্গা, টপস ও ফতুয়া বেছে নিতে পারেন। এই সময়ে পোশাক হতে হবে স্টাইলিশ ও আরামদায়ক। তাই যে পোশাকই পরেন না কেন, সেটা যেন আপনাকে সহজে মানিয়ে যায় এবং আরামদায়ক হয়। দুপুরে দাওয়াত থাকলে খুব বেশি জমকালো পোশাক না পরাই ভালো। এই দাওয়াতে সহজ নকশার চিরায়ত প্যাটার্নের পোশাক পরতে পারেন। জমজমাট আড্ডার আয়োজনে ঢিলেঢালা নরম পোশাক বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়া টপ-বটম, স্কার্ট, ম্যাক্সি ড্রেস, জাম্প স্যুট বেশ মানিয়ে যাবে।
যদি সুতির তৈরি পোশাক বেছে নেন, তাহলে তার সঙ্গে মানানসই টাইটস বা জিন্সের প্যান্ট পরতে পারেন। জিন্সের সঙ্গে পুরো হাতার টি-শার্টও পরতে পারেন। সোজা কাটের প্যান্ট বা পালাজ্জোও ভালো লাগবে। রাতের দাওয়াতে জমকালো ভাব নিয়ে আসতে চাইলে সিল্কের পোশাক পরতে পারেন। এখন সময়োপযোগী ওয়ান পিস কামিজ পরতে পারেন। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে বিভিন্ন ডিজাইনের ওয়ান পিস পাওয়া যাচ্ছে। ক্যাজুয়াল বা আধা আনুষ্ঠানিক পোশাক হিসেবে তারা কামিজগুলো তৈরি করছেন। চাপা কাটের প্যান্ট, সঙ্গে একটু লম্বাটে ধাঁচের কামিজ বা শার্ট কামিজ বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়া ঢোলা কাটের প্যান্টের সঙ্গে মানিয়ে যাবে তুলনামূলক খাটো কাটের কামিজগুলো। ফ্যাশন ব্র্যান্ড অঞ্জন’স অনুষ্ঠানে পরার জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছে।
অঞ্জন’সের প্রধান নির্বাহী শাহীন আহম্মেদ জানান, তারা সব সময় ঋতু উপযোগী ডিজাইন করে থাকেন। মূলত তারা পোশাকের কাপড়, রং, নকশার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এই সময়ের আবহাওয়ার কারণে সুতি, ভয়েল, লিনেন, সিল্ক, মসলিন- এ ধরনের কাপড় বেশি ব্যবহার করে পোশাক তৈরি করা হয়েছে। প্যাটার্নে এসেছে নতুনত্ব। তাদের হেমন্তের কালেকশনে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ওড়না, ফতুয়া, টপস, স্কার্ফসহ হ্যান্ড মেইড জুয়েলারির পাশাপাশি টপস, ফ্রক ও ওড়না ডিজাইন করা হয়েছে। অলিভ, কফি, বাদামি, সাদা, লাল, সবুজ ও মেরুন রং গুরুত্ব পেয়েছে।
এই সময় অনুষ্ঠানে নানা ধরনের স্কার্টও পরতে পারেন। হাঁটুঅব্দি ফ্লেয়ার স্কার্টের সঙ্গে সুতি টপ, চাপা স্কার্টের সঙ্গে স্মার্ট টপ বা হাঁটু পর্যন্ত স্কার্ট ড্রেস- তিন ধরনের পোশাকই পাওয়া যাচ্ছে। স্কার্ট পরলে পোশাকে আসবে ভিন্নতা। দাওয়াতে পরার জন্য অনেকের কাছে শাড়ি প্রথম পছন্দ। তারা শাড়ির সঙ্গে নানা কাটের ব্লাউজ পরতে পারেন। শাড়ি হিসেবে শিফন, কোটা ও সুতিই আদর্শ। রাতের দাওয়াতের জন্য একটু গর্জিয়াস পোশাক পরতে চাইলে হালকা জারদৌসি কাজের শাড়ি বেছে নিতে পারেন। তবে ইদানীং ব্রোকেট ও কাতানের শাড়ি এবং সঙ্গে ফুলহাতা বা কোয়ার্টার হাতা ব্লাউজ অথবা ফ্যাশনেবল কোটি বা টপস বেছে নিতে পারেন। দেখতে ভালো লাগবে। রঙের ক্ষেত্রে লাল, কালো, সবুজের মতো মূল রংগুলোর পাশাপাশি শ্যাওলা, পাউডার ব্লু, ট্যানজি অরেঞ্জ, রোজ পিঙ্ক, মিন্ট গ্রিন, অ্যাকোয়া ব্লু যেকোনো রঙের পোশাক বেছে নিতে পারেন।
সাজসজ্জা
হেমন্তে ওয়াটারবেজড সাজসজ্জাই মানানসই বেশি। রাতে বেজড মেকআপে তরল ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন। তবে আগে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে নিতে হবে। মেকআপ ভালোমতো বসানোর জন্য মুখে বুলিয়ে নিতে হবে ফিনিশিং পাউডার। যেহেতু হেমন্তে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে, তাই মেকআপ হতে হবে শাইনি ও শিমারি। চোখ যদি জমকালো হয়, ঠোঁটে থাকবে হালকা রং। এ ঋতুর আদর্শ গ্লসি লিপস্টিক। সেগুলো হতে হবে একটু চকচকে, ফ্রস্টেড ও মৃদু রঙের। ত্বক টেনে গেলে তৈলাক্ত ও শিমারিবেজড মেকআপ করা যেতে পারে। চোখের সাজ হতে পারে স্মোকি। হেমন্তে ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার না করাই ভালো। খুব গ্লোসি আর ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ লিপস্টিক ব্যবহার করলে ভালো দেখাবে। চাইলে ন্যুড সাজ সাজতে পারেন। ন্যুড হলেও জমকালো ভাবটিও ফুটে উঠবে। এ ধরনের হালকা সাজের সঙ্গে গ্লসি লিপস্টিক মানিয়ে যাবে। চুল ব্লো-ড্রাই করে খুলে রাখতে পারেন। এক পাশে সিঁথি করে রাখতে পারেন। ধুলোবালি আর দূষণ থেকে রক্ষা পেতে দিনের বেলায় চুলগুলোকে ডোনাট বান, পনিটেইল বা স্টাইলিশভাবে বেঁধে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বছরের এই সময়টায় যেহেতু প্রচুর ধুলোবালি থাকে, তাই চুল বেঁধে নেওয়াই ভালো।
গহনায় বৈচিত্র্য
পোশাকে অল্প কারুকাজ হলে হালকা গহনা পরতে পারেন। খুব চকচকে বা ঝলমলে গহনা এড়িয়ে যান। পোশাকের সঙ্গে ব্রেসলেট হোক বা কানের দুল- সবটাই যেন হয় ছিমছাম। আর ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে উজ্জ্বল রঙের গহনা পরুন। যা হবে পোশাকের সঙ্গে মানানসই। শাড়ি পরলে গহনায় বিভিন্নতা আনতে স্বর্ণের পাশাপাশি গোল্ড প্লেটেড, মেটাল, স্টোন, পুঁতিসহ নানা ধরনের গহনা ব্যবহার করতে পারেন। ফ্যাশনে এখন চোকার, লেয়ার নেকলেস, লহরি মালা, বিভিন্ন ধরনের কাটিং গহনা বেশ জনপ্রিয়। চাইলে সেখান থেকে বেছে নিতে পারেন। এই গহনাগুলো আপনার নিজস্ব আভিজাত্য ধরে রাখবে।
পোশাক পাবেন যেখানে
ওয়েস্টার্ন আউটফিটের জন্য যেতে পারেন ক্যাটস আই, এক্সট্যাসি, সারা এসব ফ্যাশন ব্র্যান্ডে বিভিন্ন কাটিংয়ের পোশাক পাবেন। এ ছাড়া দেশীয় ফ্যাশন হাউস বিশ্বরঙ, অঞ্জন’স, জেন্টল পার্ক-এ পাবেন পছন্দের দাওয়াতের পোশাক। বিদেশ থেকে আমদানি করা নন-ব্র্যান্ডের পোশাক পাবেন বসুন্ধরা সিটি, নর্থ টাওয়ার, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউমার্কেট ও ঢাকা কলেজের বিপরীতে বদরুদ্দোজা মার্কেটে।
কলি