শিশুরা বড় হয় ধাপে ধাপে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের উচ্চতা বৃদ্ধি না হলে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা হয়। শিশুর বেশ ভালো উচ্চতার জিন থাকা সত্ত্বেও হরমোন বা পুষ্টিজনিত ঘাটতিতে উচ্চতা কম হতে পারে, তাই শিশুর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে অভিভাবকদের একটু বাড়তি খেয়াল রাখতেই হয়। শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য সব ধরনের পুষ্টি উপাদানই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের জন্য উচ্চতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা রহমান।
কীভাবে উচ্চতা নির্ধারণ করা সম্ভব
উচ্চতার পূর্বাভাসের জন্য সবচেয়ে নির্ভুল পদ্ধতি হলো শিশুর হাড়ের বয়স, যা হাতের এক্স-রে দ্বারা নির্ধারিত হয়। শিশুর উচ্চতা সম্পর্কে আন্দাজ করার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেমন-
দুই গুণ দুই বছর পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে দুই বছর বয়সে শিশুর উচ্চতা দ্বিগুণ করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে তার উচ্চতার পূর্বাভাস দেওয়া যায়। এ ছাড়া ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে, তাই ১৮ মাস হলে আপনি তাদের উচ্চতা সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারবেন। তবে এ পদ্ধতি যে কার্যকর হবে তার কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
মিড পেরেন্টাল পদ্ধতি
এটি একটি শিশুর উচ্চতা নির্ধারণ করার জটিল পদ্ধতি, যাতে ইঞ্চি এককে মা এবং বাবার উচ্চতাকে যোগ করে ২ দিয়ে ভাগ করা হয় ছেলেদের ক্ষেত্রে ২.৫ ইঞ্চি যোগ করে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ২.৫ বিয়োগ করে গড় প্রত্যাশিত উচ্চতা পাওয়া যায়। বাবা-মা লম্বা হলে সন্তান লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং বাবা-মা বেঁটে হলে সন্তান বেঁটে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গ্রোথচার্ট
শিশুর উচ্চতার পূর্বাভাস দেওয়ার আদর্শ উপায় হলো গ্রোথ চার্ট। শিশু চিকিৎসকরা সাধারণত শিশুর লম্বা হওয়া ট্র্যাক করার জন্য শিশুর উচ্চতা, ওজন এবং মাথার পরিধি পরিমাপ করে এবং নির্দিষ্ট বয়সের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ উচ্চতা ও ওজন ধরে তা হলো ১ বছরে ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে এবং প্রতি বছর ৫ সেন্টিমিটার করে বেড়ে ২৫ বছরে সর্বোচ্চ ৯৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।
পারিবারিক ইতিহাস ও বংশগতি
শিশুর উচ্চতা এবং বৃদ্ধি সাধারণত পারিবারিক ইতিহাস এবং ডিএনএর ওপর ভিত্তি করে হয়, যা সে পরিবারের কাছ থেকে অর্জন করে। হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে বা শিশু কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলে, তার প্রভাবও উচ্চতায় পড়ে।
যেসব বিষয় শিশুদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করে
শিশুদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করার উপযোগী কয়েকটি বিষয় রয়েছে। উচ্চতা বৃদ্ধির বেশির ভাগই জেনেটিক কারণের ওপর (৬০ থেকে ৮০ শতাংশ) এবং বাকিটা পরিবেশগত কারণের (পুষ্টি, ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যকলাপ) ওপর নির্ভর করে।
সুষম খাবার
শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ পুষ্টিকর খাবারের ভূমিকা অপরিসীম। পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট উপস্থিত থাকা সুষম ডায়েট শিশুর বৃদ্ধিকে সহজ করে। যেসব খাবার শিশুর উচ্চতা বাড়ায় সেগুলো হলো প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। যেমন- ডিম, মুরগি, হোল গ্রেইন, সয়াবিন, ডেইরি প্রোডাক্ট এবং বাদাম ও বীজ। খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ফার্টিফাইড প্রোডাক্টস অন্তর্ভুক্ত করার ফলেও তারা ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম
জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সঠিক পরিমাণ ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মানব বৃদ্ধিকারক হরমোন নিঃসরণ করে। যে কারণে শৈশব ও কৈশোর পর্যায়ে অন্তত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
সক্রিয় থাকা
বিকাশের সময় শিশুদের সক্রিয় থাকা জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম পেশি ও হাড়কে শক্তিশালী করতে পারে, সঠিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং বেশি করে বৃদ্ধিকারক হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়। স্কুলের শিশুদের দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত ।
সঠিকভাবে বসা অনুশীলন
দুর্বল ভঙ্গির কারণে শিশুদের দেখতে ছোট লাগে সামনের দিকে ঝুঁকে বসা এবং পেছনের দিকে হেলে বসার কারণে আপনার সন্তানের প্রকৃত উচ্চতা প্রভাবিত হতে পারে এবং ঘাড়ে এবং পিঠে ব্যথা হতে পারে। সন্তানের দৈনিক রুটিনে আর্গোনোমিক্স করুন, তাকে বসার ভঙ্গি ঠিক করে অনুশীলন করতে উৎসাহিত করুন এবং শারীরিক সমস্যা এড়াতে কী ধরনের ব্যায়াম করতে হবে সে ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
ওরাল সাপ্লিমেন্ট
কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যখন শিশুর বৃদ্ধিকারক হরমোন উৎপাদন কম হয়, তখন শিশুকে ওরাল সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে, তবে তা সতর্কতার সঙ্গে এবং ডাক্তারের পরামর্শের ভিত্তিতে দিতে হবে।
কলি