মধু শুধু স্বাস্থ্যের জন্যই নয় ত্বকের জন্যও খুবই উপকারী। প্রাচীনকাল থেকেই খাবারের পাশাপাশি রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে মধু। ত্বক ও চুলের যত্নে মধু এটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বক নরম রাখে, বলিরেখা ও কালচে ভাব দূর করে। এ ছাড়া ব্রণের জীবাণুও ধ্বংস করতে মধু বেশ কার্যকর। খুব কম সময়েই উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে মধুর কোনো বিকল্প নেই।
ক্লিনজার হিসেবে মধুর ব্যবহার
মধুতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং হিউমেক্ট্যান্ট যা প্রাকৃতিকভাবে ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। ব্রণ এবং ত্বকের জ্বালাভাব প্রতিরোধ করে। মধু দিয়ে নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করলে ত্বক হয় দাগহীন ও সুন্দর। এক চামচ মধু ও এক চামচ উপটান মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের ভেতর থেকে ময়লা বের করে ও মরা কোষ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।
ফেসিয়াল টোনার হিসেবে মধুর ব্যবহার
মধু ত্বকের টোনার হিসেবে কাজ করে। শসার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে একটি বোতলে মিশ্রণটি ঢেলে ভালো করে ঝাকিয়ে নিন। শেষে একটি তুলার প্যাডের সাহায্যে এই ফেসিয়াল টোনারটি ত্বকে ব্যবহার করুন।
মধুর তৈরি স্ক্রাব
মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের ছিদ্রগুলোকে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর করে। একটি পাত্রে মধু ও চিনি দিন। ভালো করে মিশিয়ে নিন। মুখ ভিজিয়ে তারপর সারা মুখে লাগান। আপনার মুখ এবং ঘাড় আলতভাবে ম্যাসাজ করে ৫-১০ মিনিটের জন্য এটি রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়া ভালোভাবে মুখ ধোয়ার পরে মধু, কাঁচা দুধের মিশ্রণ লাগাতে পারেন। খালি মধু অল্প গোলাপ জল মিশিয়ে মুখে মেখে রেখে দিন কয়েক মিনিট। এরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হবে।
বয়সের ছাপ দূর করতে
পাকা পেঁপের খোসা ছাড়িয়ে নিন। ভালো করে পেঁপে চটকে নিয়ে এর সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে ঘন প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাক মুখে লাগিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের জন্য এমন মধু ও পেঁপের প্যাক বেশি উপকারী। মধু-পেঁপের প্যাক নিয়মিত ব্যবহারে মুখে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না।
মুখের কালো দাগ দূর করতে
মুখের দাগ দূর করতে মধু, আমন্ড অয়েল, গুঁড়া দুধ এবং লেবুর রস পরিমাণমতো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে নিতে পারেন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়া মধুর সঙ্গে চন্দনের গুঁড়া ও পাকা পেঁপে মিশিয়ে নিতে পারেন। এই ফেসপ্যাকটি নিয়মিত ত্বকে লাগালে রোদে পোড়া দাগ দূর হবে।
চুলের যত্নে
চুলের ফ্রিজি ভাব দূর করতে ও চুল সিল্কি রাখতে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনারের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে চুলের নিচের অংশে ভালোভাবে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। চাইলে কন্ডিশনারের বোতলে পরিমাণমতো মধু মিশিয়ে রেখে দিতে পারেন। এ ছাড়া ২ চামচ মধু, ৩ চামচ অলিভ অয়েল এবং টকদই একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। চুলের রুক্ষভাব দূর করে ময়েশ্চার এবং চুল পড়া বন্ধ করে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা ও ওজন কমাতে
ভেতর থেকে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে প্রতিদিন মধু খেতে পারেন। ১ গ্লাস গরম দুধে ২ চা চামচ মধু আর ৩-৪টি জাফরান গুলে খেলে তিন মাসের মধ্যে ত্বক হবে উজ্জ্বল। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে পানি না মিশিয়ে ১ চা চামচ মধুর সঙ্গে লেবুর রস ভরপেটে খেলে বেশ উপকার পাবেন। দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চা চামচ মধু ও ২ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে খেতে হবে।
কলি