ঘর সাজাতে অনেকে কার্পেট ব্যবহার করেন। নানা ধরনের বর্ণিল নকশার কার্পেট ঘরের সৌন্দর্য বহু গুণ বৃদ্ধি করে। শীতকালে মেঝের ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পেতে কমবেশি সবাই মেঝেতে রংবেরঙের কার্পেট ব্যবহার করেন। কার্পেট ঘরে যেমন উষ্ণতা এনে দেয়, তেমনি এগুলো ঘর বৈচিত্র্যময়ও করে তোলে। কোন ঘরের জন্য কেমন কার্পেট হবে।
কোন ঘরে কেমন কার্পেট
আমাদের দেশে সাধারণত শুধু বসার ঘরেই কার্পেট ব্যবহার করা হয়। তবে অনেকে বসার ঘরের পাশাপাশি শোবার ঘরেও কার্পেট ব্যবহার করেন। ঘর ও ঘরের ব্যবহারভেদে কার্পেট ব্যবহার করা উচিত। কার্পেট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঘরের আকার, দেয়ালের রং, আসবাবপত্র ও পর্দার রং ইত্যাদি বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি। বিশেষ করে দেয়ালের রং ও আসবাবপত্রের রঙের সঙ্গে কার্পেটের রং সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে তা ভালো দেখাবে না। ঝামেলা এড়ানোর জন্য ব্রাউন, কফি, মেরুন বা সবুজাভ রংগুলো কার্পেটের ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন। এ রঙের কার্পেটগুলো প্রায় সব ধরনের দেয়াল ও আসবাবপত্রের সঙ্গে মানিয়ে যায়। এ ছাড়া ঘরের রঙের বিপরীত রং নির্বাচন করতে পারেন। সাধারণত শোবার ঘরে বিছানার পাশে ও দরজার সামনে ছোট বা মাঝারি আকারের কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন। আবার অনেকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে, ইজি চেয়ার বা ঘরের ছোট সোফার সামনে কার্পেট ব্যবহার করেন সেটাও ভালো দেখায়। শোবার ঘরের বিছানার পাশে লম্বা কার্পেট ব্যবহার করলে চলাফেরা ও কাজকর্মে সুবিধা হয়। বসার রুমের সোফার সামনে ও সেন্টার টেবিলের চারপাশে কার্পেট রাখলে দেখতে ভালো লাগে আর ঠাণ্ডাও কম লাগে।
ঘরের জন্য কার্পেট নির্বাচন
কার্পেট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঘরের আকারও একটি বিবেচ্য বিষয়। সাধারণত কার্পেট ব্যবহার করা হয় চারকোনা, আয়তাকার, গোলাকার ও ডিম্বাকার। আকারে বড় কক্ষে চারকোনা কার্পেটই ভালো লাগবে। চওড়া কম কিন্তু লম্বা ঘরে আয়তাকার বা ডিম্বাকার কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন। গোল কার্পেট সেন্টার কার্পেট হিসেবে শোবার ঘরেই বেশি মানানসই। বেড সাইড ছোট রাখতে চাইলে ডিম্বাকার কার্পেট বেশি ভালো লাগবে। কার্পেট শুধু দেখতে সুন্দর হলেই হবে না, তার ওপর দিয়ে হাঁটাচলা যেন আরামদায়ক হয় সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এজন্য উলের তৈরি কার্পেট বেছে নিতে পারেন। শোবার ঘরে এমন কার্পেট আরাম ও নান্দনিকতা যোগ করবে। এখন প্রাকৃতিক ফাইবারের তৈরি কার্পেট ব্যবহার বেড়েছে। পাট, উল যুক্ত করে তৈরি হচ্ছে নতুন ধরনের কার্পেট। কার্পেটগুলোও বেশ নরম। ইনডোর-আউটডোর- দুই জায়গাতেই বিছাতে পারেন কার্পেট। একরঙা প্যাটার্নের কার্পেটগুলোও চলছে বেশ। ঘরের আসবাবের সঙ্গে মিলিয়ে বিছিয়ে দিলে অভিজাত ভাব চলে আসে। ফাইবার ও সিল্কের তৈরি কার্পেটের ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। বারান্দা কিংবা ছাদবাগানে কৃত্রিম ঘাসের কার্পেট বা গ্রাস কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন ম্যাটেরিয়ালের গ্রাস কার্পেট রয়েছে।
এর মধ্যে পাট, রেক্সিন, প্লাস্টিক, পাতলা রাবার ও সিনথেটিকের কার্পেট অন্যতম। শিশুরা যেহেতু মেঝেতে বসে খেলাধুলা করে তাই তাদের ঘরে সম্পূর্ণ কার্পেটের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। তাদের ঘরে রঙিন নকশাদার সুতি বা পাটের কার্পেট আদর্শ। কারণ সহজেই পরিষ্কার করা যায়। এসি ছাড়া ঘরে কার্পেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিনথেটিক ও পাতলা রাবারের কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন। বসার ঘরের দেয়াল আকর্ষণীয় করার জন্য এবং ঘরে সম্পূর্ণ দেশিভাব ফুটিয়ে তোলার জন্য পাটের কার্পেট ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া সিল্কের কাশ্মীরি বা পার্শিয়ান কার্পেট বেছে নিতে পারেন। বসার ঘরের জায়গা বড় হলে পুরোটাই কার্পেট দিতে চাইলে বড় একটি কার্পেট না দিয়ে মাঝারি দুই বা তিনটি কার্পেট বিছানো যেতে পারে। এতে ঘর ও কার্পেট পরিষ্কার করা সহজ ও কম কষ্টসাধ্য হবে।
কার্পেটের যত্নে
কার্পেটে ধুলো জমা একটা সমস্যা। বাড়ির কারও যদি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকে, তাহলে কার্পেটের ধুলোয় সমস্যা হতে পারে। আর শীতের সময় তো এ ধরনের সমস্যা একটু বেশিই হয়। তাই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকলে কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো। করলেও নিয়মিত কার্পেট পরিষ্কার রাখবেন। কার্পেটের যত্নে এটি নিয়মিত ব্রাশ করা প্রয়োজন এবং সপ্তাহে অন্তত এক দিন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। যদি সম্ভব হয় মাসে অন্তত দুবার কার্পেট রোদে দেওয়া ভালো।
কোথায় পাবেন
রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান, এলিফ্যান্ট রোড, বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, রাজধানী সুপার মার্কেট, বঙ্গবাজার, উত্তরা ও গুলশান মার্কেটে কার্পেট পাবেন। পিস, ফুট, গজ হিসেবে কার্পেট বিক্রি হয়। তুরস্ক, ইরান, চীন, বেলজিয়াম, দুবাইয়ের কার্পেট পাওয়া যায় এখানে। বাহারি, বুনন মজবুত ও টেকসই হয়। দেখতে সুন্দর ও দামও বেশি পড়বে। দেশীয় পাটের কার্পেটের চাহিদাও প্রচুর। ঘরে দেশীয় আমেজ তৈরি করতে পাটের কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন।
কলি