নিজেকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার জন্য হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে শরীরের বাড়তি মেদ কমে যায়। ছোট-বড় যে কারও নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করা উচিত। এ ছাড়া হাঁটলে প্রাণবন্ত অনুভূতি পাওয়া যায়, পেশি সুগঠিত হয়, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুরক্ষিত থাকে। প্রতিদিন অল্প সময় হাঁটলেও তা শরীরের জন্য উপকার বয়ে আনে।
কখন হাঁটতে হবে
হাঁটা হলো সবচেয়ে নিরাপদ, খরচহীন এবং আরামদায়ক শরীর চর্চা। একজন মানুষ নিয়মিত হাঁটলে সে সুস্থ থাকবেই। একেকজনের কাজের ধরন একেক রকম। তাই তাদের ব্যস্ততার সময়টাও আলাদা। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনি হাঁটার জন্য যখন সময় বের করতে পারবেন, তখনই হাঁটা উচিত। হাঁটার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো বিকেল। বিকেল বেলা তরুণ থেকে বয়স্ক যে কেউ প্রতিদিন সময় করে হাঁটতে পারেন।
যেভাবে হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের উচিত দৈনিক কমপক্ষে ৩০ মিনিট মাঝারি ও তীব্রতার সঙ্গে হাঁটা। একজন মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা জরুরি। সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে ১৫০ মিনিট হাঁটলে সুস্থ থাকবেন। যাদের শারীরিক অবস্থা ভালো, তারা বেশি সময় ধরেও হাঁটতে পারেন। কিন্তু কখনোই ৩০ মিনিটের কম হাঁটা উচিত নয়। কারও যদি একবারে ৩০ মিনিট হাঁটার সক্ষমতা না থাকে, তা হলে তিনবার— প্রতিবার ১০ মিনিট করে ৩০ মিনিট হাঁটতে পারেন। অথবা একবার ২০ মিনিট, অন্যবার ১০ মিনিট করে ৩০ মিনিট। যেভাবে হোক, আপনার ৩০ মিনিট সময় পূরণ করতে হবে। তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের হাঁটার বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সন্তানকে স্কুলে দিতে গেলে বাড়িতে ফেরত আসার পথটুকু হেঁটে আসতে পারেন। আবার বাজারে হেঁটে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। মাদের বাড়ির আশপাশেই উপযোগী জায়গায় প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটতে পারেন।
কেন হাঁটবেন
হাঁটা সবচেয়ে সহজ ব্যায়ামের একটি এবং এর উপকারিতা অনেক। হাঁটাহাঁটি মানসিক চাপ কমায় এবং রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে কার্ডিওভাস্কুলারের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, মন উৎফুল্ল রাখে, শক্তি বাড়ায়। হাঁটলে ওজন ঠিক থাকে, মাংসপেশি মজবুত হয় এবং অস্থিসন্ধির নমনীয়তা অটুট থাকে।
হাঁটার আগে ওয়ার্ম-আপ করা
হাঁটার আগে শরীরকে প্রস্তুত করা অত্যন্ত জরুরি। ওয়ার্ম-আপ করলে পেশি নমনীয় হয়, রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং আঘাতের ঝুঁকি হ্রাস পায়। ওয়ার্ম-আপ হিসেবে হালকা স্ট্রেচিং বা ধীরগতিতে হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন।
হাঁটার উপকারিতা
• হাঁটার ফলে আমাদের দেহের অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয়। এর ফলে আমাদের দেহে চর্বি জমে না এবং আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
• হাঁটাহাঁটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। দিনভর নানা কাজে ব্যস্ত থাকার পর সন্ধ্যায় হাঁটাহাঁটি আপনার মনকে করবে ফুরফুরে। হাঁটার অভ্যাস সারা দিনের চাপ থেকে আপনাকে মুক্ত করবে।
• নিয়মিত হাঁটায় হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত হাঁটার বিকল্প নেই।
• হাঁটা শারীরিক গঠন অটুট রাখতে সাহায্য করে। অনেকেই আছেন যাদের সারা দিন চেয়ারে, সোফায় কিংবা গাড়িতে বসে কাজ করতে হয়। ফলে শারীরিক গঠনে, বিশেষ করে পিঠে ব্যথা হতে পারে। তাই বেশি করে হাঁটা জরুরি।
• হাঁটার অভ্যাস মানসিক অবসাদ দূর করে। বাড়ায় মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল। নতুন নতুন স্মৃতি তৈরি হতে থাকে। এগুলো আপনার অনুভূতি ও সৃজনশীলতাকে প্রভাবিত করে।
• হাঁটা আমাদের সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করে, সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
• স্তন ক্যানসারসহ অন্যান্য ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও হ্রাস পায়। হাঁটার সময় হৃৎস্পন্দন আর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়ে। ফলে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়ে।
• উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেও প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাঁটলে শরীরের পেশিতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে রক্তের গ্লুকোজ কমে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
তথ্যসূত্র: স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট টেসকো লিভিং ডটকম ও বিবিসি বাংলা
কলি