‘সবার জন্য ফ্যাশন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাজধানীর আলোকি কনভেনশন সেন্টারে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে আর্কা ফ্যশন উইকের বর্ণিল আসর। চারদিনের এই আয়োজন আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
নতুন ডিজাইনার ও ব্রান্ডগুলোকে একটা প্লাটফর্ম করে দেয়াও এই আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য। তৈরি পোশাক শিল্পের পণ্য বিপনন থেকে রপ্তানি, সেখান থেকে ফ্যাশন ব্রান্ডের পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উপস্থাপন, ক্রেতাদের আকর্ষণ করা ও দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত করা ‘আর্কা ফ্যাশন উইকের’ মূল লক্ষ্য।
এবারের আয়োজনে রয়েছে রানওয়ে শো, মাস্টারক্লাস, শীর্ষ ডিজাইনার ও ব্রান্ডের পোশাক নিয়ে ফ্যাশন শো। এই আয়োজনের মাধ্যমে মত বিনিময়, নিজেদের গল্প ভাগ করে নেবে সবার সঙ্গে, যাতে করে লাইফস্টাইল ও ফ্যাশনকে অনুষঙ্গ হিসেবে সবাই গ্রহণ করতে পারে।
তৃতীয় এই আসরে প্রতিদিন থাকছে একেকটি থিম। গতকাল প্রথম দিন ডেনিম। আজ দ্বিতীয় দিন থাকছে ‘মডার্ন কন্টেপোরারি’। আগামীকাল শনিবার থাকবে ফিউশন এবং আর সমাপনী দিনে থাকেব ‘সাস্টেইনেবলিটি’। এই বিষয়গুলো কেবল আয়োজনের বৈচিত্র্যময়তাকে তুলে ধরে না। এর মাধ্যমে দেশীয় ঐতিহ্য, অভিনবত্ব, পরিবেশের প্রতি অনুরাগও প্রকাশ পাবে।
প্রতিবারের মতো গ্লাসহাউসে আছে ডিজাইন ল্যাব। যেখানে আপনার পছন্দমতো একটি প্লেইন টি-শার্ট, টোট ব্যাগ, স্কার্ফ ও হ্যাট কিনে নিজের পছন্দমতো ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, হ্যান্ডপেইন্ট, প্যাচওয়ার্ক করানো যাবে বিনা মূল্যে। এ ছাড়া অতিথিদের জন্য আছে ফেসপেইন্টিং, হেয়ার ব্রেইডিং ও পোর্ট্রেট আঁকার ব্যবস্থা।
দ্বিতীয় আসরের মতো এবারও প্রথম দিন কোন শো ছিল না। আজ দ্বিতীয় দিন থেকে থাকছে ফ্যাশন শো। প্রতিদিন চারটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে ফ্যাশন শো। প্রতি পর্বে থাকবে একাধিক ব্র্যান্ড বা ডিজাইনার লেবেলে উপস্থাপনা। এবার মোট ২৩টি শো অনুষ্ঠিত হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছে।
এবারের রানওয়েতে আজ দ্বিতীয় দিন থাকছে বাংলা পাঙ্ক, এজেড, ট্যাপারড, দানিয়া, রয়েল বেঙ্গল কতুর, ওয়ান পারসেন্ট ক্লাব, ঢেউ বাই সারা, আমি ঢাকা ও কাঁঠাল।
আগামীকাল তৃতীয় দিন থাকবে ফ্যাশন ডিজাইনার শিক্ষার্থীদের ডিজাইনে ফ্যাশন শো, গ্লি ও আমিরা। সমাপনী দিন থাকবে ঢং, তাসা, ফ্রেন্ডশিপ কালারাস অব দ্য চরস–ইন্ডি, গ্রিশো বাই সৌহার্দ্য, ব্লিস ক্লদিং, উড়ুক্কু বাংলাদেশ, তান, অরণ্য ও কুহু। সব মিলিয়ে থাকছে বারোটি ফ্যাশন কিউ।
যাঁরা কেনাকাটা করতে চান, তাঁদের জন্য আছে মার্কেটপ্লেস। আড়ং ও আমিরার মতো বড় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি আছে ব্র্যান্ড নুজার্ট, ঢাকা ভিন্টেজ, হাউস অব সুই, তাসা, প্রতিভা যেমন তেমনি নতুন ব্র্যান্ড রংস অ্যান্ড রেবেলস।
আর্কা ফ্যাশন উইক’র প্রতিষ্ঠাতা আসাদ সাত্তার বলেন, প্রথমবারের মত আর্কা ফ্যাশন উইকে থাকছে বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে মাস্টারক্লাস। ফ্যাশন শিক্ষার মাধ্যমে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এই মাস্টারক্লাসের আয়োজন করা হয়েছে। চারদিনে মোট ছয়টি মাস্টারক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে। কাঁথা স্টিচ মাস্টারক্লাসে শেখাবেন নকশাকার আফসানা ফেরদৌসি, স্ক্রিন প্রিন্টিং শেখাবে বাংলা পাংক, কারচুপি ও জারদৌজির মাস্টারক্লাসটিতে থাকছে হাউজ অফ আহমেদ, ন্যাচারাল ডাই শেখা যাবে ম্যারিগোল্ড অ্যান্ড catechu’র সঙ্গে, আপসাইক্লিং শেখানোর ব্যবস্থা করবে রিসাইক্লিং ও আপসাইক্লিং ব্র্যান্ড উড়ুক্কু।
তিনি আরও বলেন, ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পকে আধুনিক ফ্যাশন জগতের সঙ্গে একীভূত করার এক অনন্য সুযোগ তৈরি করবে মাস্টারক্লাস গুলো। এই ইভেন্টে আয়োজিত মাস্টারক্লাসগুলোতে অংশগ্রহণকারীরা দক্ষ কারিগরদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার সুযোগ পাবেন এবং শীতল পাটি, ব্লক প্রিন্টিং, কারচুপি ও জারদোজি, রিকশা পেইন্টিং এবং ইন্ডিগো টাই-ডাই ও শিবোরি ডাইয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম শিখবেন। এসব কর্মশালা শুধু
ঐতিহ্যবাহী কৌশল শেখার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং কীভাবে সেগুলো আধুনিক ডিজাইন ও ফ্যাশনে প্রয়োগ করা যায়, তা সম্পর্কেও মানুষকে জানতে সাহায্য করবে।
ভোজনরসিকদের জন্য দোতলার ‘ফুড জোনে’ থাকছে মুখরোচক খাবারের পসরা নিয়ে অ্যারাবিকা, জাস্ট জুস, স্লারপস, ওয়াফেল আপ, ফ্রুটসিকলস, কাউচ পটেটো, কড়া ফ্রাই, বিরিয়া স্টপ, সেই নেহারি, ইজাকায়া, কনা ক্যাফে ও লিয়র বেকারি।
বহুমুখী এ আয়োজনটি প্রতিদিন বেলা ১১টায় শুরু হয়ে চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। পুরো দিনের আয়োজন শেষে রাতে থাকছে সঙ্গীতায়োজন। অংশ নিচ্ছে আর্কা এক্স ভাই ভাই টেকওভার, আরসি বিডি, সাইতারা, রেদোয়ান, জলের গান, ইন্দালো ও কন্যা দে দ্য ডেস্ট্রয়ার।