নকশা, রূপে অন্য উপাদানের পণ্যের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই পাটের তৈরি পণ্য। ঘরের সাজে বৈচিত্র্য আনতে ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবে পাটজাত পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। পাটের তৈরি পণ্যগুলো ঘরের সাজে দেশীয় একটা লুক নিয়ে আসে। ড্রয়িংরুম, বেডরুম এমনকি বারান্দাকে নান্দনিক করে তোলে। এ ছাড়া আমাদের দেশীয় ফ্যাশনেও দিনে দিনে পাটের তৈরি নানা পোশাকের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। এটি আমাদের দেশে সহজলভ্য হলেও সস্তা নয়। তবে পরিবেশের বন্ধু।
ঢাকার মতিঝিলে পাটজাত পণ্য প্রদর্শনী ও স্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্রে হরেক রকমের পাটজাত পণ্য সুলভ মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পাটপণ্য নিয়ে কাজ করছে তারা। অন্যান্য উপাদানে তৈরি পণ্যের মতো পাটের তৈরি পণ্যগুলো ফ্যাশনেবল এবং যুগোপযোগী। যেকোনো ধরনের পাটপণ্যই সুন্দর নকশার আর রঙের হয়ে থাকে।
অন্দরের নানা কিছু
কাঁচা পাট, পাটের সুতা ও কাপড়ের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে নান্দনিক নকশায় গৃহস্থালি ও নিত্যপণ্য, বাসাবাড়িতে বাগান করার সরঞ্জাম, ফ্লোর কভার, প্যাকেজিং বা মোড়কীকরণ পণ্য, সাজসজ্জার উপকরণ, অফিসে ব্যবহার্য কয়েক ধরনের পণ্য প্রস্তুত করা হয়েছে। শোবার ঘরের বিছানার চাদর, পর্দা থেকে শুরু করে ম্যাট্রেস, চশমার বাক্স, হট প্লেস ম্যাট, পাপোশ, টেবিল ম্যাট, ছোট ও বড় ঝুড়ি, টিস্যু বক্স, ঢাকনা, টেবিল ল্যাম্প, রানার, গোলাকৃতির বাতি, কুশন কাভার, মোবাইল কাভার, ল্যাপটপ ব্যাগ, পার্স, শপিং ব্যাগ, বোতল ব্যাগ, নকশি বা ফেন্সি ব্যাগ, জায়নামাজ, ফ্লোর ম্যাট, দেয়ালের ম্যাট, পাটের কাগজ এবং কাগজের পণ্য, শুভেচ্ছা কার্ড, ফুলদানি, গহনা, আমন্ত্রণপত্র, শতরঞ্জি, চাবির রিং, মানিব্যাগ, পাটের তৈরি খেলনা, শোপিস, ল্যাম্পশেডসহ সবকিছুই মিলবে। ভিন্নতা আনতে পাটের টেবিল ক্লথেই রয়েছে এমব্রয়ডারির কাজ।
পুঁতি, লেস, বোতাম বসানো কুশন কাভার। কোনোটায় আবার লাল-সাদা কিংবা কালোর মধ্যে গাঢ় নীলের নকশা করা হয়েছে। এগুলো অন্যান্য পণ্য থেকে একটু বেশি দামি হলেও দেখতে আকর্ষণীয় আর পরিবেশবান্ধব।
পরার জন্য
পাটের নিজস্ব সৌন্দর্য ও চলতি ধারার ফ্যাশনের মিশেলে তৈরি পাটের জুতার জনপ্রিয়তা এখন অনেকটাই বেড়েছে। বিশেষ করে শীতে পাটের জুতা ব্যবহারে রয়েছে আরাম ও উষ্ণতা। মেয়েদের জুতার মধ্যে রয়েছে হাই হিল, হাতে সেলাই ও ছাপা নকশার স্লিপার, পাম্প শু, ফিতা দেওয়া স্যান্ডেল ও নাগরা। এ ছাড়া ছেলেদের জন্য কনভার্স জুতা, ফরমাল শু, চপ্পল, স্যান্ডেল ও স্নিকার দেখা গেছে। রঙের মধ্যে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে লাল, গোলাপি, কালো, সাদা, আকাশি ও পাটের প্রাকৃতিক রং। পোশাকের মধ্যে জ্যাকেট, ওভার কোট, ব্লেজার, টপ, প্যান্ট, কোট ইত্যাদি সৌন্দর্য ও নান্দনিকতার কারণে সবার নজর কেড়েছে। পাটের আঁশ দিয়ে কাপড় তৈরি করে সেখানে চামড়া বা মেটালের ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও নতুনভাবে তুলে ধরতে কোলাজ, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিনপ্রিন্ট বা কনট্রাস্ট রঙে নকশা করা হয়েছে। এ ছাড়া পাটের তৈরি শাড়ি বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পাটের আঁশকে মেশিনে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে তুলার চেয়ে নরম করে নানা ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। আরামদায়ক হওয়ায় সব বয়সী নারীর কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। মূলত পাটের শাড়ির সঙ্গে ফ্যাশন সচেতনদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা শাড়িগুলোকে বাজারজাত করা হচ্ছে। পাটের এসব জিনিসপত্রের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। ধীরে ধীরে পাটপণ্যের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসছে। দেশের মানুষ সচেতনভাবে পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে বলে বিভিন্ন দোকানে পাটের অনেক রকম পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।
দরদাম
বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ ৪০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। টিফিন ব্যাগ ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, লেডিস ব্যাগ ২০০ থেকে ৫৫০, মোবাইল ব্যাগ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, ওয়ালম্যাট ২০০ থেকে ২২০, শোপিস ৮০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে পাবেন। চুড়ি ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায়, দুই থেকে আড়াই ফুট লম্বা কার্পেট ২০০০ টাকা, জুতার দাম ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন দামের গহনা রয়েছে।
ঠিকানা
পাটজাত পণ্য প্রদর্শনী ও স্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র ৯৯, মতিঝিল (দ্বিতীয় তলা), করিম চেম্বার, ঢাকা (মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন)। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।