শিশুকে ছোটবেলা থেকেই সব ধরনের কাজ শেখানো উচিত। শিশুর বড় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রেও ঘরের কাজ শেখা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাওয়া,পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, এগুলো সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের অপরিহার্য অংশ। অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া কোনো সাধারণ মানুষের কারও ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। পিতা-মাতার দায়িত্ব নিজের সন্তানকে শারীরিক পরিশ্রম এবং কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি করা। এ ছাড়া সংসারের কাজে হাত লাগানোর অভ্যাস শিশুকে স্বাবলম্বী ও স্বনির্ভর করে। এ কারণে বাড়ির ছোটখাটো কাজে শিশুকে উৎসাহিত করুন।
সূচনালগ্ন
দুই বা তিন বছর বয়স থেকে তাকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে শুরু করতে হবে। খেলার ছলেই শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। তার নিজের খাবার তার নিজের হাতে খেতে দেওয়া যেতে পারে। শক্ত খাবার বাটিতে নিয়ে এবং পানীয় জাতীয় খাবার মাম পটে ভর্তি করে পট শিশুর হাতে ধরিয়ে দেবেন। এতে সে নিজ হাতে খাওয়া শিখবে এবং চামচ, বাটি এসব কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তারও কিছু কিছু কৌশল শিখে যাবে।
সচেতনভাবে শুরু
দুই বছরে শিশুরা কোনো কিছুই বুঝে করে না, তাই এগুলো যে কাজ তা সে বুঝতে পারে না। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে শিশুকে নিজের খেলনা গুছিয়ে রাখা, খেলার সময় নিজ হাতে খেলনা নেওয়া ইত্যাদি কাজ করা শেখাতে হবে। এ ছাড়া পানি নিজের হাতে ঢেলে পান করা, খাওয়ার পরে বাটি, চামচ বেসিনে রেখে আসা, কোনো কিছু এগিয়ে দেওয়া এ জাতীয় কাজগুলো করাতে হবে। নিজে দাঁত মাজা, নিজ হাতে খাওয়া এ সময়ই শিখবে। এই কাজগুলোর মাধ্যমে সে সচেতনভাবে জানতে পারবে এটা কাজ এবং এটা নিজের হাতে করতে হবে।
অগ্রসর ধাপ
সাধারণত ৬-১০ বছর বয়স পর্যন্ত এ ধাপ চলমান থাকবে। এ সময় শিশুরা নিজেদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, গোছগাছ এসব শিখবে। নিজের ব্যাগ নিজে গোছানো, মাথা আচড়ানো, নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা, পড়াশোনার জন্য বই খাতা বেছে নেওয়া ও পড়া শেষে বই গুছিয়ে সঠিক জায়গায় রাখা ইত্যাদি এই ধাপে করবে। শিশুরা কাজ শুরুর দিকে কিছু ভুল করবে তাতে পিতা-মাতার উচিত হবে বিচলিত না শিশুকে নিজের কাজটি করতে দেওয়া।
চলমান ধাপ
১০ বছরের পর থেকে এই ধাপ চলতে থাকবে এবং এ সময় শিশু পরিবারের সামগ্রিক কিছু কাজে হাত লাগাবে। যেমন- ৬-১০ বছর পর্যন্ত শিশু তার ব্যক্তিগত পরিচর্যা আর নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে শেখে। ১০ বছরের পর শিশুকে পারিবারিক শ্রমবণ্টনের মধ্যে নিতে হবে তাকে দিয়ে ঘর পরিষ্কার করানো বয়স্কদের কাজে সহযোগিতা করা এবং পুরো পরিবারের সদস্যদের বিছানা পরিষ্কার করা, ঘর ঝাড়ু দেওয়া এবং মোছার মতো কাজগুলো করা। বাড়িতে যদিও সহায়ক গৃহকর্মী থাকেও তার ছুটির দিনগুলোয় শিশুকে এসব কাজ করতে দিতে হবে। এতে শিশুরা শ্রমের মর্যাদা ও বুঝতে পারবে আবার তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
পূর্ণাঙ্গ শিখন
১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে শিশুকে সব ধরনের কাজ করতে শেখাতে হবে। রান্না, মাঝে মধ্যে নিজের জন্য নুডলস বা নাশতা তৈরি করা এবং রোগীর পরিচর্যা করা। তবে রান্নার কাজ ও কাটা বাছার কাজ করার সময় অবশ্যই বড়দের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে যাতে শিশুরা কোনো দুর্ঘটনার শিকার না হয়। আর টুকটাক দুর্ঘটনা হলেও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সমাধান করতে হবে। এভাবে ধাপে ধাপে কাজ শেখালে শিশুরা কাজ করতে আগ্রহী হবে।
কাজের অভ্যাস গড়ে তুলুন
শিশুকে দিয়ে নানা ছোটখাটো কাজ করানোর অভ্যাস করতে হবে। বিশেষ করে তার কাছে কাজের সময় গুরুত্বটা বেশি বেশি করে তুলে ধরতে হবে। কাজটি সঠিকভাবে শেষ করলে প্রশংসা করুন যাতে তার নিজেকে এই কাজের জন্যে বিশেষ কিছু মনে করে। এভাবে আপনার সঙ্গেও শিশুর একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠবে। নতুন নতুন কাজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন।
দায়িত্ব দিন বয়স বুঝে
এক্ষেত্রে শিশুর বয়স বিবেচনা করে দায়িত্ব ভাগ করে দেবেন। নতুন নতুন কাজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। তাতে একঘেয়েমি আসবে না।
নিজ পরিকল্পনায় শামিল করুন
ঘর গুছানোর কাজের পরিকল্পনায় শিশুদের গুরুত্ব দিতে হবে। বাজারে গেলে তাদের সঙ্গে নিয়ে যান। ফলে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাববে এবং কাজ করতে আগ্রহ পাবে।
ছোট ভাইবোনদের দায়িত্ব নিতে দিন
বাসায় একাধিক সন্তান থাকলে বয়সে বড়জনকে ছোট সন্তানের দায়িত্ব দিন। ওদের ভেতর যেন দ্বন্দ্ব না থাকে তা নিশ্চিত আপনাকেই করতে হবে। এভাবে আপনার সন্তান ঘরের কাজও দলবদ্ধভাবে করবে। সংসারে টুকিটাকি কাজে অন্তর্ভুক্তি শিশুকে স্বাবলম্বী ও স্বনির্ভর করতে সাহায্য করে।
টিম ওয়ার্কের বিকল্প নেই
একসঙ্গে কাজ করতে গেলে যে আনন্দ তা শিশুকে বোঝাতে হবে। দলবেঁধে শিশুর সঙ্গে কাজ করলে আপনার সঙ্গে শিশুর কিছু চমৎকার মুহূর্ত তৈরি হবে।
কলি