
শীতে ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়াসহ শরীরে পানির ঘাটতি শুরু হয়ে যায়। বিষয়টা বড়রা বিভিন্ন কৌশলে কাটিয়ে উঠতে পারলেও শিশুরা এসব বিষয় এড়িয়ে যেতে পারে না। বিশেষ করে নবজাতকের জন্য শীত এক ধরনের আতঙ্কের নাম। শীতকাল এলেই শিশুদের ত্বকের সমস্যা, নিউমোনিয়া, সর্দিসহ নানা সমস্যা শুরু হয়ে যায়। শীতের আগমন নবজাতকের অভিভাবকদের জন্য যাতে আতঙ্কের কারণ না হয় তার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এই সময়টা নবজাতকের যত্নে খুবই সচেতন থাকতে হবে। শীতে কীভাবে নবজাতকের যত্ন নেওয়া যায়।
খাদ্যাভ্যাস
নবজাতক সাধারণত তার মায়ের বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে নানাবিধ স্বাস্থ্য জটিলতা ও সমস্যার কারণে শিশুকে অনেকক্ষেত্রে ফর্মুলা দিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে শিশুর ফর্মুলা তৈরির জন্য বিশুদ্ধ পানি ফুটিয়ে ফ্লাক্সে রাখতে হবে এবং প্রতিবার গরম পানিতে খাবার তৈরির চেষ্টা করতে হবে। তবে মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই, বুকের দুধে পর্যাপ্ত চিনি থাকে যা শিশুর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চলতে সহযোগিতা করে এবং মায়ের দেহের ভেতর থেকে আসে বলে গরমই থাকে। এ ছাড়া এতে অনেক ধরনের রোগের প্রতিষেধকও থাকে। তাই নবজাতককে অবশ্যই বুকের দুধ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। শীতের সময় খাওয়ার পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিতে হবে এতে শিশু মায়ের দেহের তাপমাত্রায় উষ্ণ থাকবে আর বেড়ে ওঠাও সঠিকভাবে হবে।

মালিশ
শিশুর ত্বক ভালো রাখতে প্রতিদিন মালিশ করা জরুরি। হালকা গরম তেল দিয়ে শিশুদের প্রতিদিন মালিশ করলে ত্বকের আর্দ্রতা যেমন বজায় থাকে, তেমন দেহে রক্ত সঞ্চালনও ভালো হয়। ঠাণ্ডা লাগলে তাও সারিয়ে তোলে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যা মালিশ করলে শিশুর ঘুম ভালো হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মেটাবলিজম বাড়ে।
ব্যায়াম
মালিশ করার সঙ্গে সঙ্গে হাত পায়ের জোড়াগুলো সচল করার জন্য হালকা ব্যায়াম করাতে হবে। পা ভাঁজ করা ও সোজা করা, হাত সোজা করা ও ভাঁজ করা। এ ছাড়া হাঁটু ভাঁজ করে পেটে আলতোভাবে চাপ দেওয়া ইত্যাদি ব্যায়াম করানো যায়। এতে শিশুর পেটের গ্যাস উৎপন্ন হয় না। শরীর দ্রুত সচল হয় আর শিশুর ইমিউনিটি বাড়ে।
রোদ পোহানো
শীতের সকালের হালকা রোদে শিশুকে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট রাখতে হবে। শিশুদের শরীরে ভিটামিন-ডি সঠিকভাবে যাওয়ার জন্য এটা করতেই হবে। এ ছাড়া মায়ের পেটে থাকার সময় শিশুর শরীরে বিলিরুবিন তৈরি হয় বেশি এতে শিশুর চোখ হলুদ হয়ে যায়। এতে আতঙ্কিত না হয়ে শিশুকে সূর্যের আলোয় কিছু সময় রাখলে বিলিরুবিনের মাত্রা কমে যাবে। তাই শিশুকে খেয়াল করে রোদে পোহাতে হবে।
গোসল ও শরীর মোছা
হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে নবজাতককে গোসল করাতে হবে। তবে শীত ও ব্যস্ততার কারণে সব দিন গোসল করানো সম্ভব না হলে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে গেলে যেটুকু প্রয়োজন ওইটুকুই যথেষ্ট। শিশুদের এমনিতেই বেশি ঘাম হয় না, তাই খুব বেশি পানি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। প্রতিবার পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে মুছে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
ডায়াপার
বেশিক্ষণ ন্যাপি পরে থাকলে শিশুদের ত্বকে সমস্যা হতে পারে ভেবে অনেকেই ডায়াপার পরাতে চান না। আবার কেউ বারবার জামা ভিজিয়ে ফেলার হাত থেকে মুক্তি পেতে সারাক্ষণ ডায়াপার পরিয়ে রাখতেই পছন্দ করেন। দুই ক্ষেত্রেই সুবিধা যেমন আছে, তেমন সমস্যাও আছে। কিন্তু শিশুর কাঁথা বদল করার ঝামেলা এড়াতে ও শিশুর রাতের ঘুম পূরণ করতে ডায়াপার পরিয়ে রাখতে হয়। তবে যেহেতু ত্বকের সমস্যা হওয়ার ভয় আছে তাই ডায়াপার পরানোর আগে পাউডার বা ভ্যাসলিন লাগিয়ে নিতে হবে। শিশুর পানি পান ও মূত্রের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে দুই থেকে ছয় ঘণ্টা পরপর ডায়াপার পরিবর্তন করে দিতে হবে।
ভিজে জামা
শীতকালে বেশিক্ষণ ভিজে জামা বা ডায়াপার পরে থাকলে ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই কিছুক্ষণ পরপরই খেয়াল করতে হয় পোশাক ভিজে গেছে কি না। এই সময় শিশুদের গরম পোশাকও পরাতে হয়। তাই ওপর থেকে চট করে বোঝা যায় না পোশাক ভিজে রয়েছে কি না। ভিজে জামা বেশিক্ষণ পরে থাকলে ঠাণ্ডা লাগাও এড়ানো যায় না।
ত্বকের আর্দ্রতা
ভিজে জামা বা ডায়াপার পরে ত্বকে র্যাশ হতে পারে। ত্বক শুষ্কও হতে পারে। তাই সকালে যেমন তেল মালিশ করবেন, তেমন ভাবেই দুপুর বা বিকেলে সারা দেহে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। ন্যাপি পরার কারণে ত্বকে র্যাশ বেরোলে তার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আলাদা ক্রিমও মাখাতে পারেন।
মশারি
নবজাতককে সব সময় মশারির ভেতরে রাখতে হবে যাতে মশা কামড়াতে না পারে। নবজাতক শিশুরা সহজে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না তাই মশা তাদের বেশি কামড়ায়। এমনিতেই শীতের সময় শিশু ও বয়স্কদের যত্ন করতে হয় বেশি। তার ওপর শিশু যদি নবজাতক শিশু হয় তাহলে যত্নের মাত্রা একটু বেশি হবে। এতে নবজাতক শিশু ঝুঁকিমুক্ত থাকবে আর আপনি থাকবেন নিশ্চিন্ত।
কলি