
নতুন বছরে নিজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুনভাবে ঘরেরও পরিবর্তন হোক। কারণ ঘর হচ্ছে দিনশেষে সবচেয়ে শান্তির এবং প্রিয় জায়গা। তাই বছরের শুরুতে থাকুক গৃহের প্রতিটি কোণে নতুনত্বের ছোঁয়া। ছিমছাম আসবাব আর হালকা উপকরণ ব্যবহারে অন্দরের সাজ হয়ে উঠতে পারে অনন্য। নতুন বছরে কীভাবে ঘর সাজাবেন যেভাবে সেটা নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হলো।
নতুন বছরে নতুন রং
ঘর সজ্জার অন্যতম উপাদান হলো ঘরের রং। নতুন বছরে মানুষ ঘর সাজানোর ব্যাপারে বেশ সচেতন। শুধু আসবাব, পর্দা, কুশন কাভার, বিছানার চাদরের মতো অনুষঙ্গেই নয়, দেয়াল রাঙানোর বিষয়টিতেও রয়েছে বাড়তি মনোযোগ। কারণ, ঘরের অন্যান্য অনুষঙ্গে যত পরিবর্তনই আনুন না কেন, দেয়াল যদি হয় রংচটা, তবে ঘর সাজানো ষোলো আনাই মাটি। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘরের দেয়াল করে তুলুন বর্ণিল। এ ছাড়া ঘরের সঠিক রং মনকে শান্ত করে এবং মনের ওপর চাপও কমায়। তবে ঘরে ভুল রং ব্যবহারে হিতে বিপরীত হয়ে থাকে। যে ঘরে বেশি থাকা হয় সেই ঘরের রং হালকা হলে ভালো। এতে চোখে, মনে প্রশান্তি আসে। চাইলে ঘরে নতুনত্ব আনতে নতুন রঙের সঙ্গে দেয়ালে আলপনাও এঁকে নিতে পারেন।
বাঙালিয়ানায় অন্দর
নতুন বছরে বাঙালিয়ানা বা দেশীয় সংস্কৃতিতে সাজালে ঘরে দেশীয় ভাবের পাশাপাশি আভিজাত্য, শৈল্পিকতা ও নান্দনিকতা ফুটে উঠবে। বেত-বাঁশ, মাটির জিনিসপত্র, স্টিলের জিনিসপত্র ও নানা দেশীয় পণ্য দিয়েও ঘর সাজাতে পারেন। ঘরের একটি কোণে বেতের আয়না, বেতের ঘড়ি, বেতের বুকশেলফ রেখে দিতে পারেন। ঘরের পর্দা, দেয়ালের রং অথবা বিছানার চাদর ঘরে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার করে ঘরে বাঙালি ভাব আনতে পারেন। এ ছাড়া দেয়ালের একটি কোণায় রিকশাচিত্র দেশীয় ঐতিহ্যমূলক চিত্র আর্ট করে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন।
ভিন্ন রঙের আলো দিয়ে সাজানো
আলোর সঠিক ব্যবহার বাড়িতে এনে দেয় আলাদা সৌন্দর্য। বর্তমানে বাড়িতে আলোর উপস্থিতি শুধু একটি অপরিহার্য বিষয়ই নয়, বরং তা আপনার জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। ঘরকে আলোকিত করার মাধ্যমে এর রং ফুটিয়ে তোলে, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। প্রাকৃতিক আলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের লাইটের মাধ্যমে ঘরকে আলোকিত করতে পারেন। এলইডি লাইট ঘরের যেকোনো জায়গায় ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরকে করে তুলতে পারেন আকর্ষণীয়। এটি বিস্তৃত পরিসরে ঘরের প্রতিটি অংশ আলোকিত করে, প্রতিটি স্থান এবং আসবাবের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
এ ছাড়া প্ল্যান্টার লাইটের ব্যবহার বাড়িকে এনে দেবে ক্ল্যাসিক লুক। রুমের যেখানে গাছ আছে, সেই স্থানগুলো বা বাগান আলোকিত করতে এ ধরনের লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া চাঁদ ও তারা আকারের ফেইরি লাইট জানালার সঙ্গে টাঙিয়ে দেওয়া যায়। ছোট ইরানি ঝাড়বাতি বা টার্কিশ লাইট দিয়ে বসার ঘর বা খাবার ঘর সাজাতে পারেন। বাজেট কম হলে হ্যান্ডপেইন্ট করা লাইট ও বাঁশ দিয়ে তৈরি টেবিল ল্যাম্প দিয়ে ঘরের আবহ পরিবর্তন করতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপাদানে
মনের ও ঘরের সতেজতা ও প্রফুল্লতা ধরে রাখতে বেশি বেশি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। ইনডোর প্ল্যান্ট সে ক্ষেত্রে ভালো সংযোজন। এতে ঘরে আসবে সবুজের ছোঁয়া। গাছের অক্সিজেন মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ঘরের বাতাস প্রাকৃতিকভাবে পরিশুদ্ধ করতে চাইলে গাছের বিকল্প নেই। গাছের যত্ন নিলে মনও ভালো থাকে।
শতরঞ্জি ও কার্পেট
বসার ঘরের আকার বুঝে ছোট বা বড় আকারের শতরঞ্জি ও কার্পেট বিছিয়ে নিলে ঘরের আভিজাত্য বাড়বে। শতরঞ্জিতে দেশি আবহ ফুটিয়ে তোলা সহজ। আর রাজকীয় আমেজ আনতে চাইলে কার্পেটই আদর্শ। ইরানি নকশার কার্পেট অনেকেই পছন্দ করেন। পাটের তৈরি শতরঞ্জির দেখা মিলবে অনেক প্রতিষ্ঠানে। সেখান থেকেও বেছে নেওয়া যেতে পারেন আপনার পছন্দের শতরঞ্জি ও কার্পেট।
সরিয়ে ফেলুন অতিরিক্ত আসবাব
ঘরের ছিমছাম ভাব ধরে রাখতে চাইলে অল্প আসবাবে সাজাতে হবে। ভারী সব আসবাবে ঠাসা ঘরে প্রশান্তি পাওয়া যাবে না। ঘরের জায়গা বুঝে আসবাব সরিয়ে নিন। এ ছাড়া আসবাব এমনভাবে রাখতে হবে যেন ঘরের জায়গা নষ্ট না হয়।
মোমের ব্যবহার
নতুন বছরে অনেকে ঘরকে সুবাসিত রাখতে চান। তাই ঘরে ফুল রাখতে পারেন। সুগন্ধি মোম দিয়ে ঘরকে সুবাসিত করতে পারেন। সাধারণ মোমের বদলে এখন নানা রকম ডিজাইন ও আকারের মোমই বেশি ব্যবহার করা হয়। ঘ্রাণ হয় ভিন্ন ভিন্ন। এ ছাড়া গোলাপ, সূর্যমুখীসহ নানারকম ফুলের আকৃতির মোমের পাশাপাশি স্টার, ফলের আকৃতি, হার্ট শেপ রাউন্ড শেপসহ বিভিন্ন নকশাদার মোম তৈরি করা হচ্ছে। যা অন্ধকার দূর করার পাশাপাশি ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
শিল্পকর্মের ব্যবহার
ঘর নানা রকম শিল্পকর্ম দিয়ে সাজালেও মনে প্রশান্তি আসে। ঘর সাজাতে চিত্রকর্ম ছাড়াও মৃৎশিল্প, সিরামিক, ভাস্কর্য, কাচের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতে পারেন। মনের চাপ কমাতে আর্ট বা শিল্প উপভোগ জনপ্রিয় উপায়। ঘরে আর্ট বা শিল্প এনে দিতে পারে ইতিবাচক একটি পরিবেশ।
কলি