
বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ব্যবহৃত মসলাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কালো গোলমরিচ। এর ঝাঁজাল মসলাদার ফ্লেভার খাবারে যোগ করে বাড়তি স্বাদ। শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ানোই নয়, কালো গোলমরিচ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। হাজার হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে গোলমরিচ।
গোলমরিচের উপাদান
বায়োঅ্যাকটিভ যৌগগুলো আমাদের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর মধ্যে পাইপেরিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাইপেরিন একটি প্রাকৃতিক ক্ষারীয় যার কারণে গোলমরিচের স্বাদ ঝাঁজাল হয়। উপাদানটিকে এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে। পাইপেরিন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। গোলমরিচে পাইপেরিনের পাশাপাশি ভিটামিন-কে, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-এ, থায়ামিন, রিবোফ্লেভিন, ভিটামিন বি৬, ম্যাংগানিজ, কপার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম ও জিংক থাকে।
কী কী উপকার করে
• গোলমরিচে থাকা পাইপেরিন আমাদের হজমকে সহজ করে তোলে। খাবারে কিছুটা গোলমরিচ মিশিয়ে নিন। খাবার দ্রুত হজম করতে সহায়তা করবে।
• গোলমরিচ হজমে, জ্বরে, পেট ফাঁপা ও গ্যাস দূর করতে বিশেষ সহায়তা করে। এটি অন্ত্রের হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়িয়ে দিয়ে খাবার হজমে সাহায্য করে। পানিতে এর গুঁড়া মিশিয়ে খেলে আমাশয়ে উপকার হয়।
• দাঁতের জন্য বেশ উপকারী গোলমরিচ, এতে আছে ব্যাকটেরিয়ারোধী, প্রদাহরোধী ও অ্যানালজেসিক উপাদান। গোলমরিচের মধ্যে লবণ মিশিয়ে ব্যবহার করলে ব্যথা কমতে অনেকটা সাহায্য হয়। সমপরিমাণ গোলমরিচ ও লবণ নিয়ে এর মধ্যে কয়েক ফোঁটা পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। আক্রান্ত দাঁতে সরাসরি পেস্ট লাগান এবং কয়েক মিনিট রাখুন। এ ছাড়া দাঁতের রোগের জন্য লবণ ও গোলমরিচ চূর্ণ মিশিয়ে দাঁত মাজলে ভালো।
• গোলমরিচ প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে ঠাণ্ডা এবং কাশি নিরাময় করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া গোলমরিচ ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ, তাই এটি ভালো অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও কাজ করে।
• গোলমরিচ শরীর থেকে ফ্রি রেডিক্যালস বের করে দিতে সাহায্য করে। ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ব্যাহত করে তা প্রতিরোধ করে।
• গোলমরিচে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।
• গোলমরিচের বাইরের স্তরটিতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস রয়েছে, যা ফ্যাট ভেঙে ফেলতে সহায়তা করে এবং বিপাক বৃদ্ধি করে। তাই ওজন কমানোর চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে গোলমরিচ। এর সক্রিয় যৌগগুলো শ্বেত রক্তকণিকা বাড়াতে ভূমিকা রাখে, যা শরীর আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।
• গোলমরিচে থাকা পাইপেরিন স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে।
• গোলমরিচ রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
• গোলমরিচ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এই উপাদানটি রাখলে ডায়াবেটিসের সমস্যা কমে।
• ত্বক ভালো রাখে গোলমরিচের তেল। রাগ কমাতে সাহায্য করে মরিচ। বিষণ্নতা দূর করতে সাহায্য করে গোলমরিচের ঝাল।
• হালকা গরম পানিতে গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে খেলে শরীরে শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ে। কাজ করার শক্তি পাওয়া যায়। সকাল বেলা গোলমরিচ খেতে পারলে সারা দিন অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
কলি