
মেয়েদের শীতকালীন পোশাকে দেখা যায় রং-নকশার চমক। সহজেই জ্যাকেট কিংবা সোয়েটারের মাধ্যমে তুলে ধরা যায় অভিজাত এবং স্টাইলিশ লুক। বেশ কয়েক বছর আগেও শীতের পোশাকে এত বৈচিত্র্য ছিল না। ফ্যাশনের পরিসর এখন বেশ বিস্তৃত। ডিজাইনারা নতুন নতুন নকশার সঙ্গে আবার ফিরিয়ে আনছেন পুরোনো ট্রেন্ডও। সংগ্রহে থাকা পোশাকগুলো একটু উল্টে-পাল্টেই তৈরি করা সম্ভব আলাদা আলাদা স্টাইল।

শীতের কাপড়ের ক্ষেত্রে তরুণীদের কাছে কাপড়ের উষ্ণতা, স্টাইল ও আরাম সমানভাবে বিবেচিত হয়। সাটিন, ভেলভেট, জিনস, বিশেষ করে ডেনিমের ব্যবহারে হালকা নকশার শীতপোশাকই বেশি তৈরি হচ্ছে। আলাদা করে নয়, বরং মূল পোশাকেই ব্যবহার করা হচ্ছে এমন উপাদান, যা শীতের জন্য আরামদায়ক। আবার ফ্যাশনের সঙ্গেও বেশ যায়। ব্লেজার, সোয়েটার, টপ, পঞ্চো তরুণীদের আকৃষ্ট করছে। ফ্যাশনের ধারার বদল না হলেও কাটছাঁটে এসেছে ভিন্নতা। পাশ্চাত্যের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রাচ্যের ফিউশন। তরুণীদের মধ্যে পাশ্চাত্য ধারার পোশাকের সঙ্গে দেশীয় ভাবধারার মিশেলে তৈরি পোশাকের চাহিদা রয়েছে। দেশি মোটিফের ওভারকোট পোশাকটি শাড়ির সঙ্গেও সহজে মানিয়ে যায়।
শীতে ডেনিমের জনপ্রিয়তা ও চাহিদা কখনো শেষ হয় না। রং এবং ওয়াশের কারণে ডেনিম স্টাইলে আনে ভিন্নতা। শীতের এই সময়টাতে ডেনিমে তৈরি শার্টের চাহিদা বেশি চোখে পড়ে। হুডির সঙ্গে ক্ল্যাসিক ডেনিম জ্যাকেটের লেয়ার আপ তরুণীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। পাশাপাশি একরঙা সোয়েটারের ওপর ক্রপ জ্যাকেটও পরছেন তারা। ক্যাজুয়াল শীতকালীন পোশাক হিসেবে সুতি, উল, নিট কাপড়ের জ্যাকেটের মতো ভারী ফুলস্লিভ টি-শার্ট পরা যেতে পারে।
এ ধরনের শীতপোশাক আরামদায়ক হয় বলে স্বচ্ছন্দে সারা দিন পরে থাকা যায়। একটু ঢিলেঢালা সোয়েটার ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে পছন্দ করছেন অনেকে। এ ছাড়া দিনে দিনে আমাদের দেশে ওভারকোট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শীতে ওয়েস্টার্ন আউটফিটের সঙ্গে একরঙা লংকোটের জুরি মেলা ভার। স্টাইল করতে কিন্তু শর্টস্কার্টের সঙ্গেও পরতে পারেন ওভারকোট। নিজের ভিন্ন লুক পেতে ফ্লোরাল কোট পরতে পারেন। মোটা কাপড়ের থ্রি-পিসের সঙ্গে জেগিংস পরে পাতলা চাদর জড়িয়ে নিতে পারেন।
নকশায় ভিন্নতা
টপ, কুর্তি, সোয়েটারের হাতায় আর ঘেরে জ্যামিতিক নকশা দিয়ে আনা হয়েছে ভিন্নতা। বন্ধ ও গোল গলার পাশাপাশি থাকছে হাই নেকের শীতের পোশাক। রঙেও থাকছে নতুনত্ব। লাল, কালো, সবুজের মতো মূল রংগুলোর পাশাপাশি নানা ধরনের শেড রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শ্যাওলা রং, পাউডার ব্লু, ট্যানজি অরেঞ্জ, রোজ পিঙ্ক, মিন্ট গ্রিন, অ্যাকোয়া ব্লু বেশি থাকছে পোশাকের রঙে৷
নানা রঙের সোয়েটার
টারটেল নেক বা হাইনেক সোয়েটারগুলো শরীর উষ্ণ রাখে। কিছু সোয়েটারে হাতার দিকে আলাদা রং থাকে, যা সোয়েটারে নিয়ে আসে ভিন্নতা। রঙের ক্ষেত্রে লাল, কালো, সাদা, বাদামি, অফ হোয়াইট, সাদা-কালোর শেডসহ দু-রঙের মিশ্রণ, চেকসহ গাঢ় রং চলছে। এ সময় সোয়েটারের সঙ্গে নানা স্টাইলের জিন্সের চলটাই সবচেয়ে বেশি। তবে এর পাশাপাশি গ্যাবার্ডিন প্যান্ট বেশ জনপ্রিয়। যারা শীতের পোশাককে উজ্জ্বল করতে চান, তারা স্কার্ফ পরতে পারেন। এটা স্টাইলে শুধু ভিন্নতা আনবে না, বরং পোশাকে উষ্ণতাও আনে। মার্জিত সিল্ক, উল এবং কাশ্মিরি স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন।
অনুষ্ঠানে যা পরবেন
অভিজাত ও উষ্ণ— দুটি শব্দ জড়িয়ে থাকে সিল্ক বা রেশমের পোশাকের সঙ্গে। এককালে সিল্ক ছিল রাজকীয় পরিধেয় বস্ত্র। এখন সময় পাল্টেছে। রাশভারী সাজসজ্জার সুযোগ কিংবা আয়োজন না থাকলেও, এখনো সিল্কের পোশাক ব্যবহারে কোনো কমতি নেই। বিভিন্ন পোশাকের সঙ্গে সমানভাবে মানিয়ে গেছে সিল্ক। বেছে নিতে পারেন মনের সবুজ, নেভি ব্লু, ম্যাজেন্টা, খয়েরি, লাল, বেগুনি, কালো, সোনালি রঙের যেকোনো সিল্কের পোশাক। তবে দিনের বেলার যেকোনো পার্টিতে বেছে নিন একটু হাল্কা রঙের সিল্ক শাড়ি।
পরতে পারেন গেরুয়া, সাদা, কলাপাতা রং, কমলা, নীল, গোলাপি, আকাশি ও কুসুম হলুদ রঙের পোশাক। এ ছাড়া প্যাচওয়ার্ক নকশার পোশাক বেশ জনপ্রিয়। টুকরো কাপড়ে জোড়াতালির নকশায় তৈরি হয়েছে হুডি, জ্যাকেট ও চাদর; যা ছেলেমেয়ে উভয়ই পরতে পারবে। বিভিন্ন রঙের প্রিন্ট ও উইভিং ডিজাইনেও তৈরি করা হয়েছে চাদর, যা শাড়ি বা অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে মিলিয়েও পরা যাবে। শুধু শীতের পোশাক বলেই নয়, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে শালের রয়েছে আলাদা কদর, যা আজকের প্রজন্মের কাছেও বেশ জনপ্রিয়।
পায়ের জুতা
শীতে পা ঢাকাটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ফ্যাশন করাও জরুরি। মেয়েদের বুট জুতা বেশ জনপ্রিয়। এসব বুট জুতা চামড়ার তৈরি। বিভিন্ন কাটের নকশার পাওয়া যাচ্ছে। পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে একজোড়া বুট জুতা পরে নিলেই স্টাইলে চলে আসবে নতুনত্ব। কেডস, লোফার, স্নিকার্স পরতে পারেন। সৌন্দর্য ও চলতি ধারার ফ্যাশনের মিশেলে তৈরি পাটের জুতা পরতে পারেন। বিশেষ করে শীতে পাটের জুতা ব্যবহার করলে আরাম ও উষ্ণতা দুটোই পাওয়া যাবে।
কলি